সুনামগঞ্জ, সিলেট এইসব জায়গাতে
সাধারণত অনেক বৃষ্টি হয় আর বর্ষা
কালে তো কথায় নেই।। সেই বছরেও
প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে ফলে
টাঙ্গুয়া জলে থৈথৈ করছে।। কিন্তু
এই অথৈ জলের মধ্যেও লক্ষ্য করলাম
বেশ কিছু গাছপালা এবং বাড়িঘর
মাথা উঁচু করে নিজেদের অস্তিত্ব
এর জানান দিচ্ছে।। কিছুক্ষনের
মধ্যেই নৌকার মাঝি কামরুল
নৌকা ছেড়ে দিল।। নৌকাতে
তার একজন সহযোগীও আসে।।সারা
বছর তারা এই অপরূপ টাঙ্গুয়ার বুকে
ভেসে বেরায় নিজেদের
জীবিকা নির্বাহের জন্য।। এই
টাঙ্গুয়া তাদের মত আরও অনেক
মাঝির জীবিকার ব্যবস্থা করে।।
তাহিরপুর বাজারকে পিছনে
ফেলে আমাদের যাত্রা এখন
টাঙ্গুয়ার গভীরে।। বাজার পিছনে
থাকলেও বাম দিকে তাহিরপুরের
অখন্ডায়িত গ্রাম তখনও আমাদের
সাথে এগিয়ে চলেছে।। আর ডান
দিকে সুধু পানি আর পানি।
আর পানির পরেই রয়েছে এক সুবিশাল
পর্বতমালা।। মেঘের রাজ্য মেঘালয়
পর্বতমালা,অর্থাৎ আমাদের
প্রতিবেশী দেশ ভারত।। পাহাড়টা
তখন খুব বেশি দুরে না।। এর গায়ে
জন্মানো গাছগুলোকেও প্রায় স্পষ্ট
দেখা যাচ্ছে।।কিন্তু যতই আমরা
সামনে এগিয়ে যাচ্ছি ততই পাহাড়
আমাদের থেকে দুরে সরে যাচ্ছে।।
পাহাড় দেখতে দেখতে এবার
আমাদের দৃষ্টি অপরূপ টাঙ্গুয়ার
দিকে।। তাহিরপুরের অখন্ডায়িত
অংশ তখন শেষ হয়ে গেছে।। চার
পাশে সুধু পানি আর পানি।। কিছু
দুরে দুরেই ছোট ছোট গ্রাম দেখা
যাচ্ছে।। অনেক ক্ষেত্রে এগুলো
একটি বাড়ি।।
পানি দিয়ে ঘেরা
অল্প একটু জমিতে একটি ঘর নিয়েই
যেন গঠিত হয়েছে একটি গ্রাম।।আর
সব বাড়িতেই প্রায় একটি করে
নৌকা আসেই।। এধরনের বাড়ি
ছাড়াও মাঝে মাঝেই একটি অথবা
এক সারি গাছ মাথা উঁচু করে
দারিয়ে আছে।।
এগুলো দেখে
বুঝতে পারলাম শীত বা গ্রীষ্মের
মৌসুমে হয়তো এখানেই মাটি
জেগে ওঠে।। তখন হয়ত টাঙ্গুয়ার এত
জল কথাও হারিয়ে যায়।। তখন হয়ত
যোগাযোগের জন্য নৌকা
ব্যবহারের আধিক্যটা কমে যায়।। তখন
হয়ত টাঙ্গুয়া নতুন এক রূপ ধারন করে।।
সেই রূপের কল্পনা করতে করতে
বাস্তবে ফিরে আসলাম।। টাঙ্গুয়ার
বুকে তখন আমাদের মতই ভেসে
চলেছে অনেক ছোট বড় নৌকা।।
সবকিছু মিলিয়ে অপরূপ টাঙ্গুয়া আরও
অপরূপ হয়ে উঠেছে।। সকলেই তখন নিজ
নিজ মোবাইল অথবা ক্যামেরা
দিয়ে টাঙ্গুয়ার রূপকে ফ্রেম বন্দি
করে চলেছে।। ধিরে ধিরে
আবহাওয়াতেও পরিবর্তন চলে
এসেছে।। সকালের বৃষ্টিস্নিগ্ধ
আবহাওয়া এখন আর নেই।। সূর্য তার
