হামহাম যাওয়ার ইচ্ছে বহুদিনের ছিল। সেই ২০১১ সালে আবিষ্কার হওয়ার পরই যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু নানা প্রতিকূলতায় যাওয়া হয়নি। এবার একটা সুযোগ হল তাই দেরি না করে চলে গেলাম। বরাবরের মত আমরা আ্যডভেঞ্চার প্রিয় ২ বন্ধু ডিসিসন নিলাম প্রথম গন্তব্য আমাদের হামহাম। এ জন্যে আরো কয়েকজনকে বললাম তারা যাবে কিনা, তারা ঝর্না দেখে যাওয়ার ইচ্ছে পোষন করলেউ যাওয়ার রাস্তার কথা শুনে পিছনে দৌড় দিল। তাই অগত্যা ২ জনই ঠিক করলাম যাব। যেই কথা সেই কাজ, বৃহঃস্পতিবার রাতে গাটকি বোচকা বেধে সায়েদাবাদের দিকে রওনা দিলাম। যেয়ে হানিফ পরিবহনের শ্রিমঙ্গলের টিকেট কেটে উঠে পড়লাম বাসে। কিছুদুর না যেতেই প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু যা বাসের গতি কমিয়ে দিল। এই বৃষ্টি শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল, ভাবলাম হামহাম যাওয়ার স্বপ্ন কি বিসর্যনই দিতে হয়, কারন বৃষ্টিতে পাহার খুব ই বিপদজনক। আমরা ভাবছিলাম বাস যদি ৪ টায় নামিয়ে দেয় তাহলে এতো রাতে থাকবো কই। পরে আমাদের সব আশংকা শেষ করে বাস আমাদের শ্রিমঙ্গলে হানিফ কাউন্টারে নামিয়ে দিল ভোর ৫ টা ৪৫ মিনিটে। (এতক্ষন লাগেনা, বৃষ্টির কারনে এতো দেরি) । ভোর ৫ টা ৪৫ এ তো কনো হোটেল খোলেনা, তাই ২ বন্ধু শ্রিমঙ্গল শহর প্রদক্ষিন করার সিদ্ধান্তে উপনিত হলাম। সারে ৬ টার দিকে একটা হোটেলে ঢুকে রুম নিয়ে কাপর চোপর ছেরে হামহাম যাওয়ার জন্যে তৈরি হয়ে নিলাম। রুমে ব্যাগ রেখে বেরিয়ে পড়লাম হামহাম মিশনে। এদিকে একজন দীনদরদি সিএনজি ওয়ালা আমাদের দেখেই বুঝে ফেলে আমরা কোনদিকে যাব। সে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে আমাদের নিয়ে যাওয়ার জন্যে (ধান্দাবাজি আর কি) । কিন্তু আমরা পন করলাম ধান্দাবাজের সিএনজি তে নয়। হোটেলে নাস্তা করে সি এন জি খোজার মিশনে নেমে পড়লাম। হোটেলের সামনেই পেয়ে গেলাম একজনকে। ১৩৫০ টাকা আপ-ডাউন মিটিয়ে উঠে পড়লাম কলাবন পারার উদ্যেশ্যে। (বেচারা ধান্দাবাজ পিছনেই ছিল, করুন দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে ছিল) । যাওয়ার পথে ফিনলে চাবাগান, লাওয়াছড়া বন দেখতে দেখতে মনজুড়িয়ে গেল। দেড় ঘন্টা পর কলাবন পারায় এসে পৌছালাম। এখানে চাম্পারার চা বাগান থেকে কলাবন পাড়া পর্যন্ত রাস্তা কাচা, তাই সবসময় সিএনজি আসতে পারেনা। আমাদের সিএনজিওয়ালা আমাদের মতই আমুদে, তাই আমাদের নিয়ে এসেছে সরাসরি। সেই গাইড ঠিক করে দিল, ২০০ টাকায় মিটিয়ে দিল জয়লাল কে। জয়লাল আমাদের নিয়ে রওনা দিল হামহাম
