somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মদিনার মুসাফির -- ২

০৩ রা জুন, ২০১৩ রাত ১০:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার জীবনে নানা সময়ে আমি আল্লাহর কাছে যা চেয়েছি মহান আল্লাহ সব সময় তা পূরন করেছেন। তাই কেন যেন আমার মনে হচ্ছিলো আমি অবশ্যই পূর্ন্যময় সে পাথরে একবর হলেও চুমু দিতে পারবো। কিন্তু কখন কিভাবে হবে তখনো জানতাম না। কাবা শরীফের চারপাশে তাওয়াফ বা চক্কর শেষে আমাদের পরবর্তী গন্তব্য হলো সাফা মারওয়া সায়ী বা দৌড়ানো। এটিও ওমরাহ এর একটি অংশ। সাফা মারওয়া যাওয়ার আগে আপনাদের পবিত্র কাবা ঘরের কিছু প্রাচীন কথা শুনানোর লোভ সামলাতে পারছিনা। তাছাড়া আমার খুব কাছের কিছু বন্ধু সব সময় আমাকে কাবা শরীফ নিয়ে নানা প্রশ্ন করে। আসুন শুনি কাবা শরীফ কখন নির্মান শুরু হলো।

আল্লাহতায়াআলার নির্দেশে সর্বপ্রথম ফেরেশতারা কাবাগৃহ নির্মাণ করেন আদম আঃ-এর সৃষ্টির দুই হাজার বছর আগে।

দ্বিতীয়বার আদম আঃ পাঁচটি পাহাড় থেকে পাথর সংগ্রহ করে বাইতুল্লাহ নির্মাণ করেন। এই পাহাড়গুলো হচ্ছে লেবানন,তুরে সিনা, তুরে জিতা, জুদি ও হেরা।

তৃতীয়বার হজরত আদম আঃ- এর পুত্র হজরত শিষ আঃ কাবা নির্মাণ করেন,যা নূহ আঃ-এর যুগে সংঘটিত মহাপ্লাবনের সময় আল্লাহপাক আসমানে উঠিয়ে নেন।
চতুর্থবার হজরত ইব্রাহিম আঃ ও তার পুত্র হজরত ইসমাইল আঃ নির্মাণ করেন, যা নয় গজ উঁচু ৩০ গজ লম্বা এবং ২৩ গজ চওড়া ও দুই দরজাবিশিষ্ট ছিল।

পঞ্চমবার আমালিকা গোত্র, ষষ্ঠবার জোরহাম গোত্র, সপ্তমবার মহানবী সাঃ-এর পঞ্চম পূর্বপুরুষ কোসাই ইবনে কেলাব নির্মাণ করেন। অষ্টমবার কোরাইশরা নতুন করে নির্মাণ করেন। এ নির্মাণকাজে স্বয়ং নবী করিম সাঃও শরিক ছিলেন। তিনি আপন কাঁধে বহন করে পাথর জোগান দেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ৩৫ বছর।


কাবাঘর নির্মাণকালে হাজরে আসওয়াদকে কেন্দ্র করে কোরাইশদের মধ্যে যুদ্ধের উপক্রম হয়। তখন এ সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব আসে রাসুল সাঃ এর উপরে। কাবা শরীফ নির্মাণে কোরাইশদের প্রতিজ্ঞা ছিল, কোনো প্রকার হারাম বা সন্দেহযুক্ত মাল ব্যবহার করা হবে না। এ প্রতিজ্ঞায় তারা সবাই শেষ পর্যন্ত অটল-অবিচল ছিলেন। যার ফলে হালাল মাল শেষ হয়ে যাওয়ায় কাবাঘরের উত্তর পার্শ্বের ছয় থেকে সাত হাত পরিমাণ জায়গা ছেড়ে দিয়েই নির্মাণকাজ সমাপ্ত করা হয়। সেই স্থানটুকু হাতিম নামে পরিচিত।
নবমবার হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের রঃ নির্মাণ করেন। তার এ নির্মাণ ছিল হজরত ইব্রাহিম আঃ-এর নির্মিত কাবার অনুরূপ।

