পত্রিকার পাতায় দুইজন মেয়ের অসহায় অপরাধী ধরণের ছবি দেখে আর ঘটনা পড়ে মনস্টার ছবিটার কথা মনে পরে গেলো। ডানদিকের বয়সে বড় মেয়েটা ঠিক শার্লিজ থেরনের অস্কারজয়ী সেই উদ্ধত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে। মনস্টার ছবিটা আবার সত্য ঘটনার অবলম্বনে নির্মিত ছিলো। এক বিষম বয়সী সমকামী জুটির পালিয়ে প্রেম, সিরিয়াল কিলিংএর অপরাধ ও সবশেষে একজনের ফাঁসি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি সারা জাগানো ঘটনার অবলম্বনে ছবিটা নির্মিত হয়েছিলো। মনস্টার খুব ভালো একটা ছবি। আমার দেখা অন্যতম ভালো। শার্লিজ থেরন অসাধারণ অভিনয় করেছেন।
সমকামী ফোবিয়া আমার নাই। সমকামী বলে কোন স্পেসিফিক গোত্রের অধিকার নিয়াও আমার খুব একটা মাথা ব্যথা নাই, বিভিন্ন কারনে। কিন্তু মেয়ে দুইটার ছবি দেইখা প্রচন্ড মন খারাপ হয়ে গেলো। এতোটাই খারাপ হইলো যে অনেকে এই দুইটা মেয়ে সম্বন্ধে অনেক কিছু লিখে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন দেখলাম, কিন্তু আমার এক কলম লিখতে ইচ্ছা হইলো না। মেয়ে দুইটার একমাত্র অপরাধ পাইলাম একটা মেয়ের বয়স কম, আইনগতভাবে মাইনর। এটা নিয়া অবশ্য পুলিশ বা সাংবাদিক কারো কোন মাথাব্যাথা দেখলাম না। তার বদলে সমকামী প্রেম এবং পালিয়ে বিয়ে করার ঘটনা পাওয়া গেলো। পালিয়ে বিয়ে করা কোন আইনেই অপরাধ না, সমকাম বাংলাদেশের আইনে অপরাধ কিনা আমার জানা নাই, ঐতিহ্যগতভাবে এই দেশের মানুষ সমকামীদের অপরাধী হিশাবে গণ্য করেছে এমন কোন উদাহরণ আমার জানা নাই। কিন্তু সমাজ এই ধরণের বিবাহ মেনে নেবে বলে মনে হয়না। তারমধ্যে আবার একটা মেয়ে হিন্দু আরেকটা মেয়ে মুসলমান। শাহবাগ, হেফাজত কান্ড, রানা প্লাজা এবং রেশমা কান্ডের মধ্যের আমাদের সমাজে যে পরিমান ভাঙচুরের শব্দ শোনা গেছে, এই দুইটা মেয়ে যে ঘটনার জন্ম দিছে তাতে তারচেয়েও বেশি ভাঙচুরের শব্দ শোনা যায়। এর পরেও এই দুইজনের বিবাহ বাংলাদেশের সমাজ তার বিভিন্ন লেভেল থেকেই মেনে নিতে এখনো প্রস্তুত হয়নাই। তবে এই দুইজনের সাহস এই প্রমাণ করে যে বাংলাদেশে নারীরা সাবলম্বী হচ্ছে। এধরণের ঘটনা সামনে আরো ঘটবে বলে মনে হচ্ছে। তবে এই দুটি মেয়ের ভাগ্য তাদের শক্তি সাহস এবং তাদের পরিবারের ম্যানেজ করার, শাসন করার নানান ঘটনার মধ্য দিয়া যাবে।
কিন্তু এই দুইটা মেয়ে সিরিয়াল কিলার না। তারা কম বয়সী দুইটা মানুষ। ভুল করুক, ঠিক করুক, এমন কোন অপরাধ তারা করে নাই, যার জন্যে এইভাবে এইরকম একটা ছবি সাংবাদিকরা পত্রিকার পাতায় ছাপাতে পারে। আমি দেখতে পাচ্ছি, গত ২৪ ঘন্টায় এই ছবিটা কিভাবে চারিদিকে সার্কুলেট হচ্ছে। বাংলাদেশের সর্বস্তরের চোর, ছেচর, লম্পট, সাইকোদের কাছে এবং হাটহাজারি মাদ্রাসাতে এই ছবি তথ্যপ্রযুক্তির কল্যানে ইতিমধ্যে পৌছে গেছে। অথচ এই মেয়ে দুইজনের একজন গলাম মওলা রনি অথবা আরেকজন সালমান এফ রহমান নন। এ দুইটা মেয়ে যেকোন বিচারে গোলাম আযম অথবা কাদের মোল্লার চেয়ে অধিক নিরাপত্ত্বা পাওয়ার দাবি রাখে। তাইলে এই দুইটি মেয়ের নিরাপত্ত্বা কেনো এভাবে কিছু সাংবাদিকদের উজবুকি মানসিকতার কারনে বিঘ্নিত হবে? এই ঘটনার সাথে জড়িত পুলিশ এবং সাংবাদিকরা অবশ্যই অপরাধ করেছে। আমি এই অপরাধের বিচার দাবি করছি। ধিক্কার জানাই সেই সম্পাদকদের যারা হিটের নেষায় বিবেক বুদ্ধি মনুষ্যত্ব খুইয়ে ফেলেছেন।