কিছুদুর যাওয়ার পড়েই চোখে পড়লো সরকারি নোটিশবোর্ড
গাইডকে জিজ্ঞাসা করলাম আমাদের কোন পথে নিয়ে যাবে, সে বলল শর্টকাট একটা রাস্তা আছে যেটা পাহারি, ঝিরি পথে নাকি অনেক পানি এবং স্রোত তাই ওটা একটু বিপদজনক।
জঙ্গলের ভেতরে
কিছুদুর যাওয়ার পরই এরকম সাকো পেলাম। এরকম সাকো মোট ৪ টা পার হতে হয়।
খালি উঠছি ই । টিলা আর শেষ হয় না। এরকম উচু টিলা প্রায় ৭-৮ টায় উঠতে হয়। টিলায় উঠতে উঠতে শরিরের শক্তি শেষ হয়ে যাচ্ছিল। এই টিলা বিপদজনক ও। রাস্তা একদম কিনারা ঘেষে, পা পিছলে পড়লেই কয়েকশ ফুট নিচে জঙ্গলের মধ্যে পড়তে হবে। আমি কালেমা পড়তে পড়তে টিলা পারি দিয়েছি। এই সময়ে নিত্য সঙ্গি বাশের মর্ম বুঝতে পারলাম
সবচেয়ে বড় টিলা থেকে নিচে নেমে ঝিরি পথে এসে পড়লাম। আমাদের কেউ এখনো আছার খেলনা ক্যানো ভেবে শঙ্গিত হয়ে গেলাম, ঠিক এইখান থেকে পেছনে ফিরেই দেখি আমার বন্ধু আছার খেয়ে পড়ে আছে

ঝিরি পথ
ক্যানো জানি আমাদের জোক ধরছিল না। হয়ত ওই রাস্তায় জোক কম ছিল। আমার ফ্রেন্ডকে ২ টা জোক ধরলে সে রিতিমত আতংকিত হয়ে ডাকাডাকি শুরু করল। পড়ে গাইড যেয়ে জোক ছারিয়ে দিল। আর আমাকে কখন ধরেছে তা টের ই পাইনি। যখন উঠালাম, তখন এই অবস্থা।
পৌছে গেছি হামহাম
হামহাম
ফটোসেশন সেরে নেমে পড়লাম পানিতে। আমরা তাউ অনেক পানি পেয়েছি হামহামে। বর্ষাকালে এখানে আসাটা ঝুকিপূর্ন কারন ঝিরি পথে প্রচুর পানি এবং স্রোত থাকে তাই আসাটা একটু কঠিন, কিন্তু তখন আবার হামহামে প্রচুর পানি থাকে ঝর্নায়।
বিএসএফ এর দখল এর ব্যাপারটা গাইড জয়লালের কাছে থেকে শুনলাম। সে বলল, বি এস এফ এসেছিল কিন্তু পরে কলাবনবাসি এবং বিজিবি মিলে তারিয়েছে। এর মানে ব্যাপারটা সত্যি ছিল। উল্যেখ্য যে হামহাম এর নদির একটু দূরে গেলেই বি এস এফ ক্যাম্প।
১ ঘন্টা থাকার পর যখন চলে যাব তখন দেখলাম আরেকদল এসে হাজির। আমরাই ওইদিন প্রথম ছিলাম। আমাদের আসতে ২ ঘন্টা লেগেছিল। যেতেউ তাই।
যাওয়ার পথে
কলাবন ফেরার পথে জঙ্গলে আরো ২ দলের সাথে দেখা। একদল জজ্ঞেস করলো ভাই হাফ ঘন্টায় যেতে পারবো তো? আমরা ২ জন শুনে তাজ্জব বনে গেলাম। পরে তাদের বলে দিলাম ২ ঘন্টা লাগবে, বেশিও লাগতে পারে আপনাদের হাটার গতির ওপর নির্ভর করে।
