পর্ব ১ এর পর: view this link
ক্যুবেক সিটির 'গাখ্ দ্যু প্যালে' ( Gare du Palais ) ট্রেন স্টেশন থেকে ট্যাক্সি নিয়ে পড়ন্ত বিকেলে যখন আপার টাউনের সেন্ট অ্যানি রোডের জাখদাঁ (Hotel Jardin Ste-Anne) হোটেলে এসে উঠলাম, বাইরে তখনও সূর্য্যের আলো ঝলমল করছে। হোটেল রুমে ব্যাগগুলো কোনমতে রেখেই সঙ্গী নাইকন ডি-৯০ কে নিয়ে বের হয়ে পড়লাম শহর দেখার উদ্দেশ্যে। ওল্ড ক্যুবেক সিটির আপার টাউনে আমাদের হোটেল, যেটি ক্যুবেক শহরের বিখ্যাত গ্র্যাণ্ড হোটেল 'শাঁত্যু ফ্রন্টনেক' থেকে পায়ে হাঁটা পথ। অতএব, আলো থাকতে থাকতেই পায়ে হেঁটে চলে এলাম সেন্ট লরেন্স নদীর ধারের বিশালাকার 'শাঁত্যু ফ্রন্টনেক' -এর সামনে।
Hotel Jardin Ste-Anne এর সামনে
আমার নাইকন ক্যামেরায় তোলা ওল্ড সিটির লোয়ার টাউনের কিছু ছবি:
মামা দেখি রাস্তার ধারে ভায়োলিন বাজিয়ে টাকা ইনকাম করছেন
১৯৮০ সালে Fairmont Le Château Frontenac কে ন্যাশনাল হিস্টোরিক সাইট অব কানাডা'র অন্তর্ভূক্ত করা হয়। অবর্ণনীয় সৌন্দর্য্য আর রূপের আধার ওল্ড ক্যুবেকের আঁকাবাঁকা সরু পথে হাঁটতে হাঁটতে আমরা যেন ফিরে গেলাম চারশো' বছরের সেই পুরনো শহরটিতে। নাইকন ক্যামেরা দিয়ে একের পর এক তুলতে থাকলাম আপার টাউন ওল্ড ক্যুবেক সিটির রূপ সৌন্দর্য্য। view this link
Château Frontenac এর কিছু ছবি:
টরন্টো থেকে ক্যুবেক সিটিতে আসার আগে হোটেল নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। বিভিন্ন অনলাইন ওয়েবসাইট, ব্লগ ইত্যাদি থেকে এতটুকু অন্তত: বুঝতে পেরেছিলাম যে, আপার টাউনের 'শাঁত্যু ফ্রন্টনেক' -এর কাছাকাছি হোটল নেবার ব্যাপারেই সবাই রেকমেণ্ড করেছে। প্রায় মাস দু'য়েক আগে বুক করা আমাদের সেন্ট অ্যানি রোডের হোটেল জাখদাঁ-ও ছিল 'শাঁত্যু ফ্রন্টনেক' থেকৈ পাঁচ মিনিটের পায়ে হাঁটা পথ। ক্যুবেক আসার আগে হোটেল নিয়ে যতটা দুশ্চিন্তা করেছিলাম, এস দেখলাম আমাদের হোটেলটি আশাতীত রকমের ভালো, সুন্দর এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। যদিও এখানে কোন রিসেপশন ডেস্ক কিংবা সকালের ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা নেই। ঠিক পাশের হোটেল 'শ্যাম্পেইন' -এ তাই 'চেক-ইন' করতে হলো।
ওল্ড সিটির লোয়ার টাউনের আরও কিছু ছবি:
আপার টাউনের ছবি
পরদিন খুব সকালে উঠে ব্রেকফাস্ট সেরে নিলাম হোটেলের কাছেই 'সেন্ট অ্যানি রোডের ওপর 'পেঁ বেনি' রেস্টুরেন্টে, যেখানে জাখদাঁ -তে থাকার সুবাদে সকালের ব্রেকফাস্টে ২০% ডিসকাউন্ট পেলাম।
'পেঁ বেনি' তে ফ্রেঞ্চ ব্রেকফাস্ট
'পেঁ বেনি''র ইন্টেরিয়র
