আইজেনস্টাডের বিখ্যাত ছবি। এ দুজনের একজন ছিলেন নাবিক আরেকজন নার্স। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান পরাজয় মেনে নিলে একেবারেই অপরিচিত এ দুজন আরো অনেকের মতো আনন্দে নেমে এসেছিলেন নিউ ইয়র্কের টাইম স্কোয়ারে।
স্ট্রিট ফটোগ্রাফি কি? এর মানে কি পথে পথে ছবি তুলে বেড়ানো? অনেকটা তাই। এর বৈশিষ্ট্য হলো ক্যান্ডিড শট। হতে পারে বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে যেমন পথে, পার্কে, সি বিচে, শপিং মলে এমনকি পলিটিকাল মুভমেন্টে।
ফটোগ্রাফির ভাষায় এটি স্ট্রেইট ফটোগ্রাফির মধ্যে পড়ে। অর্থাৎ যা যেভাবে আছে, সেভাবেই ছবিতে তুলে আনার চেষ্টা। যেন সমাজের একটি আয়না। এ কারণেই স্ট্রিট ফটোগ্রাফি অনেক সময়েই হয়ে ওঠে আইকনিক, বিশেষ করে যখন তা কোনো একটি বিশেষ বিষয় ও সময়কে নির্দেশ করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আলফ্রেড আইজেনস্টাড-এর নিউ ইয়র্ক টাইমস স্কয়ারে তোলা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার বিজয়ের ফটো। (ওপরের ছবিটি)
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় স্ট্রিট ফটো স্রেফ একটি বিষয়কে উপস্থাপন করে। এ শ্রেণীর ফটোর আরো একটি দিক হলো এতে সব সময় ফটোগ্রাফারকেই অ্যাপ্রোচ করতে হয় ছবি তোলার জন্য। এর মানে এ নয় যে, আপনি প্রত্যেকের কাছে গিয়ে বলবেন, প্লিজ, আপনার একটি ছবি তুলতে চাই। এমন করলে বরং আপনার ছবি স্বতঃস্ফূর্ততা হারাবে। তবে ছবি তোলার উদ্যোগটি নিতে হবে আপনাকেই। এ তথ্য থেকে আরো একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার কথা। সেটি হলো এটি কোনো লাজুক ফটোগ্রাফারের কাজ নয়। আর যদি লাজুকতা থাকেই তবে তা দূর করার কাজটি নিজেকেই করতে হবে। যেমনটা পেরেছিলেন ব্রেসো। মজার ব্যাপার হলো, অতীত ঘাটলে দেখা যায় অনেক বিখ্যাত স্ট্রিট ফটোগ্রাফারই ক্যারিয়ারের শুরুতে যথেষ্ট শাই বা লাজুক ছিলেন।
লাজুকতার এ তথ্যটিকে একটু অন্যভাবে ব্যাখ্যা করলে কেমন হয়? সে ব্যাখ্যাটি হলো, ফটোগ্রাফার হিসেবে আপনি যদি লাজুক হয়ে থাকেন তবে আজ থেকেই স্ট্রিট ফটোগ্রাফির চর্চা শুরু করুন। এ শুরুটি করতে পারেন আপনার বাড়ির সামনের রাস্তাটি থেকেই, যেখানে আপনার পরিচিত লোকজন আছে। যারা আপনার ছবি তোলা দেখে তেড়ে মারতে আসবে না।
এভাবে বিষয়টি একটু ইজি হয়ে এলে না হয় একটু দূরে কোথাও যান ছবি তুলতে। প্রথমে অপরিচিত লোকজনের দিকে ক্যামেরা সরাসরি না-ই ধরলেন। অথবা টেলি লেন্স ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এ সংক্রান্ত একটি কৌশল পাবেন স্টিভ ম্যাককারির কাছ থেকে। তিনি কোনো এলাকায় গিয়েই ছবি তুলতে শুরু করেন না। প্রথমে আশপাশের লোকদের সময় দেন যাতে তারা অপরিচিত এ ফটোগ্রাফারের উপস্থিতি ভুলে যেতে পারে। তারপর তিনি ছবি তুলতে শুরু করেন।
