জাদুঘর দেখতে আমরা সবাই ভালোবাসি, তাই না? কিন্তু আজকে আমরা এমন কয়েকটি জাদুঘর সম্পর্কে জানবো, যেগুলো দেখতে যাওয়ার আগে আপনাকে অবশ্যই অতিরিক্ত রকমের সাহস আর ইতিবাচক চিন্তাভাবনা জমিয়ে নিতে হবে। আসুন, পরিচিত হই পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর জাদুঘরের সাথে।
নম্বর-১ঃ দ্য মিউজিয়ম অব ডেথ (লস এঞ্জেলস, ক্যালিফোর্নিয়া, ইউ.এস.এ.)
এই জাদুঘর প্রথম স্থাপিত হয় জুন ১৯৯৫ সালে, আমেরিকার স্যান ডিয়েগোর প্রথম মরচুয়ারি ভবনে। প্রতিষ্ঠাতা রিটা ডিন, জেডি হ্যালি আর ক্যাথি শুলজ্ প্রথম অনুভব করেন যে তাঁদের দেশে মৃত্যু নিয়ে শিক্ষার ক্ষেত্রে একটা বড় শুন্যতা আছে। সেই শিক্ষা শুন্যতা পূরনেই তাঁরা প্রতিষ্ঠা করেন ‘মৃত্যুর জাদুঘর’।
কি আছে এই জাদুঘরে?
আছে মৃত্যু সম্পর্কিত সবকিছু। পৃথিবী কুখ্যাত সিরিয়াল কিলারদের আঁকা ছবি, ভয়ংকর ক্রাইম সিন, বিকৃত অটোপসির, বিভৎস গাড়ি দুর্ঘটনা, গিলোটিনে মাথা কেটে ফেলার ভিডিও। অর্থাৎ যত রকমের বিকৃত আর বিভৎস ছবি হতে পারে, তার সব-ই আছে এই মৃত্যুর জাদুঘরে। এটাকে বলা হয় সিরিয়াল কিলারদের আঁকা পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সংগ্রহশালা। এই জাদুঘরে কোন গাইড নেই, পুরোটাই সেল্প গাইডেড ট্যুর যা সাধারনত ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা লাগে। কিন্তু যদি আপনার পাকস্থলি সহ্য করতে পারে, তাহলে যতক্ষন ইচ্ছা থাকতে পারেন। আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে, এই জাদুঘরে প্রবেশের কোন বয়সসীমা নেই (কারন সকলকেই মরতে হবে, তাই না?)। তবে শক্তভাবে রেকমেন্ড করা হয়ে যেন দর্শক ’ম্যাচিওরড’ হয়।
নম্বর-২ঃ ভেন্ট হাভেন ভেন্ট্রিলোকুইস্ট মিউজিয়াম (ফোর্ট মিচেল, কেন্টাকি, ইউ.এস.এ.)
ভেন্ট্রিলোকুইস্টের পুতুলের কথা মনে হলেই আমাদের চোখে ভাসে পুরোনো আর মজাদার কিছু কাঠের পুতুলের কথা। কিন্তু ওপরের ছবিটা খেয়াল করে দেখুন। পুতুলগুলো কিন্তু একই সাথে যথেষ্ট আতংকজনকও। মানুষের একটা রেপ্লিকা যেটা কিনা মানুষের মতো কথা বলে, অঙ্গভঙ্গি করে, সেরকম একটা জিনিসের কাছাকাছি থাকাও কিন্তু অস্বস্তিকর।
এবার চিন্তা করুন তো, এরকম শত শত পুতুল বসে আছে চেয়ারে। আর তাদের ভয়ংকর নিষ্প্রাণ দৃষ্টিদিয়ে আপনাকে লক্ষ্য করে চলেছে ক্রমাগত, তাহলে কতক্ষন আপনি আপনারা নার্ভ ঠিক রাখতে পারবেন। প্রকৃতপক্ষে এটাই পৃথিবীর একমাত্র জাদুঘর যেটা কিনা ভেন্ট্রিলোকুইসজমকে উদ্দ্যেশ্য করে বানানো হয়েছে। পুতুলের সংখ্যা প্রায় ৭০০।
নম্বর-৩ঃ মমির জাদুঘর (গুয়ানাজুয়াতো, মেক্সিকো)
নাম শুনেই বুঝতে পারছেন এটা কিসের জাদুঘর। ১১১টা মমিকৃত মানবদেহ সাজানো আছে এখানে-সব ধরনের, সব বয়সের। ভাবছেন, মমি তো সাধারন জিনিস, কতই বা ভয়ংকর হবে। কিন্তু ছবিগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন, এটা আসলে একটা উন্মুক্ত কবরখানা ছাড়া কিছুই নয়। প্রত্যেকের মুখে প্রচন্ড কষ্ট আর আতংকের ছাপ চিরস্থায়ী হয়ে গেছে যা এসেছে জীবন্ত কবর দিলো যে আতংক হয়, তার থেকে।
এই জাদুঘরের ধারনা গড়ে ওঠে ১৮৩৩ সালের কলেরা মহামারী থেকে যার ফলে ওই এলাকার অনেক মানুষ মারা যায়। তখন ওই এলাকার নিয়ম ছিলো যে, মৃত ব্যক্তির আত্মিয়স্বজনদের ট্যাক্স দিতে হতো যেন তাদের প্রিয়জনের লাশ ঠিকমতো দাফক করা অবস্থায় থাকে। যেসব ব্যক্তি পর পর তিন বছর ট্যাক্স দিতে ব্যর্থ হতো, তাদের প্রিয়জনের লাশ কবর থেকে তুলে ফেলা হতো।
তো, তুলে ফেলার পর দেখা গেল, লাশগুলো প্রাকৃতিকভাবেই মমিতে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। তখন কবরস্থাসের কর্তৃপক্ষ সেগুলো সংলগ্ন ভবনে সাজিয়ে রাখা শুরু করল যেন যদি তাদের আত্মীয়রা আবার ট্যাক্স পরিশোধ করে, তাহলে যেন লাশ আবার কবর দেয়া যায়। ক্রমে যখন মমির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেল, তখন সেটাকে এই জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়।
এখানে আছে প্রথম খুঁড়ে তোলা মমি, ডঃ রেমেজিও লিরয়ের লাশ যা তোলা হয় ৯ জুন ১৮৬৫ সালে। এখানে আপনি দেখতে পাবেন মানুষগুলো যে অবস্থায় মারা গেছে, সেই অবস্থাতেই মমি করা হয়েছে। পোষাক আশাক সব আগের মতোই । এখানে আছে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট মমি-একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলার ভ্রুন যে কিনা ওই অবস্থাতেই কলেরায় আক্রান্ত হয়েছিলো। যেহেতু এই মমিগুলো প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়েছে, তাই মিশরের মমির থেকে এগুলো দেখতে অনেকবেশি ভৌতিক।
এটা এখনও পর্যন্ত অজানা যে মাটির কোন বৈশিষ্ট্য লাশকে এরকম মমিতে পরিণত করে। তবে সবচেয়ে চালু বিশ্বাস হলোঃ জীবিত থাকাকালীন পাপের প্রায়শ্চিত্ব করার জন্য সৃষ্টিকর্তা এদেরকে মমি করে ফেলেছেন।
তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:২৬