পুরনো শহরের সব খাবার দোকানের সামনেই মেন্যু লিস্ট দামসহ টাংগানো থাকে
তারপর পাশেই 'ইনফরমেশন সেন্টার' থেকে ঘোরাঘুরি সংক্রান্ত আরও কিছু তথ্য নিয়ে নিলাম। আপাতত আজকের প্ল্যান পায়ে হেঁটে ওল্ড কুইবেক সিটির আপার এবং লোয়ার টাউন ঘুরে দেখা। এর ফাঁকে দুপুর দুইটায় রিভার ক্রুজে 'মো মোরেন্সি ফলস' পর্যন্ত ঘুরে আসার জন্যে 'ইনফরমেশন সেন্টার থেকেই ক্রুজের টিকিট কনফার্ম করে নিলাম।
পায়ে হাঁটা পথে ওল্ড ক্যুবেক সিটির আপার টাউনের আরও কিছু ছবি:
এই ঘোড়ার গাড়িতে চড়তে ৯০ ডলার লাগবে। মাত্র ৪৫ মিনিটের ট্রিপ।
ইনফরমেশন সেন্টার থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হলো পায়ে হেঁটে ওল্ড সিটি আপার টাউনের পার্লামেন্ট পর্যন্ত। ক্যুবেক পার্লামেন্টের পর থেকেই 'নিউ ক্যুবেক সিটি' শুরু হয়েছে। পর্যটকদের জন্যে পার্লামেন্টের ভেতরে সকাল ১১.৩০ এবং বিকাল ৪ টায় ইংরেজিতে ফ্রি গাইড ট্যুরের ব্যবস্থা আছে।
এই রাস্তায় আর একটু গেলেই পার্লামেন্ট
আপার টাউন
আপার টাউন
আপার টাউন
আপার টাউন
পার্লামেন্টের ঠিক পাশেই রয়েছে 'প্লেইন অব আব্রাহাম' বা 'ব্যাটল ফিল্ড'। এখানেই ইংরেজ এবং ফ্রেঞ্চদের মাঝে দীর্ঘ সাত বছর যুদ্ধ হয়েছিল যে যুদ্ধে ফ্রেঞ্চরা ইংরেজদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। পরবর্তীতে ফ্রান্স আর কখনোই ক্যুবেকের আধিপত্য গ্রহণ করতে পারেনি। ১৭৬০ খ্রীষ্টাব্দে ক্যুবেকের ওপর থেকে ফ্রেঞ্চরা সম্পূর্ণরূপে ক্ষমতা হারায়। ইংরেজ-ফ্রান্স যুদ্ধ শেষে ১৭৬৩ সালে ফ্রেঞ্চরা ইংরেজদের কাছে কানাডার অনেক কলোনী হস্তান্তর করে।
নিচের ছবিগুলো সব আপার টাউনের:
view this link
দুপুর দেড়টার দিকে Terrasse Dufferin এর সামনে দিয়ে আপার টাউনের শাঁত্যু ফ্রন্টনেকের সামনে অবস্থিত 'ফিউনিকুলার' নামের এক ধরনের লিফট যোগে নেমে এলাম লোয়ার টাউনে। তারপর পায়ে হাঁটা পথে চলে এলাম রিভার ক্রুজের জন্যে নির্ধারিত ফেরীর সামনে।
আপার টাউন থেকে দেখা লোয়ার টাউন
ফিউনিকুলার থেকে দেখা লোয়ার টাউন
ফিউনিকুলার দিয়ে নিচের লোয়ার টাউনে নামছি। জনপ্রতি ২.২৫ ডলার করে নেয়
রিভার ক্রুজের দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে পরের পর্ব খুব শীঘ্রই পোস্ট করবো আশা করছি। তার আগে দেখে নেই ওল্ড ক্যুবেকের আপার টাউনের আরও কিছু ছবি:
এবার লোয়ার টাউনের আরও কিছু ছবি:
এবং সবশেষে লোয়ার টাউন থেকে দেখা শাঁত্যু ফ্রন্টনেক
পর্ব ৩ view this link পর্ব ৪ view this link
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১৮ রাত ৯:৫৯