ডিএনএ-৯৮, কবর ২৪/বি, লেন-১০। এটি একটি পরিচয়। একজন মানুষের পরিচয়। অথচ এক বছর আগেও নাম ছিল। পরিবার, সšøান-স্বজন ছিল। সকালে কাজে বের হওয়ার সময় সšøানটির বায়না ছিল, ফেরার সময় খেলনা নিয়ে আসতে হবে। কাজ শেষে বাজার-সদাই সারতে হবে, বাবার ওষুধ কিনতে হবেÑ এমন অনেক সাধারণ চিšøা তারও ছিল। একদিন মারা যাবেনÑ এটাও ভাবনায় ছিল। মারা গেলে বাবা পাশে কিংবা মায়ের পাশে কবর দিওÑ এমন শেষ ইচ্ছাও ছিল। অথচ মানুষটি এখন শুধুই নম্বর।
তার আর নাম নেই। যাপিত জীবনের গল্পগুলোও মুছে গেছে। শেষ বিদায়টিও হয়েছে অজ্ঞাত হিসেবে। একদিন যাদের অন্য দশটি মানুষের মতো সবকিছুই ছিল, মৃত্যুর এক বছর পর তারা শুধুই অশনাক্ত দেহ। রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন এমন ১০৫ হতভাগ্য। তারা সবাই সাভারে ধসেপড়া রানা প্লাজার ‘হত্যার’ শিকার।
ধ্বংস¯øহৃপ থেকে উদ্ধার হয়েছে ছিল দলিত-মথিত নিধর দেহগুলো। ঘামে ভেজা জীবন রক্তে একাকার। চেনার উপায় নেই। অজ্ঞাত হিসেবে গত বছরের ১১ মে থেকে পরের চারদিনে ৩২২ জনকে দাফন করা হয় জুরাইন কবরস্থানে। দীর্ঘ ডিএনএ পরীায় ২১৭ জনের পরিচয় মিলেছে। ১০৫ জন চিরদিনের জন্য অশনাক্ত হয়ে রইলেন।
সবার কবরে নাম-পরিচয় সংবলিত এপিটাফ ঝুলছে। ব্যতিক্রম এই ১০৫টি কবর। শুধু কতগুলো নম্বর ঝুলছে। তাদের পরিচয় এখন, ডিএনএ-৯৮, কবর ২৪/বি, লেন-১০। এমন আরও ১০৪টি নম্বর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে জুরাইন কবরস্থানে।
এই ১০৫টি কবরের যে কোনো একটি শহিদুলের। তবে কোনটা তা জানেন না তার মা মরিয়ম বেওয়া। এমনিতেই ৭০ বছর পেরিয়ে জীবনের ভারে নহ্যৃব্জ। তার ওপর বুকে এখন সšøান হারানোর ভার। বেদনার ভারে নুইয়ে গেছেন কিশোরগঞ্জে কুলিয়ারচরের এই নারী। ছেলের কবর কোনটা জানেন না। তাই অশনাক্ত কবরগুলোর অনেকগুলোর সামনেই দাঁড়ালেন। দোয়া পড়লেন। অঝোরে কাঁদলেন।
শুধু মরিয়ম বেওয়া নয়, জুরাইন কবরস্থানে বৃহস্পতিবার সকালে এসেছিলেন রানা প্লাজার শিকার অনেক নিহতের পরিবারের সদস্যরা। যাদের হারানো স্বজনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে, তারা নির্দিষ্ট কবরের সামনে দাঁড়িয়ে দোয়া-দরুদ পড়লেন। বিভিšæ সংগঠনের দেওয়া ফুলগুলো কবরের ওপর সযœে দিলেন। যাদের স্বজন এখনও অশনাক্ত, তারা কবরে-কবরে ঘুরে ফিরলেন।
পরিচয় মিলিছে এমন ভাগ্যবানদের একজন কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের শরীফ হোসাইন। তার বড় ভাই এসেছিলেন আদরের ছোট ভাইটার কবরে একটু আতর-গোলাপজল ছিটিয়ে জিয়ারত করতে। কথা বলার আগেই কাšæায় ভেঙে পড়লেন। একটু ধাতস্থ হয়ে বললেন, আমার ভাইয়ের কপাল কিছুটা হলেও ভালো। মরার সাত মাস পরে হলেও জানতে পারছি কোনটা আমার ভাইয়ের কবর। বুড়া মা মাঝে মাঝে কবর পাড়ে দাঁড়িয়ে কাšæাকাটি করে মনটা শাšø করতে পারেন।
যাদের নিহত স্বজনের পরিচয় এখন অশনাক্ত তাদের আসলেই কোনো সাšø¡না নেই। মেয়ে হারানোর শোকে বিহŸল ধামরাইয়ের নিজাম উদ্দিন। মেয়ে নহৃরে হাফসা কাজ করতেন রানা প্লাজার গার্মেন্টে। মেয়ের লাশটা খুঁজে পাননি। শুধু জানেন, জুরাইনের ১০৫টি কবরের যে কোনো একটি।
নিজাম উদ্দিন বললেন, হাঁপানির কষ্টে ভুগছেন অনেকদিন। মেয়েটাই ছিল ভরসা। মেয়ের লাশ খুঁজে না পাওয়ার কোনো সহায়তাও পাননি। এই বৃদ্ধও ৯ নম্বর লেনের ১৬টি কবরের প্রতিটির সামনে দাঁড়িয়ে দোয়া-দরুদ পড়লেন। অশ্র“ চোখে মোনাজাত করলেন, ‘আলাহ যেটাই আমার মাইয়ার গোর হোক, তুমি তারে শাšিø দেও।’ তাকে শাšø দিতে আরেক বৃদ্ধ এগিয়ে এলে, কাšæায় ভেঙে পড়ে বলেন, ‘সবার কবরে নাম আছে, আমার মাইয়ার আছে খালি লম্বর। কোন লম্বরটা আমার মার।’