অফিস থেকে ফিরে ড্রেস চেন্জ করেই রুটিন মত দিলাম একটা ঘুম। প্রচন্ড ক্ষুধা নিয়ে ঘুম থেকে উঠলাম সাড়ে দিন ঘন্টা পরে। কিচেনে গিয়ে দেখি রান্না করা কোন খাবার নাই।

ভীষন মন খারাপ। একটু পর মেজাজটাও খারাপ হয়ে গেল যখন কিচেনের ক্যাবিনেটে ঝোলানো রোস্টারে দেখলাম আজ রবিবার, তারমানে আজকে আমার রান্নার দিন।

এইবার খাবার না থাকার রহস্য বুঝলাম। কি আর করা! পেটে প্রচন্ড ক্ষুধা নিয়েই রাধতেঁ বসে গেলাম।

শিরোনামহীন সবজি খিচুড়ী রান্না করার বুদ্ধি দিল। আমি বল্লাম সেই সাথে থাকুক ভূনা গোশত। ও সায় দিয়ে বল্ল পারলে সাথে সালাদও করো।


ফ্রিজে সবজি বলতে যা পেয়েছি, জেদ করে সব এনে জড়ো করে রাখলাম কিচেন ডেস্কে

ফ্রিজ থেকে গোশত বের করে কুসুম পানিতে ভিজিয়ে রাখলাম।

চপিং বোর্ড আর চাকু (এইটাকে চাকু না বলে চাপাতি বলাই ভাল


সব সবজি থেকে একটু করে কেটে একটা প্লেটে গুছিয়ে রাখলাম। এখানে আছে, ফুলকপি; বেগুন; কুমড়ো; গাজর; লাল আর সবুজ ক্যাপসিকাম; মরিচ।

সালাদের ইনগ্রেডিয়েন্টঃ টমেটো, শসা, গাজর, মরিচ, পেয়াঁজ আর ধনেপাতা কুচি। শসাগুলো ইটালিয়ান স্টাইলে কাটা। সাথে অলিভ থাকলে ১৬ কলা পূর্ন হতো অবশ্য।
সাথে এক টুকরো লেবু আর মাঝে খানিকটা সরিষার তেল। সালাদে এ দুটো জিনিস মিশিয়ে দিলে সালাদের স্বাদ দ্বিগুন বেড়ে যায়। বিশ্বাস না হলে পরখ করেই দেখুন না!


আলু, ডাইস করে কাটা। ভূনা গোশতে আলু দিতে হয় না, কিন্তু আলু আমাদের বাসার সবার খুবই ফেবারিট। প্রতিদিনের কোন না কোন মেনুতে আমরা আলু রাখার চেষ্টা করি।

চারটে বড় সাইজের পেয়াঁজ কুচি, সাথে ৫টা মরিচ। খিচুড়ী আর গোশত উভয়ের জন্য।

৪ কাপ ধোয়া চাল; খিচুড়ীর জন্য

দেড় কাপ ধোয়া মসুর ডাল; খিচুড়ীর জন্য

গোশতের জন্য গরম মসলা

দু চা চামচ হলুদ, খিচুড়ীর জন্য

ছয় চা চামচ রাধুনিঁ গোশতের মসলা

২০০ গ্রাম পাম তেল,

১০০ গ্রাম আয়োডিনযুক্ত নুন

চালের উপর কাটা সবজিগুলোকে ছড়িয়ে দিয়েছি।

সবজি, চাল, তেল, নুন , পেয়াজ আর হলুদের মিক্সার
পানিঃ পরিমান মত

গোশতের উপর আদা-রসুন বাটা (দেড় চা চামচ করে), গরম মসলা মরিচ আর পেয়াজঁ।

এরপর রাধুঁনি মসলা, তেল আর নুন মিশিয়ে সোজা ঘুটা। (ব্যাচেলর অথবা এক্সপ্রেস পদ্ধতি)

