নানান ভাবচক্কর ইতং বিতং কইরা সঙ্গী সাথী পশু পাখী না পাইয়া স্টার সিনেপ্লেক্সে না যাইয়া অবশেষে ল্যাপীতেই দেখতে বসলাম এই সিনেমাটা। রবার্ট ডাউনি মালটারে আমার পছন্দ বেশ আগে থেইকাই, ওর এটিটুড এর কারণে আর একটা কারণ জনি ডেপের মত প্রথম যৌবনে সাফল্য পাইয়াও মাঝখানের সময় কাটছে নানান এক্সপেরিমেন্টে (ড্রাগ, এডভেঞ্চার, প্রেম আরো অনেক কিছু)। পরে যখন ব্যাক করছে তখন আরো পরিণত আরো জোশ, লেভেলে গেছে।
যাউগ্গা। ভাঙ্গারী মানব সিরিজের প্রথম পর্বের পর থেকেই একটা সংকট দেখা দেয়, সেটা হল কেন্দ্রীয় চরিত্ররে অতিমানব এবং মানব এই দুইটার ভারসাম্য রক্ষা করার। একদিকে ডাউনির ক্যারিশমা; তারে ব্যক্তিত্ব হিসেবেই অনেক আকর্ষনীয় করে রাখে, একসেন্ট্রিক প্লেবয় জিনিয়াস তার উপর লৌহ বর্ম। এই লৌহ বর্ম তারে নতুন নতুন উচ্চতায় নেয়, বিশেষত প্রযুক্তি নির্ভর পৃথিবীর গড হিসেবে।
খেয়াল করে দেখবেন এভেঞ্জারে আমেরিকান হিরোইজমের চূড়ান্ত দাম্ভিকতায় সবচেয়ে বড় বীর কিন্তু এই লৌহমানব। থর, হাল্ক এদের পিছনে ফেলে মহা বীর হিসেবে আধুনিক উত্তর আমেরিকাকে ধারণ করে আয়রনম্যান। যে এরোগেন্ট কিন্তু শেষ পর্যন্ত "সবার" জন্য জীবন উৎসর্গ পর্যন্ত করতে পারে। ক্যাপ্টেন আমেরিকা হল, বীর হৃদয়ের; আর তার কাজ মাঠে, তার প্যাটার্ণটা অনেক বেশি ডিফেনসিভ, রক্ষাকারীর ভূমিকায়, দেশপ্রেম, নিজের মাটি বিষয়টা প্রবল।
বেশি সিরিয়াস না হই। প্রথম পর্বে স্টার্কের উত্থান আমরা দেখি এবং দ্বিতীয় পর্বে দেখি তার আত্মকেন্দ্রীক, খেয়ালী, স্বার্থপর রূপকে। দ্বিতীয় পর্বের স্টার্ক অনেক বেশি প্রযুক্তি নির্ভর। এই প্রিলিউডটা জরুরী কারণ তৃতীয় পর্বে ডাইরেক্টরের উদ্দেশ্য ছিল স্টার্করে মানবিকতর করে তোলা। এই জন্য প্রাথমিক টেক গিক পর্বের পরই, স্টার্কের ব্যক্তিগত জীবন নায়িকাকে হারানোর শংকা, কিছুটা ইতিহাস, শিশুর সাথে সময় কাটানো, নিজের বাড়ী ধংস হয়ে যাওয়া, সব সাপোর্ট হারিয়ে ফেলা এমন কোন মশলা নাই যে দেয়া হয়নি।
তবে টুইস্ট করতে যেয়ে বেন কিংসলির চরিত্রটাকে পুরা সাজানো বানানোটা; গল্পের জন্য সেই হিরোইক হিরোর বিপরীতে ভয়ানক ভিলেনের অস্তিত্বকে খারিজ করে দেয়। কিন্তু একই সাথে সত্য কথাটা বলেও ফেলে, "আমেরিকা তার নিজের সাথেই নিজের স্বার্থে যুদ্ধ করে"। আমেরিকার শত্রুও সে নিজেই, কি এরোগেন্স!
যাউগ্গা! ভিলেন এর জন্য যে লোহা গলানীর পাওয়ার বরাদ্দ থাকবো এইটা বোঝা কঠিন কিছু ছিল না। তা না হইলে সে ভাঙ্গারী ম্যান সিনেমার ভিলেন হবে কিভাবে? গাই পিয়ার্স ভালৈ করছে। আসলে বেশ ভালো করছে। এক চরিত্রে মহানায়কদের মেয়াদ ৩ পর্ব এটা তো বেশ ভালৈ বোঝা যায়। আর এখানেই মেশিন ম্যান তৃতীয়মাত্রার ব্যার্থতা।
তুলনা একটাই ব্যটম্যান সিরিজের তৃতীয় পর্ব; যাই করুক; অন্তত হতাশ করেনি তার কারণ ঘটনার ধারাবাহিকতা এবং চরিত্রের মানবিকতাকে তৈরি করার ক্ষেত্রে ভীষণ যত্ন। এক্ষেত্রে ব্যাটম্যানের সুবিধা একটু বেশি কারণ সে ২য় পর্বে অসামান্য ভিলেনের সাহায্য পেয়েছিল। আর ৩য় পর্বে সুন্দরী প্রতারক এবং শক্তিশালী ভিলেন ও প্লট। ফলে সিনামাটা তৃতীয়মাত্রার ক্যাচালে কলিজু কলিজু হয়ে উঠেনি।
এদিকে লইট্টা ফিশ রূপী বেন কিংসলে অন্যদিকে ভাঙ্গাচূড়া বর্ম এবং গিনেথ পেল্ট্রোর ননচার্ম (অর্থাৎ বিকর্ষণ) অন্যদিকে গাই পিয়ার্সের চার্ম এবং শার্পনেস সব মিলিয়ে রবার্ট ডাউনিরে পুরা মাইনকার চিপায় ফালায় দিসে। সিনেমা চলসে মূলত ডাউনির চার্মে আর এটিটুড এ। কিন্তু বাজে স্ক্রীপ্ট সিনেমায় মানবিক আর অতিমানবিক আয়রনম্যান এর ভারসাম্য তৈরি করতে পারেনি। ফলে সিনেমাটা খাওয়া যায় একবার কিন্তু আর ভুলেও দ্বিতীয়বার দেখার আশা আমি করিনা। বিশেষত দেশে যখন, মেশিন ম্যান আর তৃতীয় মাত্রার নাটক নিয়া আমরা অলরেডি ক্লান্ত।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:০০