২০০৯ সালের মাঝামাঝিতে সুযোগ এলো। আমাদের অফিসের (রবি, সেসময় একটেল) সিনিয়র কলিগরা হজ্জ যাবার প্রস্তাব নিয়ে একটি মিটিং ডাকে। আপাত দৃষ্টিতে আমার বয়স বা জীবন-আচার সম্ভব্য হজ্জ যাত্রীদের কোটায় পড়ে না। তারপরেও কেন যেন ডাক পেলাম। হতে পারে পদের কারণে। আমাদের গাইডও ওইদিন উপস্থিত ছিলেন। তাকে পছন্দ হল। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম।
হজ্জের শেষের কাছাকাছি সময়ে জাতিয় নির্বাচন পড়লো। নির্বাচনের আগে দেশে থাকাই পছন্দ। তারপরও সিদ্ধান্ত বদল না করে টাকা পয়সা জমা দিয়ে দিলাম। শুধু পুরো সফরের সময়টা কমিয়ে নিলাম।
সময় মত হতে হজ্জের বিশেষ পাসপোর্ট হাতে এলো। যথারীতি নাম পরিচয়ে অসংখ্য ভুল (ওটা আমার পাসপোর্ট প্রমাণ করা কষ্টকর)। আমার নাম বড় আর একটু অন্যরকম হওয়ায় সবাই একটু সংশোধন করার সুযোগ নেন। এই প্রবণতা বেশি দেখা যায় সরকারি কেরানিদের ক্ষেত্রে। আমাদের হজ্জ গাইড জানালো ওতে তেমন সমস্যা হবেনা।
হজ্জ যাত্রার প্রস্তুতিতে ব্যাগ গোছানো শুরু করলাম। বই পুস্তক অনলাইন ঘেঁটে একটি তালিকা তৈরি করে গোছগাছ শুরু করলাম। দুসেট এহরামের কাপড়ের সাথে বেশি কিছু ভাল পাঞ্জাবি পাজামা নিলাম। গিয়ে মনে হয়েছে - জোব্বা আর ঢোলাঢাল থ্রি কোয়াটার শর্টস নিলে সবচেয়ে ভাল হতো। পরার পরে ফেলে আসার মত কাপড় নেওয়াই ভাল।
বাসা থেকে এহরামের কাপড় পরে রওনা দিয়েছিলাম। তীর্থ যাত্রার এই এক অসাধারণ অনুভূতি। পলার দিকে, আরশানের দিকে চেয়ে অনেক কিছু ভাবছিলাম। তীর্থ যাত্রার অনুভূতি পুরোপুরি উপভোগ করতে চাইছিলাম। ধর্মমতে ওদেরকে আল্লার জিম্মায় রেখে চলে যেতে হবে। চোখ ভিজে আসছিল বারবার। আমি সেসময় প্রায়শই দেশের বাইরে যেতাম। কখনও মাসে তিনবার। মাঝে মধ্যে অফিস থেকেও সরাসরি চলে যেতাম। কিন্তু এই যাত্রার অনুভূতি অন্যরকম। মনে হচ্ছিল জেট প্লেনে যেতেই এমন লাগছে, কেমন লাগতো যখন মানুষ হেঁটে হজ্জে যেত।
সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হজ্জ ক্যাম্পে পৌঁছলাম। সেখানে কাজ এহরাম বাঁধা, নিয়ত করা ও নামাজ আদায়। এরপর এয়ারপোর্টে পৌঁছে ইমিগ্রেশন শেষ করে সাউদি এয়ারের বিশাল প্লেনের পেটে। অন্যবার বিদেশ যাওয়ার চেয়ে হজ্জ-যাত্রী বলে একটু বেশি দেরি হল। অথচ উল্টোই হবার কথা।
প্লেনে উঠে বুঝলাম। এরপর মনে হল - এত আগে নিয়ত করার বদলে, মিকাতে পৌঁছাবার আগে করলেই হত। কারণ প্লেনে প্রচণ্ড শিত লাগলেও এহরাম অবস্থার কারণে মাথায় কোন কাপড় দিতে পারছিলাম না। একসময় বিমান যাত্রা শেষ হল। কিন্তু এয়ার পোর্টে নেমে ধৈর্যের পরীক্ষা শুরু। বসার যায়গা নেই, হাতে পড়ার মত বই নেই (বই লাগেজে), এমপিথ্রি প্লেয়ারে ট্র্যাকগুলো দু-তিনবার শুনে শেষ, নোটবুকে চার্জ নেই। কোন প্রসেস কখন শেষ হবে সেটা কেউ জানেনা। মিডিলইস্টের বেশিরভাগ এয়ারপোর্টের মত সবার হেলে দুলে চলাফেরা। একজনের কাজ তিনজন মিলে করা। অন্য সময় হলে হয়ত রাগ উঠত। মনে মনে পড়তে থকলাম - লা রাফাসা ... জিদালা।
দীর্ঘ অপেক্ষায় ক্ষুধা ভয়ানক হয়ে গেল। এয়ারপোর্টের যে দোকান খুঁজে বের করলাম তার বিরিয়ানি গলার নিচে যায় না। অন্য যাত্রীর সাথে থাকা কিছু খবার খেয়ে পেটের জ্বালা কমলো।
একসময় ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এয়ার পোর্টের বাইরে আমাদের নির্ধারিত বাসে উঠলাম। উদ্দেশ্য হারাম শরিফের পাশে আমাদের নির্ধারিত বাসা। রাস্তার দুদিকের মরুভূমি, খেজুর বাগান, ছোট ছোট লোকালয় পার করে বাস ছুটে চলল .
পর্ব ২ : Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:১১