এসব কী হচ্ছে দেশে! যা ইচ্ছে তাই করবে না কি? মন মত কোন কিছু না হলেই রাস্তায় নেমে যাবে—এই চিন্তা মাথায় আসে কীভাবে? আদালতের একটি রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সারাদেশে পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘট ডেকে বসে আছে। তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের মৃত্যুর জন্য দায়ী বাসচালককে শাস্তি দিয়ে গত সপ্তাহে মানিকগঞ্জের আদালতে রায়ের পর শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করে।
বাসচালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার পর তার নিজ জেলা চুয়াডাঙ্গার পরিবহন শ্রমিকরা প্রথম ধর্মঘট শুরু করে। এরপর গত রোববার খুলনা অঞ্চলের ১০ জেলায় ধর্মঘট শুরু করে পরিবহন শ্রমিকরা।
অন্যদিকে সোমবার ঢাকার আদালতের এক রায়ে সাভারে সড়কে, এক নারীর মৃত্যুর ঘটনায় এক ট্রাকচালককে মৃত্যুদণ্ড দিলে মঙ্গলবার থেকে সারাদেশে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় শ্রমিকরা।
গাড়িচালকদের খামখেয়ালিতে দিন দিন সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে, কোনও কমার লক্ষণ নেই। প্রতিদিন জীবনহানি ঘটে, নানা উদ্যোগের কথা শুনি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য অনেকগুলো কারণ আছে—কিন্তু আসল কারণ ড্রাইভারদের স্বেচ্ছাচারিতা। এদের নুন্যতম দায়িত্ববোধ বলে যদি কিছু থাকত। এতগুলো জীবন যার হাতে তুলে দিয়ে যাত্রীরা গাড়িতে ওঠে, সে গাড়ি চালানোটাকে মনে করে পুতুল খেলা। ড্রাইভিং সিটে বসে যত খাজুরে আলাপ শুরু করে ফোনে, নিয়ম-নীতি না মেনে গাড়ি চালাতে থাকে, জানোয়ারের মত পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালাতে থাকে।
মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে আন্তঃজেলা শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ের সামনে এই সংঘর্ষের সময় পুলিশের একটি রেকার এবং একটি অস্থায়ী পুলিশ বক্সে আগুন দেয়। ধর্মঘট উপলক্ষে শ্রমিকরা সকাল থেকেই আন্তঃজেলা শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। সন্ধ্যার পর তাদের সংখ্যা আরও বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে গাড়ি চলাচলে বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ তাদের থামানোর চেষ্টা করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। মঙ্গলবার সকাল থেকে বাস না পেয়ে চরমদুর্ভোগে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। এক জেলা থেকে অন্য জেলায় সড়ক যোগাযোগ কার্যত বন্ধ। শ্রমিকরা বিভিন্ন স্থানে যান চলাচলেও বাধা দিচ্ছে।
ধর্মঘট মঙ্গলবার শেষ হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের কাছ থেকে স্পষ্ট কোনও উত্তর মিলছে না।
আদালতের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় এই কর্মসূচি হওয়ায় ধর্মঘটীদের সঙ্গে কোনও আলোচনায় যেতে চাইছে না সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। শ্রমিকেরা কার বিরুদ্ধে অবরোধ ডেকেছে? এটি যে আদালতের রায়—যার বিরুদ্ধে যাওয়া যায় না, গিয়ে লাভ হয় না সেই বোধ-বুদ্ধিই মনে হচ্ছে এদের নেই। হায় এই সব গোঁয়ারদের হাতে আমরা জীবনটা তুলে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকি। এই সমস্ত কাজ-কর্মে মনে পড়ছে মন্ত্রী মহদয়ের বিখ্যাত উক্তিটি ড্রাইভারদের গরু-ছাগল চিনলেই চলে! গরু-ছাগল চেনা লোকদের ড্রাইভার বানালে কী হয় তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। আদালতের রায়কে তারা গায়ের জোরে পালটাতে চাইছে। দুনিয়ার সব খুনিদের বিচার করা যাবে, শাস্তি দেয়া যাবে কিন্তু খুনি ড্রাইভারকে কিছু করা যাবে না! এই মামা বাড়ির আবদার আর কত দিন চলবে?
ছবি - বিডি নিউজ ২৪ডট কম
১. ০১ লা মার্চ, ২০১৭ রাত ২:৪২ ০
সরকারের বিশৃংখল অবস্হার সুযোগ নিচ্ছে শ্রমিকেরা