somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদুল আযহা ও কুরবানীর তাৎপর্য এবং কুরবানীর মাসায়েল , ৪র্থ কিস্তি {বিস্তারিত মাসায়েল}

০৩ রা নভেম্বর, ২০১১ রাত ১০:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকের বিষয় ::

কুরবানীর সময়,
কুরবানীর দিন ও তারিখ,
কুরবানীর পশু ও তার হুকুমের বর্ণনা
অংশীদারী বা যৌথ কুরবানীর হুকুম,
কুরবানী যাদের উপর ওয়াজিব

بسم الله الرحمن الرحيم


اَلْحَمْدُ لِلّهِ رَبِّ الْعاَلَمِيْنَ وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِيْنَ والصَّلوةُ و السَّلاَمُ عَلى اَشْرَفِ الْاَنْبِياءِ وَالْمُرْسَلِيْنَ وَعَلى اَلِه وَاَصْحَابِه اَجْمَعِ





কুরবানীর দিন ও তারিখ :

মাসআলা : যিলহজ্জ মাসের ১০,১১ ও ১২ তারিখের সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত যে কোন একদিন কুরবানী করা যাবে। তবে প্রথম দিন কুরবানী করা উত্তম। তারপর দ্বিতীয় দিন, তারপর তৃতীয় দিন।
মাসআলা : অজ্ঞাতভাবে, অলসতায় বা অন্য যে কোন ওজর বশত: যদি কুরবানীর দিনগুলো অতিবাহিত হয়ে যায় অথচ কুরবানী করতে সমর্থ হয়নি, তাহলে অভাবী বা মিছকীন ব্যক্তিকে উক্ত জানোয়ার বা সমমূল্য টাকা ছদকা করে দিতে হবে। আর তখন সে যদি মৃত্যুর নিকটবর্তী হয়, তার জন্য এর ওসীয়ত করে যাওয়া ওয়াজিব।
মাসআলা : তবে কুরবানীর দিনগুলোতে ইচ্ছা করে কুরবানী না করে তার মূল্য ছদকা করলে কুরবানী আদায় হবে না। কেননা কুরবানী একটা স্বতন্ত্র ইবাদত।

কুরবানীর সময় :

মাসআলা : যে সমস্ত এলাকায় ঈদ ও জুম’আর নামায জায়িয, তথায় ঈদের নামাযের পরেই কুরবানী করবে। যদি ঈদের নামাযের পূর্বেই কুরবানী করে বসে তাহলে পুনরায় কুরবানী করা ওয়াজিব হবে। যে সব এলাকায় ঈদের নামায ও জুম’আর নামায শরীয়ত মোতাবিক ওয়াজিব নয়, সে সব অঞ্চলের লোকদের জন্য ঈদের দিন সুবহে সাদিক এর পর থেকেই কুরবানীর ওয়াক্ত শুরু হয়।{ফাতোয়ায়ে শামী ৫ম খন্ড, ২০২ পৃষ্ঠা}
মাসআলা : কিন্তু যে শহরে একাধিক জায়গায় ঈদের নামায হয়, তথায় কোন এক জায়গায় নামায হয়ে গেলেই গোটা এলাকায় কুরবানী করা জায়িয হবে। { বদায়ে। }
মাসআলা : যদি কোন কারণ বশত: প্রথম দিনে ঈদের নামায পড়তে না পারে, তবে ঈদের নামাযের ওয়াক্ত অতিবাহিত হওয়ার পরেই অর্থাৎ সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে যাওয়ার পর কুরবানী করা জায়িয হবে।{দুররুল মুখতার}
মাসআলা : যদি শরয়ী কোন কারণ বশত: ঈদের দিনে নামায আদায় করা সম্ভব না হয়, তা হলে শহর বাসীদের জন্যে দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিন ঈদের নামাযের আগে কুরবানী করা জায়িয। সতর্কতার জন্য সূর্য ঢলে যাওয়ার পরে যবেহ করাই উত্তম। {ফাতওয়ায়ে শামী ৫ম খন্ড}
মাসআলা : রাত্রেও কুরবানী করা যাবে, তবে উত্তম নয় বরং মাকরূহে তানজিহির সহিত দুরস্ত হবে।{ ফাতওয়ায়ে শামী। }
মাসআলা : যদি শহরবাসী ঈদের নামাযের পূর্বে কুরবানী করতে ইচ্ছা করে, তবে তা জায়িয হওয়ার পদ্ধতি হলো কুরবানীর পশু শহরের বাইরে যেখানে ঈদের নামায পড়া জায়িয নেই সেখানে পাঠিয়ে দিবে, যাতে ফযরের নামাযের পর যবেহ করে নিতে পারে। এরূপ করা জায়িয। কারণ, কুরবানীর ক্ষেত্রে পশুর হুকুম হলো পশুর যবেহের স্থান হিসেবে, কুরবানীদাতার স্থান হিসেবে নয়।

কুরবানী যাদের উপর ওয়াজিব :

মাসআলা : হজ্জব্রত পালনকারীদের জন্যে কুরবানী ওয়াজিব। এ ছাড়া অন্যান্য মুসলমানদের উপর কুরবানী ওয়াজিব হবার শর্ত দুটি।
এক : তাকে সাহেবে নিসাব হতে হবে। অর্থাৎ যার উপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব তার উপর কুরবানী ওয়াজিব।
দুই : তাকে সুস্থ মস্তিষ্ক, বালিগ ও মুকীম হতে হবে। কেননা পাগল, নাবালিগ এবং মুসাফিরের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়।

