somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

******** মদিনার মুসাফির******

৩০ শে মে, ২০১৩ রাত ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মক্কা মদিনা সফর নিয়ে এর আগেও অনেক ভ্রমন কাহিনী বের হয়েছে। আমি নিজেকে সবসময় একজন আধুনিক মানুষ উদার পন্থী মুসলমান ভাবি। আমার চোখে মক্কা মদিনা দেখতে এই সফর নামাটি পড়ে দেখতে পারেন। কয়টি কিস্তি হবে আপাতত বলতে পারছিনা। তবুও ৮/১০ কিস্তি লিখার ইচ্ছে আছে। মক্কা মদিনা ছাড়াও খুব কাছ থেকে দেখা বাংলাদেশীদের দুঃখ দূর্দশা কিছু লেখার চেষ্টা করবো। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।


আমার এক খুব কাছের মানুষ ইব্রাহীম খলিল ভাইয়ের সাথে ২/১ দিন পর পর রাতের বেলা বিভিন্ন বিষয়ে আমার মোবাইলে কথা হয়। আলোচনার এক পর্যায়ে ইব্রাহীম ভাই ওমরা পালনের প্রস্তাব দিলেন।আমি কিছু না ভেবে বললাম চলুন যাই। সৌদি সরকারের নিয়ম অনুসারে ৪০ বছরের নিচে কেউ ওমরায় যেতে পারবেনা আর যদি যায় তবে অন্য কোন মহিলার মুহরিম বা অভিবাবক হিসাবে যেতে পারে।


কিন্তু আমি সেই মহিলা কই পাই? হজ্ব এজেন্সি বললো সময় লাগবে ব্যবস্থা করে দিতে। মনটা ততক্ষনে মদিনার আহবান শোনা শুরু করেছে। সারারাত ভাবছি হায়রে মদিনায় বুঝি আর যাওয়া হবেনা।একটি নাত খুব স্মরনে আসছিলো-- মনে বড় আশা ছিলো যাবো মদিনায়............

সকাল বেলা আমার এক খালা বাসায় আসলেন।খালা আমাকে বলছেন তিনি তার বাচ্চা সহ ওমরা করতে যেতে চান কিন্তু খালু সাহেব পুলিশের চাকরী হবার কারনে যেতে পারছেন না,খালা একা মানুষ কার সাথে যাবে? মনে মনে ভাবলাম ও কামলে ওয়ালা তোমার ডাক তাহলে এসেই পড়েছে। আমি খালাকে বললাম খালা আমিও যাবো চলেন যাই।

১৭ই মে বাংলাদেশ বিমানের বিজি ০০৩৬ ফ্লাইটে আমার যাত্রা শুরু। বাংলাদেশ বিমানের প্রতি আমার বিশেষ ভীতি আছে,অনেকে ভাবছেন আমার দেশপ্রেমের করুন দশা। আসলে তা না একবার বাংলাদেশ বিমানে ঊঠার বাজে অভিজ্ঞতার কারনেই এমনটি হয়েছে,যাই হোক সে অনেক বড় ইতিহাস। এয়ারবাসে উঠার পর মনে হলো না আমার আগের ধারনার সাথে এই বিমানের কোন মিল নেই। ৪৩০ সিটের এই এয়ারবাসটি উন্নত বিশ্বের যে কোন এয়ার বাসের সঙ্গে তুলনীয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো এসব কিছু ছাপিয়ে আমার মন মদিনা দেখার জন্য ব্যকুল হয়ে গেলো।

আট বছর আগে যে মদিনাকে দেখেছি যে কাবাকে দেখেছি তা আজ আবার দেখার ভাগ্য আমার হচ্ছে এই ভেবে মনটা খুশি হয়ে উঠলো। মনে পড়ে গেলো আলা হযরতের সেই নাত ফির কারাম হো গ্যায়া মে মাদিনে চালা...আবারো কামলে ওয়ালার করুনা হয়েছে আমি মদিনায় যাচ্ছি।

