somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'দ্য নোটবুক'- একটি নিকলাস স্পার্কস মাস্টারক্লাস ~একজন পাঠকের মূল্যায়ন

২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এটা আসলে কিছুদিন আগেই লেখা উচিৎ ছিল । ব্যক্তিগত কিছু কাজের জন্য লেখা হয়ে উঠেনি । আমি আসলে রোম্যান্টিক উপন্যাস খুব পছন্দ করি না, পড়াও হয় না খুব বেশি । তবে নিকলাসের কোনো বই সহজে ছাড়িনা । সে অর্থে উনি আমার সবচেয়ে পছন্দের রোম্যান্টিক বইয়ের লেখক । তাই এই মূল্যায়নে আমার ব্যক্তিগত আবেগ কাজ করবে স্বাভাবিক । তবে আমি চেষ্টা করেছি সেসবের পাশ কাটিয়ে লেখার ।

নিকলাস স্পার্কস(Nicholas Sparks) এর অন্য কোন শাখার বই পড়ার সুযোগ হয় নি আমার । উনার রোম্যান্টিক বইগুলোই শুধু পড়া হয়েছে । যাক সে কথা । বইয়ের মূল্যায়নে চলে আসি । বইটি বিভিন্ন শাখায় ভাগ করে লেখা হয়েছে । প্রতিটি শাখার আলাদা নাম আছে । আমি এই ধরণটা পছন্দ না করলেও এই বইয়ে তা ব্যতিক্রম মনে হয়েছে । এক্ষেত্রে এটি বইটির সহজবোধ্যতা বাড়িয়েছে ।

প্রথমেই আসি গল্পে । বরাবরের মতই নিকলাস তার গল্পে যুক্তির চেয়ে আবেগকে গুরুত্ব দিয়েছেন । এমনকি এই বইয়ের প্রথম অধ্যায়ের নাম 'মিরাকল' বা 'Miracle' । এতে অবশ্য অবাক হইনি আমি । উনার বেশিরভাগ রোম্যান্টিক গল্পে এই উপাদান থাকবেই । পরিমাণটাও বেশ উলেখযোগ্য । নোয়াহ স্মৃতি শক্তি হারানো অ্যালিকে গল্প বলে । অ্যালি এমনকি তার নিজের নামও ভুলে যায় । তাই প্রতিদিন নোয়াহ অ্যালিকে সেই একই গল্প বলে ।

গল্পের দুই প্রধান চরিত্র নোয়াহ এবং অ্যালি । গল্পটি শুরুও হয়েছে গল্প বলার ছলেই । লেখক নোয়াহ হয়ে গল্পটি বলতে শুরু করেন । তিনি এটাও বলেছেন কেউ কেউ এটাকে 'লাভ স্টোরি' বলবে আবার কেউ কেউ বলবে 'ট্র্যাজেডি', এটাকে তিনি অবশ্য 'মিরাকল' বলতে চেয়েছেন । নোয়াহ শহরে থাকে না । অ্যালি শহরের বাসিন্দা । অ্যালি আর তার পরিবারের সবাই গ্রীষ্মের ছুটিতে নোয়াহদের এলাকায় ঘুরতে আসে । সেই গ্রামেই তাদের পরিচয় । নোয়াহর কোন উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই । জীবন তার কাছে উপভোগের । সে প্রথম জীবনেই মা হারায় । তবে তার বাবার কাছ থেকে সে অনেক কিছু শিখে । কবিতা আবৃত্তি তাদের মধ্যে একটা । বিভিন্ন রোম্যান্টিক লেখকের উদ্ধৃতি দিতে পারে সে অনায়াসেই । সেই গ্রীষ্মেই তাদের দেখা ও অ্যালি তার জীবনে প্রথম সত্যিকার আনন্দ পায় । তারা একে অপরের প্রেমেও পড়ে যায় । তাদের মধ্যকার শারীরিক সম্পর্কের বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখক পারদর্শিতার পরিচয় রেখেছেন ।

কিন্তু অ্যালির বাবা মা এটা সহজে মেনে নেয় না । একটা অজানা জায়গায় তাদের মেয়ে রাত একটা পর্যন্ত বাইরে থাকবে এটা তারা মানতে পারে না । নোয়াহ অ্যালির বাসায় গিয়ে একরকম অপদস্থ হয় । বিশেষ করে অ্যালির মা এটা মেনে নিতে পারে না । এটাই তাদের কাল হয়ে দাড়ায় । ছুটি শেষে অ্যালিকে শহরে যেতে হয় । বিভিন্নভাবে নোয়াহ চেষ্টা করলেও যোগাযোগ রাখতে ব্যর্থ হয় ।

