(২)
(৩)
উপরের ছবি গুলো দেখিয়ে যদি প্রশ্ন করা হয় এটা কি? তাহলে অনেকেই যথার্থ বলবেন এটা "Windmill" তথা বায়ুচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বায়ু চালিত টরাবাইনের মাধ্যমে পরিবেশ বান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদন চীন, ভারত,আমেরিকা, জার্মানী, যুক্তরাজ্য, পুর্তগাল, কানাডা সহ সারা বিশ্বব্যাপি জনপ্রিয় ও কার্যকরী হয়ে উঠেছে। ২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী চীন ৬২৬৩৩ মেগাওয়াট, আমেরিকা ৪৬৯১৯ মেগাওয়াট, জার্মানী ২৯০৬, ভারত ১৬০৮৪ মেগাওয়াট, ফ্রান্স ৬৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। যাই হোক উপরের ১ নম্বর ছবিটি জার্মানীর একটি বায়ু বিদ্যাুৎ কেন্দ্র এবং ২ নম্বর ছবিটি ভারতের একটি বায়ু বিদ্যাুৎ কেন্দ্রের।
কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয় ৩ নম্বর ছবিটি কোথায় তাহলে উত্তর দিতে অনেকে দ্বিধা সংকোচে পড়ে যাবেন।
হ্যাঁ পাঠক! ৩ নম্বর ছবিটি বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের। কি অবাক হচ্ছেন? দেশে এমন সুন্দর একটা জায়গা বা বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে অথচ আপনি জানেন না। হাহাহা এরই নাম সর্বগ্রাসী রাজনীতি।
যাই হোক ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার সাগর মোহনা সোনাপুর গ্রামে সমুদ্রসৈকত থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে ২০০৪ সালের ২৩ জানুয়ারি তৎকালীন সরকার বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ৯০০ কিলোওয়াট উত্পাদনক্ষমতাসম্পন্ন এ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে ব্যয় হয় ৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উত্পাদনও শুরু হয়। চালু অবস্থায় সর্বোচ্চ উত্পাদন রেকর্ড হয় ২৫০ কিলোওয়াট।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে ৫০ মিটার উঁচু টাওয়ার, জেনারেটর, কন্ট্রোল প্যানেল, সাবস্টেশন, ব্লেড, ম্যাচিং গিয়ার এলিমেন্ট স্থাপনসহ প্রায় ৫০ মিটার উঁচু টাওয়ারের মাথায় দেড় টন ওজনের পাখা বসানো হয়। যাতায়াতের জন্য মুহুরী সেচ প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত সড়কও নির্মাণ করা হয়। কেন্দ্রটি পরিচালনায় স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে ১১/০.৪ কেভি লাইনের একটি সংযোগ টানার পাশাপাশি টু-ওয়ে মিটারও স্থাপন করা হয় উত্পাদিত বিদ্যুৎ কেনাবেচার জন্য।
কিন্তু উৎপাদন শুরুর কয়েক মাস পরেই যান্ত্রিক ত্রটির কারণে এই পরিবেশ বান্ধব দৃষ্টি নন্দন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়।এরপর প্রায় আট বছর কেটে গেলেও বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেয়নি সরকার কিংবা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। অযত্ন-অবহেলায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিণত হয়েছে গোচারণ ভূমিতে।
যাই হোক এবার অন্য প্রসংগে আসি। সম্প্রতি দেশের সবচেয়ে বড় ইস্যু রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বাংলাদেশ সরকার ও ভারতের যৌথ বিনিয়োগে সুন্দর বনের উপকন্ঠে রামপালে স্থাপিত হতে যাচ্ছে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কিন্তু এদেশের দেশপ্রেমিক সচেতন মানুষ সরকারের এমন সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি। দেশী বিদেশী নানা বৈজ্ঞানীক সমীক্ষায় এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের ফলে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হবে বাংলাদেশ। ধ্বংস হয়ে যাবে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে খ্যাত প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের গর্ব সুন্দরবন। হুমকির মুখে পড়বে জীব বৈচিত্র এবং সুন্দরবন কে আশ্রয় করে গড়ে উঠা মানুষের জীবন ও জীবিকা।