somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হানিমুনে যা যা হল................

২৪ শে মে, ২০১১ সকাল ১০:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দরকার হলে সবার পেছনে গিয়ে বসব তবুও আমি জানালার পাশের আসনটায় বসব- যাত্রাকালে মোটামুটি এই নিয়ম ই আমি ফলো করে থাকি। এতদিন কার যত যাত্রা তার সবই ছিল একগাদা বন্ধু সহ ছুটে চলা। আর এইবার সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা, দুটো টিকেট, সহযাত্রী মাত্র একজন, কিন্তু আসল ঘটনা হল জানালার পাশে বসার সুযোগ সম্ভবত আমি হারিয়ে ফেললাম চিরদিনের জন্য অথবা অন্যভাবে বললে বলা যায় এইটায় মনে হয় স্বাভাবিক নিয়ম :):)

উইকির সংজ্ঞা অনুযায়ী (Honeymoons in the modern sense a pure holiday voyage undertaken by the married couple) আমাদের এই যাত্রাকে হানিমুন বলা চলে ;);)

"হানিমুনে যা যা হয়" নামক বইতে সমরেশের নায়ক নায়িকা দার্জিলিং এর পাহাড়ে ছুটে গেলেও আমাদের গন্তব্য পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত পানে। এর আগে যতবারই কক্সবাজারে গিয়েছি প্রতিবারই গেছি দলবেঁধে , সো এই বারের যাত্রা আসলেই অন্যরকম।

কক্সবাজার গিয়ে আমার প্রথম পছন্দ হোটেল সী ক্রাউন- কারন এই হোটেলের এত কাছেই বীচ যা অন্য কোন হোটেলে পাওয়া যায়না। যখন ইচ্ছা তখন সাগরে নামার জন্য এই হোটেলটাই পারফেক্ট। চাইলে রুমে শুয়ে শুয়েও সাগর দেখা যায়।



এতবার গেছি তবুও সাগরের আকর্ষন যেন একটুও কমেনা। ভেবেছিলাম কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে দুপুরে খাওয়া দাওয়া সেরে তারপর আস্তে ধীরে সাগরের কাছে যাব। কিন্তু অমোঘ আকর্ষন ত্যাগ করা অত সহজ না যখন সাগর একেবারে চোখের সামনে। ব্যাগটা রেখে তাই আমরাও আর অপেক্ষা করলামনা। নীচে নামতেই কয়েকজন ফটোগ্রাফার ঘীরে ধরল, কে কত ভাল ছবি তোলে তার বর্ণনা, অফ সীজন তাই কেউ চাচ্ছেনা সুযোগ হাতছাড়া করতে। নাছির নামক এক পিচ্চীর কথাবার্তা ভাল লাগায় তাকে সাথে নিলাম, মনে মনে ভাবছি, হায়রে শেষ পর্যন্ত টাকা দিয়ে ছবি তুলতে হবে, যুগল ছবি তোলার আর অন্য কোন উপায় ও নেই।



সাগর সৈকত কি এবার একটু অন্য রকম লাগছে ?? নিজের কাছেই যেন জানতে চাইলাম। প্রিয় মানুষটিকে জড়িয়ে ধরে কাউকে যখন ছবি তুলতে দেখতাম তখন ভাবতাম ইস কবে যে অমন করে ছবি তুলব !!! সে ইচ্ছা পূরনের সুযোগ পেয়ে গেলাম এত দিনে। বড়রা যখন চার চাকার মোটর বাইকে করে বীচে ঘুরে বেড়াত ভাবতাম ধুর এটাতে কি এমন মজা । কি মজা সেটা চড়েই দেখা যাক- তাই আর অপেক্ষা না করে আমরাও এমাথা ওমাথা চক্কর খেয়ে আসলাম।ভালইত লাগল ;)

ফটোগ্রাফার নাছির মনের মাধুরী মিশিয়ে আমাদের ছবি তুলতে লাগল, কি অবলীলায় ক্যামেরার পেছনে থাকতে ভাল লাগে যে আমার, সে আমিও ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে যাচ্চি........

প্রিয় জায়গাগুলো নতুন করে দেখার ইচ্ছাটা দমিয়ে রাখা গেলনা। আর তাই দুপুরের লাঞ্চের জন্য সাগরে একদফা দাপাদাপি শেষে আমরা হাজির হলাম তরঙ্গ রেস্তোরায় বসনিয়ান নান আর কোরালের কাবাবের জন্য ।



সানসেটটা আজ একটু অন্যরকম !!! হয়ত ,হয়তবা নয়-কিন্তু দুজনে মিলে সূর্যের এই অন্যভুবনে চুটে চলা দেখাটা আসলেই অন্যরকম। খেয়াল করে দেখলাম নাছির আমাদের এই সময়টুকু ফ্রেমে একটার পর একটা ধরে রাখছে। মাঝে মাঝে তার সাজেশন অনুযায়ী আমরাও দাঁড়িয়ে যাচ্ছি, দ্বৈত ছবি ঠিক কোন কোন ফ্রেমে সুন্দর হবে নাছির বলে চলে, আমরাও মনের আনন্দে সেভাবেই দাঁড়িয়ে পড়ি, আফটার অল হানিমুন বলে কথা :):)

