বনের রাজা,বনের ক্ষমতাসীন সরকার কিংবা বনপ্রধান - বাঘ, রাজ্যের কোন এক পথ ধরে চলতেছিলেন একদিন । সেই পথের ধারে এক গাছের মাথায় বসে চিন্তামগ্ন ছিল এক বানর । নাদুস-নুদুস বানর কে দেখে কুচিন্তা উদয় হল বাঘের মনে ।
বাঘের 'হালুম' শব্দে বানর সুড়সুড় করে নেমে এল গাছের নিচে । বাঘ বলল - ' হে বানর, তোমাকে পুটু মারার সখ আমার অনেক দিনের । আজ যখন একেবারে সামনাসামনি চলে এসেছ তো... '
বাঘের কথা শুনে বানরের তো আক্কেল গুড়ুম ! ক্ষমতাসীন বাঘ যে সুযোগ পেলেই ক্ষমতাবলে বনের সব পশু-পাখির পুটু মেরে বেড়ায়, এটা সে জানে, কিন্তু এভাবে যে অপ্রস্তুত ভাবে ধরা খেয়ে যাবে তা জানা ছিল না বানরের । কি আর করা ! দৌড়ে যে সে গাছে উঠবে সে উপায়ও নেই, তার আগেই বাঘের থাবায় অক্কা ! '
' কিন্তু বনরাজ বাঘমামা স্যার, আমার যে এইডস !' লজ্জা মুখে বানর বলল ।
' কস্কি বানর ? এই আকামডা ক্যাডা করলো ?'
' কেউ করে নাই স্যার ।
' থাপ্রাইয়া তোর দাঁত ফালাইয়া দিমু, চরিত্রহীনা বানর । কেউ কিছু না করলে এম্নিএম্নি এইডস হয় ? আমারে কি সাহাবাগের আবুল ইমরান পাইছস ?' বনভুমি কাঁপিয়ে ক্রুদ্ধ বাঘ বলল ।
' সরি মহামান্য স্যার' কাচুমাচু বানর বলল -' ওটা ছিল বনের বিড়াল !'
বাঘ দু পা সামনে এগিয়ে থাবাদিয়ে বানরের গর্দান ধরে একদম উঁচু করে ফেলল । 'বেয়াদব, বিড়ালের পুটু তো অনেকবারই মারলাম, কৈ আমার এইডস হইছে ? হইছে এইডস ??'
' জী মহামান্য বাঘমামা স্যার, বনের বিড়াল না, ওটা ছিল কালোবিড়াল !!'
' ফের মিথ্যে কথা ? কুখ্যাত কালোবিড়ালটা যে খোঁজা, এ তো বনের সবাই জানে । তাহলে এইডস হল কিভাবে ? সত্যি করে বল বদমাইশ বানর, নইলে কিন্তু...'
' আসলে হুজুর, একদিন আমি বনের পথ ধরে হাঁটছিলাম, হঠাৎ কালো বিড়ালটা আমার পাশকাটিয়ে চলে গেল দ্রুত, সেকেন্ডের জন্য কালোবিড়ালের ছায়া পড়লো আমার উপর ।ব্যাস, হয়ে গেল আমার এইডস !' একটু থেমে ফের যোগ করলো বানর, ' আমার কথা বিশ্বাস না হলে বনের হাঁস-মুরগীদের জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন । ওরা সবাই এইডস অক্রান্ত !'
বাঘ সত্যি হতাশ হয়ে ছেড়ে দিলেন বানরকে । প্রজাতন্ত্রের
অনেক পশু-পাখিই আজ এইডস অক্রান্ত কালো বিড়ালের জন্য !
' হুজুর, একটা কথা বলি '- সুযোগ পেয়ে বানর বলল। 'একটু আগেই এ পথ দিয়ে গেছে শিয়াল, মোটা-তাজা শিয়ালকে আপনার পছন্দও হবে । তাছাড়া শিয়ালের এইডসও নাই । '
' বল কি হে, শিয়ালকে তো আমি অনেক দিন আগে থেকেই মনে মনে খুজছি । তোমাকে অনেক ধন্যবাদ বাছা বানর ।'
বাঘ চলে যেতেই বানর তিন লাফে গাছে উঠে পড়লো । বাঘের যাত্রাপথে ক্রুদ্ধ দৃষ্টি রেখে মনে মনে বলল বানর, ' বাঘ গেছে শিয়ালের পুটু মারতে, কাল নিউজ হবে, বনের সব পথে পথে !!'