মাসআলা : কোন অসচ্ছল ব্যক্তি যদি ১২ই যিলহজ্জ তারিখের সূর্যাস্তের পূর্বে সচ্ছল হয়ে যায় অথবা পাগল যদি সুস্থ হয়ে যায় বা, মুসাফির যদি ১২তারিখের সূর্যাস্তের পূর্বে মুকীম হয়, তাহলে তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে।
মাসআলা : কোন গরীব ব্যক্তি কুরবানীর নিয়তে পশু খরিদ করে থাকলে তার উপর ও কুরবানী ওয়াজিব। এমনকি কুরবানীর পূর্বে ঐ পশুটি হারিয়ে গেলে বা খোয়া গেলে আরেকটি পশু খরিদ করে কুরবানী করা ওয়াজিব হবে। { ফাতওয়ায়ে শামী।
}

মাসআলা : সাহিবে নিসাব যত বড় ধনীই হোকনা কেন, তার উপর একটি কুরবানীই ওয়াজিব হবে। {আযীযুল ফাতওয়া ৭৩০পৃষ্ঠা}
মাসআলা : প্রত্যেক বিত্তশালীর উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। তবে কাবিন নামায় স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর পক্ষ হতে কুরবানী করার ওয়াদা করলে, ওয়াদা মোতাবেক কুরবানী করতে হবে নতুবা গুনাহ্গার হবে।

কুরবানীর পশু ও তার হুকুমের বর্ণনা :

ছয় প্রকার পশু দ্বারা কুরবানী করা যায়।
১. উট। ২. গরু। ৩. মহিষ। ৪. ছাগল। ৫. ভেড়া। ৬. দুম্বা।
এর বাইরে অন্য কোন পশু দ্বারা কুরবানী করলে কুরবানী হবে না।
মাসআলা : কুরবানীর জন্য উট কম পক্ষে পাঁচ বৎসর বয়সের হতে হবে। গরু ও মহিষ অন্তত দুই বৎসর বয়সের হতে হবে। আর দুম্বা, ছাগল ও ভেড়া হতে হবে অন্তত এক বৎসর বয়সের।
মাসআলা : ছয় মাস বয়সের ভেড়া, দুম্বা শারীরিক দিক দিয়ে মোটা তাজায় এক বৎসরের সমতুল্য মনে হলে তা দ্বারা কুরবানী জায়িয। কিন্তু ছাগল যতই মোটা তাজা হউক না কেন তার জন্য এক বছর পূর্ণ হওয়া শর্ত। একদিন কম হলেও তার দ্বারা কুরবানী জায়িয হবে না। { রদদুল মোখতার,৫ম খন্ড ২০১পৃষ্ঠা }
মাসআলা : গর্ভবতী জন্তু দ্বারা কুরবানী জায়িয আছে । কিন্তু অত্যাসন্ন গর্ভজাত জন্তু দ্বারা কুরবানী অবশ্যই মাকরূহ হবে। {ফাতওয়ায়ে শামী,৫ম খন্ড ২৮১ পৃষ্ঠা}
মাসআলা : চর্মরোগ যুক্ত মোটা জন্তু দ্বারা কুরবানী করা জায়িয হবে কিন্তু দুর্বল জন্তু দ্বারা জায়িজ হবে না। { ফাতওয়ায়ে শামী ৫ম খন্ড ২৮০ পৃষ্ঠা। }
মাসআলা : স্বভাবগত এক অন্ডকোষ বিশিষ্ট জানোয়ার দ্বারা কুরবানী জায়িয। { এমদাদুল ফাতওয়া,৩য় খন্ড ৪৭২পৃষ্ঠা। }
মাসআলা : যে জন্তু বেশী পায়খানা খায় তা দ্বারা কুরবানী জায়িয হবে না। তবে উটকে ৪০ দিন, গরু-মহিষকে ২০ দিন, ছাগল-ভেড়াকে ১০ দিন ধরে পায়খানা খাওয়া থেকে বিরত রাখলে কুরবানী জায়িয হবে।
মাসআলা : যে জন্তুর পুরুষাঙ্গ কাটা হওয়াতে সংগমে অক্ষম কিংবা বয়োবৃদ্ধ হওয়াতে বাচ্চা-জন্মানো থেকে অক্ষম হয়ে গেলে, তার দ্বারা কুরবানী জায়িয হবে। { ফাতওয়ায়ে শামী ৫ম খন্ড ২৮৪ পৃষ্ঠা।
}
মাসআলা : কুরবানীর পশু মোটা-তাজা এবং দেখতে মানানসই হওয়া দরকার। দুর্বল, জীর্ণশীর্ণ, অন্ধ, এক পা খোঁড়া, গোড়া থেকে শিং ভাংগা, কান ও লেজ, ওলান এক তৃতীয়াংশের বেশী কাটা ইত্যাদি ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারা কুরবানী হয় না।
মাসআলা : যে পশুর শিং জন্ম থেকে উঠেনি অথবা উঠার পর কিছু অংশ ভেঙ্গে গেছে তা দিয়ে কুরবানী করা জায়িয হবে।
মাসআলা : যে জানোয়ারের একটি দাঁত ও নেই অথবা অধিক দাঁত পড়ে গেছে অথবা, জন্ম থেকেই কান নেই, তা দিয়ে কুরবানী করা দুরস্ত হবে না।
মাসআলা : যে পশুটি কুরবানী করা হবে, তার উপর কুরবানীদাতার পূর্ণ মালিকানা সত্ত্ব থাকতে হবে। বন্ধকী পশু, কর্জকরা পশু বা পথে পাওয়া পশু দ্বারা কুরবানী আদায় হবে না।

