মুসলিমদের অন্যতম পবিত্র স্থান আল-কুদস বা জেরুজালেমে ইসরাইলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে বুধবার অনুষ্ঠিত ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি’র জরুরি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেয় নি সৌদি আরবের রাজা সালমান বিন আবদুল আজিজ কিংবা যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমান। এ সম্মেলনে সৌদি সরকার তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকেও পর্যন্ত পাঠয় নাই। এদিকে গাজায় ফিলিস্তিনের জনগন তাদের সাথে প্রতারণা করে ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষা করবার জন্য সৌদি রাজা ও যুবরাজের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে তাদের ছবিতে আগুন দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে সৌদি আরবের সঙ্গে ইহুদিবাদী ইসরাইলের সাম্প্রতিক নানা যোগাযোগের পরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বায়তুল মুকাদ্দাসকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহী হয়ে ওঠে। সেই কারণেই সম্ভবত সৌদি রাজা কিংবা যুবরাজ এ সম্মেলনে যায় নি। সৌদি আরবের শীর্ষ নেতৃত্ব এ সম্মেলনে অংশ না নিয়ে প্রমাণ করেছেন- তারা ফিলিস্তিনের জনগণের পক্ষে নন বরং ইহুদিবাদী ইসরাইল ও আমেরিকা স্বার্থের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
১৯৬৯ সালে পবিত্র আল-আকসা মসজিদে ইহুদিবাদীরা আগুন দিলে মরক্কোর রাজধানী রাবাতে মুসলিম দেশগুলোর অংশগ্রহণে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং সেখানেই ওআইসি গঠিত হয়। এটি এখন জাতিসংঘের পরেই সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক সংস্থা।
এদিকে আল-কুদস বিষয়ে ইসরাইলের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার পুরষ্কার হিসেবে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমানকে ইহুদিবাদী ইসরাইল সফরের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ইসরাইলের গোয়েন্দামন্ত্রী ইসরায়েল কাট্য সৌদি দৈনিক ‘ইলাফ’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি সৌদি যুবরাজকে তেল আবিব সফরের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
মোহাম্মাদ বিন সালমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জেরুজালেম সংক্রান্ত ঘোষণার প্রতি সমর্থন জানিয়ে মাহমুদ আব্বাসকে ওই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। তবে মাহমুদ আব্বাস বুধবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ওআইসির জরুরি শীর্ষ সম্মেলনে দেয়া ভাষণে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। মাহমুদ আব্বাস তার ভাষণে বলেন, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে কথিত শান্তি প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতা করার যোগ্যতা হারিয়েছে আমেরিকা।
জেরুজালেম আল-কুদসকে কেন্দ্র করে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি’র জরুরি শীর্ষ সম্মেলন ডাকায় তুরস্ককে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। তিনি বলেছেন, এই সম্মেলন ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে মুসলিম বিশ্বে আশা সঞ্চার করেছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেছেন মুসলিম দেশগুলো কঠোর অবস্থান নিলে মার্কিন সরকার তার সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পারবে না। ইস্তাম্বুল সম্মেলনে বেশিরভাগ মুসলিম দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানরা উপস্থিত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেন, এই উপস্থিতি ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে মুসলিম বিশ্বের ঐক্যমত্য ফুটিয়ে তুলেছে। ফিলিস্তিনিদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে এই ঐক্যমত্য কাজে লাগবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এদিকে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে ইরানের শীর্ষস্থানীয় সেনা কমান্ডার মেজর জেনারেল কাসেম সোলায়মানির টেলিফোনালাপে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে ইহুদিবাদী ইসরাইল। ইহুদিবাদী পত্রিকা মা’রিভ জানিয়েছে, তেল আবিব মনে করছে, এই টেলিফোনালাপে জেনারেল সোলায়মানি হামাস ও ইসলামি জিহাদ আন্দোলকে ইসরাইল বিরোধী অভিযান পরিচালনার জন্য সবুজ সংকেত দিয়েছেন। ধারনা করা হচ্ছে ফোনালাপে জেনারেল সোলায়মানি ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতি সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রস্তুতির কথা ঘোষণা করেছেন।
মুসলিম দেশ মালয়েশিয়া ঘোষণা করেছে বায়তুল মুকাদ্দাস ইস্যুতে তারা সেনা পাঠাতে প্রস্তুত রয়েছে। মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিশাম উদ্দিন হোসেইন বলেছেন ফিলিস্তিনের বায়তুল মুকাদ্দাস শহরকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুরো মুসলিম বিশ্বের সাথে বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে এবং পরিস্থিতি মোকাবেলায় যদি প্রয়োজন হয় তাহলে মালয়েশিয়া ফিলিস্তিনে সেনা পাঠাতে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, "আমাদেরকে যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। মালয়েশিয়ার সামরিক বাহিনী সবসময় প্রস্তুত আছে এবং সর্বোচ্চ নেতৃত্ব থেকে নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করছে।"তিনি আরো বলেছেন, "আমরা দোয়া করছি যেন চলমান এ দ্বন্দ্ব বড় ধরনের সংঘাতের পর্যায়ে না যায়।"
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৫৪