somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খেলনা নিয়ে যত কথা...

২০ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খেলার জন্য খেলনার প্রয়োজন খুব একটা নেই সব সময়। গোল্লাছুট, কানামাছি কিংবা হা-ডু-ডু খেলে যারা বড় হয়েছেন, তারা খুব ভালো করেই সেটা উপলব্ধি করতে পারেন। খেলনাবিহীন সেইসব রঙচঙে খেলা যারা খেলেছেন, তারাই আবার খেলেছেন পুতুল, রান্না-বাটি, রজ্জুলাফ, ফুটবল, সুপারির খোলের গাড়ি গাড়ি খেলা কিংবা লাটিম। যা দিয়ে খেলা হয়, তাই খেলনা। তাই বলে খেলনা চাকা-গুলতি-লাটিমে আটকে থাকেনি। স্থান-কাল ভেদে খেলনায় এসেছে কত বাহারি পরিবর্তন। এই বাংলা মুল্লুকেও সেই কাপড়, বাঁশ, মাটির খেলনার দিন পুরোদমে শেষ হয়ে না গেলেও, হারিয়ে গেছে অনেক কিছুই। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে খেলনা হয়েছে দিনে দিনে আরও আকর্ষণীয়। নিছক বিনোদনের উদ্দেশ্যকে ছাড়িয়ে খেলনায় যুক্ত হয়েছে অন্যান্য উদ্দেশ্যও। খেলনার এইসব পরিবর্তন নিয়েই আজকের এই সাত-সতেরো।

কারা প্রথম খেলনা তৈরি করেছিল?
ঠিক কারা প্রথম খেলনা তৈরি করেছিল, সেকথা সুনির্দিষ্ট করে বলা একেবারে সহজ নয়। হয়তো আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগে সুমেরীয় সভ্যতার কোনো শিশু তাইগ্রিস আর ইউফ্রেতিস নদীর তীরে খেলতে খেলতে বালিতে গড়েছিল কোনো দেবতার আদল। সেখান থেকে উৎপত্তি হয়েছিল খেলনার ধারণা। খেলার জন্য একটা কিছু লাগবে। কিন্তু খেলনার নিকটতম ইতিহাসও বলে, খ্রিস্টের জন্মের অন্তত ৫০০ থেকে ১০০০ বছর আগেও ইয়ো-ইয়ো’র প্রচলন ছিল। চীনের এবং গ্রিসের শিশুরা কাঠের তৈরি কিংবা টেরাকোটার নকশা অঙ্কিত ইয়ো ইয়ো দিয়ে খেলা করত। সেগুলোর মধ্যে কিছু কিছু ধাতবও ছিল। এগুলোতে বিভিন্ন মন্দির এবং ধর্মীয় প্রতিকৃতি খোদাই করা থাকত। গ্রিসের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব এ্যাথেন্সে প্রাচীন কিছু ইয়ো-ইয়ো’র নমুনা সংরক্ষিত আছে। প্রাচীন ভারতের সম্পদশালী পরিবারের শিশুরা ব্রোঞ্জের এবং মাটির পশুপাখির মূর্তি, বিশেষ করে ঘোড়া এবং হাতির মূর্তি দিয়ে খেলত।

Yo-yo

২০০৪ সালে প্রত্নতাত্ত্বিকরা প্যান্তেলারিয়ার ইতালিয়ান দ্বীপের একটি গ্রামে ৪০০০ বছরের একটি পুরনো মূর্তি খুঁজে পান। মূর্তিটির মাথার দিকটা ধ্বংসপ্রাপ্ত ছিল, কিন্তু ওটার আদল দেখে ধারণা করা হয়েছিল, মূর্তিটি সম্ভবত কোনো খেলনাই হবে। প্রাচীন রোমান সংস্কৃতি এবং সভ্যতার অন্যতম উদাহরণ হলো ‘কাচিনা’ পুতুল, যেগুলো দিয়ে বাচ্চাদের খেলতে দেয়া হত মূলত ধর্মীয় মিথের সঙ্গে যুক্ত থাকার উদ্দেশ্যে। রোমানদের পুরনো কবরখানাগুলো খুঁড়ে এগুলোকে সংরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া গেছে। টরোন্টোর রয়্যাল অন্তারিও মিউজিয়াম এবং ব্রিটিশ মিউজিয়ামে ‘কাচিনা’ পুতুলের নিদর্শন রাখা হয়েছে। এগুলো লিনেন আর প্যাপিরাসের সমন্বয়ে তৈরি। ধারণা করা হয়, এগুলো খ্রিস্টের জন্মের তৃতীয় শতকের দিকের।