অংশীদারী বা যৌথ কুরবানীর হুকুম :
মাসআলা : উট, মহিষ ও গরুর মধ্যে উর্ধ্ব পক্ষে সাত জন পর্যন্ত অংশীদার হতে পারবে। এর কম হলে ও ক্ষতি নেই। ভেড়া, দুম্বা ও ছাগল একজনের পক্ষ হতে একটিই কুরবানী করতে হবে।
মাসআলা : একই পশুতে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কুরবানী করার জন্য দুটি শর্ত রয়েছে :
প্রথমত: সকল অংশীদারেরই কুরবানীর নিয়ত থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোন অংশীদারের কেবল গোশত খাওয়া বা অন্য কোন নিয়ত থাকলে সকলের কুরবানী নষ্ট হয়ে যাবে।
দ্বিতীয়ত : ভাগের প্রতিটি অংশ সমান হতে হবে।

মাসআলা : এক ব্যক্তি কুরবানীর জানোয়ার খরিদ করলো এবং তার ইচ্ছা যে, অন্য কোন লোককে অংশীদার বানাবে এটা দুরস্ত হবে। যদি খরিদ করার সময় গোটা গরু বা উট নিজের জন্য খরিদ করার নিয়ত করে পরে অন্য লোককে অংশীদার করার ইচ্ছা করে তাও জায়িয হবে। কেননা এক ব্যক্তির উপর এক ভাগই কুরবানী করা ওয়াজিব তবে কুরবানী ওয়াজিব নয় এমন কোন ব্যক্তি কে শরীক করা হলে তা দুরস্ত হবে না।

মাসআলা : কিন্তু কোন গরীব ব্যক্তি নিজে একাই কুরবানীর নিয়তে একটি গরু কিনে থাকলে অন্য কাউকে ভাগ শরীক বানাতে পারবে না।

মাসআলা : কুরবানী দাতা এক বা একাধিক অংশীদার মনে মনে ঠিক করে প্রথমে কুরবানী করলো তারপর অংশীদারদের অনুমতি নিল, তা হলে কুরবানী দুরস্ত হবে না।

মাসআলা : গাভী, বলদ, মহিষ ও উট দুই/তিন/চার/পাঁচ ছয় ব্যক্তি শরীক হয়ে কুরবানী করা জায়িজ আছে। প্রত্যেক ব্যক্তির এক ভাগ পূর্ণ হওয়ার পর অতিরিক্ত অংশে এক ভাগের কম হলেও কোন ক্ষতি নেই।

মাসআলা : এজন্যই উল্লেখিত জানোয়ারে ছয় ব্যক্তি মিলে অংশীদার হয়ে বাকী এক ভাগে সবাই শরীক হয়ে নবী করীম সা. অথবা অন্য কোন বুজর্গ- বা অন্য কারো নামে কুরবানী দিলে তা দুরস্ত হবে।

মাসআলা : ঠিক অনুরূপ ভাবে ছয় ভাই প্রত্যেকে এক ভাগের পূর্ণ অংশীদার হয়ে বাকী সপ্তম ভাগে সবাই শরীক হয়ে তাদের পিতার নামে কুরবানী করলে দুরস্ত হবে।

মাসআলা : তবে দুই শরীক বা ততোধিক ব্যক্তি শুধু মাত্র এক অংশে শরীক হয়ে কুরবানী করা জায়িয হবে না।

মাসআলা : কুরবানীর জানোয়ার খরিদ করার পূর্বেই শরীকদের ঠিক করে নেয়া উত্তম এবং সকলের নিয়ত জেনে নেয়া ভাল।{ ফাতওয়ায়ে শামী, ৫ম খন্ড-২০১ পৃষ্ঠা।
}

মাসআলা : সমস্ত শরীকের মধ্যে একজন অমুসলিম থাকলেও কুরবানী জায়িয হবে না।{ মালাবুদ্দা মিনহু। }



মৃত ব্যক্তির পক্ষ হতে কুরবানীর হুকুম :

