যায় হউক এবার সেই সব আগ্নেয়াস্ত্রের কথা বলা যায় যা আমি ছুঁয়ে দেখেছি অথবা খুব কাছ থেকে।
জীবনে প্রথম ছুয়ে দেখি বিখ্যাত ( কুখ্যাতও বটে-আমাদের পুলিশের এটা থেকে নাকি গুলি বের হয়না) থ্রি নট থ্রি (৩০৩) রাইফেল। ১৯৮৮ সালের কথা।নির্বাচনী দায়িত্বের কারনে এবং ব্যালটের নিরাপত্তার জন্য ভোটের আগের দিন (কেন্দ্র কাছে থাকায়) দুই পুলিশ সহ আব্বু বাসায় আসেন। দুই পুলিশের হাতে দুখানা ৩০৩ ।শিশু সুলভ আকর্ষনে সেই প্রথম আগ্নেয়াস্ত্রের ছোয়া পাওয়া নেড়ে চেরে দেখা। আমার শত কোশ্চেন এর উত্তর ও তারা দিয়েছিলেন। ট্রিগার থেকে বুলেট সবই।বিশাল সাইজের বুলেট কিছুটা অবাকই করেছিল। বুঝেছিলাম এটা জায়গা মত বিধলে বাঁচার আশা দুরাশা।
পরবর্তী সাক্ষ্যাৎ হয়েছিল একেবারে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রের সাথে। ঘূর্নিউপদ্রুত এলাকায় সাহায্য করতে যাওয়া সেনা সদস্যদের সাথে থাকা চাইনিজ রাইফেল আর এস এম জি। ২৫ টি বুলেটের ম্যাগাজিন সহ চাইনিজ রাইফেল।তখন ওজনটাও ভালই মনে হইছিল। তারা কি সুন্দর এটাকে পার্ট পার্ট করে খুলে পরিষ্কার করত আবার লাগিয়েও ফেলত কি অবলীলায়। হাতে নিয়ে দেখতে বেশ লাগত।এর বুলেটগুলো আরও বড়। বেশ ঝকঝকে করে রাখত তারা।রাইফেল গুলোকে অনেক আপন ভাবত ওরা।
এস এমজির ম্যাগাজিনটা ছিল গোল বড় চাকতির মত, বুলেট গোল করে সাজানো থাকত তাতে। জিনিসটাও বেশ ভারী।
বৈধ অস্ত্রের সাথে সাক্ষ্যাৎ এখানেই শেষ।
ক্লাশ সেভেনে পরা কালীন কোন এক বিকালে খেলার মাঠে আমরা কয়জন বসে আছি বল এখনও আসেনি। মাঠের এক পাশে আগে থেকেই বসে ছিল পাড়ার এক ছেলে।আমাদের থেকে কয়েক বছরের বড়। হঠাৎ কথা বলতে বলতে সে কোমরে গুঁজে রাখা রিভলবারটা দেখাল। ভয়ে ভয়ে আমরা সেটা ধরেও দেখলাম। আঙ্গুলের মাঝে নিয়ে ঘুরানোর ও একটা ট্রাই দিলাম। বল চলে আসাতে ঐ খানেই শেষ অবৈধ অস্ত্রের প্রথম ছোঁয়া।
অষ্টম শ্রেনীতে বৃত্তির কোচিং চলছে।তাড়াহুড়ো করে কোত্থেকে এসে আমার পাশে বসল ক্লাশেরই একটা ছেলে।জানতাম ওর ভাই ছাত্র দলের ক্যাডার।এদিকে তার আগের দিন ক্লাশেরই একজনের সাথে তার মারামারি হইছে। বসে একটু পরে সে আমার হাতটা টেনে নিয়ে তার ব্যাগের মধ্যে ঢুকাল।ভারী কিছু একটা অনভূত হতেই বললাম এটাকি।পিস্তল। শুনেত আমি টাসকি।একটু বের করে দেখাল।আমিও ব্যাগে হাত ঢুকিয়ে ধরেধরে দেখলাম। নবম শ্রেণীতে উঠে ওকে আর দেখিনি, খোঁজও নেয়া হয়নি কেন সে নেই ,অবশ্য নেবার ইচ্ছাও জেগেছিল এমনটি মনে পড়েনা।
