কিনবো কিনবো করে অবশেষে কিনে ফেললাম HP ProBook 4430s, কোর আই ফাইভ (সেকেন্ড জেনারেশন)। আগেরটা ছিলো Acer, তিন বছর ভালো সার্ভিস দিলো, এখনো পুরোপুরি ঠিক আছে। ওটা সেল করে দেবো চিন্তা করছি। এবার পছন্দ করলাম HP। মূল কারন, দেখতে সুন্দর। দাম পড়লো ৫১,১০০ টাকা, ১ বছরের ওয়্যারেন্টি সহ। যেকোন জিনিস কেনার পরে সেটা খুঁটিয়ে দেখা আমার স্বভাব । ভাবলাম এটা নিয়ে একটা রিভিউ পোস্ট দেই, যারা ল্যাপটপ কেনার চিন্তা করছেন তাদের কাজে দেবে।
এই ল্যাপটপের উপর এবং ভেতরের অংশ এ্যালুমিনাম শিট দিয়ে তৈরি, যা দেখতে খুব ভালো লাগে, ময়লা হয় কম, এবং টেকসই। ওজনও খুব বেশি না। বন্ধ অবস্থায় মোটা না পাতলা বোঝাতে গেলে বলতে হবে, মিডিয়াম। হিট হয় খুবই কম, অবশ্য এই কৃতিত্বটা এইচপির চেয়ে ইন্টেলের বেশি। কারন চিপসেটের "নর্থ ব্রিজ" (যা একই সাথে গ্রাফিক্স প্রসেসর) এখন মূল প্রসেসরের মধ্যে ভরে দেয়া হয়েছে। নর্থ ব্রিজ চিপ প্রচুর হিট জেনারেট করতো যার জন্য পুরো ল্যাপটপই খুব বেশি গরম হয়ে যেত।
এই ল্যাপটপের যা ভালো লাগেনি তা হলো টাচ্প্যাড, যার রেসপন্স খুবই খারাপ। আরেকটা সমস্যা হয়েছে ড্রাইভার ডাউনলোড করতে গিয়ে। একই মডেলের ল্যাপটপে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ডিভাইস ইউজ করায় এইচপির সাইটে ড্রাইভারও দেয়া আছে এক গাদা। এই ল্যাপটপের জন্য কোনটা, তা খুঁজে বের করে ডাউনলোড করতে গিয়ে যথেস্ট গলদঘর্ম হতে হয়েছে। সাথে কোন সিডিও দেয়নি।
আরো একটা সমস্যা হয়েছে উইন্ডোজ সেভেন এবং অফিস ২০১০ এর পাইরেটেড কপি এ্যাক্টিভেট করতে গিয়ে। একই ডিভিডি থেকে ইন্সটল করা আমার ডেস্কটপে, সেখানে সুন্দর কাজ করে কিন্তু ল্যাপটপে সেই ক্র্যাক কাজ করেনা। অদ্ভুত ব্যাপার। পরে নেটে অনেক খুঁজে নতুন এ্যাক্টিভেটর ডাউনলোড করে কাজ করাতে পেরেছি দুইটাই।
প্রসেসর: ইন্টেল সেকেন্ড জেনারেশন কোর আই ফাইভ, যার কোড নেম Sandy Bridge, 32nm process. প্রথম জেনারেশন কোর প্রসেসরের হিট শিল্ড খুললে দেখা যেত দুইটা চিপ বা ডাই পাশাপাশি বসানো আছে। একটা মূল প্রসেসর (যা মূলত দুইটা প্রসেসর একই সাথে - যার জন্য বলা হয় ডুয়াল কোর), আরেকটা হলো চিপ সেটের নর্থ ব্রিজ+ গ্রাফিক্স প্রসেসর, যা একসময় মাদারবোর্ডে থাকতো, এখন প্রসেসরের সাথে থাকে। সেকেন্ড জেনারেশন কোর প্রসেসরে এই দুইটা চিপই একসাথে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে, অর্থাৎ একই ডাইতে দেয়া হয়েছে। ফলে প্রসেসর খুললে আপনি দেখবেন একটাই চিপ। এর ফলে হিট জেনারেট হচ্ছে কম, বিদ্যুত খরচও কম। প্রসেসর, নর্থ ব্রিজ এবং গ্রাফিক্স চিপের মধ্যকার ইন্টারকানেকশন আরো ফাস্টার হয়েছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে টার্বো বুস্ট টেকনলজি যা দিয়ে কম গিগাহার্জের প্রসেসর দিয়ে বেশি গিগাহার্জ প্রসেসরের সমমানের স্পিড পাওয়া যাবে। মূল কথা দাড়ায় সেকেন্ড জেনারেশন প্রসেসর দিয়ে আপনি আগের চেয়ে বেটার গ্রাফিক্স পাবেন, বেশি ব্যাটারি ব্যাকাপ পাবেন এবং কম হিট হবে আপনার ল্যাপটপ। উল্লেখযোগ্য পরিমান বেশি পার্ফরমেন্স পাবেন। আরো আছে হাইপার থ্রেডিং প্রযুক্তি যা দিয়ে প্রসেসরের একেকটা কোর, ভার্চুয়ালি দুইটা কোর হিসেবে কাজ করবে। আপনার ওএস দেখবে দুই কোর মিলে টোটাল ৪টা প্রসেসর। আরো আছে VT বা Virtualization Technology, যা থাকলে আপনি ম্যাক ওএস ইন্সটল করতে পারবেন পিসি বা ল্যাপটপে।
