somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রমেলের মৃত্যুঃ এ শুধু তাদের পক্ষেই সম্ভব

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গত কয়েকদিন ধরে বেশ কিছু আবেগপূর্ণ লেখালেখি এবং হৃদয়স্পর্শী পোস্ট দেখে রোমেল চাকমার ব্যপারে আমার প্রচণ্ড কৌতূহল হয়েছে। স্বাভাবিক কারনেই, আমি একটু খোঁজ খবর নেয়ার চেস্টা করলাম, ঘটনাটি নিয়ে। পার্বত্য এলাকার কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী এবং সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে, কৌতূহল নিবারণের অনেক কিছুই স্বল্প সময়েই পাওয়া গেল। তবে বলতেই হবে, যা পেলাম তার জন্য আমি প্রস্তুত না থাকলেও, অবাক হইনি। কারণ, আমাদের দেশে সব সময়ই কিছু লোক ব্যক্তি স্বার্থকেদ্রিক চিন্তা চেতনা থেকে উদ্দেশ্যমূলক প্রচারনায় অংশগ্রহণ করে। রোমেল চাকমার ঘটনাটি তাই ব্যতিক্রমধর্মী কিছু নয়; অন্তত আমার কাছে।
রোমেল চাকমাকে একজন নিরীহ এইচ এস সি পরীক্ষার্থী হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু এটাই কি তার একমাত্র পরিচয়? সত্যিই কি একজন নিরীহ উপজাতীয় ছাত্রকে নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে হত্যা করে তার লাশ সামাজিক এবং ধর্মীয় রীতিনীতির তোয়াক্কা না করে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে দিয়েছে সেনাবাহিনী? এমনকি, যখন রোমেল চাকমার লাশ তার বাড়ী পর্যন্ত নেয়াই হয়নি, তখন দাবি করা হয়েছে যে, ফেসবুকে ছবিতে দেখা যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ অস্রুসজল নয়নে ফুল ছিটিয়ে তাকে বিদায় জানাচ্ছে। যেখানে তার সৎকার করা হয়েছে শুক্রবার দুপুরে, সেখানে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতেই প্রকাশিত এক লেখায় তাকে পেট্রল দিয়ে পুড়িয়ে ফেলার গল্প ফেঁদে পাঠকদের সমবেদনা অর্জনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর প্রতি তীব্র ঘৃণা সৃষ্টির অপচেষ্টা পর্যন্ত করা হয়েছে। এমনকি তাকে পুত্রের মর্যাদা দিয়ে তার উপর অত্যাচারের এমন মিথ্যা এবং অতিরঞ্জিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে যে; স্বাভাবিকভাবেই পুত্রের আসনে বসানোর অনুভুতি ব্যক্ত করাটাও তাই লোক দেখানো এবং বৈষয়িক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বলেই প্রতিভাত হচ্ছে।
পার্বত্য অঞ্চলে চাঁদাবাজির বিষয়টি এখন ইন্টারনেট আর মিডিয়ার বদৌলতে সর্বজনবিদিত। তন্মধ্যে নানিয়ারচর এলাকার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, কারণ রাংগামাটির কাউখালি, কুতুকছড়ি এবং নানিয়ারচর এলাকায় ইউ পি ডি এফের আধিপত্য বেশি এবং তাদের সকল ধরনের কর্মকান্ডের মাত্রাও বেশি। এখানকারই একজন একটিভ ইউ পি ডি এএফ সদস্য এবং পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের নেতা ছিলেন রোমেল চাকমা। স্বাভাবিকভাবেই এলাকার চাঁদাবাজি ও অন্যান্য বেআইনি কার্যকলাপ ও তার নেতৃত্বেই ঘটত। ২৩ জানুয়ারীর মালামাল ভর্তি দুইটি ট্রাক পোড়ানোর ঘটনাটি শুধু একটি উদাহরণ মাত্র। ঐ ঘটনায় অনেকগুলো পরিবারকে সর্বস্বান্ত করার পাশাপাশি শতাধিক ব্যক্তির মোবাইল ছিনিয়ে নেয়া হয়। দীর্ঘ প্রায় ২ মাসের অধিক সময় ধরে তদন্ত করে, নিরাপত্তা বাহিনী এই অপরাধের সুত্র উন্মোচনে সক্ষম হয় এবং তদন্তের বিভিন্ন সুত্র মারফত রোমেল চাকমার নাম উঠে আসে। যেখানে এমন সাফল্যের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর প্রশংসা করা উচিত, তা না করে এখানে অপরাধীকে ধরার দোষে দোষী করা হয়েছে। একজন অপরাধীর অপরাধ আড়াল করার পাশাপাশি, নিরাপত্তা বাহিনীর সাফল্যকে কালিমালিপ্ত করার এমন প্রয়াসের কথা ভেবেই বোধ হয়, উচ্চারিত হয়েছে, “সত্যি সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ !”