শক্তির প্রদর্শন করতে প্রচেষ্টার খুব
বেশি কমতি করছে না।। অনেকের
ব্যাগ থেকেই ছাতা বের হতে শুরু
করল।। মেহেদী ভাই মুড়ি মাখাতে
শুরু করেছে।। কিছুক্ষনের মধ্যেই তা
তৈরি হয়ে গেল।। কিছুক্ষন চলল এই
মুড়ি ভোজ।। এরপর আবার টাঙ্গুয়ার
সৌন্দর্যের ভান্ডারে ডুব দেয়া।।
কিছুক্ষন পরেই আমরা এমন একটা
জায়গাতে আসলাম যার দুই দিকেই
ঘন গাছপালা তথা গ্রাম আর
মাঝখানে প্রায় ২০-৩০ মিটার
বিস্তৃত পানি।।দৃশ্যটি সুন্দরবনের কথা
মনে করিয়ে দেয়।। সুন্দরবনের এই
রূপটি মনে হয় বাংলাদেশের
সকলেই দেখেছে।।সামনাসামনি
না দেখলেও দেখেছে
টেলিভিশনে।। পার্থক্য এই যে
সুন্দরবনে থাকে লবনাক্ত পানি আর
এখানে স্বাদু পানি।।
ঘড়িতে তখন হয়ত ১২টা বা তার একটু
বেশি।। নৌকার ছাদ থেকে নেমে
চলে আসলাম নৌকার সামনের
দিকে।। দুই পা বাইরে পানিতে
ডুবিয়ে বসে পরলাম নৌকার
ধারে।। আবহাওয়া উষ্ণ হলেও
টাঙ্গুয়ার পানি অনেকটাই শীতল।।
নৌকার গতির সাথে সামঞ্জস্য
রেখেই পানি আমার পায়ে
ধাক্কা খেয়ে তরঙ্গ সৃষ্টি করে
চলেছে।। মাঝে মাঝে জলের
নিচে জন্মানো জলজ উদ্ভিদের
লতা পা কে আঁকড়ে ধরছে।। এখানে
পানি অনেক পরিস্কার।। কিছু কিছু
জায়গায় পানির নিচে মাটি
দেখা যায়।। অপরূপ এক দৃশ্য।। বুঝতে
পারলাম পানি এখানে খুবই
অগভীর।। নৌকাটা যে চলছে
কিভাবে তা ভেবেই আশ্চর্য হলাম।।
এভাবেই চলতে থাকল নৌকা এবং
সময়।।
দুপুর ১টার একটু বেশি বাজে হয়ত
তখন।।একটা লোকালয়ের দেখা
পাওয়া গেল।।বুঝতে পারলাম
দুপুরের খাবারের জন্য এখানেই
নৌকা নঙ্গর করানো হবে।।
কিছুক্ষনের মধ্যেই আমাদের মাঝি
সেই গ্রামের ঘাটে নৌকা নঙ্গর
করল।। আমরা একে একে নৌকা
থেকে নেমে পরলাম।। এরপর একটা
ছোট স্কুল ঘরের সামনে দারালাম।।
আমাদের মধ্য থেকে দুইজন
হোটেলের খোজ করতে গেল যেটা
আমাদের তের জন ও দুইজন মাঝি
মোট পনের জনের খাবারের ব্যবস্থা
করতে পারবে।।কিছুক্ষন পর তারা
হোটেল খোজ করে ফিরে আসলেন
এবং আমাদের সেই হোটেলের পথ
প্রদর্শন করলেন।। খাবারের
তালিকা হল ভাত,ডাল,ভর্তা এবং
মাছ।।সমস্যা হল আমি তো মাছ খাই
না।। তাই আমার জন্য ডিম ভাজির
ব্যবস্থা করা হল।। ডিম,ভর্তা এবং
ডাল দিয়ে দুপুরের খাবার বেশ
ভাল ভাবেই সম্পন্ন হল।। এখন এখানেই
একটু অপেক্ষা করন এবং তার পরেই
আবার ভেসে যাব অপরূপ টাঙ্গুয়ার
বুকে।।।।।
to be continued........
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৫ রাত ১১:৩৮