ফ্লাইট যখন সৌদি আরবের জেদ্দা বিমান বন্দরে ভিড়লো ততক্ষনে স্থানীয় সময় রাত চারটা। অনেকটা ক্লান্ত হয়ে ইমিগ্রেশনে দাঁড়িয়ে আছি,আমার সাথে ইব্রাহীম ভাই, আমার খালা ও তার বাচ্চা। ইব্রাহীম ভাইকে আরো কিছু দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে তিনি যাদের মুহরিম হয়ে এসেছেন তাদের এরাইভাল কার্ড লিখে দিতে হচ্ছে।

যাহোক অনেক ভীড় ঠেলে আমরা বের হতে হতে সকালের আলো ফুটে গেছে। কিন্তু এয়ারপোর্ট থেকে বের হতে হতে আরেক বিপত্তি। একদল লোক এসে আমাদের পাসপোর্ট চাইছে। আমি বললাম হু আর ইউ এন্ড হাউ কুড ইউ সিজ আওয়ার পাসপোর্ট। আমার তো রাগে গা জ্বলতেসে। আল্লাহ তায়লার ইচ্চায় এই পিচ্ছি বয়সে অনেক দেশের ঘোরাঘুরি শেষ। কোথাও এমন হেনেস্তা হতে হয়নি। আমি তর্ক চালিয়ে যাচ্ছি। সবচেয়ে বড় কথা হলো এরা আমাদের সাথে এমন আচরন করছে যেন আমরা ভয়ঙ্কর কোন অপরাধ করে ধরা পড়া আসামী।

পড়া লেখার নাম গন্ধ তেমন একটা এদের নাই তবু শেখ শেখ ভাব এই অফিসারগুলো হম্বি তম্বি করে বেড়াচ্ছে ,আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ইংলিশ শব্দ খুজে বেড়াচ্ছে। যাইহোক এক বাংলাদেশীর মাধ্যমে জানতে পারলাম অনেক বাংলাদেশী নাকি ওমরাহ ভিসায় এখানে এসে থেকে যায় আর যেতে চায়না,তাই এ ব্যবস্থা।ওরা ওমরাহ শেষে পাসপোর্ট ফেরত দেবে। কি আর করা চুপ করে মেনে নিলাম। বাসে করে জেদ্দাহ থেকে ৮০ কিমি দূরে মক্কা নগরীতে যাচ্ছি। বাসে বসে ভাবছি আমি সেই নগরীতে যাচ্ছি যে শহর কে নিয়ে আল্লাহ কোরআনে শপথ করেন। এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো আল্লাহ তায়লা এই শহরের শপথ করেছেন । হাজারো বছর আগ থেকে এই শহরকে বিশেষ লালন করেছেন এমন কি এই শহর আবাদ এর জন্য ইব্রাহীম আঃ এর স্ত্রী পুত্রকে পরীক্ষায় ফেলেছেন। কেন বলতে পারেন?

এতো ভালোবাসা দিয়ে এই শহরকে লালন পালনের উদ্দেশ্য আল্লাহ তায়লার একটাই তা হলো এই শহরে জন্ম নিবেন জগতের রহমত রাহমাতাল্লিল আলামিন প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ দঃ ।

এসব ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত আমি ঘুমিয়ে পড়লাম বাসের মধ্যেই। ঘুম ভেঙ্গে দেখি আমি চলে আমি এক অচেনা শহরে চলে এসেছি। আট বছর আগের সেই শহরের সাথে নতুন মক্কার কোন মিল পাচ্ছিনা। তবুও মনে প্রশান্তি লাগলো এই ভেবে আমি আমার কামলে ওয়ালার জন্মভুমিতে এসেছি, আমি মুসলমানের কাবার শহরে এসেছি। প্রতি ওয়াক্ত নামজে যে কাবাকে সামনে রেখে মহান স্রষ্টাকে সিজদা করি সেই কাবা।