মাসআলা : মৃত ব্যক্তি যদি অছিয়ত করে থাকে, তাহলে তার এক তৃতীয়াংশ মাল হতে তার জন্য কুরবানী করা ওয়ারিশদের উপর ওয়াজিব। এবং উক্ত কুরবানীর সম্পূর্ণ গোশত গরীব মুসলমানকে ছদকা করা ওয়াজিব।{ ফাতওয়ায়ে শামী। }
মাসআলা : স্বচ্ছল অবস্থার লোকেরা নিজের ওয়াজিব কুরবানী ছাড়াও নিজ মুরব্বী, উস্তাদ, নিজের শায়খ, বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়-স্বজনদের পক্ষ থেকে কুরবানী করতে পারেন। এবং ঐ কুরবানীর গোশত ধনী-দরিদ্র সকলেই খেতে পারবে। { ফাতওয়ায়ে শামী। }
মাসআলা : স্বীয় মাল দ্বারা নিজ নামে নফল কুরবানী করে এক বা একাধিক মৃত ব্যক্তির জন্য সওয়াব বখশিস করা ও জায়িয। এরূপ কুরবানীর গোশত ও ধনী-দরিদ্র সকলেই খেতে পারবে।


কুরবানীর গোশতের হুকুম :

মাসআলা : অংশীদারী কুরবানীর জানোয়ারের গোশত পাল্লা দ্বারা ওজন করে বন্টন করা ওয়াজিব। অনুমান করে বন্টন করা জায়িয হবে না।

মাসআলা : অংশীদারী কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজ পরিবারের জন্য রাখা এবং এক অংশ আত্মীয়-স্বজনদের কে দেয়া, আর এক অংশ ফকীর মিসকীন ও গরীবদের দান করা মুস্তাহাব/ উত্তম।{ ফাতওয়ায়ে শামী, হেদায়া }

মাসআলা : তবে যদি প্রয়োজনে কেউ সম্পূর্ণ গোশত নিজেদের জন্য রাখে অথবা, সম্পূর্ণটাই দান করে দেয়, তা হলেও কোন অসুবিধা নেই। তবে বিবেক ও মানবাতার দাবী হচ্ছে, তা সকলকে নিয়েই খাওয়া এবং সাধ্যানুযায়ী গরীব মিসকীনকে দান করা।

মাসআলা : কুরবানীর গোশত বিক্রয় করা হারাম।

মাসআলা : কুরবানীর পশু যবেহকারী ও গোশত প্রস্তুতকারীর পারিশ্রমিক গোশত বা চামড়া থেকে দেয়া জায়িয নেই। যদি দেয়া হয় তাহলে সেই পরিমাণ টাকা সদকা করে দেয়া ওয়াজিব।

মাসআলা : যে সমস্ত চাকর চাকরানী, দিন মজুর বা বাৎসরিক মজুর, বুয়া গাড়ীর ড্রাইভার মালিকের খানা খেয়ে থাকে, আমাদের দেশের প্রথা অনুযায়ী তাদের এ খাদ্য বেতনের মধ্যে গণ্য। অতএব সরাসরি শুধু কুরবানীর গোশত তাদের কে খাওয়ালে কুরবানীর গোশত বেতনের বিনিময়ে বিক্রিতে পরিণত হয়ে যায়, এ কারণে কুরবানীর গোশত সরাসরি তাদেরকে খাওয়ানো জায়িয নেই। তা সত্ত্বেও যদি খাওয়ানো হয়, তা হলে নির্ধারিত বেতন হতে কিছু টাকা বেশী দিতে হবে অথবা খানার সাথে কুরবানীর গোশত এবং অন্যান্য সাধারণ নিত্যদিনের কিছু তরকারী দিলে জায়িয হবে। এমনকি সে সময় যদি শুধু কুরবানীর গোশত দিয়ে ও খানা খায় তাহলে ও জায়িয হবে।


কুরবানীর পশুর চামড়ার হুকুম :

মাসআলা : কুরবানীর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে নিজেও ব্যবহার করা জায়িয।
মাসআলা : অন্য কাউকে হাদীয়া দেওয়া ও জায়িয।

মাসআলা : যদি বিক্রয় করে তা হলে চামড়ার মূল্য গরীব মিসকীনদের কে সদকা করে দেয়া ওয়াজিব।

মাসআলা : নফল কুরবানীর চামড়া ও গোশতের হুকুম ওয়াজিব কুরবানীর মতোই।

মাসআলা : কুরবানীর চামড়া বিক্রয় করে তার মূল্য দিয়ে মসজিদ মেরামত, রাস্তা-ঘাট বাধা, মাদ্রাসা-মক্তব তৈরী করা জায়িয হবে না। {ফাতওয়ায়ে শামী}

মাসআলা : গরীবদের শিক্ষা, চিকিৎসা ও পুর্নবাসনের জন্যে কেউ কোন প্রকল্প গ্রহণ করে থাকলে তাতে চামড়া বা চামড়া বিক্রির টাকা প্রদান করা যায়।
মাসআলা : চামড়া পচনশীল দ্রব্য। পচার কারণে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। তাই পচা চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলা এবং সেই সাথে পরিত্যক্ত নাড়ি-ভূড়ি সমস্ত কিছু মাটিতে গভীর খাদ খুড়ে মাটি চাপা দেয়া উচিৎ।
মাসআলা : কুরবানীর পশুর রশি ইত্যাদি গরীবদের কে দান করে দিতে হবে। নিজের কাজে ব্যবহার করতে পারবে না।



কুরবানীর পশু যবেহ করার মাসায়েল :

