এনোশিমা-র গুগল ভিউ
সকাল আটটা সতের-র ট্রেনে চেপে ফুজিসাওয়া পৌঁছালাম দু'ঘন্টা পর। এখান থেকে ইলেক্ট্রিক ট্রেন (ট্রাম) এ চড়ে কামাকুরা যাব। ব্যস্ত টোকিওর পেটের ভেতর ট্রামে চড়ার কল্পনাই করা যায়না। সরু রাস্তা ধরে, বাড়িগুলোর প্রায় উঠোনঘেঁষে ট্রেন দুলকি তালে চলছিলো। সবাই এহেন যানে চড়তে পেরে ফুল ভল্যুমে আহা উহু করতে থাকলো। মনে হচ্ছিলো দু'ঘন্টার এক ধাক্কায় শতবছরের পুরনো জাপানে কেউ ফেলে এনেছে আমাদের।
কামাকুরা যাওয়ার পথে

ট্রেনের ভিতর থেকে প্রশান্ত দর্শন

বীচ ধরে শিকড় গেড়েছে ট্রেন লাইন। ডানে উত্তাল প্রশান্ত-কে রেখে বাঁয়ের জঙ্গলের স্পর্শ থেকে কোনমতে গা বাঁচিয়ে ট্রেন পৌঁছে গেল কামাকুরা স্টেশন। ১১৯২ সালে মিনামতো ইউরিতোমো-র সামরিক সরকারের প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠালাভের পর থেকেই এ শহরের গুরুত্ব বাড়তে থাকে। চতুর্দশ শতকে কামাকুরা সরকারের পতন হলেও অসংখ্য Temple, Shrine থাকার কারণে ইতিহাসের সাথে যুক্ত হয়ে গেছে এ শহরটি।
মধ্যদুপুর, চর্বিগলানো রোদ। প্রতিকূল আবহাওয়ায় কে যে ঘোরার চিন্তা মাথায় আনছিলো



এরপরেই ঝর্ণার পবিত্র পানি পান করার একটা ব্যাপার সেপার থাকে। আমরা মহানন্দে সেই পবিত্র পানি দিয়া মাথা, মুখ, পা ধোয়া শুরু করলাম

ধর্মীয় নৃত্য বা গীতিনাট্যের মঞ্চ

একজায়গায় দেখি গুটুগুটু মুখোশ বিক্রি করতেছে

পাশাপাশি আরো কয়েকটা ছিল, কিন্তু এক Shrine দেখেই আমরা ইস্তফা দিলাম। Mac এ আইসা লাঞ্চ সেরে পরবর্তী স্পট কামাকুরা বীচের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম আবার ট্রামে চেপে। বীচে নাইমাই অভিযাত্রী দল পড়িমড়ি করে ছুটলো পানির দিকে।

দাপাদাপি করতে করতে প্রায় সাড়ে তিনটা বাজায়া দিলাম। এনোশিমা দ্বীপে তখনো যাওয়াই হয়নাই। এনাম ভাই, সাদেক ভাইর জসিলা সাঁতরানি দেইখা উতসাহের চোটে সুমন ভাই ২৫ ডলার দিয়া দোকান থিকা শর্টস কিনা নামলো পানিতে। শখের দাম লাখ টেকা। এইখানে শেষ হইলে ভালোই হইত। বেচারারা সাগর থাইকা পারে আইসা একটা গণশাওয়ারে ঢুকছে পরিষ্কার হইতে। এক মহিলা ক্যাঁক কইরা ধরলো, আটশ ইয়েন লাগব। আমরা বাইর থিকা বেচারাগো এই দুরবস্থা দেখে গড়াগড়ি



আবারো ট্রামে চেপে হাসে স্টেশনে নামলাম। জায়গার নাম হাসে হলেও বিকালের পড়ন্ত রোদ্দুরে আমাদের কানতে বাকি। স্টেশনের বাইরেই জিন-রিকশা বা মানুষটানা রিকশা রাখা। চড়া দামে ট্যুরিস্টরা ঘুইরা বেড়াইতেছে। এইখানে ব্যবসার একটা ভালো সম্ভাবনা পায়া সুমন ভাই ঝলসায়া উঠল। তার নাকি আবার রিকশা চালনার অভিজ্ঞতা আছে।

যাই হোক, গন্তব্য Great Buddha। গৌতম বুদ্ধের বিশালকায় ব্রোঞ্জের মূর্তি। ১৩.৩৫ মিটার উচ্চতার এই মূর্তিটি জাপানের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৌদ্ধমূর্তি। ১২৫২ সালে এটিকে মূলত Temple এর অভ্যন্তরে স্থাপন করা হলেও পনের শতকের সুনামির কারণে জোয়ারের পানিতে এর বেষ্টনি ভেঙ্গে পড়ে। তখন থেকেই এটি ভক্তদের জন্য উন্মুক্ত স্থানে বসানো আছে।

এদের খালি ব্যবসা। মূর্তির পেটে ঢোকা যাবে, সেখানেও টিকেটের লম্বা লাইন। দেখলেও পস্তামু, না দেখলেও পস্তামু এই ভেবে আমরা সোৎসাহে ঢুকলাম। ১০ সেকেণ্ড থেকে গরমে ছিটকে বের হয়ে আসলাম।
আর দেরি করা যায়না, ছুটলাম এনোশিমার উদ্দেশে। ব্রিজ পার হয়ে দ্বীপের মুখে জড়ো হয়ে হেঁটে পুরা এলাকাটা ঘোরার সিদ্ধান্ত হল।
দ্বীপের শুরুতে

সাগরের হু হু বাতাস আর ঊষার প্রস্তুতি, চমৎকার আবহাওয়াতে আমাদের সারাদিনের ক্লান্তি অলক্লিয়ার হয়ে গেছে। সবচে' ভাল্লগছে লাইটহাউজ থেকে পুরা দ্বীপ আর প্রশান্তের শান্ত সৌম্য রূপটা দেখতে।
লাইটহাউজ

লাইটহাউজের চান্দি থেকে তোলা দ্বীপে ঢোকার পথের ছবি

প্রাকসান্ধ্য এ মুহূর্তগুলি বর্ণনায় আনা সম্ভব নয়, শুধুই অনুভবে মেখে নিলাম।


সাগরের নোনা ভালোবাসা বাক্সবন্দী করে সবাই আবারো রেলে চাপলাম ফিরতি পথে। সোয়া তেরটা মনের একদিন বেমক্কা পুরে নিল মহাসাগরের বখাটে ঢেউ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০০৮ বিকাল ৪:১২