কানাডা আসার পর থেকেই মনের গভীরে এক অদম্য ইচ্ছা ছিল টোবারমোরী যাব। সবার মুখে টোবারমোরী'র নাম শুনতে শুনতে এই জায়গার প্রায় প্রেমেই পড়ে গিয়েছিলাম। গেল সামারেও যাব যাব করেও যাওয়া হলোনা। মনটাই খারাপ ছিল। তাই কিছুদিন আগে যখন রোহান ভাই বললেন, 'কি রে, যাবি নাকি টোবারমোরী? আমি সাত-পাঁচ এতকিছু না ভেবেই বলে বসলাম, 'এবার আর কোথাও যাই বা না যাই, টোবারমোরী যাবই যাব।'
যেই কথা সেই কাজ। কাজ থেকে ছুটি নিলাম। দিনক্ষণও ঠিক হয়ে গেল। পঁচিশ মে, ২০১৫ তারিখ আমাদের যাত্রা শুরু হবে। আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হলো হোটেল বুকিং এবং ট্যুর প্ল্যান করার জন্যে। যথারীতি টোবারমোরী সংক্রান্ত সবধরণের পড়ালেখা শেষ করে রোহান ভাইকে জানালাম যে, আমরা যদি ওন্টারিও প্রভিন্সের উত্তরে টোবারমোরীর সাথে 'মাসকুকা' -ও ঘুরে আসতে চাই তাহলে 'কলিংউড' শহরে থাকাটাই যুক্তিযুক্ত। দেরী না করে কলিংউড -এ হোটেল 'লাক্সারী ইন' -এ একটা বুকিং-ও দিয়ে ফেললাম প্রাইসলাইন ডট কমের মাধ্যমে। কারণ যত দেরী করবো, হোটেলের ভাড়া বাড়তেই থাকবে। কিন্তু তখনও বুঝতে পারিনি যে স্বল্প সময়ের মাঝে শুধু টোবারমোরী ঘুরেই শেষ করা যাবেনা। কাজেই আবারও ট্যুর প্ল্যান রি-শিডিউল করলাম। কলিংউডে থাকার চিন্তা বাদ। কারণ কলিংউড থেকে টোবারমোরী ড্রাইভ করে যেতে প্রায় আড়াই ঘন্টা সময় লেগে যাবে। অতএব এবার আমাদের প্ল্যান টোবারমোরী থেকে দেড় ঘন্টা দূরের গ্রে কাউন্টির একটি ছোট মফস্বল শহর 'ওয়েন সাউণ্ড' -এ থাকা এবং ওয়েন সাউণ্ড থেকেই টোবারমোরী'র দর্শনীয় স্থানগুলোতে গাড়ি নিয়ে ঘুরতে যাওয়া। 'লাক্সারী ইন' -এর বুকিং বাতিল করে দিয়ে ওয়েন সাউণ্ডে আমাদের ঠিকানা হলো 'হোটেল কমফোর্ট ইন'-এ।
হাইওয়ে ৬ ধরে আমাদের গাড়ি ছুটে চলেছে
ওই দূরে ব্লু-মাউন্টেন পাহাড়ের সারি
হাইওয়ে ৬ এ ৮০ কিলোমিটার/ ঘন্টার বেশি স্পিড তোলা নিষেধ
পঁচিশ তারিখ কাক ডাকা ভোরে আমাদের যাত্রা শুরু হলো। ব্যস্ত শহর টরন্টোর জ্যাম আর যান্ত্রিক জীবনকে পেছনে ফেলে আমাদের গাড়ি ছুটে চললো টোবারমোরী'র ব্রুস পেনিনসুলা ন্যাশনাল পার্কের উদ্দেশ্যে। আজ আমাদের টার্গেট হলো দুপুরের আগেই টোবারমোরী'র ব্রুস পেনিনসুলা ন্যাশনাল পার্কে পৌঁছে যাওয়া। প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টার ড্রাইভে আমরা পৌঁছে যাব টরন্টো থেকে ৩০০ কি.মি দূরের উত্তর পশ্চিমের ছোট শহর টোবারমোরীতে যেটি ওন্টারিও প্রভিন্সের উত্তর ব্রুস পেনিনসুলা মিউনিসিপালিটির অন্তর্গত ছোট্ট একটি শহর।