শিয়াল কি যেন লিখতেছিল আপন মনে । বাঘের হালুম শব্দে চেয়ার টেবিল ফেলে তড়িৎ দাঁড়িয়ে সম্ভাষণ জানালো বনের রাজা বাঘকে ।
' ব্যাস্ত হবার কিছু নেই প্রিয় শিয়াল । দেখি, একটু সামনে এসো, পাছাটা ঘোরাও, লেজটা উচু করে ধরো !'
ক্ষমতাসীন বনের রাজা বাঘের হুকুম অমান্য করার স্পর্ধা শিয়ালের নেই । বাঘের হাত থেকে পালিয়ে যাওয়ার উপায়ও নেই, কেননা, বনরাজ্য তার । বেচারা শিয়াল লেজ উচু করে ধরতেই বাঘের মুখ থেকে একটিমাত্র শব্দ বেড়িয়ে এল, ' ওয়াও !!!'
' প্রিয় শিয়াল, এত সুন্দর পুটু তোমার, এখন যদি আমি না মারি তার অর্থ হবে পুটুর অপমান করা । আর পুটুর অপমান মানে তোমারও অপমান । আমি চাই না আমার রাজ্যে কেউ কাউকে
অপমান করুক, স্বয়ং সে রাষ্ট্রপ্রধানও বা হোক না কেন ।' ...'যাও, ঘরে যদি সুরেশ খাঁটি সরিষার তেল থাকে তো জলদি নিয়ে এসো !'
বেচারা শিয়াল ! শেষ পর্যন্ত এই ছিল কপালে !!কিন্তুদুঃখ-শোকে কাতর শিয়াল কি যেন ভাবছে মনে মনে । হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো তার চোখ-মুখ, ঠোঁটের কোনায় ক্রুদ্ধ হাসি খেলে গেল
সামান্য সময়ের জন্য ।
' মান্যবর, হে মহান জংগলপতি, রাজাধিরাজ বাঘ, আমি এ বনের সামান্য এক শেয়াল মাত্র । আপনার 'তরে যদি জীবন বিলিয়ে দিতে পারি তবে তো আমি ধন্য । আর আপনি সামান্য পুটু মারার কথা বলছেন ? এত আমার সাত পুরুষের সৌভাগ্য ! অবশ্য হুজুর, আপনার মেশিনের যে সাইজ, কর্মসম্পাদন শেষে আমার যে অক্কা হবে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই ! তবুও, আমার সে মৃত্যু হবে গৌরবের-সন্মানের-আনন্দের, যাকে বলে কিনা শহীদি মরা !! তাই স্যার, শহীদ মৃত্যুর পূর্বে আমার শেষ একটা আবদার, জীবনের শেষ চাওয়া ছিল আপনার কাছে ।'
' বল, বল প্রিয়তমা শিয়াল, কি সেই আব্দার তোমার ? আমি কথা দিচ্ছি, তোমার শেষ কথা আমি রাখব । ' বিগলিত বাঘ বলল ।
' হুজুর, আপনি যেমন বনের পশু-পাখি দের পুটু মেরে বেড়ান, তেমনি আমারও ভাগ্যে নেংটি ইদুরের মত দু চারটা জোটে, কিন্তু তাতে কি মজা বলুন ! আমি কত দিন রাত, কতশত বার ভেবেছি, আহা, যদি একবারের জন্য- সামান্য সময়ের জন্য হলেও যদি বনের রাজা মহামান্য বাঘের পুটু মারতে পারতাম তাহলে ধন্য আমি !ধন্য আমার চৌদ্দ পুরুষের জন্ম ! স্যার যদি শেষবারের মত সুযোগ দিতেন । '
বাঘ চুপচাপ ! শিয়াল ফের বলতে শুরু করলো ' মহামান্য, তারপর আমিতো মরেই যাব, তাহলে তো সবকিছুই শেষ হয়ে যাবে । রাজ্যের একটা কাকপক্ষী পর্যন্ত জানবেনা কিছু । প্লিজ স্যার ।'
বাঘ মহাশয় মনে মনে ভাবছেন যে শিয়াল এত করে যখন বলছে, তাছাড়া সত্যিতো কেউ কিছু জানবেনা, আর শিয়ালের মেশিনের যে সাইজ, আমার কিচ্ছু হবে না !!
