"আমি ধর্ম কর্ম পালন কম করলেও, প্রচণ্ড ভাবে বিশ্বাসী একজন মানুষ।মেডিকেলে থাকতে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি ধুমায়ে তাবলীগ ও করেচি।
সে যাই হোক কথা শুধু লম্বা হয়ে যায়
আসল কতায় আসচি।
গিয়েচিলুম ফুফুর বাড়ী।দুপুরে জম্পেশ খানা দানার পর চমৎকার একটা বিউটি স্লিপ দিয়ে সন্ধ্যার সময় ফুরফুরে মেজাজে বের হলাম এলাকা ঘুরে দেখতে। সেখানে আমি আগেও গিয়েচি কয়েক বার। সুতরাং এলাকাটি আমার পরিচিত।ফুফুর বাড়ীর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে খরস্রোতা ধলাই নদী। সিরাম স্রোত। মানি নদী পার হওয়ার উপায় নাই
যাইহোক নদীর পাড়ে বাতাস খেয়ে আমি আর আমার ফুফাত ভাই গেলাম স্থানীয় বাজারের দিকে। গ্রামের মানুষ দেখলাম সবাই সবাইকে চেনে। শহরের ইট কাঠ পাথরের কথা এক্ষণে নাই বা বললাম। বাজারে আমার মূল আকর্ষণ হল গরুর দুধের সর দিয়ে বানানো চা। আহ, অতি উপাদেয় বস্তুটি। চোখ বন্ধ করলে এখনও আমি চায়ের স্বাদ পাই
এই দোকানের লোক জন আমাকে চেনে। সুতরাং বলতে হল না, বসার সাথে সাথেই চা চলে আসলো। ধীরে ধীরে জমে উঠল আড্ডা। এই আড্ডা যে আমাকে কোথায় নিয়ে যাবে জানলে তখনই উঠে আসতাম। কিনতুক হায়
এলাকার কিছু লোক জন, কিছু যুবক( দেখে আমার কাছে প্রথমে শিবির শিবির মনে হইসিল) সবাই মিলে গল্প চলছে। সবার অজান্তে (নাকি কেউ ইচ্ছা করে এই প্রসঙ্গ তুলসে আমার মনে নাই) আড্ডার বিষয় বস্তু চলে গেল ধর্মের দিকে। জানিনা কেন, এই বিষয় পেয়ে লোক জন দেখি জাকায়ে বসলো। এবং আমি বুজতে পারলাম এরা সবাই স্থানীয় এক পীরের ভক্ত।
তারা সবাই কিভাবে বুজল আমি জানি না, যে আমি পীর টির খুব একটা কেয়ার করি না( সত্যিকারের কিছু বুজুর্গ আছে, এটা আমি মানি এবং তাদের প্রতি আমার পূর্ণ শ্রদ্ধা আছে)।
তাদের মধ্যে উচ্চকণ্ঠ যে মুরিদ তার নাম কাইয়ুম।সে রীতিমত উত্তেজিত আমার প্রতি।
সে আমাকে বলল, " আফনে মন অয় তবলিগ খরইন?? নানি??" ( নানি?? মানে হল ঠিক না???)
আমি বললাম," মাঝে মাঝে যাই। কেন?? কোন সমস্যা??"
সে বলে," জিনা সমইসসা কুন্তা নায়, আরবার আসেও।। ( তার কথায় বিদ্রুপের সুর)
বললাম, " কি সমস্যা??"
বলল, " আফনারা তো গিয়া মসিদও( মসজিদে) খাইন আর গুমাইন। মসিদর পাখ পবিত্রতা নাশাইলাইন। আইচ্চা বাই, আফনে তো ডাখতর মানুষ, আফনে জানবা। আফনে আমারে কউক্কা ছাই, ( শুরু হইল তার বয়ান)
নবী করিম (সাঃ) যখন মেরাজ ও গেলা, তখন আসমানর এখটা জাগাত গিয়া জিব্রিল (আঃ) কইলা,"ইয়া রসুল আল্লাহ, আমি আর যাইতাম পারতাম নায়। এখন আফনার এখলা যাওয়া লাগব।" এর বাদে নবী কিলা আল্লাহর আরশ পর্যন্ত গেলা??"
কথাটা বলে সে এমন একটা ভাব ধরল যেন এইমাত্র সে বিরাট একটা ধর্ম যুদ্ধ জয় করল। তার সাঙ্গ পাঙ্গ রাও রসিয়ে রসিয়ে খুব উপভোগ করছে আমার অবস্থা। আমার ফুফাত ভাই বিব্রত হয়ে বলল, "ধুর বাদ দে তো। চল জাইগা।" আমিও একটু চিপায় পইরা গেসিলাম।
হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকের মতো আমার মনে পরে গেল একটা আন ক্লিনড বাম্বু মার্কা প্রশ্ন
আমি খুব বিনাইন ভঙ্গীতে বললাম,"কাইয়ুম ভাই, আসলে আপনার কথায় যুক্তি আছে। কিন্তু আফনারে এখটা কতা জিগার করি??"
সে বলল, " অবশ্যই ডাখতর সাব কউক্কা।"
আমি বললাম," অজু করা তো খুব জরুরী জিনিস। ঠিক নানি??"
সে বলে," অবশ্যই"
আমি বললাম ," আফনার পীরে অজু করা হিকাইন নি আফনারারে??"
সে খুব আহত গলায় বলে, " ইতা কিতা মাতইন ডাখতর সাব?? অজু আরবার হিকানি লাগে নি??"
আমি বললাম, " তাইলে আমারে আফনে এখটা প্রশ্নের উত্তর দেউক্কা।"
"কিতা প্রশ্ন কউক্কা ছাই" কাইয়ুম এর উত্তর।
আমি বললাম," কইন চাই দেকি, কোন কোন ইবাদতের আগে অজু করা ফরজ??"
কাইয়ুমের তো মাথায় বাজ পরল মনে হইল। পুরা ঘর পিন ড্রপ সাইলেন্স।।
আমি বিদ্রুপের হাসি নিয়ে তাকায় আছি মুরিদানে এবাদ পীরের দিকে।
পরে বললাম," ভাই যারা কোন ইবাদতের আগে অজু করা ফরজ এইটা জানে না, তাদের তো আগে এইটা জানা উচিত। নবী (সাঃ) কিভাবে আল্লাহর আরশে গেছেন এইটা পরে জানলেও চলবে।"
মনে মনে ভয় ও পাইসিলাম, ধইরা নি আবার মাইর টাইর দেয়।যাইহোক বাঙ্গালী মেহমানের অপমান করতে জানেনা। আর জানেনা বলেই, সবার কাছ থেকে অমায়িক ভঙ্গীতে বিদায় নিয়ে আসতে পেরেছি।
পরে ফুফাত ভাই এর কাছে জানতে পারলাম, এবাদ পীর, একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার, কোন কারনে সে মানসিক ভাবে ভারসাম্যহীন। কিন্তু সে নাকি খুব নিরীহ গোছের লক।চখে প্রায় দেখেনা, মানে অন্ধ। তার মুরিদেরাই নাকি তার নামে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করে বেড়ায়।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে ভণ্ড পীরের হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখুন, আমিন।।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:১২