এক কথায় রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত সরকারের একটি আত্মঘাতি ও হটকারী সিদ্ধান্ত। সংগত কারণে এদেশের দলমত নির্বিশেষে সকল দেশ ও পরিবেশ প্রেমী মানুষ সরকারের এমন সিদ্ধান্তে বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছে এবং রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রতিহত করার শপথ নিয়েছে।
কিন্তু সরকার বাহাদুর জনগনের ভাষা কিংবা পালস বুঝতে চেষ্ঠা করছেন না কিংবা বুঝেও না বুঝার ভান করছেন। উল্টো সরকারের নানা দায়িত্বশীল ব্যাক্তি নানা রকম ভ্রান্ত যুক্তি দিয়ে রামপালের আত্মহনন কে জায়েজ করার নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তারা জনগন কে বার বার স্মরন করিয়ে দিতে চাইছেন যে আমাদের জাতীয় জীবনে বিদ্যুতের প্রয়োজন আছে। কাজেই আলোর জন্য সুন্দরবন বিসর্জন দেওয়া অন্যায় কিছু নয়। জনগনের একটা অংশ উনাদের চাতুর্যপূর্ন কথায় কনভিনসড হয়ে একি সুরে আওয়াজ তুলছেন যে আমাদের বিদ্যুৎ দরকার।
কিন্তু আমরা কেউতো বলছিনা আমাদের বিদ্যুৎ দরকার নেই। আমরা বলছি আমরা বিদ্যাুৎ চাই, তবে অন্ধকারের বিদ্যুৎ চাইনা। মায়ের নোলক বিকিয়ে দিয়ে আমরা হীরার অলংকার চাইনা। দেশ ও জগনের বিদ্যুতের প্রয়োজন নিয়ে আমাদের সরকার মহোদয় ভাবছেন এটা আমাদের জন্য সুংবাদ। আমরা সেই জন্য সরকার কে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু সে ভাবনা হোক পরিচ্ছন্ন। সেই ভাবনা বাস্তবায়ন হোক দেশের সব কিছু সুরক্ষা করে। সে ভাবনা কে বাস্তবায়নের নামে কোন দেশের সুদুরপ্রসারী হীন পরিকল্পনা আমাদের সরকারের হাতেই সফল হয়ে উঠুক সেটা আমরা চাইনা।
সরকার যদি সত্যািই দেশের বিদ্যুত সমস্যা সমাধান করতে চান তবে সেটার জন্য কেন দেশের মানুষের বিরুদ্ধে গিয়ে পরিবেশ বিনাশী পরিকল্পনা নিতে হবে। সরকারের সামনে তো খোলা আছে আরো অপশন। সরকার কি সেদিকে মন দিতে পারেনা? সরকার কি সোনাগাজীর চরে পড়ে থাকা কৌটি টাকা খরচ করে গড়ে তোলা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু করতে পারেন না। নাকি বিগত সরকার বিদ্যুৎ কেন্দ্র করেছে তাই সেটাকে উপেক্ষা করে কৌটি তাকার সম্পদ নষ্ট করাই দেশপ্রেম এবং বিদ্যুৎ ভাবনার প্রকৃত স্বরূপ ?
আমরা রাজনীতি প্রিয় জাতি। আমরা মূত্র বিসর্জন থেকে শুরু করে রাতে নাক ডেকে ঘুমানো সবকিছুতেই রাজনীতি করতে ভালবাসি। কিন্তু তাই বলে কি অপ রাজনীতি আর পরশ্রীকতরতায় ধ্বংস হয়ে যাবে আমাদের জাতীয় সম্পদ আর সম্ভাবনা !!!
আমাদের কে কেন বিদ্যুতের জন্য ধংস করতে হবে মায়াবী হরিনের আবাসভূমি।পাশের দেশ ভারত যদি তার পরিবেশ বাঁচিয়ে উইন্ডমিল টেকনোলজি ব্যাবহার করে ১৬০৮৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে তবে আমরা কেন পারবোনা? আমাদের কে কেন ভারতের কূ-পরামর্শে ধ্বংস করতে হবে আমাদের পরিবেশ ? আমাদের তো আছে ১২১ কিলোমিটার সুদীর্ঘ সমুদ্র সৈকত। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত ও আশপাশের ২৮০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সহজেই বায়ুচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা যায়। জল ও সৌরবিদ্যুতের পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানির অন্যতম উত্স হতে পারে এ খাত। এর মাধ্যমে বিদ্যুতের বড় ধরনের ঘাটতি মেটানো সম্ভব হবে। দেশ ও পরিবেশ দুটোই বাঁচবে।
আলোকিত আলোয় আলোকিত হোক আমাদের বসুধা।
কৃতজ্ঞতায়: ফেণী ব্লগ ও দৈনিক বনিকবার্তা
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:৩৫