ঘটনা এখানেই শেষ নয়, বরং কেবল শুরু ! এপ্রিলের ৫ তারিখে সেনাবাহিনী তাকে গ্রেফতার করে, দেশের আইন মেনে তাকে স্থানীয় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। আর, অপরাধীর অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে, গ্রেফতার করার দিন রাতেই তাকে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে পাঠিয়ে দেয়া হয়। অথচ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন একজন রোগীর জন্য চিৎকার করে দাবি করা হলো, সেনা প্রহরায় চিকিৎসা করা হয়েছে। আমি ভেবে কূল পাইনা, যারা এমন আচরণ করে, তারা দেশের মানুষকে কত বোকা মনে করে ! গলার জোর বেশি থাকলেই কি, যা খুশি তাই বলতে হবে !
চিকিৎসাধীন একজন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর শুরু হলো আরেক ঘৃণ্য পর্যায়। ১৯ এপ্রিল দুপুরের দিকে, রোমেল চাকমাকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরেরদিন ময়না তদন্ত শেষে তার মৃতদেহ তার এক আত্মীয়ের নিকট হস্তান্তর করা হয়। মৃতদেহ নিয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে, রাতে যখন বুড়িঘাটে এসে পৌঁছায়, তখন রাত হয়ে গেছে, এবং প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। সেখান থেকে নৌকায় লেক পার হয়ে, আবার অনেকটা পথ হেটে তারপর বাড়ি পৌঁছাতে হবে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই, সাথে থাকা আত্মীয়রা অন্যদের সাথে পরামর্শ করে রাত টা ওখানেই কাটিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। রাতে সৎকার না করার সংস্কারও এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার আরেকটা কারণ ছিল। অথচ কি অবলীলায় নিঃসঙ্কোচে কিছু লোক মায়া কান্না করলো এই বলে যে, সেনাবাহিনী লাশ ছিনিয়ে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে গেছে। সেনাবাহিনীকে হেয় করার জন্য, কতিপয় ব্যক্তি এবং বিশেষ কিছু গোষ্ঠী সব সময়ই এমন ঘৃণ্য কাজ করে এসেছে। একবারও তাদের মনে হয়নি যে, মানুষ এতো বোকা নয়? একবারও কি তাদের মন বলেনি, মৃতদেহ নিয়ে এমন জঘন্য আর নীচতায় না জড়াতে!
মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতি এই উপমহাদেশে বিরল নয়, আমাদের দেশেতো নয়ই। এই জন্যই কি না, জানি না; পরের দিন যখন তার আত্মীয়দের উপস্থিতিতে ধর্মীয় রীতি-নীতি মেনেই তার সৎকার করা হলো, তখন ও কিছু স্বঘোষিত পিতা এবং আত্মীয়রা কান্না করলেন এই বলে যে, সেনাবাহিনী তার পুত্রের লাশ ছিনিয়ে নিয়ে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। অথচ, সৎকার এর সময় স্থানীয় জন প্রতিনিধি, পুলিশ এবং প্রশাসনের লোকও উপস্থিত ছিল।
বাস্তবের রুঢ়তা কিন্তু আরো নির্মম। প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও যখন প্রশাসন যথাযথ ভাবে সৎকার আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে, ইউ পি ডি এফ এর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তখন স্থানীয় ভান্তেকে ভয় দেখিয়ে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। একবারও বিবেচনা করেনি যে, ভান্তে না থাকলে সৎকার করা যাবে না। তারা ধর্মকে বড় মনে করেনি, বড় মনে করেছে নিজেদের স্বার্থকে। তাদের কাছে, সদ্য পুত্রহারা পিতা-মাতার যথাযথ সৎকার প্রক্রিয়া অনুসরনের একান্ত কামনার তুলনায় সেনাবাহিনীকে ছোট করার রাজনৈতিক স্বার্থকেই বেশি শ্রেয় মনে হয়েছে।
যাদের ঘৃণ্য কার্যকলাপের শিকার পাহাড়ের নিরীহ পাহাড়ী – বাঙ্গালী সকলেই, যাদের মিথ্যাচারের শব্দে আজ কান পাতা দায়, যাদের কেনা গোলামে পরিণত হয়েছে তথাকথিত প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের একাংশ, যাদের ব্যক্তি স্বার্থের কাছে দেশ- ধর্ম তুচ্ছ, এমনকি যাদের মিথ্যাচার হতে একটা মৃতদেহও আজ রক্ষা পেল না; তাদেরকে কথা বলতেও আমার রুচিতে বাঁধে, ঘৃণা হয়। আসুন, আমরা সবাই এইসব লেবাশধারী জানোয়ারদের স্বরূপ উন্মোচন করি।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১২:০২
৮৪০ বার পঠিত
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রানশিপমেন্ট বাতিলের পর বাংলাদেশ কী করতে পারে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:২৩