কাচিনা পুতুল

আবার, সবচে পুরনো মেকানিক্যাল পাজল তৈরি হয় গ্রিসে, খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকের দিকে। ওহ হো, একটা কথা তো শুরুতেই বলা উচিত ছিল- সবচে’ পুরনো খেলনা মনে করা হয় মার্বেলকে। মিশরের নাগাদায় সুপ্রাচীন কবরখানায় পাওয়া গিয়েছিল পোড়া মাটি আর পাথরের ছোট ছোট মার্বেল।

খেলনার বাণিজ্যিক উৎপাদন এবং পরিবর্তন
খেলনার প্রসারণ সবচে’ বেশি হয়েছিল আঠারো শতকের দিকে। ১৭৬৭ সালে John Spilsbury প্রথম তৈরি করেন ‘জিগস পাজল’। বাচ্চাদের ভূগোল শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে আটটি থিমকে কেন্দ্র করে এই পাজল তৈরি করেছিলেন তিনি। থিমগুলো হলো- the World, Europe, Asia, Africa, America, England and Wales, Ireland and Scotland.

প্রথম জিগস পাজল

মডার্ন জিগস পাজল

ঐ একই সময়ে ইংল্যান্ডে আসল ‘রকিং হর্স’ নামক খেলনা। কিন্তু এগুলো সীমাবদ্ধ ছিল কেবল ধনীদের মধ্যে। তার আগে ইংল্যান্ডে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল কাঠের পুতুল। উনিশ থেকে বিশ শতকের দিকে প্লাস্টিক খেলনার আবির্ভাবের ফলে খেলনা জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য হয়ে ওঠে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে। এরপর শিল্পায়নের প্রসারণের ফলে বাজারে আসতে থাকে মটর কার, টয় ট্রেন, টেডি বিয়ার, করোনেশন কোচ, বার্বি ডল-এর মতো খেলনাগুলো। টেডি বিয়ার, বার্বি ডল- এগুলো তো প্রবল পরাক্রমে এখনো পৃথিবী শাসন করে যাচ্ছে। ১৯৫২ সালে টেলিভিশনে প্রথম প্রচারিত হয় খেলনার বিজ্ঞাপন। সেই প্লাস্টিক খেলনাটির নাম ছিল- ‘Mr. Potato Head’, তৈরি করেছিলেন নিউইয়র্কের জর্জ লার্নার।

Mr. Potato Head

এখন, টেডি বিয়ার সম্পর্কে একটি মজার তথ্য যোগ করা যেতে পারে। গল্প আছে, টেডি বিয়ারের নাম ‘টেডি’ হয়েছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের কারণে। খেলনা একটি ভালুককে শুট করতে বলা হলে রুজভেল্ট সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁর কাছে মনে হয়েছিল, ভালুকটি ঠিক খেলনার মতো নয়। এই ঘটনা নিয়ে পত্র-পত্রিকায় রম্য কার্টুনও ছাপা হয়েছিল। সেই থেকে ঐ খেলনার নাম হয়ে গিয়েছিল- ‘টেডি বিয়ার’। কেননা- প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের ডাক নাম ছিল ‘টেডি’।

