somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস অর্থাৎ কি না ওখানেই খতম কিন্তু আসলে ওটা খতম না , নতুন শুরুর অশনি সংকেত । স্যারের ক্লাশে বসে থাকতে থাকতে হাতে পায়ে ঝিম ধরে যায় । অপেক্ষায় থাকি কখন তিনি লম্বা শুর তুলে বলবে বুজছো ও ও ও । আজকে সম্ভাবত স্যার তার জীবনের আখেরি ক্লাশ নিয়ে নিচ্ছেন শেষ করতেই চাচ্ছেন না ।মোবাইল টা পকেটেই আছে , ক্ষীণ আশা যদি সেই কিন্নরি আর একবার ফোন দিয়ে বলেন কি ব্যাপার মিস কল দিচ্ছেন না কেনো । বলতেই পারে, জগতে কতো কিছুই না হয়, শোনা কথা লম্বা মানুষ বয়স হলে ঝুকে ছোট হয়ে যায় অথচ হিমালয়ের কতো বয়স হলো ঝুকে ছোট হবার পরিবর্তে তিন ফুট বেশি লম্বা হয়ে গেছে । কিছুক্ষন পর পর পকেটে হাত বোলাচ্ছি । কিন্তু জগতের কতো কিছু হবার মতো আমার জন্য কিছুই হচ্ছে না । সারাদিন কেটে গেলো, অভদ্র মোবাইল একবারো বেজে উঠলো না অথচো দোকানে রাস্তায় পার্কে বাগানে কেউ না কেউ মোবাইল হাতে পৃথিবীর সকল সুখের একক মালিকানা নিয়ে হাত পা দুলিয়ে ঘাড় নাড়িয়ে চোখ নাচিয়ে শরীর দুলিয়ে অনর্গল কথা বলেই যাচ্ছে অথচ আমি পকেটে আস্ত একটা মোবাইল নিয়ে নির্বাক ভবকান্ত কুমার হয়ে বসে আছি ।

অপেক্ষার প্রহর লম্বা হতে হতে পুলিশের হাতের থেকেও লম্বা হয়ে যাচ্ছে কিন্তু হাতে কিছুই ধরা পরছে না । আশা একদম ছেড়েই দিয়েছি। অমন মিষ্টি ঝর্নার মতো কন্ঠ যার সে কি আর আমাকে মনে রাখবে? না রাখার সম্ভাবনাই বেশি । মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকাতে তাকাতে মোবাইলটা কে এখন অসহ্য লাগা শুরু করেছে । গরম আর মিষ্টি কণ্ঠি দুইজনি আমার ধৈর্যের পরিক্ষা নিতে লাগলো । আমি ও পন করলাম, বিনা যুদ্ধ নাহি দেব সুতাগ্র মেদিনী । আমি কল করে ফেললাম । লম্বা টানে টু টু বেজেই যাচ্ছে , ধরার নাম গন্ধ নাই । এমন কেনো, কল আসলে ধরবে , দুইটা বকা ঝকা দেবে , কেনো কল করলাম , এতো বড় সাহস আমার কি করে হলো বা বামন হয়ে আকাশের চাঁদের দিকে নজর কি করে দিলাম , চোখে এতো পাওয়ার আসলো কই থেকে ইত্যাদি । তা না মোবাইল বেজে বেজে নিজেই চুপ হয়ে গেলো । ধুর ভাল লাগে না । তিন দিন ধরে ফোন টা পকেটে নিয়ে ঘুড়তে ঘুড়তে ওটা এখন বোঝার মতন লাগছে । ফোন টা বিছানায় ফেলে রেখে চিলে কোঠার বাহিরে গিয়ে দাড়ালাম । তিব্র গরমে জান যায়া যায় । বুক চিড়ে চাপা নিঃশ্বাস এসে ফুরুত করে বেড়িয়ে গেলো ।

চতুর্থ দিন, কোন ফোন এলো না । খেয়াল করলাম , আমার কেমন কান্না পাচ্ছে । বুকের ভেতর চাপা কষ্ট মাঝে মাঝেই নিঃশ্বাসের সাথে ফোপানোর মতো করে বেড়িয়ে আসছে । আচ্ছা একটা মানুষ চাচ্ছে যেন অন্য মানুষ টা তাকে মনে করুক কিন্তু সেই মানুষ টা কেনো চাচ্ছে না মনে করতে । এটা কেমন কথা । এই মানুষটার চাওয়ার কি কোন দাম নাই । চিলে কোঠার টিনের ছাদের বলা নেই কওয়া নেই বড় বড় ফোটার বৃষ্টী এসে পরতে লাগলো সেই সাথে উড়িয়ে নেয়া বাতাস । গরমে গা ঘেমে স্যাঁত স্যাঁতে হয়ে গেছিলো। বৃষ্টী রফোটা পরতেই দৌড়ে ছাদে চলে এলাম । আহ বৃষ্টী, কি যে মিষ্টি ।দু হাত ছড়িয়ে বৃষ্টী টা সারা শরীরে মেখে নেবার সব চেষ্টা করলাম ।বাড়ির আশে পাশের ছাদেও হৈ হুল্লর পরে গেছে বৃষ্টীতে ভেজার । কি যে এক আনন্দ । হুট করে এসে হুট করে বৃষ্টী গায়েব । যাহ, বাবা, এ আবার কেমন তরা । আধা কাক ভেজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম । আবার যদি বৃষ্টী আসে । হঠাৎ কানে ধরা পরলো টিং টিং মোবাইলের মৃদু শব্দ । ছুটে গিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখি সেই কল, যে কলের অপেক্ষায় আমি এক পায়া কানি বক হয়ে তপস্যায় ছিলাম । কাঁপা হাতে রিসিভ করলাম ।