সুতরাং, শিয়াল মনের সুখে বনের রাজা বাঘের পুটু মারা শুরু করলো ! বাঘের অত্যাচারে অতিষ্ঠ বনের গাছপালা,পিপিলিকা থেকে শুরু করে প্রাণীকূলের সব বাসিন্দা । অত্যাচারের কথা যতই মনে পরছে শিয়ালের, 'মেশিন' ততবেশি গর্জে উঠছে । সবার পক্ষ থেকে তাই আজ প্রতিশোধ জালিম শাসকের প্রতি । মেশিন চলছে ...
হ তে হলমার্ক দুর্নীতি- মারো ঠ্যালা হেইয়ও
প তে পদ্মাসেতু কেলেঙ্কারি- মারো ঠ্যালা হেইয়ও
ব তে বিডিআর হত্যাকাণ্ড- মারো ঠ্যালা হেইয়ও
ফ তে ফালানি হত্যা- মারো ঠ্যালা হেইয়ও
শ তে শেয়ারবাজার লুটপাট- মারো ঠ্যালা হেইয়ও
ম তে মিডিয়া, নগ্ন মিডিয়া- মারো ঠ্যালা হেইয়ও
ভ তে ভারতের পা চাটামি, ভাকু, ভাদা মারো ঠ্যালা হেইয়ও
ন তে ,-বাম সরকার- মারো ঠ্যালা হেইয়ও
স তে সাগর-রুনি হত্যা- মারো ঠ্যালা হেইয়ও
ই তে ইলিয়াস গুম- মারো ঠ্যালা হেইয়ও
ব তে বাকশাল মারো ঠ্যালা হেইয়ও
আ তে আবুল, দুই আবুল - মারো ঠ্যালা হেইয়ও
ক তে কালে বিড়াল - মারো ঠ্যালা হেইয়ও... ... ...
শিয়ালের মেশিন চলছে বুলেট - নাহ, রকেটের গতিতে, মহামান্য বাঘের দফা-রফা একেবারে শেষ ! কিন্তু শিয়ালের থামার কোন লক্ষণ নেই । সহ্যের চুরান্ত সীমায় পৌঁছে বাঘ বলল -
'হে আমার আসল পুরুষ শিয়াল, প্লিজ, এবার একটু বিরতি নেয়া যাক !'
' জী হুজুর, আপনার কথা শিরোধার্য । কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন ছিল । আপনি ক্ষমতাধর, বনের রাজা,দেশের অভিভাবক; আপনি যখনই সুযোগ পান তখনই জনগনের মানে বনের পশু পাখির পুটু মেরে বেড়ান । একবারও কি তাদের স্থানে নিজেকে কল্পনা করে দেখেছেন ? কিম্বা, বুঝতে চেষ্টা করেছেন তাদের অনুভুতি ? হুজুর, সরকার যখন জনগনের পুটু মারে তখন সেটা হয় আইন । জনগন যখন জনগণেরই পুটু মারে তখন তা বেআইন । কিন্তু জনগন যখন সরকারের পুটু মারে তখন তা আইন বা বেআইন বলে কিছু থাকে না, সেটা হয় সরকারের পতন ।'
হঠাৎ বাঘের আর্তচিৎকারে শিয়াল থেমে গেল । " চূড়ান্ত সময় " যে পার হয়ে গেছে সে খেয়ালই নেই ! মহামান্য বাঘের পেট ফুলে ফেঁপে একাকার ! সর্বনাশ !! হবেই বা না কেন, হ তে হলমার্ক দুর্নীতি - মারো ঠ্যালা হেইয়ও থেকে তালিকাতো আর কম দীর্ঘ নয়, কিম্বা ঠ্যালাও তো আর কম মারা হয়নি !!!