রাতে ডিনারে বউ যখন বলল তোমার প্রিয় ডাক রোস্ট আছে, খাবা নাকি। আমি মনে মনে প্রমাদ গুনি আর বললাম সাগর পাড়ে শুধুই সাগরের মাছ খাব অন্য কিছু না। সেই কবে একবার নিঝুম দ্বীপে সকালে হাঁসের মাংস আর খিচুড়ীর মোহে পড়ে লঞ্চ মিস করার গল্প করেছিলাম, সে গল্প রুপান্তরিত হয়ে শ্বাশুড়ির কাছে পৌঁছাল "জামাই এর হাঁসের মাংস ভীষন পছন্দের" এই রূপ নিয়ে। ফলাফল হল বিয়ের আগে প্রথম যেদিন ভাবীর বাসায় গিয়েছিলাম সেদিন থেকে আজও যখনই শ্বশুড় পক্ষের যে কোন দাওয়াতেই যায়না কেন টেবিলে হাঁসের মাংসের নিরবিচ্ছিন্ন উপস্হিতি। না করার কোন উপায় নেই, সাথে সাথে শুনতে হয়, তুমি অনেক পছন্দ কর বলেইত এটা রাখা হয়েছে :(:( কেমনে বুঝায় সাথে যে খিচুড়ি থাকতে হবে আর লোকেশনটা নিঝুম দ্বীপের জন্য এই কথা প্রযোজ্য !!!!

বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্কে আগে যাওয়া হয়নি, তাই আমরা ঠিক করলাম জীবনে আগে যেহেতু সাফারী পার্ক দেখিনি তাই এইবার দেখে আসি ।না গেলে জানা হতনা চিড়িয়াখানা আর সাফারি পার্কের মাঝে কোন পার্থক্যই আমরা করতে পারিনি। গ্রীলের ফাঁক দিয়ে বাঘের আর গর্জন শুনে সিংহের উপস্হিতি নিশ্চিত হতে হয়েছিল। কোন এককালে নাকি এরা মুক্তই ছিল, বন্য হাতী বাউন্ডারী ওয়াল ভেঙ্গে ফেলায় এখন এরা বন্দী জীবনযাপন করছে। অমন আহামারি কিছুই নয় অথচ একটু প্ল্যান আর স্বপ্ন থাকলে ঐ জায়গাটিকে কত সুন্দর করে গড়ে তোলা সম্ভব হত !!!



যায় হউক আফসোস করার সময় নেই, ইনানীতে আমাদের সূর্য অস্ত দেখতে যেতে হবে.........

ইনানীতে একসময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল হাজারো প্রবাল । সর্বভূক জাতি আমরা। সবই খেয়ে ফেলেছি, রয়ে গেছে কেবল সূর্যটি - ধরা ছোঁয়ার বাইরে বলেই সে আজও বেঁচে আছে।








অসম্ভব প্রিয় সময় এই গোধূলিবেলা, নিবিড় মনে আমরা চেয়ে থাকি অস্তমিত সূর্য পানে.......

বিকেলবেলার আলো ক্রমে নিভছে আকাশ থেকে।
মেঘের শরীর বিভেদ করে বর্শাফলার মতো
সূর্যকিরণ উঠে গেছে নেমে গেছে দিকে- দিগন্তরে ;
সকলি চুপ কী এক নিবিড় প্রণয়বশত । ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১১ দুপুর ২:৪৬
৬৩টি মন্তব্য ৬৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=মাঝরাতে ঘুম ভাঙ্গে যদি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৫:২৮



নষ্ট কলের টুপটুপ জলের শব্দে
ঘুমের চোখ বেয়ে নামে নির্ঘুম রাত
এপাশ ওপাশ করে কেটে যায় অজস্র প্রহর
বুকের বামে যত দুর্ভাবনা এসে হয় জড়ো।

আধখোলা চোখে দুঃস্বপ্ন এসে করে ভর
চোখ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যরিস্টার জায়মা রহমান রূপ দিয়ে জাতির মন জয় করতে পারবেন না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:৩৪




ব্যরিস্টার জায়মা রহমানের দাদী তাঁর দাদার কারণে ক্ষমতা লাভের সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু কিছু বিষয়ে তাঁর অদক্ষতার কারণে জনগণ তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ছিলেন। মন্দের ভালো সূত্রে এবার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতের আরো একটি দূরভিসন্ধি ব্যর্থ হয়ে গেলো

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:৪৩



পনাদের কি মনে আছে সাইফ আলী খানের ওপর হামলার কাহিনী? নিশ্চয় মনে আছে। এখানেও ভারত একটি গেম খেলতে চেয়েছিল কিন্তু দাবার চালটা সঠিকভাবে চালতে পারিনি তাই তাদের দূরভিসন্ধি ফাঁস... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ড্রিম কী?

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:৪৬



গত বছরের এপ্রিল থেকে আমি একটা কাহিনী লেখা শুরু করি "বাংলাদেশি ড্রিম" নামে। আমার আসলে অন্য একটা উপন্যাস শুরু করার পরিকল্পনা ছিল। শুরু করেও ছিলাম সেটা। কিন্তু হঠাৎ করে বিদ্দুচ্চমকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখোশ অবয়ব (রিপোস্ট)

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১:০৬

ছবি: ইন্টারনেট

উদ্‌ভ্রান্ত আমি কয়েকটি জালে আটকে গিয়েছি,
কেউ বলে যান্ত্রিকতা, কেউ বলছে মায়া,
কেউ কেউ আবার বলছে ধোঁকা,
কোনোটাই ফেলে দিতে পারিনি,
পরে দেখি সত্য বলেছে সবাই।
আমি দেখলাম, মানে স্বচক্ষেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×