র্যাম: এখানে ২জিবি ডিডিআর-থ্রি র্যাম ব্যবহার করা হয়েছে Elpida ব্র্যান্ডের, যা জাপানের NEC - Hitachi এর তৈরী। সর্বোচ্চ ৮ জিবি র্যাম লাগানো যাবে, তবে তার জন্য ৬৪ বিটের উইন্ডোজ ইন্সটল করতে হবে।
আপডেট: ৮জিবি র্যাম ইন্সটল করলাম ট্রান্সেন্ড ব্রান্ডের। প্রতি ৪জিবি মডিউলের দাম পড়লো ২৬০০ টাকা।
হার্ডডিস্ক: ৫০০ জিবি, ৭২০০ আরপিএম, সাটা-২, তোশিবার তৈরি।
ইউএসবি: ৪টা ইউএসবি পোর্ট আছে, এর মধ্যে একটা শুধু USB 3.0 সাপোর্ট করে। এখন পোর্টেবল হার্ডড্রাইভ এবং পেন ড্রাইভ USB 3.0 দিয়ে আসা শুরু করেছে যা দিয়ে অনেকগুন বেশি স্পিডে ডাটা ট্রান্সফার করা যায়।
ডিসপ্লে: ১৪.৬ ইঞ্চি ডিসপ্লে প্যানেল যা Innolux এর তৈরি। Innolux তাইওয়ানের সবচেয়ে বড় ডিসপ্লে ম্যানুফ্যাকচারার। এর কন্ট্রাস্ট খুবই ভালো, নিখুঁত ঝকঝকে ছবি পাওয়া যায়।
মাদারবোর্ড: এই ল্যাপটপের মাদারবোর্ড তৈরি করেছে "ফক্সকন"। ফক্সকন এ্যাপলের আইফোন ও আইপ্যাডও তৈরি করে দেয়।
টাচপ্যাড: Synaptic এর তৈরি। অতি জঘন্য। আমার পুরানো ল্যাপটপেও Synaptic এর টাচপ্যাড কিন্তু সেটা অনেক ভালো।
ওয়েব ক্যাম: এইচপির তৈরি। বলা আছে হাই-ডেফিনেশন, কিন্তু এইচডি কোয়ালিটি ছবি মনে হয়না। যদিও ঝকঝকে ছবি, ওয়েব ক্যাম হিসেবে খুবই ভালো কিন্তু এইচডি বললে আরো ভালো কিছু হবার কথা।
মাইক্রোফোন এবং স্পিকার: এই দুইটারই প্রশংসা করতে হয়। মাইক্রোফোন স্টেরিও, যা ল্যাপটপে বিরল। স্পিকারও ভালো। স্কাইপ দিয়ে টেস্ট করেছি, খুব ভালো কাজ করে। HDMI পোর্টও আছে, যা দিয়ে সহজেই টিভিকে মনিটর হিসেবে কাজ করানো যায় সাউন্ড সহ।
কিবোর্ড: চিকলেট টাইপ কিবোর্ড, ভালোই।
কার্ড-রিডার ও ডিভিডি ড্রাইভ: কার্ড রিডার JMicron এর তৈরি, ডিভিডি রাইটার এচইপির।
ওয়াইফাই ও ব্লুটুথ: দু'টারি প্রসেসর Atheros এর তৈরি। সাথে PCMCIA স্লট আছে যেখানে বিভিন্ন ধরনের মডেম লাগানো যাবে। সুবিধা হলো ইউএসবি মডেমের মতো বাইরে কিছু বের হয়ে থাকবেনা।
পরিশেষে বলবো, দেখুন একটা ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ, কিন্তু এর মধ্যে বেশিরভাগ যন্ত্রাংশই অন্য কোম্পানি থেকে কিনে এনে লাগানো। এজন্য যে ল্যাপটপই খুলবেন, দেখবেন অনেক কিছুই কমন। আর এজন্যই ল্যাপটের দাম এখন এতো কম। আমরা যেভাবে ব্র্যান্ডের নাম ধরে বাছাই করি, এটা ভালো না সেটা ভালো, এটা আসলে এখন কাইন্ড অফ ইউজলেস। দেখতে হবে কোন মডেলের ল্যাপটপের ভেতরে কি ব্র্যান্ডের পার্টস আছে। কিন্তু দোকানে সেভাবে দেখার কোন সুযোগ নেই। তখন নেটে খুঁজে দেখতে হবে কোন রিভিউ আছে কিনা। বাকিটা ভাগ্য। ধন্যবাদ কস্ট করে পড়ার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ১০:১৬