বাঘ এরপর শিয়ালের পুটু আর মারবে কি, নিজেই বেহুশ হয়ে পরে রইল । এই সুযোগে শিয়াল পগারপার !
ক্ষণিকপরে মান্যবর বাঘের হুশ ফিরল । গা-ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়াল সে । হারামি শিয়ালের প্রতি ক্রোধ আর পুটুর ব্যথায় বাঘের শরীর কাঁপছে থর থর করে ! কিন্তু তা স্বত্বেও আকাশ বাতাসকাঁপিয়ে হুঙ্কার দিয়ে উঠলো বাঘ, তারপর বাতাসে বদমাইশ শিয়ালের গন্ধ শুঁকে ছুট লাগাল ঝড়ের বেগে ।
শিয়াল ততক্ষণে পৌঁছে গেছে বনের শেষপ্রান্তে । সামনেই দু পেয়ে প্রাণী মানুষ নির্মিত মসৃণ পিচ ঢালা রাস্তা, সেখানে একটা বেঞ্চপাতা আছে বসার জন্য । ক্লান্ত শিয়াল বসে পড়লো সেখানে । শিয়াল সতর্ক, আচমকা কখন না বা বাঘ এসে ঝাপিয়ে পরে ঘাড়ের উপর । কিন্তু পিলে চমকে উঠলো তার , যখন অল্প দূরে দেখতে পেল বাঘের অবয়য় । এখন যদি সে খিচ্চা দৌড়ও লাগায় তারপরেও রক্ষা নাই, বাঘ ঠিকই ধরে ফেলবে ।
বেঞ্চের উপর রাখা জিনিসগুলোর প্রতি দৃষ্টি গেল শিয়ালের । কেউ একজন একটা পত্রিকা, মাথার হ্যাট ও একটা চশমা ফেলে গেছে। চালাক শিয়াল হ্যাট মাথায় , চশমা চোখে লাগিয়ে হাতে পত্রিকা নিয়ে এমন ভাব নিল যেন অবিকল কোন মানুষ বসে পেপার পড়ছে ।
বাঘ মানুষকে দেখে সামান্য ঘাবড়ে গিয়ে জিজ্ঞসা করলো, ' এই পথে কোন শিয়াল কে যেতে দেখেছেন মানুষ ভায়া ?'
পত্রিকা থেকে মুখ না ফিরিয়েই মানুষরুপী শেয়াল বলল, ' কোন শিয়াল, যে শিয়াল বনের রাজা বাঘের পুটু মারছে ?!!'
আসমান থেকে পড়লো যেন বাঘ । শিয়াল যে বাঘের পুটু মারছে এ খবর বনের সবার কাছে পৌঁছে গেছে, না হলে মানুষ জানলো কিভাবে ? পত্রিকা পরা দেখে ভাবল, হয়তবা পত্রিকা থেকে হতে পারে । মানসন্মানের আর কিছু বাকি রইলনা,কিন্তু মিডিয়া তো কখন তার বিরুদ্ধে যাওয়ার কথা না, মিডিয়া তো তার কেনা গোলাম । তবে ? তাহলে জিজ্ঞাসা করা যাক মানুষের কাছে ।
'মানুষ ভাই, শিয়াল যে বাঘের পুটু মারছে তা কি পেপারে উঠছে ?' !!!
বেচারা বাঘ চলছে অচেনা পথে । নিজ রাজ্যে কিভাবে যাবে সে ? সে মুখ কি তার আছে ? লজ্জা, কি লজ্জা ! বারে বারে ঘুরে ফিরে শিয়ালের কথাটি মনে পড়ছে তার ... ' কিন্তু জনগন যখন সরকারের পুটু মারে তখন তা আইন বা বেআইন বলে কিছু থাকে না, সেটা হয় সরকারের পতন ।'
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:১৫