২০-২০ ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক অভিষেকের আগেই আমরা ২০-২০ খেলে অভ্যস্ত।প্রতিদিনের পাড়াত ম্যাচগুলোও ছিল ২০-২০ ম্যাচ। এস এস সির পর পাশের পাড়ার এক টিমের হয়ে একটা টুর্ণামেন্ট খেলতে গেলাম আমি আর আরেক বন্ধু।চোখ বন্ধ করে আমি ভালই পিটাতে পারি আর ও ধীরে সুস্হে সেটেল হয়ে খেলে। কিন্তু বিধি বাম। ১ম বলেই আম্প্যায়ার এলবির আবেদনে সারা দিয়ে দিলেন। আর যায় কোথায়।নন স্ট্রাইকিং এ দাঁড়িয়ে যা দেখছি আমি ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলামনা। আমাদের টিমের মালিক মাঠে ঢুকে আম্প্যায়ার এর দিকে বাঁকানো পাইপের মত কি একটা ধরে ধুম গালিগালাজ করে বলছে এই আউট হবেনা আর না হলে এই টুর্ণামেন্ট বন্ধ।শেষ পর্যন্ত টুর্ণামেন্ট ই বন্ধ হয়ে গেল। লোহার পাইপ তাতে স্প্রিং লাগানো ট্রিগার আছে। এটাই নাকি বহুল ব্যবহৃত পাইপগান যার বুলেটের পাড়াত নাম বিচি।
এর কয়েক দিন পড়ে পাড়াত এক ছাত্রলীগ ক্যাডার আমাদের সবাইকে ডেকে তার বাসার ছাদে নিয়ে গেল। বঙ্গবন্ধুর সৈনিক বানানোর কথা বলে একটা কমিটি করা হল।সভা চলাকালীন তার দলের একজন একটা ব্যাগ নিয়ে আসে।কিছুক্ষন পর সে ব্যাগ থেকে বন্দুকেথ মত দেখতে বের করে বলল এটা কাটা রাইফেল। তোদের লাগলে নিয়ে যাবি। ও মুখো আর যাওয়া হয়ে উঠেনি ব্যস্ত কলেজ জীবনে।সে হাত ছানিতে হারিয়ে গেছে কৈশোরের এক খেলার সাথী।ফেরারী জীবন নিয়ে এখন পরবাসী।
কলেজ জীবনে শিবিরের হাতছানিতে মুগ্ধ হয়ে এক বন্ধু তখন ক্ষমতাবান শিবির নেতা হয়ে উঠার পথে। কলেজে প্রায় শুনি হলে আছে একে৪৭ নামক ভয়ংকর সেই আগ্নেয়াস্ত্রের অস্তিত্ব।দেখার সাধ মাথা চাড়া দেয়,আগ্নেয়াস্ত্রের প্রতি অমোঘ আকর্ষন বলে কথা। ধারনা ছিলনা এত সহজেই সে আশা পূরন হবে। বন্ধুটিকে বলেছিলাম। একদিন সে হঠাৎ করে বলল আমার বাসায় চল একটা জিনিস দেখাব।
বাসায় তার রুমের বুকশেলফের পিছন থেকে বের করে নিয়ে আসল ।আমিত হতবাক।আমার চোখের সামনে এটা কি। এ যে একে৪৭ ।নেড়ে চেড়ে যতভাবে সম্ভব দেখলাম। অথচ আমার মাঝে কোন উত্তেজনায় কাজ করলনা। চোখের সামনে আরেকটি বন্ধুর হারিয়ে যাওয়া দেখছিলাম।সে দেখাল কি করে সিঙ্গেল শ্যুট করতে হয় কি করে ব্র্যাশ ফায়ার করতে হয়। ২৫টি বুলেটের একটা ম্যাগাজিনও ছিল।খুব ইচ্ছা করছীল একটা ফায়ের করে দেখতে।আফটারঅল এয়ার গান দিয়ে বেলুন যেহেতু ফাটাতে পারি এটাও পারব। গর্জিয়াস একটা জিনিস ।