মাসআলা : পশুকে বাম বাহুর উপর শুইয়ে কেবলা মূখী করে যবেহ করতে হবে। কেবল উটের বেলায় এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে না। কারণ, উটকে করতে হয় নহর। অর্থাৎ পা বেঁধে দাঁড় করিয়ে ধারালো বর্শা অথবা ছুরি গলোদেশে অর্থাৎ শ্বাসনালীতে ঢুকিয়ে রক্ত প্রবাহিত করে দেয়া সুন্নাত। উট ব্যতীত অন্য জন্তুর বেলায় যবেহ করাই সুন্নাত।

মাসআলা : নিজের কুরবানী নিজে যবেহ করাই উত্তম। যবেহ করতে অক্ষম ব্যক্তি এবং নারীরা নিজ নিজ কুরবানী অবলোকন করবেন।

মাসআলা : ভাগের পশুকে সকল অংশীদার একত্রে ধরে শুইয়ে যবেহ করা উত্তম।
নিজ কুরবানী নিজ হাতে করা এবং অবলোকন করার মাধ্যমে কুরবানকারীর অন্তরে এ অনুভূতি জাগ্রত হয় যে, আমি আল্লাহর দেয়া সম্পদ কুরবানী করছি। এ পশুর রক্তের মতোই আমি আল্লাহর রাহে আমার বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতে প্রস্তুত আছি।
মাসআলা : শুধু দিলে দিলে কুরবানীর নিয়ত করলেই যথেষ্ট হবে। মৌখিক ভাবে বলা জরুরী নয়। তবে যবেহ করার সময় “বিছমিল্লাহি আল্লাহু আকবার” মুখে বলা জরুরী/ফরয। যদি কেউ ইচ্ছা পূর্বক বিছমিল্লাহ না বলে, তা হলে পশু হালাল হবে না।

মাসআলা : যবেহকারীর সাথে যারা ছুরি বা তলোয়ার ধরবে তাদের সকলকেই “বিছমিল্লাহ” পড়তে হবে। যদি কেউ কেউ না পড়ে, তাহলে উক্ত পশুর গোশত হালাল হবে না। { ফাতওয়ায়ে শামী ও কাজী খান। }

মাসআলা : যবেহকারীর মুখ কেবলার দিকে হওয়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্। ওজর ব্যতীত বাদ দিলে মাকরূহ হবে।

মাসআলা : যবেহের শরীয়ত সম্মত নিয়ম হলো : শ্বাসনালী, খাদ্য নালী ও তার দুই পার্শ্বে দুইটি রক্তের মোটা রগ এই চারটি জিনিস কাটা। কমপক্ষে তিনটি কাটলে খাওয়া হালাল হবে, নতুবা হারাম হবে। উক্ত চার রগের পর সম্পূর্ণ গলা কর্তন করা মাকরূহ। { ফাতওয়ায়ে শামী। }

মাসআলা : প্রত্যেক হালাল পশুর ৭টি অংশ ব্যতীত সবটুকুই খাওয়া হালাল । কেবল সাতটি জিনিস খাওয়া যাবে না। সাতটির মধ্যে একটি হারাম এবং ছয়টি মাকরূহ তাহরীমী।
১. প্রবাহিত রক্ত যা যবেহের পর রগ থেকে স্ববেগে বের হয়, তা হারাম।
২. পুরুষ পশুর পুরুষ অঙ্গ।
৩. মহিলা পশুর পেশাবের স্থান/স্ত্রী অঙ্গ।
৪. অন্ডকোষ।
৫. পেশাবের ঝুলি।
৬. পীতের থলে।
৭. মাংসের গ্রন্থি, যা অধিকাংশ সময় চামড়া ও গোশতের মধ্যবর্তী স্থানে হয়ে থাকে।
অর্থাৎ গোশতের উপরিভাগে এবঙ চামড়ার নি¤œ ভাগের গুটি।
মাসআলা : বিছমিল্লাহ পড়ার পর যদি জানোয়ার পালিয়ে যায়, তবে দ্বিতীয় বার যবেহ করার সময় বিছমিল্লাহ পড়া ওয়াজিব।

মাসআলা : কুরবানীর জানোয়ার যবেহ করার সময় অংশীদার উপস্থিত হওয়া অথবা প্রত্যেকের নাম উল্লেখ করা জরুরী নয়। হ্যাঁ অংশীদারদের উপস্থিত থাকা উত্তম।

মাসআলা : ঘাড়ের উপর দিয়ে কুরবানীর পশু যবেহ করলে তা খাওয়া হারাম হবে। তবে উপর দিক থেকে যবেহ করার পর প্রাণ বের হওয়ার পূর্বে নালী সমূহ কেটে দিলে জায়িয হবে, কিন্তু মাকরূহ হবে। { বদায়ে ৫ম খন্ড ৮০ পৃষ্ঠা।
}


মাসআলা : মহিলা, নেশা গ্রস্ত, পাগল, বোবা, অপ্রাপ্ত বয়স্ক দ্বারা ও যবেহ করা জায়িয হবে যদি যবেহের নিয়মনীতি জানে ও বিছমিল্লাহ পড়ে। { মাজমাউল আনহার ২য় খন্ড ৭৮৯ পৃষ্ঠা। }

মাসআলা : ভাল জানোয়ার কুরবানী করার সময় যদি ক্রটিময় হয় যেমন, পা ভেঙ্গে গেল, তা সত্ত্বেও কুরবানী সহীহ হবে। {ফাতওযায়ে শামী ৫ম খন্ড ২৮৪ পৃষ্ঠা।}