আমরা যেহেতু কোন এজেন্সিকে আমাদের থাকা খাওয়ার দায়িত্ব দেইনি তাই নিজেরাই হোটেল খুজে বের করলাম। হেরেম শরীফের পাশে বুর্জ আল সুলতান।হোটেলে এসে কিছুটা ফ্রেশ হয়ে ওমরা সম্পন্নের প্রস্তুতি নিচ্ছি যেহেতু ওমরা সম্পন্ন না হলে আমরা ইহরাম খুলতে পারছিনা।


লাব্বাইক তালবিয়া পড়তে আমরা হাজির হলাম খানায়ে ক্বাবার দিকে। প্রথমে যখন ক্বাবা চোখে পড়লো আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিনা। ক্বাবায় যখন প্রথম চোখ পড়লো দুনিয়া কি জিনিস ভুলে গেলাম,ভুলে গেলাম নিজেকে। আমার সর্বশক্তি দিয়ে আমি বলে উঠলাম লাব্বাইক ইয়া আল্লাহ। শুরু হলো হাজরে আসওয়াদ থেকে কাবার তাওয়াফ। হজ গাইড হাতে নিয়ে একটার পর একটা দোয়া পড়ছি। প্রতি তাওয়াফে আলাদা আলাদা দোয়া। আবার হাজরে আসওয়াদে ফিরে নতুন চক্কর শুরু করি। মনে প্রবল ইচ্ছা আসয়াদ পাথরকে একটু চুমু দেবো।কিন্তু সেখানের ভীড়ে সাহসে কুলায় না। অপেক্ষায় থাকি হয়তো কোনদিন আমার কামলে ওয়ালার দয়া হবে,আমাকে আসওয়াদ পাথরে চুমুর ব্যবস্থা করে দেবেন।

হাজরে আসওয়াদ নিয়ে প্রায় আমরা সবাই জানি তবুও আমার জানা কিছু জ্ঞান আপনাদের সাথে শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারছিনা। হাজরে আসওয়াদ বাংলায় কালপ্রস্তর আরবীতে الحجرالأسود ইংরেজীতে Al-Hajaru-l-Aswad র্পূব নামঃ হাজরে আস-আদ বা সাদা প্রস্তর

হাজরে আসওয়াদ মূলতঃ কোন পাথর নয়, প্রকৃত পক্ষে হাজরে আসওয়াদ একজন ফেরেশ্‌তা ছিলেন। আর হাজরে আসওয়াদ খালেছ নিয়তে চুম্বনকারী ব্যক্তির গুনাহ্‌ চুষে নেয়। একটি পাথর যার রং শুরুতে এক হাদীস অনুযায়ী দুধেরমত বা বরফের চেয়েও সাদা ছিল। পরে আদম-সন্তানের পাপ তাকে কালো করে (তাফসীরে ইবনে কাসীর সূরা বাকারা ১২৭ নং আয়াতের তাফসীর)হাজরে আসওয়াদের ঠিক নিচ থেকে একটি পানির ধারা যমযম কুপে প্রবেশ করেছে।বিশ্ব মুসলিম নর-নারীর কাছে এ পাথর অতি মূল্যবান। তিরমিজী শরীফের হাদীস শরীফে বর্ণীত হয়েছে, হাজরে আসওয়াদ যখন (হযরত আদম আলাইহিস সালাম -এর সঙ্গে) জান্নাত থেকে অবর্তীণ হয় তখন তা দুধের চেয়েও সাদা ছলি; কিন্তু আদম সন্তানের গুনাহ একে কালো করে দিয়েছে। তিরমিজি, ইবনু খুযাইমা, ইবনু হিব্বান ও হাকেম র্বণতি সহি হাদীস শরীফে র্বণীত হয়েছে যে, এ পাথরের একটি জিহ্বা ও দুটি ঠোঁট রয়েছে, তা দ্বারা কিয়ামতের দিন চুম্বনকারীদের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে।

চলবে.....................
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৩ রাত ১২:২৮
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×