বনে যে জোককে রক্ত দেব বলে ভেবে এসেছিলাম সেই জোকের দেখা পেলাম তাউ ১ টা। কিন্তু অলতারনেটিভ ছিল মানে মশা। মশা আবার যেনতেন মশা না, এলিট শ্রেনির মশা মানে এডিস মশা। সবচেয়ে বেশি রক্ত মশাকেই দান করেছি। কলাবন ফিরে জয় লাল কে ২০ টাকা বখশিশ সহ ওর পাওনা দিয়ে ফিরে চললাম।
আসার পথে লাওয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতরে সেই বিখ্যাত রেলাইন।
আসার পথে চা বাগানে ৭ লেয়ারের চা খাওয়ার জন্যে ঢুকলাম। প্রথম ৬ টা লেয়ার স্বাদ লাগেনি, শুধু শেষের লেয়ারটা স্বাদ লেগেছে। শ্রিমঙ্গল ফিরে রেস্ট নিয়ে সন্ধায় সিলেটের উদ্যেশ্যে যাত্রা করলাম।
যেভাবে যাবেন
অনেকেই এর আগে বর্ননা দিয়েছে, আমি আমরা যেভাবে গিয়েছি সেটার রেট জানিয়ে দিচ্ছি
ঢাকা-শ্রিমঙ্গল বাস হানিফ - ৩৮০ টাকা । সায়েদাবাদ/ফকিরাপোল থেকে ছাড়ে শেষ বাস ১১ টায়
ভোরে পৌছালে হোটেল নিয়ে নিল ভাল হবে। হোটেল ভারা বিভিন্ন রকমের। আমরা ৫০০ টাকা ভারায় ডাবল বেড এ ছিলাম।
হোটেলে ব্যাগ রেখে ৭ টার ভেতরে হামহাম রওনা দেয়া ভাল হবে। সি এন জি বা জীপ নিতে পারেন। সি এন জি নিলে শহরের প্রধান মোরের ওখানেই পাবেন। আমরা ১৩৫০ টাকা মিটিয়েছিলাম আপ-ডাউন। দল করে গেলে জীপ নিলে ভাল হবে। জীপ পাওয়া যাবে স্টেশন রোডের পাম্প থেকে অথবা স্টেশনের উলটা দিকে অনেক জীপ থাকে। যেটাতেই যান, সরাসরি কলাবন পারায় চলে আসবেন। অনেক সময় চাম্পারা চা বাগান থেকে কলাবন রাস্তা খারাপ থাকে, সি এন জি আসতে পারেনা। হেটে যেতে হয়।
কলাবন এসে গাইড পেয়ে যাবেন, ২০০-২৫০ টাকা। আমাদের সি এন জি ওয়ালা ২০০ টাকায় মিটিয়ে দিয়েছিল। পরে অবশ্য ২০ টাকা বখশিস দিয়েছিলাম
সাথে লবন, সরিষার তেল, মশা নিরধক মলম নিয়ে যাবেন। জোক ছারাতে লবন দরকার হবে, আর মশার মলম অবশ্যই নিবেন(আমরা না নিয়ে হারে হাড়ে টের পেয়েছি)। খাওয়া দাওয়া হালকা নিবেন, ভাল হয় শুধু স্যালাইন পানি নিলে। বেসি ভারি হলে পাহারে উঠতে সমস্যা হবে।
২ ঘন্টা লাগবে যেতে, ৩ ঘন্টাউ লাগতে পারে, যাওয়া আসা ৪-৫ ঘন্টা। সারে ৭ কিলোমিটার ভেতরে হামহাম। শ্রিমঙ্গল ফিরে এসে চাইলে রাতে ঢাকায় রওনা দিতে পারেন, অথবা সিলেট যেতে পারেন। আমরা সন্ধায় সিলেট রওনা দিয়েছিলাম। পরের দিন জাফ্লং ঘুরে ওই দিন রাতেই ঢাকা ব্যাক করেছিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১২:০৭