আজও মনে পড়ে সেই গ্লাসভাঙা মুড়ির টিনমার্কা রাবির বাসে করে ক্যাম্পাসে যাওয়ার দিনগুলো। গাড়ির ড্রাইভার মামাকে আমরা পাইলট মামা বলতাম, সেই মুড়ির টিন মার্কা বাসে উঠতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করতাম। বিশাল ক্যাম্পাসে কত্ত ভাল লাগা,কত্ত বন্ধু।ক্লাশ শেষ মানেই আড্ডাবাজি, সেই স্টেডিয়ামের পাশে সিলসিলা রেস্তোরা কিংবা ক্যাফেটেরিয়ায় বসে চা সিংগাড়ার সাথে আড্ডাবাজি। কখনোবা বাবলা তলায় ঘাসের উপর বসে সবাই মিলে কোন জনপ্রিয় গানে গলা মেলানো। এ যেনো আমাদেরই রাজ্য এখানে সবাই আমরা এক একজন রাজা।
সেই জিয়া হলের কথা আজ সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে। হলের ডাইনিং এর ম্যানেজারের কাছে ১০ টাকা দিলে একটা কেরামবোর্ডের গুটির ন্যায় টিকিট পাওয়া যেতো, সেই টিকিট দিলেই পাওয়া যেতো একটা তরকারির বাটি। সাথে ভাত এবং ডাল ইচ্ছামত। পৃথিবীর সবচেয়ে সস্তা এবং নিন্মমানের খাবার বোধহয় এটাই। কিন্তু তখন ঐ খাবার খুব বেশি খারাপ লাগতো না। মিরাজ নামের এক ডাইনিং কর্মচারীর মামা সাথে খুব ভাব ছিল আমার, যেতে দেরি হলেও আমার জন্য খাবার রেখে দিতো।
বিকেলের রাবি সত্যি অসাধারণ, কেউবা বন্ধুদের নিয়ে লাইব্রেরীর পাশে গ্রুপ স্টাডিতে ব্যস্ত আবার কেউবা রাকসু ভবনে গান নাটক, কবিতা আবৃতির মহড়ায় ব্যস্ত। কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে চলতো সাংস্কৃতিক অনুষ্টান,ওদিকে স্টেডিয়াম কিংবা জিয়া হলের মাঠে চলতো ক্রিকেট খেলা। অনেকেই পশ্চিম পাড়ায়(মেয়েদের হলের সামনে) গার্ল ফ্রেন্ড কিংবা মেয়ে বন্ধুদের সাথে খোশ গল্পে ব্যস্ত থাকতো এসময়।
এরপর সন্ধ্যা নামলে মেয়েরা হলে ফিরে যেতো, কারণ সন্ধ্যার পরে মেয়েদের বাইরে থাকা নিষেধ ছিল। আমরা ওদের ক্ষাপাতাম
'বেলা গেল হাস মুরগি ঘরে তোল '
এরপর ফিরে আসা হলের দিকে, নিজের হলের সামনে অথবা বন্ধুদের হলের সামনে আবার জম্পেশ আড্ডা। আর পড়াশুনা?ওটা রাত
এগারোটার পর। এবাবেই কেটে যেতো রাবির দিনগুলো।
রাবিকে নিয়ে লিখতে হাজার হাজার পৃষ্টা শেষ হবে। ইদানীং পত্রিকার পাতায় যখন দেখি রাবির সাধারণ ছাত্রদের উপর কিছু ছাত্রনামধারী গুন্ডা হাতুড়ি নিয়ে হামলা চালায়,শিক্ষকরাও রেহায় পায় না এদের হাত থেকে। আমাদের সময়ও ধর্মীয় লেবাসে এসব গুন্ডারা ছাত্রদের রগ কাটতো আজ সরকারি লেবাসে ওরা একই কাজ করছে। সত্যি রাবির এসব খারাপ খবর দেখলে মন খারাপ হয়ে যায়।
আজ রাবির শুভ জন্মদিন, ভাল থেকো আমার প্রাণের রাবি।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার রাবি
প্যারিস রোড
রাবির প্রবেশ পথ
গোল্ডেন জুবিলী টাওয়ার, যেটি নির্মাণের সময় শিল্পি মৃণাল হকের পাশে দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে দেখেছিলাম
সেই মুড়ির টিনমার্কা বাসগুলি
রাবির ভিতর দিয়ে যাওয়া রেললাইন
চারুকলার ছাত্রদের তৈরি ভাষ্কর্য
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:১৯