এই লোক, শয়তান, পাজী, বেহায়া, অসভ্য , বারণ করেছিলাম না আমাকে কল করতে, কল করলেন কেনো ? ও পাশ থেকে মাটিতে পরে কাচের প্রিচ ভেঙ্গে যাওয়ার মতো করে ঝনঝনিয়ে উঠলো । আমি থতমতো খেয়ে ফোন টা কেটে দিলাম । কি জানি কি বলতে আবার কি বলে ফেলি, না বাবা মাফ চাই দোয়া চাই । ফোন আবার বেজে উঠলো ।এইবার কিছুটা সাহস ধার করে রিসিভ করলাম ।
আপনার সাহস তো কম না, আমার মুখের উপর কল কেটে দেন , একে তো আমাকে ফোন করে বিরক্ত করছেন তার উপর আবার আমার মুখের উপক কল কেটে দিচ্ছেন । স্টুপিট, মাংকি হেড, গর্ধভের নানা ।
আমি কি একটূ কথা বলতে পারি, কাচুমাচু হয়ে বললাম ।
কি ! কি! বলবেন টা কি আপনি , এই তো বলবেন, আপনি কল দেন নাই, আপনার ভুত কল করেছে ।
জ্বী না কল আমি দিয়েছি ।
কেনো দিয়েছেন , রাগী কঠর গলায় বললো
জানেন আজ অনেক বৃষ্টী হয়েছে , পরিস্থিতি আমার অনুকুলে আনার চেষ্টা করলাম ।
তো, কি হয়েছে ?
না বললাম আর কি
বৃষ্টী হলে কি আপনি অচেনা অজানা মানুষদের বিরক্ত করা শুরু করেন । ধমকের সুরে জিজ্ঞাসা করলো । এতো দেখছি মহা যন্ত্রনা হলো , এখন যতোদিন বৃষ্টী হবে ততদিন আপনি আমাকে জ্বালাবেন ।
বৃষ্টীর কথা বলে তো দেখছি মহা বিপদে পরে গেলাম । কি বলবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না । ওদিকে এটাও চাচ্ছি না কল টা কেটে যাক । মনের মধ্যে লক্ষ কথার ঝর বইছে মুখ দিয়ে বেরোচ্ছে হে! হে ! আওয়াজ ।
হে হে , করেন কেনো, আপনি তো বোবা না ।
আপনি ভালো আছেন
ওপাশে খানিক নিরাবতা নেমে এলো , জ্বী আমি ভালো আছি আমার বাবা দাদা নানা চাচা সবাই ভালো আছেন, আর কিছু?
আপনার মা, নাই ?
ওমা সে কি কথা মা থাকবে না কেনো
ওদের কথা বললেন না তাই জিজ্ঞাসা করলাম, জোকস করার চেষ্টা ।
আপনি নিজেকে কি জনি লিভার মনে করেন?
কে উনি ?
থাপরিয়ে দাঁত খুলে নেব, জনি লিভার কে উনি চেনে না । অথচ জনি লিভারের মতো জোকস মারা শুরু করছেন ।
আমি হা হা হা করে হেঁসে উঠলাম, মনের ভেতর এক রাশ প্রশান্তির বৃষ্টী এসে যেনো ভিজিয়ে দিলো । চাতক পাখি যেমন বছর জুড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে জলের তেষ্টায় আর জলের ফোঁটার প্রথম পরশে পাখা মেলে উড়াল দেয় আকশের পানে, আমার মন ও ঠিক তেমনি উড়াল দিলো তাহার পানে, অজানা উদ্দেশ্যে ।
বেকুবের মতো হাসছেন কেনো
আপনি ঝিনুক দেখেছেন , জবাব না দিয়ে জিওজ্ঞাসা করলাম
কেনো দেখবো না , অনেক দেখেছি, আমার গ্রামের বাড়ির পুকুরে অনেক পাওয়া যায় ।
জানেন, ঝিনুক পানির নিচে লুকিয়ে থাকে কিন্তু যখন বর্ষার প্রথম জল এসে পুকুরে পরে ঝিনুক পানির উপরে ভেসে ওঠে তার খোলস খুলে দেয় । আর সেই জলের ফোঁটা এসে তার খোলসে আশ্রয় নিলে খোলস বন্ধ করে টুপ করে পানির নিচে তলিয়ে যায় ।
এতো জ্ঞ্যান কেনো দিচ্ছেন আর এতে হয় টা কি ?
মুক্তা, বিশুদ্ধ নির্ভেজাল মুক্তা হয় ।

কটাশ করে ফোন টা কেটে গেলো, মনে হলো বুকের ভেতর একটা হৃদ স্পন্দন খানিক ক্ষনের জন্য থেমে গেলো । বিশাল জলধারা কে থামিয়ে দিলে যেমন নদীর দুই পার চুর্ন বিচুর্ন করে ফেলে তেমনি আমার হৃদয়ের দুই কিনার চুর্ন বিচুর্ন হয়ে যেতে লাগলো , অজানা ভীতি এসে রাক্ষসের মতো চেপে ধরলো হৃদপিন্ড । বাতাসে অক্সিজেনের তিব্র অভাব বোধ করলাম, জলের তলায় হারিয়ে যাওয়া মানুষের মতো খাবি খেতে লাগলাম। দিশাহারা হয়ে ফোনের বাটন চেপে গেলাম । ফোন বেজেই যায় , যায়, যায় , যায়। কোন প্রতি উত্তর নাই । আবার চেস্টা করি , বন্ধ একদম বন্ধ। মনে হয় তাহারে চিরকালের তরে হারালাম ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৬
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×