১.০
আমি তখন সাউথ কেরিয়ার কিউং হি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডাস্ট্রি ও ট্রেড পলিসিতে মাস্টার্স করছি। আমার একটা কোর্সের নাম ছিল থিওরি অ্যান্ড প্রকটিসেস অব গ্লোবাল ট্রেড গভর্নেন্স। কোর্সটি পড়াতেন প্রফেসর Wook Chae... ...বাকিটুকু পড়ুন

সময় থাকতে মনা হুশিয়ার......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪

সময় থাকতে মনা হুশিয়ার......


ফ্যাসিবাদের দুঃশাসনকালে সময়ের চলমান প্রক্রিয়ায়, নাগরিক দ্বায়িত্ব পালনে দেশের প্রয়োজনে রাজপথে আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি। কীবোর্ডকে অস্র বানিয়ে স্বৈরশাসকের হৃদয় ফালাফালা করে দিয়েছি। ফলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এক ঝাঁক শূন্যতা=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৩


আপনজনেরা অপেক্ষার প্রহর গুনে
কার্ডিয়াক হাসপাতালের চেয়ারে বসে,
সব থেকেও যেন কী নেই
এক ঝাঁক শূন্যতা বুকে মানুষগুলো কী উদাস।

কেউ বা সিসিইউতে, কেউ আইসিইউয়ে
হাতে গাঁথা সেলাইনের মালা,
সাদা চাদর গায়ে শুয়ে অপেক্ষায় অনন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

চৈত্র সংক্রান্তি থেকে পহেলা বৈশাখ বহমান আনন্দধারা।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৮


চৈত্র মাসের বাতাসে যে সুগন্ধা হওয়ার দোলন সে ব্যাপারটার প্রশান্তি অনন্য! মাঝ দুপুরের তপ্ততা, নুয়ে আসা বিকেলে আচমকা দুরন্ত দুষ্ট ঝড়, অথবা সন্ধ্যার আজানের ঘরে ফেরার ব্যস্ত ধ্বনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজা, ওসামা, পাকিস্তান, নাজি : বাংলাদেশে মাল্টিভার্স পতাকা বিপ্লব !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:১২


গত একসপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনের গাজাবাসীর উপর ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে সারা বাংলাদেশে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে গেছে। কিন্তু এই প্রতিবাদের মিছিলে এমন সব পতাকা, সিম্বল ও ছবি হাতে প্রতিবাদীরা মিছিল করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×