অবশেষে সকল জল্পনা কল্পনা ভেঙ্গে ৭০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মত সৌদি আকাশে উড়ল ইসরাইলগামী বিমান। এর আগে সৌদি আরবের বিমানবন্দরগুলোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ইসরাইলের একটি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে।
বৃহস্পতিবার ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি উড়োজাহাজ ইসরায়েলের তেল আবিবের গুরিঅন বিমানবন্দরে পৌঁছায় বলে জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ইসরায়েল থেকে বা ইসরায়েলগামী উড়োজাহাজের সৌদি আরবের আকাশসীমা ব্যবহারের উপর ৭০ বছরের পুরনো একটি নিষেধাজ্ঞা ছিল। তবে কিছু দিন পূর্বে একটি খবরে বলা হয় সৌদি সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে যাচ্ছে। অতঃপর ফ্লাইটরাডার মনিটরিং অ্যাপের তথ্যানুযায়ী, এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ জিএমটি ১৬:৪৫ মিনিটে সৌদি আরবের আকাশে প্রবেশ করে এবং প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে ৪০ হাজার ফুট উপর দিয়ে উড়ে দেশটির আকাশসীমা অতিক্রম করে। বিমানটি ওমান, সৌদিআরব, জর্ডানের আকাশ সীমা ব্যবহার করে পশ্চিমতীর হয়ে ইসরাইলে প্রবেশ করে যেখানে যাত্রা পথে মোট সাড়ে সাত ঘণ্টা সময় লাগে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দেশটির পর্যটন মন্ত্রী যারিভ লেভিন বলেন, “দুই বছরের প্রগাঢ় সহযোগিতা ও কাজের ফল আজকের এই ঐতিহাসিক দিন।”সৌদি রাজার নতুন এক ফরমান অনুযায়ী সেদেশের বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ইসরাইলের জিফোরএস কোম্পানির হাতে।
পর্যবেক্ষকদের ধারণা, আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানকে ঠেকাতে এ দেশ দুটি কাছাকাছি আসছে। গত দুই দশকে মধ্যপ্রাচ্যে গঠনমূলক ভূমিকার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের জনপ্রিয়তা ব্যাপক বেড়েছে এবং এ অঞ্চলের শক্তির ভারসাম্য ইরানের পক্ষে চলে গেছে। ইরাক থেকে শুরু করে সিরিয়া, লেবানন পর্যন্ত ইরানের সুস্পষ্ট প্রভাব বলয়ের মধ্যে রয়েছে। অন্যদিকে সিরিয়া ইস্যুতেও আরেক দেশ তুরস্ক ও ইরান একসাথে কাজ করছে। জিসিসি ভুক্ত দেশ ওমান এবং কাতার ও এখন নানা কারনে ইরানমুখি হয়েছে। এ কারণে সৌদি শাসকদের ধারণা তাদের শত্রু ইরানের শত্রু ইসরাইলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে হয়তো মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব ঠেকানো যাবে।
ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পেছনে আরেকটি কারণ হচ্ছে, সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ সংকট ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। যুবরাজের ধারনা পাশ্চাত্য বিশেষ করে আমেরিকার সমর্থন নিয়ে তিনি সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্বে পরিণত হতে পারবেন। ওয়াশিংটনে ইহুদিবাদী লবিং গ্রুপের প্রভাবের বিষয়টিও সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান অবহিত আছেন। তাই তার ইসরাইলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একদিকে যেমন আমেরিকার সমর্থন পাওয়া যাবে অন্যদিকে পরবর্তী রাজা হওয়ার স্বপ্নও পূরণ হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:৩৭