পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে মানব-মানবীর ভালোবাসা অকৃতিম বলে বিবেচিত হয়ে আসছে। এই ভালোবাসা কখনও প্রেম , কখনও প্রনয়ে রুপ নেয় । শিরি-ফরহাদ , লাইলী-মজনু , রোমিও - জুলিয়েট এদের ভালোবাসার উপাখ্যান তৈরি হলেও কোনো সাহিত্যিক, দার্শনিক এর প্রকৃত ব্যাখা দিতে পারেন নি । হয়তবা এ বিষয়টি এমন যা মানব হৃদয় দ্বারা অনুধাবন করা সম্ভব নয় । তেমনই এক ভালোবাসার গল্প নিয়ে লিখতে বসেছি যা আপনার 'ভালোবাসা কি?' এই দুর্বোধ্য প্রশ্নের অন্তত ১% হলেও সন্ধান দিতে পারবে... আজকের রিভিউ সত্যিকারের ঘটনা নিয়ে তৈরি মুভির।
হাচি একটি বিশেষ প্রজাতির কুকুর, তার প্রকৃত মালিক তাকে নিয়ে কোন এক যায়গায় যেতে গিয়ে খাচাশুদ্ধ হাচি কে হারিয়ে ফেলে। আর হাচি ভাগ্যের টানে চলে আসে এক স্টেশনে , যেখানে সে একজন প্রফেসর কে খুজে পায়, প্রফেসর ট্রেনে করে তার ভ্রমন থেকে ফিরছিলেন। এত সুন্দর আর অসহায় কুকুরকে দেখে প্রফেসরের মনে মায়া হয় । প্রকৃত মালিক কে কুকুর ফিরিয়ে দেয়ার জন্য নানা বিজ্ঞপ্তি দিলেও মালিক কে খুজে পাওয়া যায় নি । আর এরই মধ্যে প্রফেসরের মনে কুকুরটির জন্য একরকম ভালোবাসা কাজ করে । আর কুকুরটি? সে তো তার প্রভুকে আগে থেকেই খুজে নিয়েছিল ...
হাচি' অর্থ অষ্টম এবং 'কো ' অর্থ প্রিন্স / ডিউক , অন্য অর্থে সৌভাগ্য , যেটা প্রফেসর তার এক জাপানী বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পারে । হাচি ছিল একিতা প্রজাতির রাজকীয় কুকুর , তারা প্রচন্ড প্রভুভক্ত হয় এবং তারা প্রভুর কোন মনরঞ্জন করত না । প্রভুর সংস্পর্শে থাকাটাই তাদের একমাত্র দায়িত্ব ছিল ।
এভাবেই হাচি বেড়ে উঠতে থাকে প্রফেসর এবং তার পরিবারের সাথে। প্রফেসর ট্রেনে করে তার কর্মস্থলে যেতেন আর অবাধ্য হাচি প্রফেসরের সাথে স্টেশনে প্রফেসরকে এগিয়ে দিয়ে আসত, আবার ঠিক ৫ টার সময় যেই ট্রেন আসে তার জন্য অপেক্ষা করত । প্রফেসরের সময় হেরফের হলেও হাচির কোনোসময় ই হেরফের হত না সময়জ্ঞানের । এভাবে হাচির অভ্যাসে পরিনত হয় ।
কিন্তু একদিন প্রফেসর আর কর্মস্থল থেকে ফিরে আসলেন না । হাচি ঠিকই তার মনিবের অপেক্ষায় রইল কিন্তু তার মনিব কোনোদিন ফিরে আসেনি । কিন্তু হাচি আশা ছাড়েনি , সে টানা ৯ বছর তার মনিবের অপেক্ষায় ছিল । ঋতু বদলেছে , তুষার পড়েছে , হাড় কাপানো শীত পড়েছে, প্রচন্ড রোদ পড়েছে , ঝম ঝম বৃষ্টি হয়েছে কিন্তু হাচি কখনই তার মনিবের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়েনি ।
মুভিটির শেষ পর্যায়ে প্রফেসরের স্ত্রী এসে যখন হাচিকে স্টেশনের ঠিক সেই যায়গাটিতে বসে থাকতে দেখে তখন সে উক্তিটি করে , 'Hachi ,You are still waiting'। পৃথিবীটা এমনই মানুষ মানুষকে কিছুদিনেই ভুলে যায় , প্রচন্ড ভালোবাসার বাবার মৃত্যুর শোক ভুলে যায় , কিন্তু কেউ কেউ থাকে যে কখনও আশা ছাড়ে না যে তার ভালোবাসার মানুষটি ফিরে আসবে। এটাই ভালোবাসা যা মানবতার উর্ধ্বে । আর আমি আমি মনে করি এমন ভালোবাসার ক্ষমতা মানুষের নেই , থাকলে আজও এত হানাহানি , ভেদাভেদ থাকতো না । আমি মনে করি সৃষ্টিকর্তা মানুষকে বাকশক্তি দিয়েছেন কিন্তু যাদেরকে দেননি তাদের ভেতরটা ভালোবাসায় পূর্ন করে দিয়েছেন । হাচি যার উদাহরন ।
সত্যিকারের হাচি মারা যায় ১৯৩৫ সালের ৮ই মার্চ। তার প্রভুর অপেক্ষায় তার জীবনাবসান ঘটে। হাচির কিছু ছবি আপনাদের জন্য গ্যালারি করে দিলাম ...
আসল হাচিকো
হাচির মৃত দেহের সামনে প্রফেসরের স্ত্রী সহ অন্যন্য
হাচির সম্মানে শিবুইয়া স্টেশনে নির্মিত প্রতিকৃতি
মনিবের কবরের পাশে হাচির স্মৃতিস্তম্ভ
এই সেই শিবুয়া স্টেশন যেখানে প্রফেসর আর হাচি একত্র হতেন
আশা করি আপনারা মুভিটা দেখবেন এবং কেমন লেগেছে জানাতে ভুলবেন না …
আইএমডিবি রেটিং ঃ ৮.১
ডাউনলোডঃ ১. Click This Link
২. অনলাইনে দেখুনঃ http://streamzzz.net/file/724/
আমারও একটা বিড়াল ছিল , কিন্তু বিড়াল অতটা প্রভুভক্ত নয় … চিন্তা করছি একটা কুকুর পুষব । অন্তত বাবা-মার পর কেউ তো নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসবে
বেশী বড় করে ফেললাম বোধোয়, কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না ঃ)।
লিখাটি পুর্বে মুভি লাভারস ব্লগে লেখক কতৃক প্রকাশিত .