somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষগুলো সব নম্বর হয়ে গেল

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ডিএনএ-৯৮, কবর ২৪/বি, লেন-১০। এটি একটি পরিচয়। একজন মানুষের পরিচয়। অথচ এক বছর আগেও নাম ছিল। পরিবার, সšøান-স্বজন ছিল। সকালে কাজে বের হওয়ার সময় সšøানটির বায়না ছিল, ফেরার সময় খেলনা নিয়ে আসতে হবে। কাজ শেষে বাজার-সদাই সারতে হবে, বাবার ওষুধ কিনতে হবেÑ এমন অনেক সাধারণ চিšøা তারও ছিল। একদিন মারা যাবেনÑ এটাও ভাবনায় ছিল। মারা গেলে বাবা পাশে কিংবা মায়ের পাশে কবর দিওÑ এমন শেষ ইচ্ছাও ছিল। অথচ মানুষটি এখন শুধুই নম্বর।
তার আর নাম নেই। যাপিত জীবনের গল্পগুলোও মুছে গেছে। শেষ বিদায়টিও হয়েছে অজ্ঞাত হিসেবে। একদিন যাদের অন্য দশটি মানুষের মতো সবকিছুই ছিল, মৃত্যুর এক বছর পর তারা শুধুই অশনাক্ত দেহ। রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন এমন ১০৫ হতভাগ্য। তারা সবাই সাভারে ধসেপড়া রানা প্লাজার ‘হত্যার’ শিকার।
ধ্বংস¯øহৃপ থেকে উদ্ধার হয়েছে ছিল দলিত-মথিত নিধর দেহগুলো। ঘামে ভেজা জীবন রক্তে একাকার। চেনার উপায় নেই। অজ্ঞাত হিসেবে গত বছরের ১১ মে থেকে পরের চারদিনে ৩২২ জনকে দাফন করা হয় জুরাইন কবরস্থানে। দীর্ঘ ডিএনএ পরীায় ২১৭ জনের পরিচয় মিলেছে। ১০৫ জন চিরদিনের জন্য অশনাক্ত হয়ে রইলেন।
সবার কবরে নাম-পরিচয় সংবলিত এপিটাফ ঝুলছে। ব্যতিক্রম এই ১০৫টি কবর। শুধু কতগুলো নম্বর ঝুলছে। তাদের পরিচয় এখন, ডিএনএ-৯৮, কবর ২৪/বি, লেন-১০। এমন আরও ১০৪টি নম্বর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে জুরাইন কবরস্থানে।
এই ১০৫টি কবরের যে কোনো একটি শহিদুলের। তবে কোনটা তা জানেন না তার মা মরিয়ম বেওয়া। এমনিতেই ৭০ বছর পেরিয়ে জীবনের ভারে নহ্যৃব্জ। তার ওপর বুকে এখন সšøান হারানোর ভার। বেদনার ভারে নুইয়ে গেছেন কিশোরগঞ্জে কুলিয়ারচরের এই নারী। ছেলের কবর কোনটা জানেন না। তাই অশনাক্ত কবরগুলোর অনেকগুলোর সামনেই দাঁড়ালেন। দোয়া পড়লেন। অঝোরে কাঁদলেন।
শুধু মরিয়ম বেওয়া নয়, জুরাইন কবরস্থানে বৃহস্পতিবার সকালে এসেছিলেন রানা প্লাজার শিকার অনেক নিহতের পরিবারের সদস্যরা। যাদের হারানো স্বজনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে, তারা নির্দিষ্ট কবরের সামনে দাঁড়িয়ে দোয়া-দরুদ পড়লেন। বিভিšæ সংগঠনের দেওয়া ফুলগুলো কবরের ওপর সযœে দিলেন। যাদের স্বজন এখনও অশনাক্ত, তারা কবরে-কবরে ঘুরে ফিরলেন।
পরিচয় মিলিছে এমন ভাগ্যবানদের একজন কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের শরীফ হোসাইন। তার বড় ভাই এসেছিলেন আদরের ছোট ভাইটার কবরে একটু আতর-গোলাপজল ছিটিয়ে জিয়ারত করতে। কথা বলার আগেই কাšæায় ভেঙে পড়লেন। একটু ধাতস্থ হয়ে বললেন, আমার ভাইয়ের কপাল কিছুটা হলেও ভালো। মরার সাত মাস পরে হলেও জানতে পারছি কোনটা আমার ভাইয়ের কবর। বুড়া মা মাঝে মাঝে কবর পাড়ে দাঁড়িয়ে কাšæাকাটি করে মনটা শাšø করতে পারেন।
যাদের নিহত স্বজনের পরিচয় এখন অশনাক্ত তাদের আসলেই কোনো সাšø¡না নেই। মেয়ে হারানোর শোকে বিহŸল ধামরাইয়ের নিজাম উদ্দিন। মেয়ে নহৃরে হাফসা কাজ করতেন রানা প্লাজার গার্মেন্টে। মেয়ের লাশটা খুঁজে পাননি। শুধু জানেন, জুরাইনের ১০৫টি কবরের যে কোনো একটি।
নিজাম উদ্দিন বললেন, হাঁপানির কষ্টে ভুগছেন অনেকদিন। মেয়েটাই ছিল ভরসা। মেয়ের লাশ খুঁজে না পাওয়ার কোনো সহায়তাও পাননি। এই বৃদ্ধও ৯ নম্বর লেনের ১৬টি কবরের প্রতিটির সামনে দাঁড়িয়ে দোয়া-দরুদ পড়লেন। অশ্র“ চোখে মোনাজাত করলেন, ‘আল­াহ যেটাই আমার মাইয়ার গোর হোক, তুমি তারে শাšিø দেও।’ তাকে শাšø দিতে আরেক বৃদ্ধ এগিয়ে এলে, কাšæায় ভেঙে পড়ে বলেন, ‘সবার কবরে নাম আছে, আমার মাইয়ার আছে খালি লম্বর। কোন লম্বরটা আমার মার।’