ব্রেসো আরো মজার কাজ করতেন বলে জনশ্রুতি আছে। তিনি তার ছোট্ট লাইকা ক্যামেরাটি হাতের রুমাল দিয়ে পেচিয়ে নিতেন। মাঝে মধ্যে তিনি হাতটি মুখের কাছে তুলে আনতেন যেন মনে হয় তিনি নাক মুছছেন। আর ওই ফাকে ছবি তুলে নিতেন।
আরো একটি পদ্ধতি অনেক ফটোগ্রাফার ব্যবহার করেন। একেবারে হালকা মেজাজে টুরিস্টের মতো ছবি তুলতে বের হন এরা। ফলে আশপাশের লোকজন এদের দিকে তেমন মনোযোগ দেয় না। অবশ্য বাংলাদেশে এতেই লোকজনের আগ্রহ বেড়ে যেতে পারে অনেক গুণ।
তবে, স্ট্রিট ফটোগ্রাফির আসল লক্ষ্য হলো লোকজনের অলক্ষ্যে কোনো পাবলিক প্লেসের প্রাণ স্পন্দনটি তুলে আনতে পারা।
=============
যাযাদি, ১৯-০২-০৮
=============
স্ট্রিট ফটোগ্রাফি : একটি উদাহরণ ও টুকটাক কাজের কথা
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
২০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর


আলোচিত ব্লগ
=এখানে আর নিরাপত্তা কই!=
কোন সে উন্নয়নের পথে হাঁটছি বলো
এই গিঞ্জি শহর কি বাসের অযোগ্য নয়?
শূন্যে ভাসমান রাস্তা-নিচে রাজপথ
তবু কি থেমে আছে যানজট কিংবা দুর্ঘটনা?
দৌঁড়ের জীবন-
টেক্কা দিতে গিয়ে ওরা কেড়ে নেয় রোজ... ...বাকিটুকু পড়ুন
এই শহর আমার নয়
এই শহর আমার নয়
ধুলিমলিন, পোড়া ধোঁয়ায় ঘেরা
ধূসর এক স্বপ্নহীন চেহারা।
এই শহর, আমার নয়।
ঘোলাটে চোখে জমে হাহাকার,
চেনা মুখেও অচেনার ছাপ।
পথে পথে স্বপ্নরা পোড়ে,
আলোর ছায়ায় খেলে আঁধার।
এই শহর... ...বাকিটুকু পড়ুন
টিউবওয়েলটির গল্প
এটা একটি টিউবওয়েল।
২০০৯ সালে, যখন আমি নানী বাড়ি থেকে লেখাপড়া করতাম, তখন প্রতিদিন এই টিউবওয়েল দিয়েই গোসল করতাম। স্কুল শেষে ক্লান্ত, ঘামাক্ত শরীর নিয়ে যখন ঠান্ডা পানির ঝাপটায় নিজেকে স্নান... ...বাকিটুকু পড়ুন
গাজায় গণহত্যা : মুসলিম বিশ্বের নীরব থাকার নেপথ্যে !
গাজার প্রতিটি বিস্ফোরণে কেবল ধ্বংস হয় না —প্রতিধ্বনিত হয় একটি প্রশ্ন: মুসলিম বিশ্ব কোথায় ? মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির আয়নায় এই প্রশ্নটি এক খণ্ড অন্ধকার, যা শুধু আন্তর্জাতিক রাজনীতির ব্যর্থতা... ...বাকিটুকু পড়ুন
লেখকের প্রাপ্তি ও সন্তুষ্টি
একজন লেখক যখন কোন কিছু লিখেন, তিনি কিছু বলতে চান বলেই লিখেন। বলাটা সব সময় সহজ হয় না, আবার একই কথা জনে জনে বলাও যায় না। তাই লেখক কাগজ কলমের... ...বাকিটুকু পড়ুন