আলু মেশানোর পর
এরপর চুলায় বসিয়ে দিন। মিনিট পাঁচেক পর হালকা নেড়ে দিয়ে পরিমানমত পানি দিয়ে ঢেকে দিন।

রাইস কুকারে খিচুড়ি হয়ে বসে আছে। সময় লেগেছে ২৭ মিনিট।

গোশতও হয়ে গেছে, (সময় খেয়াল করি নাই। চড়িয়ে দিয়ে ছবি আপলোড করতে বসে গিয়েছিলাম! একটু পর গিয়ে দেখি প্রায় হয়ে গেছে!

শিরোনামকে বলেছিলাম ১০ মিনিট পর আমাকে গোশত নেড়ে দেবার কথা মনে করিয়ে দিতে, সে দেয়নি।


এই ছিলো আমার গত রবিবার রাতে নিজ হাতে রান্না করা ডিনার।

ছবিগুলো আম্মুকে দেখালাম। আম্মু তো বিশ্বাসই করতে পারছে না! করবে কিভাবে? দেশে থাকতে যে ছেলেকে এক গ্লাস পানিও আম্মুকে ঢেলে দিতে হয়েছে, সে ছেলে এমন দাবী করলে বিশ্বাস করাটা কষ্টই বৈকি!
এই পোস্টা দেয়ার কথা ছিলো তিন দিন আগে। রান্না করে ছবি তুলে রিসাইজ করে অর্ধেক আপলোড করার পর পিসির যান্ত্রিক গোলযোগের কারনে পোস্টাতে পারিনি। পোস্টানো তো দূরের কথা, তিন দিন নেটেই ঢুকতে পারিনি। তাই টাটকা টাটকা ছবি দিয়ে এই বাসি পোস্ট।

বিলিভ ইট অর নট, জীবনে প্রথম এই আইটেম রান্না করলাম। রান্না শেষে শুধু খাবারের ঘ্রান শুকেঁই রুমমেট দুইজন ১০ মুখে প্রশংসা করল। খাবার সময় তারা কোন কথা বলেনি। শুধু গোগ্রাসে গিলেছে। পরে দেখি আমার ভাগের অংশ নিয়েই প্রায় টানাটানি পরে যাবার মত অবস্থা! তাই সুযোগ বুঝে আমিও তাদের সাথে প্লেট নিয়ে বসে পড়ি।

এরপর ভাবলাম, পেট পূজো তো জম্পেশ হলো, এইবার এইটা দিয়ে একটা পোস্ট লিখে ফেলি। তাছাড়া, শিরোকে যখন খাবারের ডেসক্রিপশন দিচ্ছিলাম, তখন নাকি ওর জীভ জলে টইটুম্বুর! তাই ভাবলাম, রেসিপি দিয়ে সচিত্র একটা পোস্ট দিই। বেচারী দুধের (খিচুড়ী+গোশত) স্বাদ ঘোলে (ছবিতে) মেটাক!

উল্লেখ্য, এরাগে ব্লগে এইরকম প্রতিটি প্রসেস পয়েন্টে ছবি দিয়ে আর কেউ রেসিপি পোস্টাইনি। আমিই প্রথম।

সেফঃ প্রলয় হাসান
ছবিঃ প্রলয় হাসান
মেন্যু আইডিয়াঃ ব্লগার শিরোনামহীন + প্রলয় হাসান
এটা হলো আমার ব্লগ জীবনের ২য় রেসিপি। প্রথম রেসিপির লিংক নীচে দেয়া হলো। এটাও ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিলো।
Click This Link
ব্লগার পুসকিকেও একটা টেনকু দিয়ে রাখি এই ফাকেঁ, কারন ওর দেয়া ওরে পিয়া (আজা নাচলে) গানটা পোস্ট লিখার পুরোটা সময় শুনেছি। গানটা ভীষন ভাল লেগেছে। বিকেল থেকে শুনছি।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:০৮