somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোমাকে না লেখা চিঠি

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




প্রিয় মিলি,
গতকাল রাতের অসম্পূর্ন কল্পনায় হঠাৎ ঘুমহীন হয়ে গিয়েছিল আমার চোখ,
ঘুম চোখ নিয়ে সেলফোনে হাত রাখতেই দেখি
ইনবক্সে অচেনা এক চিরকুট!
চোখ বুলিয়েই পরেই বুঝতে পেরেছি তোমার পাঠানো।
অনেকগুলো মাস পেরিয়ে নতুন নম্বর থেকে তোমার চিরকুট!
ভেবেই আমার চোখ জুড়ে দুর্দান্ত উচ্ছাসের ঢেউ!

তিনদিন পেরিয়ে গেল,
মেঘালয়ের কুয়াশা সাদা রুমাল আর সরছে না।
সোমেশ্বরীর স্বচ্ছ পানিতে মাছেরও দেখা নেই!
তবুও পাথর কুড়ানীর দল থেমে নেই! জীবন তাদের চলছে!
তোমার চিরকুট পড়বার পর মনে হলো সব ঠিকঠাক চলছে;
শুধু আমিই পারছিনা।

তোমার পাঠানো চার-চারটি চিরকুট
যেন ছোট খাটো একটা চিঠির মতো মনে হলো।
জানতে পারলাম ঘর-সংসার, নতুন অথিতি, বাড়ির ছাদ আর
বাসন মাজার মহারাণী হয়েই কেটে যাচ্ছে তোমার সোনালী দিন গুলো।
অথচ-
তুমি একদিন স্বনির্ভর হবার স্বপ্ন দেখতে;

তুমি লিখেছ, নরম তুলতুলে হাত দুটোতে পাথরের মতো
অসমান কোন চড় জেগেছে, যেন অদৃশ্য কংক্রিট!
আলসে ভরা সেই সব ঘুমে ভরা দুপুর
তোমার মুঠোতে এখন এনে দিয়েছে হাজার রকম কাজ আর কাজ,
দিনকে দিন হারিয়ে যাচ্ছে তোমার বৈভব।

মিলি,
ভুলে থাকার আরেক নাম অভিমান!
আর সেই অভিমানকেই পাশবালিশ ভেবে জড়িয়ে আছে তুমি।
তোমার মতো-
মেঘালয়ের পাহাড় গুলোও যেন আজকাল অভিমান করে আছে,
তার গায়ে জমে থাকা মেঘগুলো, অবচিত।
তিলতিল করে জমে থাকা অভিমান,
তোমাকে ছেড়ে আমাকেও গ্রাস করে নিচ্ছে ক্রমশ,
তাই বোধ হয়-
চোখের উত্তাপে কাছের সম্পর্ক গুলোতে ছড়াচ্ছে ম্লান হবার পূর্বাভাস।

তুমি জানতে চেয়েছ ভালো আছি কিনা?
মিলি, ভালো থাকা এখন ততটাই কঠিন-যতটা কঠিন ভুলে থাকা!
ভালো থাকার আশায় সিগারেট ছেড়েছি,
জায়গা বদলেছি, ঘর-দুয়ার, সঙ্গ সব ছেড়েছি
নিজেকে রুটিন মাফিক বেঁধে ধরেও
ভালো থাকতে পারিনি; হয়ত পারবো না।
নিমাই’দার মেমসাহেব কিংবা গোধূলিয়া পড়তে গেলেই কান্না আসে,
আমারও মাটি সরে যায় পা থেকে,
যন্ত্রনা আরো বেড়ে যায় এরিখ সেগালের লাভ স্টোরি পড়লে।
রানিখং এর গির্জা, ছিমছাং নদী, রামকৃষ্ণ মঠ সব কিছুর সামনেই
মিথ্যে অভিনয় করে ভালো থাকার চেষ্টা করি।
গঙ্গাসাগর, পালোলাম সৈকত কিংবা ঝাড়খন্ড
কোন কিছুতেই পা আর চলে না যেন সব অশ্রেয়!