তার কাছে আরও দেখলাম জাহাজের ফ্লেয়ার গান। যেগুলি মাঝেমাঝে উদ্ধার করে পুলিশ রকেট লাঞ্চার বলে চালিয়ে দেবার চেষ্টা করে।
ঐ বন্ধু অবশ্য স্বার্থের টানাপোড়েন আর দন্দ্বে ফিরে এসেছিল সে পথ থেকে।ইসলাম নিয়ে বিকিকিনির সে পথ ছেড়ে আজ মুক্ত জীবন নিয়ে অনেক ভাল আছে সে ইসলামকে বুকে নিয়েই।
ভার্সিটির ১ম সেম।লাইব্রেরীর সামনে বসে আছি।লীগের দু গ্রুপের উত্তেজনায় এক পক্ষ্যের একজন কোথা থেকে একটা একনালা বন্দুক নিয়ে লাইব্রেরীর সামনে হাজির।কথাবার্তা ছাড়াই এক রাউন্ড আকাশে ফায়ার করে আবার হাওয়া। ভোজবাজির মত ছিল সে আসা যাওয়া।
ভার্সিটিতে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ভিসিকে আমরা সাধারন ছাত্ররা আটকানোর প্ল্যান করলাম।আমাদের বাসায় মিটিং হল।আটকানোর একটা রিহার্সেল ও করে ফেললাম।মিটিং শেষ করে বের হচ্ছি এমন সময় গলির মুখে বাইক নিয়ে তিন শিবির কর্মী হাজির।হুমকি ধামকি দিয়ে গেল।ভয় পেলেও আমরা অনড়।আটকানো হল ভিসিকে।সন্ধ্যায় লীগ সভাপতি আমাঠে ডাকল।আড়ালে নিয়ে বলল তোমরা দল আর শিবিরকে ভয় পাবানা।আমার ছেলেপেলে রেডী আছে মশীন নিয়ে। হাসলাম, ভয় পেলে হবে নাকি এটা আমার শিক্ষ্যা জীবন।
কিছুক্ষন পর ছাত্রদল রড নিয়ে হামলা চালাল। কিভাবে কিভাবে যেন আমরা ঠেকিয়ে দিলাম। এক আপুর সাহসী হ্যাচকা টানে দলের সভাপতি পড়ে যায়।দলের আরেক গ্রুপ আমাদের পক্ষ্য নেয়ায় ওরাও সরে পড়ে।শিবির ও হামলা করেনি দলের সাথে লেগে যেতে পারে এই কারনে।
দল যখন হামলা চালায় লীগের মেশিনধারীরা কোথায় দম নিতে গিয়েছিল আজও জানা হয়নি। ১৮ ঘন্টার অবরোধের পর ভিসি ভার্সিটি খুলে দিতে রাজি হয়।
পরের অস্ত্র হাতে ধরা হয়নি শুধু দর্শন হয়েছিল। ছাত্রী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন।এখানেও মুখোমুখি দলের সাথে। রড আর ইটপাথরের লড়াই।নীরব দর্শক ৩০৩ ধারীরা যেন ব্যাপক মজা পাচ্ছে। আমাদের অনেকেই আহত হল। তখনো আমরা পিছু হঠিনি।হঠাৎ দলের এক ক্যাডার ওয়ান শ্যুটার গান বের করে পুলিশের সামনেই উপরের দিকে গুলি ছুড়ে বসল। হুড়োহুড়িতে আমাদের প্রতিরোধ ভেঙ্গে গেল। সব পত্রিকায় অস্ত্র হাতে তার ছবি এল শুধু পুলিশই তাকে দেখলনা।
পরিশেষে আবারও মাসুদরানা। রানা পড়ে পড়ে নিজের একটা বৈধ লাইসেন্স করা পিস্তলের শখ মনের গহীনে শুধু নয় প্রকাশ্যেই উঁকি দেয় সবসময়।
নিজের একটা ওয়ালথার পি পি কে নাইন এম এম।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০০৯ সকাল ১১:৪২