এই সময়ে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে নোয়াহ যায় । সেখানে তার একজন ভালো বন্ধুকে হারায় । অ্যালির কাছ থেকে কোন উত্তর না পেলেও মিরাকলে বিশ্বাসী নোয়াহ আশা ছেড়ে দেয় না । তবে তার মানসিক এবং শারীরিক চাহিদা সে বিভিন্নভাবে মেটায় । পরের বার যখন তাদের দেখা হয় তখন অ্যালি একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলের সাথে বিয়ে করার দ্বারপ্রান্তে ।

কিন্তু নোয়াহর সাথে একটি বাড়ির বিজ্ঞাপন দেখে দেখা করতে আসে অ্যালি । এটা সেই বাড়ি যেখানে তাদের প্রথম মিলন হয় । সেটা ছিল নোয়াহর স্বপ্ন । নোয়াহর স্বপ্নের বাড়ি দেখতে এসে অ্যালি বুঝতে পারে সে আসলে এখনো নোয়াহ কে ভালবাসে । পরে জানতে পারে অ্যালির মা তাকে নোয়াহর চিঠি দেয় নি । এভাবেই কাহিনি গড়ায় ।

তবে গল্পের সেরা আকর্ষণ এই কাহিনি নয় । সেরা আকর্ষণ এই প্রেমের প্রতি নোয়াহর আত্মনিবেদন । অ্যালি অ্যালঝেইমার রগে আক্রান্ত হয়ে সব ভুলে যায় । তবুও নোয়াহ তাকে ছেড়ে যায় না । প্রতিদিন তাকে এই গল্পটা পড়ে শুনায় । কিছুক্ষণের জন্য অ্যালি হয়ত সব মনে করতে পারবে এই আশায় । এই অংশটুকুই হৃদয়গ্রাহী ।

এখানে কবিতাগুলো ব্যবহার হয়েছে যথার্থ । লেখকের ভাষা এতটাই সহজবোধ্য যে আমার মত বাংলা মিডিয়ামের ছেলেকেও অভিধান ব্যবহার করতে হয়নি । লেখার হাত অত্যন্ত ভালো । কয়েকটি পত্রিকার উদ্ধৃতি দিচ্ছি ঃ

"They don't come better than this... An irrestible will-they-won't-they read that will reel you in" ~ 'Glamour'

"A one-night read... Sparks generates authentic emotional power.. If you are in need of good cry, 'The Notebook' is absolutely the right book" ~ 'USA Today'

"Masterful storytelling" ~ 'C:hoice'

"very moving" ~ 'Closer'

এই মন্তব্যগুলোতে এতটুকু বাড়িয়ে বলা হয় নি । লেখকের লেখার ভঙ্গি এতটাই ভালো যে যে কেউ এই বই পড়ে আনন্দ পাবে । এই গল্পের আর একটা সেরা দিক হচ্ছে প্রকিতির বর্ণনা । এত ভালো বর্ণনা আমি খুব বেশি ইংরেজি বইয়ে পাই নি । লেখক আমাদের চিন্তা করতে পারায় । তার লেখা পড়ার সময় মনে হয় আমি নিজেই দেখছি । এটা খুব বেশি লেখক পারে না ।
কবিতাগুলো খুবই হৃদয়স্পর্শী । একটা দিলাম ঃ
"Love, in these last and tender hours
is sensitive and very pure
Come morning light with soft-lit powers
to awaken love that's ever sure."

প্রতিটি ঘটনার সময় একটা করে চিঠি দেখান হয়েছে । এই চিঠিগুলো নোয়াহ অ্যালিকে লিখে পাঠিয়ে ছিল । সত্যি কথা বলতে এই প্রথম আমি চিঠি না লেখার আফসোস করতে বাধ্য হয়েছি । চিঠিগুলো অনেক আবেগ বহন করতে পারে । যেটা আজকালকার আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যম পারে না । শেষে যখন ঘুম থেকে উঠে অ্যালি নোয়াহকে চিনতে পারে তখন মনে হবে আপনি নিজেই জিতে গেছেন । এতটা খুশি হবেন । এই গল্পের নোয়াহ আমাদের দেখিয়ে দেয় কি করে ভালবাসতে হয়, ভালবাসা ধরে রাখতে হয়, ভালবাসা আদায় করে নিতে হয় । নিঃস্বার্থ ভালবাসা আজকাল কোথায় পাবেন বলুন?

বইটার প্রচ্ছদ ভালো । যদিও এখনকারগুলোতে মুভির পোস্টার দিয়ে দেয়া হয়েছে । তার পরও খুব খারাপ লাগে নি । বুইয়ের পাতা গুলো মানসম্পন্ন । । অনেক দিন পর আমার মনে হয়েছে আমাদের নিজেদের বইগুল সংরক্ষণের উপযোগী করতে হবে । বইটা পড়তে পারেন । ভালবাসায় বিশ্বাস করতে সেখাবে এই বই । লেখকের ভক্ত হয়ে যাবেন নিঃসন্দেহে । বই পড়ার মজাটা মুভি দেখে পাবেন না এটা লিখে দিতে পারি ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৮
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×