আর অল্প গেলেই ওয়েন সাউণ্ডে পৌঁছে যাব আমরা
ওয়েন সাউণ্ড শহরে পৌঁছে গিয়েছি আমরা। এই ওয়েন সাউণ্ড শহরের ওপর দিয়েই আরও উত্তরে গেলে টোবারমোরী।
মে থেকে অক্টোবর মাসের থ্যাংকস গিভিং লং উইকেণ্ড পর্যন্ত টোবারমোরী'র জীবনযাত্রায় পর্যটকদের আনাগোণা থাকে। বছরের বাকীটা সময় এই ছোট্ট মফস্বল শহরটি বরফের চাদরে ঢাকা থাকে। টোবারমোরীতে দেখার কি আছে? কেউ যদি এই প্রশ্নটি করেন, তাহলে বলতে হয়, টরন্টোর উত্তরের শহর টোবারমোরী হলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের আধার যেখানে রয়েছে অসংখ্য ট্যুরিস্ট স্পট।
দুপুর বারোটা নাগাদ টরন্টো থেকে সরাসরি ব্রুস পেনিনসুলা ন্যাশনাল পার্কে পৌঁছালাম আমরা। পার্কিং লটে বসে খাওয়াদাওয়া পর্ব শেষ হবার পর পায়ে হেঁটে বনের ভেতরে প্রবেশ করলাম। উদ্দেশ্য, প্রথমে সাইপ্রাস লেক দেখা। ব্রুস পেনিনসুলা ন্যাশনাল পার্কের ভেতর ছোট-বড় অনেকগুলো লেক থাকলেও সাইপ্রাস লেকের সৌন্দর্য্য আসলেই অন্যরকম। সাইপ্রাস লেক দেখার পর আমরা প্ল্যান করলাম Grotto view this link এর কাছাকাছি চলে যাব। পাহাড়ের গায়ে এক বিশাল গুহা Grotto যেটি সহস্র বছরে জর্জিয়ান বে -এর পানির ধাক্কায় সৃষ্টি হয়েছে।
পার্কের ভেতর পার্কিং লট
সাইপ্রাস লেক
সাইপ্রাস লেক
সাইপ্রাস লেক
দূর থেকে দেখা গ্রত্তো
গ্রত্তো
গ্রত্তো এর কাছাকাছি যাবার পর জর্জিয়ান বে-এর স্বচ্ছ ঠাণ্ডা পানিতে আমরা পা ভিজালাম। ব্রুস পেনিনসুলা ন্যাশনাল পার্কের ভেতরে পায়ে হাঁটা পথে অনেক ট্রেইল রয়েছে। এখানে রয়েছে ক্যাম্পিং করার সুবিধাও।
ব্রুস পেনিনসুলা ন্যাশনাল পার্কের আরও কিছু ছবি এই ফাঁকে দেখে নেই:
পার্কের ভেতর গহীন বন
ব্রুস পেনিনসুলা ন্যাশনাল পার্ক থেকে দেড় ঘন্টা ড্রাইভে ফিরে এলাম ওয়েন সাউণ্ড শহরের কমফোর্ট ইন হোটেলে। ক্লান্ত শরীরে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম। পরের দিনের রিভার ক্রুজে বিখ্যাত 'ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড' দেখার উত্তেজনাটা টের পেলাম যখন ঘুম ভাঙলো খুব ভোরে রোহান ভাইয়ের আওয়াজে।
পর্ব ২ view this link
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১৫ দুপুর ২:০৫