আমার মতো অক্ষরজীবীদের চোখে অশ্মরী জন্ম নেয়
আর জানতে ইচ্ছে হয় তুমি ভালো আছো তো?
তুমি হয়ত বলবে ভালো-খারাপ থাকাটা নিজের কাছে,
হয়তোবা তাই! কিন্তু নিজেকে কার কাছে রাখবো বলতে পারো?
আমার ভালো থাকা আর আকাশ দেখা এখন সমান কথা।

তুমি লিখেছ মাঝে মাঝে আমাকে ভাবলে তোমার মন মেঘ হয়ে যায়,
জানতে চেয়েছ তোমার মতো আমারও এমন হয় কিনা?
সূর্যের মতো সত্যি এই যে, নন্দিত হতে গিয়ে আমি বোধহয় তোমার কাছে নিন্দিত হয়ে গেলাম,
নিন্দিত হয়ে পুরোনো কথা ভেবে কি হবে?
সেসব কথা ভেবেই না মনকে মেঘ করো না।

কেউ হয়ত জানবেনা কোনদিন,হয়ত আমি আর-
খোলা আকাশ জানবে মন খারাপের কথা।
জানবে আমার ভাবনাতেও বিরহের তুলির আঁচর পড়ে,
বিরহী সুর বাজে; করুণ বিউগলের সাথে সাথে কেউবা সেখানে মার্চ করে বেড়ায়।

আমাদের ফেলে দেয়া সোনালী সে সময়কার সব স্মৃতির পাতায় আজ বন্দি।
নিজেকে হ্যাংলাটে মনে হয়,
আজকাল তোমার মতো কারো মুখায়ব দেখলেই ছুটে যাই,
সেই খরগোসের মতো দাঁত, সেই হাসি
এই বুঝি তুমি!
এখন জীবনের সোনালী দিন খুইয়ে পাথর যুগে এসে গেছি।
পাথরের ভারে চোখ মেলতেই যতো যন্ত্রনা।

প্রতি মুহূর্তেই সময়ের দাসত্বের অনুবর হয়ে যাচ্ছি
ভালো কিংবা ভুলে থাকার চেষ্টায় ক্রমাগত পরাজিত
হবার শঙ্কায় ভুগছি।
তুমি ভেবে নিও মুদ্রার এ পিঠের মতো জীবন হলেও আমি ভালো নেই;
একটু একটু করে বিক্রি হয়ে যাচ্ছি সময়ের কাছে।

মিলি, জানিনা কেন তোমাকে-
খুব গভীরে, খুব গোপনে লোকচক্ষুর আড়াল করেছিলাম;
তবে মনে হতো তুমি যেন আমার পিদিম;
এ আলো শুধু আমার একার।
তোমাকে নিয়ে কোনদিন কিছু লেখা হয়ে উঠেনি
শুধু অচল পয়সার মতো করে লুকিয়ে রেখেছি বুকের পাশ পকেটে
আজ শুধু বলবো, মৃত্তিকার মতো আনন্দ তোমার মুকুট হোক;
যা আছে সুখ আমার তোমাতে মিশে যাক,
তুমি কুসুম্ভরানী হয়ে থেকো,
তোমার পৃথিবীতে,
তোমার গহীনে।

♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠

রচনাকাল:
১৯ জানুয়ারী
সুসং নগর। উইলকিংসন রোড।
৪৫৬ বার পঠিত
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চিন্ময় ব্রহ্মচারী প্রভুকে গ্রেফতার করা হল কোন উদ্দেশ্যে?

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ২৫ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৯

আমার ধারণা চিন্ময় ব্রহ্মচারী প্রভুকে গ্রেফতার করা হয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার জন্য। ভালো উদ্দেশ্যে তাকে গ্রেফতার করা হয় নাই। চিন্ময় ব্রহ্মচারীর কথা বার্তা আমার ভালো লাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অসমাপিকা, ২২শ অধ্যায়

লিখেছেন মেহবুবা, ২৫ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫৬


২১ অধ্যায়: Click This Link

তোমাকে বলেছিলাম
----নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
"তোমাকে বলেছিলাম, যত দেরীই হোক,
আবার আমি ফিরে আসব।
ফিরে আসব তল-আঁধারি অশথগাছটাকে বাঁয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিন্দুরা কেন ভারতে যায়?

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩২



দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের বাড়ি-ঘর থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি সদয় ব্যবহার করতে এবং তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করছেন না।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইলিশনামা~ ১

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


১৯৮৫ সালে ডক্টর মোকাম্মেল হোসাইন ‘ ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে যেই রিসার্চ পেপারটা( থিসিস – এম এস এর জন্য) জমা দিয়েছিলেন সেটা এখানে মিলবে;
[link|https://open.library.ubc.ca/cIRcle/collections/ubctheses/831/items/1.0096089|Spawning times and early life history of... ...বাকিটুকু পড়ুন

৯০% মুসলমানের এই দেশ? ভারতে কতগুলো মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির করা হয়েছে? গতকালও ভারতে মসজিদের পক্ষে থাকায় ৩ জন মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৪২
×