খেলনার ধরণ এবং শিক্ষামূলক খেলনা
সারা পৃথিবীতে যে পরিমাণ এবং যত ধরণের খেলনা উৎপাদিত হয়, সব হিসেব-নিকেশ করে খেলনাকে মোটামুটিভাবে ২৬টি ক্যাটাগরিতে ফেলা যায়। খেলনার বিবর্তন এবং যুগোপযোগী চাহিদার ধারায় খেলনার বাজারের একটা বড় অংশে আধিপত্য বিস্তার করেছে ‘Educational toys’ বা শিক্ষামূলক খেলনা।
দাবা, কার্ড, ডাইস, ব্যাকগ্যামন- এগুলো সবই শিক্ষামূলক খেলনা এবং পুরনো খেলনা। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই খেলা হত, এখনো হয়। সেই দিক থেকে বিচার করলে এগুলো একই সাথে পুরনো এবং আধুনিক। কিন্তু, শিক্ষামূলক খেলনার সবচে’ উদ্ভাবনী সংস্করণ হলো বিজ্ঞানভিত্তিক খেলনাগুলো। বিংশ শতকে শিশুদের মধ্যে তুমুল সাড়া ফেলেছিল তখনকার সায়েন্স কিটগুলো। ১৯১১ সালে আলফ্রেড কার্লটন গিলবার্ট একটি রেল কনস্ট্রাকশন প্রজেক্ট দেখে দারুণ অভিভূত হন এবং তৈরি করেন ‘ইরেক্টর সেট’ নামের একটি সায়েন্স কিট। ১৯১৩ সালে সেটা প্রথম বাজারজাত করা হয়। এরপর একে একে আসে, ‘Current Contenders’, Digi-Comp, Gilbert U-238 Atomic Energy Lab, Gilbert Lab Technician Set for Girls, Chemcraft – এর মতো দারুণ দারুণ সব সায়েন্স কিট। এগুলো তখন এতই জনপ্রিয় হয়েছিল যে, বাচ্চারা ক্রিসমাস উৎসবের উপহার হিসেবে এগুলোই প্রত্যাশা করত।
আর এখন, এই ২০১৮ সাল পর্যন্ত সেটা এগিয়ে গেছে আরও বহুদূর। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই এই ক্ষেত্রে। বাংলাদেশে অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স নামের একটি সায়েন্স কিট ছয়টি প্রজেক্ট নিয়ে এসেছে এর মধ্যেই।

অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স
বাচ্চারা খেলতে খেলতে পেয়ে যাচ্ছে আলোর প্রতিসরণ-প্রতিফলন, পোলার-অপোলার যৌগ, চুম্বকের আকর্ষণী-বিকর্ষণী ধর্ম, সিরিজ ও প্যারালাল বর্তনী, মাপজোখ আর শব্দ-সংক্রান্ত মৌলিক জ্ঞান। এভাবে, বাংলাদেশও বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতোই নতুন নতুন রূপ নিয়ে খেলনা-শিল্পে হাজির হচ্ছে। পরিবর্তন শুরু হয়ে গেছে!






সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১:৫১
৩৭৫ বার পঠিত
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভারতীয় পতাকার অবমাননা

লিখেছেন সরলপাঠ, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ ভোর ৪:৪৩

বাংলাদেশের ২/১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় পতাকার অবমাননা আমার কাছে ছেলেমী মনে হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করার কারণে বাংলাদেশের মানুষের মনে প্রচন্ড রকমের ভারত বিদ্বেষ তৈরি হয়েছে।

কিন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভিসা বন্ধ করায় ভারতকে ধন্যবাদ।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩



ভারত ইদানীং ভিসা দিচ্ছেনা; তারা ভিসা না দিয়ে আমাদেরকে শিক্ষা দিতে চায়! তাদের করদ রাজ্য হাতছাড় হওয়া খুবই নাখোশ, এতোই নাখোশ যে মোদী মিডিয়া দিনরাত বয়ান দিচ্ছে এই দেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতের চিকিৎসা বয়কট এবং

লিখেছেন পবন সরকার, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫৬


ভারতের এক হাসপাতাল ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশের কোন রুগিকে তারা চিকিৎসা দিবে না। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যে হাসপাতাল থেকে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার জন্য বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। চামচা পুঁজিবাদ থেকে চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছিল দেশ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:১৩






চামচা পুঁজিবাদ থেকে দেশ চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা মিলে চোরতন্ত্র করেছে।

সোমবার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনাকে ভারত ফেরত পাঠাবে তবে............

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪২


শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে বিচারের জন্য ভারতের কাছে ফেরত চাইতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশকে প্রতিহিংসামূলক বিচারপদ্ধতি বাদ দিতে হবে। বিচারে শেখ হাসিনা যাতে ন্যায় বিচার পান বাংলাদেশকে আগে তা নিশ্চয়তা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×