পশু যবেহ করার মাসনূন পদ্ধতি :

যবেহ করার সুন্নাত তরীকা এই যে, যবেহ করার পূর্বে ছুরি উত্তম ভাবে ধার/তেজ করে নিবে এবং যবেহকারী কিবলামূখী হয়ে দাঁড়াবে এবং যবেহের জন্য পশু কেবলামূখী করে শুয়াবে এবং নি¤েœর আয়াত শরীফ পাঠ করবে ঃ
اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّموَاتِ وَالْاَرْضَ حَنِيْفًا وَّمَا اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- اِنَّ صَلَاتِىْ وَنُسُكِىْ وَمَحْيَاىَ وَ مَمَاتِىْ للهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ- لَاشَرِيْكَ لَه وَ بِذَا لِكَ اُمِرْتُ وَاَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ- اَللّهُمَّ لَكَ وَ مِنْكَ-
“আমি সকল দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে একনিষ্ঠ হয়ে ঐ আল্লাহর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করর্ছি যিনি আসমান যমীন সৃষ্টি করেছেন এবং আমি কখনো শিরক কারীদের মধ্যে নই। নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার কুরবানী আমার জীবন ও আমার মরণ সব কিছুই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্যে। তার কোন শরীক নেই, আমাকে তারই নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবঙ আমি সকলের আগে তার অনুগত ও ফরমাবরদার। হে আল্লাহ! এ তোমারই জন্যে পেশ করা হচ্ছে এবং এ তোমারই দেয়া”। { মিশকাতুল মাসাবীহ্ }
তারপর بسم الله الله اكبر বলে যবেহের কার্য্য সমাধা করবে এবং যবেহ করার পর নি¤œ লিখিত দোয়া পাঠ করবে।
اَللّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنِّى كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِـيْبِكَ مُحَمَّدٍ وَخَلِيْلِكَ اِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ-
“হে আল্লাহ! তুমি এ কুরবানী আমার পক্ষ থেকে কবুল কর, যেমন তুমি তোমার পিয়ারা হাবীব মুহাম্মদ সা. এবং তোমার খলীল ইবরাহীম আ. এর কুরবানী কবুল করেছিলে”।


 কুরবানীর আদাব :

মাসআলা : কুরবানকারীর জন্যে এটা উত্তম যে, যে দিন কুরবানীর পশু যবেহ করা হবে তার কিছু দিন পূর্বেই কুরবানীর পশু সংগ্রহ করে তাকে লালন-পালন করবে। কেননা আল কুরআনে কুরবানীকে সম্মান করার ঘোষণা এসেছে :
وَ مَنْ يُّعَظِّمْ شَعَا ئِرَاللهِ فَاِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوْبِ -
“কেউ আল্লাহর নাম যুক্ত বস্তু সমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে তা তো তার হৃদয়ের আল্লাহ ভীতি প্রসূত”। { সূরা আল হজ্জ -৩২। }

মাসআলা : এক জানোয়ারের সামনে অন্য জানোয়ার কে যবেহ না করা মুস্তাহাব।

মাসআলা : জানোয়ারের প্রাণ পূর্ণভাবে বের হয়ে যতক্ষণ পর্যন্ত জানোয়ার ঠান্ডা না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত চামড়া না খোলা এবং গোশ্তের কোন অংশ না কাটা উচিৎ। কারণ, এতে জানোয়ারের কষ্ট হয়। { রদ্দুল মোখতার ১৮৮ পৃষ্ঠা। }


কুরবানীর আরো কতিপয় মাসায়েল :

মাসআলা : বৎসরের অন্যান্য মাসের মত যিলহজ্জ মাসেরও চাঁদ উদয় হওয়ার পর থেকে দশ তারিখের মধ্যে যে কোন দিন গরু, ছাগল, মুরগী ইত্যাদি যবেহ করা জায়িয, এতে দোষের কিছু নেই।

মাসআলা : কুরবানীর দিনগুলিতে যে সমস্ত পশু দ্বারা কুরবানী জায়েয নেই, তা কুরবানীর নিয়তে যবেহ করা মাকরূহ। (যেমন হাঁস, মুরগী ইত্যাদি)। { ফাতওয়ায়ে আলমগীরী। }

মাসআলা : ওয়াজিব কুরবানীর পশুর মধ্যে আকীকার নিয়ত করাও জায়িয আছে। যেমন একটি গরু/মহিষের মধ্যে ৫/৬ শরীক আছে বাকী ১/২ ভাগে আর কেউ আকীকার নিয়তে অংশীদার হলে জায়িয হবে। উল্লেখ্য যে, আকীকার জন্য ছেলের ক্ষেত্রে ২ ভাগ আর কন্যা সন্তানের ক্ষেত্রে ১ ভাগে অংশীদার হতে হবে। অনুরূপভাবে নফল, নজর, মান্নত ও ওছিয়তের অংশ নিলেও জায়িয হবে।[ফাতওয়ায়ে শামী, ৫ম খন্ড ২০২ পৃষ্ঠা।]

