‘তোমরা ভুল ইনফরমেশন পেয়েছ। আমরা ওসব রাখি না। ইচ্ছে হলে সার্চ করতে পার।’
ওরা যেন এইটেই চাচ্ছিল- আমার কথায় নিশ্চিত খুশী হল। আবার অমায়িক হেসে বলল, তোমাদের দেখে মনে হয় না এর ব্যবসা কর বা এসব ব্যাবহার কর কিন্তু …
কাঁধ শ্রাগ করল যেন তারা অপারগ, আমাদের রুম সার্চ করা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই ‘ইনফরমেশন যখন পেয়েছি তখন এই রুটিন ওয়ার্কটা-তো করতেই হবে।’ তোমাদের পাসপোর্ট কোথায়?
এইরে খেয়েছে! প্রবাসে পাসপোর্ট কি মহামূল্যবান তা ভুক্তভোগীরাই জানে। এখনও বুঝতে পারছিনা এরা পুলিশ না পুলিশের বেশে ছিনতাইকারী? হাতে ইলেকট্রিক টেজার ব্যাটন বা 'স্তান ব্যাতন', কোমরে গোজা পিস্তল; হ্যান্ড-কাফ আর পোশাক দেখে সন্দেহ হবার কথা না তবুও! এখনকার এই রাশিয়ায় অনেক কিছুই সম্ভব।
ঢোক গিলে বললাম-‘পাসপোর্ট দিয়ে কি হবে?’
‘দেখতে হবে তোমরা এখানে বৈধ না অবৈধ।’
উপায় নেই অগত্যা আমাদের পাসপোর্ট-জোড়া তাদের দিকে এগিয়ে দিতেই তারা অবহেলাভরে সে দুটো হাতে নিয়ে যেভাবে পাতা উল্টালো তাতে সন্দেহ ঘনীভূত হল। তবুও ভাবলাম এরা হয়তো আনাড়ি।
পাসপোর্ট তাদের কাছে রেখে বলল ‘রুমে চল।’
ওদের মধ্যে খর্বকায় ব্যক্তি মনে হয় সাধারণ সেপাই; কেননা সে কোন কথা বলছেনা শুধু হুকুম তামিল করছে আর মিটি মিটি হাসছে। ভদ্রলোক বেশ সানন্দেই কিংবা অতি উৎসাহে আমাদের রুমের দিকে খানিকটা বল প্রয়োগ করে নিয়ে গেল।
রুমে আসতেই বলল দেয়ালের ধার ঘেঁষে উল্টো দিকে মুখ রেখে হাত উপরে করতে -আমাদের দেহ সার্চ করবে?
আমরা এখন জালে আটকে গেছি ‘যদি তারা সত্যি পুলিশ হয় সেটা আমাদের সৌভাগ্য; কিন্তু নাহলে কিছুই করার নেই। দুজন কৃশকায় বঙ্গ-সন্তানের ক্ষমতা নেই বিশাল দেহী অস্ত্রধারী দুই রুশীয়’র মোকাবেলা করা। এমনকি ওই দুজনের বিপরীতে আমরা জনা-আষ্টেক থাকলেও ভয়ে কাঁপতাম!
এটাই বাস্তবতা! হিরো সাজার অবকাশ নেই। দেয়ালের দিকে মুখ করে হাত উপরে তুলতেই ওরা কাছে এসে পা দুটো ফাঁক করে সার্চ শুরু করল। পুরো দেহ হাতরে কিছু না পেয়ে বলল, ভ্রাতা এবার হাত দুটো পিছনে নাও-তো দেখি।
বাধ্য ছেলের মত হাত পিছনে নিতেই শিরদাঁড়া বেয়ে একটা ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেল। গ্যাঁড়াকলে আটকে গেছি!দু’জনের হাতেই হাতকড়া পড়িয়ে দিল।
এবার দলের পাণ্ডা দশাসই দেহের(যাকে আমরা পুলিশ অফিসার ভেবেছিলাম)সেই ব্যক্তিটি আমাদের ঘুরে দাড়াতে বলে ছোটখাটো একটা বক্তৃতা দিল। তার সারাংশ হচ্ছে,
-ওরা আমাদের পুরো ফ্লাট সার্চ করবে । ওদের বিশ্বাস যে আমরা কোন এক গোপন স্থানে ‘নারকোতিক’ লুকিয়ে রেখেছি । তবে এসব খুঁজতে গিয়ে তারা যে মনের ভুলে কিছু তুলে নেয়নি (!)এমন অপবাদ যাতে আমরা না দিতে পারি সেই শঙ্কায় একজন সাথে থাকবে।
কথা বলার সময় টেজার ব্যাটনটা বারবার স্পার্ক করে আমাদের মনে অদৃশ্য ভয়ের সঞ্চার করছিল ।
খানিকটা রুশ ভাষা জানার জন্য আমিই হলাম সেই সাক্ষী !
বড় রুমটাতে গিয়ে শুরু হল চিরুনি তল্লাশি। হারিয়ে যাওয়া কোন কিছু যা আমরা অনেক খুঁজেও পাইনি সেইগুলি সে খুঁজে বের করে দিল। ডিভান শো-কেস ওয়্যারড্রব বাদ দিলাম ঘরের প্রতিটা ইঞ্চি সে তন্ন তন্ন করে খুঁজল ওয়াল-পেপার ওয়াল-কার্পেট খুঁচিয়ে ছিঁড়ে দেখছিল- আর মাঝে মধ্যে হাসিমুখে সেই সাথে বার বার টেজার ব্যাটনটা আমার নাকের সামনে ধরে স্পার্ক করে ভয় দেখাচ্ছিল। আমি জানি ওই ব্যাটনটা কি ভয়ঙ্কর! প্রতি চাপে ওটা নাকি একটা মাত্র চাপে ২মিলিয়ন পর্যন্ত ভোল্ট বা ৪.৯৯ মিলিয়াম্পস স্টান বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে!
অভিজ্ঞতা নেই –তবুও যদ্দুর জানি,পুরু পোশাকের উপর দিয়েও নাকি যে কাউকে মুহূর্তেই অজ্ঞান করে দেয়া সম্ভব।জায়গা-মত লাগলে মারা যাওয়াও বিচিত্র নয়!ভয় পাওয়ার কারণটা সহজেই অনুমেয়। সারা ঘর খুঁজে যতগুলো রুবল আর দামী জিনিস পেল তাই এনে জড় করল আমার সামনের টেবিলে।
এবার ধীর পদক্ষেপে আমার সামনে এসে পিস্তলটা বের করে নলটা কপালে ঠেকিয়ে বলল‘কি ভয় লাগে?’
ভয়ার্ত চোখে তার মুখের দিকে তাকিয়ে অনুরোধ করলাম ‘তোমার এখানে যা কিছু ভাল লাগে তুমি নিয়ে যাও- কিন্তু দয়া করে আমাদের টর্চার কোর না।’
তৃতীয় পর্ব শেষ।
আগের পর্বের জন্য; Click This Link
প্রথম পর্বের জন্য; Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০২৩ সকাল ১০:৩৬