২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইরান কি তবে কাগুজে বাঘ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:০৭


সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল-হামাস-হিজবুল্লাহ ত্রিমুখী যুদ্ধে প্রচুর লোক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।২০২২ সালে ফিলিস্তিনের সংগঠন হামাস ইসরায়েলের উপর হামলা করলে এই যুদ্ধ শুরু হয়।এখন পর্যন্ত ইসরায়েল ফিলিস্তিনের প্রায় ৫০... ...বাকিটুকু পড়ুন

অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টা নিয়োগ কারা দেয় ?

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

বৈষম্যবিরোধি আন্দোলনের সফল পরিসমাপ্তির পর আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কেরা ডক্টর ইউনুসকে দেশের ক্ষমতা গ্রহন করার আহবান সেই শহীদ মিনার থেকেই জানিয়েছিল। ডক্টর ইউনুস প্রথমে অরাজি হলেও পরে ছাত্রদের হাজারো অনুরোধের মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমুখী একটি চাওয়া

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:২০


মানুষের মুখে হাসি ফুটুক,
আঁধার মুছে আলোর ছোঁয়া,
ক্লান্তিহীন পথ চলুক,
নতুন স্বপ্ন আনবে জোড়া।

দিনবদলের শপথ নিয়ে,
কাঁধে কাঁধ মিলে কাজ করে যাই,
নদীর স্রোতে ভেসে ভেসে
একটি স্রোতে মিলিয়ে যাই।

সবার তরে সমান বিচার,
ধনীর দুঃখীর,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলার একমাত্র অভিশপ্ত রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ

লিখেছেন জ্যাকেল , ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৫০

২৩শে জুন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব জনাব সিরাজ উদ দৌলা ব্রিটিশদের কাছ হেরে যান কেবলমাত্র মীরজাফর, জগৎশেট, রাজভল্লভ, ঘষেটিদের কারণে। বাংলার ইতিহাসে এই দিনটি একটি অভিশপ্ত দিন। এর পর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের গ্রামের বিয়ের বর দেখা

লিখেছেন প্রামানিক, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:১৩


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

একদিন পরেই শুক্রবার। সকালেই বাবাকে ঐ বাড়ির ঘরবর (অর্থাৎ বর দেখা অনুষ্ঠানকে আঞ্চলিক ভাষায় ঘরবর বলে) উপলক্ষে ডাকা হয়েছে। বাবা সকালে গিয়ে বর দেখা উপলক্ষ্যে কি কি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×