মাসআলা : কেউ মান্নত করলো যে, যদি আমার অমুক কাজ পূর্ণ হয়, তাহলে আমি একটি বকরী/দুম্বা/গরু কুরবানী করবো। সেই কাজ পূর্ণ হলে, তার উপর উক্ত পশুর কুরবানী করা ওয়াজিব হবে। আর কুরবানীর মান্নত করলে উক্ত পশু কুরবানীর সময়ই তথা যিলহজ্জের ১০,১১,১২ তারিখ কুরবানী করতে হবে।

মাসআলা : এর আগে বা পরে যবেহ করলে সহীহ হবে না। উল্লেখ্য যে, মান্নতের কুরবানীর গোশত নিজে খাওয়া ও ধনী ব্যক্তিকে খাওয়ানো জায়িয নয়। তা সম্পূর্ণ রূপে গরীবদের মাঝে বন্টন করে দিতে হবে।[ফাতওয়ায়ে আলমগীরী।]
মাসআলা : কুরবানীর পশু কোথাও হারিয়ে বা চুরি হয়ে গেলে, যদি কুরবানীর নিয়তে দ্বিতীয় পশু ক্রয় করার পর কুরবানীর দিন গুলোর মধ্যেই পূর্বের পশু পাওয়া যায়, তাহলে ধনী ব্যক্তির জন্য একটি কুরবানীই ওয়াজিব হবে। অবশ্য উভয়টাই কুরবানী করা উত্তম।
উল্লেখ্য যে, সেই অবস্থায় প্রথমটি কুরবানী করে থাকলে ভাল। আর যদি দ্বিতয়িটি কুরবানী করে, তবে দেখতে হবে যে, প্রথমটি অপেক্ষা দ্বিতীয়টির মূল্য কম কিনা? যদি কম হয় থাকে, তবে যত টাকা কম হবে, তা গরীবকে দান করে দেয়া ওয়াজিব।
পক্ষান্তরে গরীব ব্যক্তি যদি কুরবানী করার জন্য পশু ক্রয় করার পর তা হারিয়ে যায় এবং সে আরেকটি ক্রয় করে, অত:পর প্রথমটি পাওয়া যায়, তাহলে তার জন্য দুইটি পশুই কুরবানী করা ওয়াজিব। কেননা গরীব যেটাই ক্রয় করবে কুরবানীর নিয়তে, পৃথক পৃথক ভাবে প্রত্যেকটাই তার উপর ওয়াজিব হবে।

মাসআলা : কুরবানীর নিয়তে পশু ক্রয় করে তার দ্বারা উপকৃত হওয়া মাকরূহ। যেমন সওয়ার হওয়া, কাজ করানো, দুধ দোহানো, পশম কাটা, ভাড়া দেয়া ইত্যাদি। যদি এরকম করা হয়, তবে এর লাভের পরিমাণের টাকা সদকা করা ওয়াজিব।

মাসআলা : সম্পত্তির কয়েকজন অংশীদার একই পরিবার ভূক্ত হলে, যদি তাদের মাল পৃথক করলে প্রত্যেকের উপর কুরবানী করা ওয়াজিব হওয়ার পরিমাণ মাল হয়, তাহলে প্রত্যেকেই পৃথক পৃথক ভাবে কুরবানী করতে হবে। এরূপ একান্নভূক্ত পরিবারের একাধিক ব্যক্তি মিলে কুরবানী দিলে, সে ক্ষেত্রে কুরবানীর গোশত বন্টন করা জরুরী নয়। একত্রে রেখে সকলে খেতে পারবে। [ফাতওয়ায়ে শামী ৬ষ্ঠ খন্ড।
]
মাসআলা : কারো কুরবানী ওয়াজিব না হলে ও কিংবা কেউ ঋণী হলে ও শরীয়তে তার কুরবানী করার অনুমতি আছে এবং এটা বিরাট ছওয়াবের কাজ। আর ওয়াজিব হলে তো কুরবানী দিতেই হবে। কোন প্রকার ঋণ কুরবানী সহীহ হয়োর জন্য প্রতিবন্ধক নয়। [সুনানে তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী ৫ম খন্ড ২৯১পৃষ্ঠা।]

মাসআলা : কেউ কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার পর ৭/৮ বছর কুরবানী করেনি। এখন বিগত বছরের কুরবানী বর্তমান বছরের কুরবানীর সাথে যোগ করে আদায় করলে তা আদায় হবে না। বরং এ বছর, শুধু এ বছরের কুরবানীই আদায় করা যাবে। আর অন্যান্য বছরের কুরবানীর কাযা হিসেবে সেগুলোর পশু ক্রয় করে সরাসরি দান করে দিতে হবে অথবা সে গুলোর মূল্য সদকা করে দিতে হবে। [দুররুল মুখতার ৫ম খন্ড ২২৬পৃ/ফাতওয়ায়ে আলমগীরী ৫ম খন্ড ২৯৬-২৯৭ পৃষ্ঠা।]

মাসআলা : মহিলাদের কুরবানীর ক্ষেত্রে স্বামির নামও বলা যাবে এবং পিতার নামও বলা যাবে। যেমন অমুকের কন্যা- অমুক বা অমুকের স্ত্রী অমুক।