দশমবার বাদশা হাজ্জাজ বিন ইউসুফের নির্দেশে ইবনে জুবায়েরের নির্মিত কাবাগৃহ ভেঙে ফেলা হয় এবং কোরাইশ বংশের নির্মিত কাবার আকৃতিতে পুনরায় নির্মাণ করা হয়, যা আজ পর্যন্ত বিদ্যমান। পরবর্তিতে খলিফা হরুন- অর-রশিদ চেয়ে ছিলেন হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের নির্মিত কাবাঘর ভেঙে দিয়ে হুজুর সঃ-এর আকাঙ্ক্ষা মোতাবেক হজরত ইব্রাহিম আঃ- এর অনুরূপ নির্মাণ করবেন। কিন্তু ইমাম মালেক রঃ কঠোরভাবে নিষেধ করেন। কেননা এতে কাবাঘর রাজা-বাদশাহের খেল-তামাশার বস্তুতে পরিণত হবে। সব ওলামায়ে কেরামও এর ওপর ঐকমত্য পোষণ করেন।

১৬০১ খ্রিঃ হিজরিতে সুলতান আহমদ তুর্কি বায়তুল্লাহ শরিফ মেরামত করেন এবং ১৯৪৭ খ্রিঃ বাদশাহ আজিজ ইবনে সাউদ কাবা শরিফের দরজা নতুন করে তৈরি করেন। ৬০৫ খ্রিঃ হজরত মুহাম্মদ সাঃ কর্তৃক হাজরে আসওয়াদ প্রতিস্থাপনেরআগে কাবা শরিফ পাথরের নির্মিত একজন মানুষের উচ্চতার সমান উঁচু এবং চার দেয়ালবিশিষ্ট ছাদবিহীন ছিল।

একবার আবিসিনিয়ার রাজা ‘আবরাহা’ হস্তি বাহিনী নিয়ে ‘কাবাঘর’ আক্রমণ করতে আসে। তখন নবীজির দাদা আব্দুল মুত্তালিব ছিলেন কাবা ঘরের সেবক। তাকে সবাই বললো হে আব্দুল মুত্তালিব আবরাহা বাদশা হস্তী বাহিনী নিয়ে কাবা আক্রমনে আসছেন। তিনি বললেন এটি যে আল্লাহর ঘর তিনিই এটি রক্ষা করবেন। এ প্রসঙ্গে বলে রাখি মুহাম্মদ দঃ এর দাদা ও পিতা মাতা ছিলেন ইব্রাহিম আঃ এর অনুসারী মুসলিম। অনেকে না জেনে তাদের মুশরিক ভেবে থাকেন। অবশেষে আব্রাহা বাদশা কাবা আক্রমন করতে আসলে আল্লাহ তায়লা ছোট্ট বেহেশ্তী পাখি আবাবিলকে পাঠান । আবাবিল পাখি দেখতে অনেকটা আমাদের দেশের ফিঙ্গে পাখির মত। এই আবাবিল পাখি তাদের ঠোটে আর দুই পাখায় করে নিয়ে এসেছিলেন ছোট্ট ছোট্ট পাথর। আর সেই ছোট্ট পাখির আক্রমনে আব্রাহা বাদশার হাতির বাহিনী চরম পরাজয় বরন করে। এ ঘটনার কথা আমরা কুরআনে ‘সূরা ফিলে’ জানতে পারি। এখনো মাঝে মাঝে কাবা শরীফের চারপাশে আবাবিল পাখি ঘোরাফেরা করে। হয়তো এখনো তারা তাদের পূর্বের পাখিদের মতো কাবা শরীফের পাহারা দিয়ে যুগের আব্রাহাদের জানান দিচ্ছে। চলবে...........................
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×