মাসআলা : কোন সচ্ছল ব্যক্তি কুরবানীর জন্যে একটি পশু খরিদ করলো। অতঃপর তার মধ্যে এমন ত্রুটি দেখা গেল যার জন্য তা কুরবানী করা দুরস্ত হলো না। তখন তাকে আর একটি পশু খরিদ করে কুরবানী দিতে হবে। তবে কোন দরিদ্র লোকের এমন অবস্থা হলে যার উপর কুরবানী ওয়াজিব ছিল না, তার পক্ষে ঐ ত্রুটি যুক্ত পশুই কুরবানী করা জায়িয হবে।

মাসআলা : কুরবানীর হাদিয়ার গোশ্ত নিজের কুরবানীর গোশ্ত থেকে আলাদা করে পাক করলে, চাকর-চাকরানী সহ সকলকে খাওয়ানো জায়িয হবে। [ এমদানুল ফাতওয়া ৯৬৭ পৃষ্ঠা।
]
মাসআলা : কুরবানীর জন্তুকে ফুলের মালায় সাজিয়ে অথবা পিঠের উপর রঙ্গিন কাপড় জড়িয়ে রাস্তায়-রাস্তায়, বাড়ী-বাড়ী ঘোড়ানো, এসকল কাজ অবান্তর। এতে সাওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ হবে। তাই এ সকল কু-সংষ্কার পরিত্যাগ করা মুসলমানদের কর্তব্য।

মাসআলা : কোন কোন এলাকায় কুরবানীর পশুর খাদ্যনালী, গরুর শিং ইত্যাদি নিয়ে ঘরের সামনে টাঙিয়ে রাখা হয়। মনে করা হয় এর মাধ্যে রয়েছে অনেক পূণ্য এবং এর দ্বারা কোন জ্বীন-ভূত ঢুকতে পারবে না। প্রকৃত পক্ষে এসকল কাজ শরীয়তের পরিপন্থী। ইসলামে এর কোন ভিত্তি নেই।

মাসআলা : কোন কোন এলাকায় যে সমস্ত গাছের আমে পোকা হয়, সে সমস্ত গাছে বসে কুরবানীর গোশ্ত খেয়ে তার হাড় গুলো গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয় এবং মনে করা হয় যে, আম গাছে আর পোকায় ধরবে না। কিন্তু এসকল কাজ বিদআত, শরীয়ত পরিপন্থী। এমন গর্হিত কাজ হতে মুসলমানদের বেঁচে থাকা উচিৎ।


আগামী পর্বে পড়ুন
>>> কুরবানীর লক্ষ্যবস্তু কে ছিলেন? ইসমাঈল আ. না কি ইসহাক আ. !!



৩য় কিস্তি পড়ুন >> ঈদুল আযহা ও কুরবানীর তাৎপর্য এবং কুরবানীর মাসায়েল। ৩য় কিস্তি {যিলহজ্জ মাসের করনীয় কাজ}।http://www.somewhereinblog.net/blog/shopnochari99/29477021

২য় কিস্তি পড়ুন >>ঈদুল আযহা ও কুরবানীর তাৎপর্য এবং কুরবানীর মাসায়েল। ২য় কিস্তি{লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং শিক্ষনীয় বিষয়} http://www.somewhereinblog.net/blog/shopnochari99/29474975


১ম কিস্তি >> পড়ুন কুরবানীর ইতিহাস http://www.somewhereinblog.net/blog/shopnochari99/29474391
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১১ রাত ১০:২৭
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শেখ হাসিনার শেষের ঘন্টা ও কিছু কথা!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৩২

এই বৃষ্টি ভেজা রাতে আজ অনেক ঘটনাই মনে পড়ছে, কোনটা রেখে কোনটা লিখি তা নিয়েও ভাবতে হচ্ছে! তবে প্রথম যে ঘটনা লিখতে ইচ্ছা হচ্ছে তা হচ্ছে শেখ হাসিনার পলায়নের শেষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি নিষিদ্ধ

লিখেছেন আজব লিংকন, ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৪১

আমি নিষিদ্ধ! হইলেও হইতে পারি!
শুনছি নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের বেশি আকর্ষণ। দূর থেইক্কা আপনি আমারে দেখেন। টুকটাক আমার লেখালেখি পড়েন। কই কখনো তো আপনারে লাইক কমেন্ট কিংবা খোঁচা মারতে দেখলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি।। আমি পদত্যাগ করিনি , ডাইনী করেছে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৪০

জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানা আপু

লিখেছেন সোহেল ওয়াদুদ, ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৩

শুভ জন্মদিন আপু! আপনার জন্মদিনে সুস্থ দেহ প্রশান্ত মন কর্মব্যস্ত সুখী জীবন কামনা করছি। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আপনি এবং দুলাভাই অনেক প্রজ্ঞাবান মানুষ। দেশের স্বার্থে জাতির স্বার্থে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পদ ত্যাগ না করলেও ছেড়ে যাওয়া পদ কি শেখ হাসিনা আবার গ্রহণ করতে পারবেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৯



তিনি ছাত্র-জনতার ধাওয়া খেয়ে পদ ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে প্রাণে বেঁচে গেছেন। পদের লোভে তিনি আবার ফিরে এসে ছাত্র-জনতার হাতে ধরাখেলে তিনি প্রাণটাই হারাতে পারেন। ছাত্র-জনতার হাত থেকে রক্ষা পেলেও তাঁর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×