আকাশ তখন মেঘে ঢাকা।।মাথার
ওপর মেঘ নিয়েই বের হলাম হোটেল
থেকে।।সবার মনেই তখন একটা ভয়
কাজ করছে যে বৃষ্টির কবলে না
পরতে হয়।। ভাগ্য ভাল থাকায় মেঘ
আমাদের খুব বেশি বিরক্ত করল না
বরং যেটুকু গুরি গুরি বৃষ্টি হল তাতে
আমাদের ভয়ের বদলে আনন্দই লাগল।।
যাই হোক আমাদের প্রাথমিক গন্তব্যহল একটা ঘাট।নাম বৈঠা খালির
ঘাট।। প্রথমে আমাদের যাত্রার জন্য
সি এন জি ঠিক করার চেষ্টা করা
হলেও এই সকালে সি এন জি এর
দেখা পেলেও তার ড্রাইভারের
দেখা পাওয়া গেল না।। তাই তখন
আমাদের বিকল্প রাস্তা ভাবতে হল
আর সেই রাস্তাটা হল লেগুনা।।
বেশ খোঁজাখুঁজির পর একটা লেগুনা
পাওয়া গেল এবং তার সাথে তার
ড্রাইভারও আছে যে আমাদের
নিয়ে যেতে রাজি হয়েছে।। গুরি
গুরি বৃষ্টির মধ্যেই
লেগুনাই চোড়ে
বেরিয়ে পরলাম।।
কিন্তু সূচনা ভাল হল না।।যে ঘাটে
গিয়ে পৌছালাম তা বৈঠা
খালির ঘাট না।।লেগুনা থেকে
নামা মাত্রই ঐ ঘাটের মাঝিরা
বলল যে এটা বৈঠা খালির ঘাট
না।।সেটা ঐ দিকে।। ঐ দিকে টা
যে কোন দিকে তা বোঝা গেল
না।। তবে এটা বোঝা গেল যে
প্রায়ই মানুষ এখানে আসে এবং
আমাদের মত ভুল করে।।কিন্তু ভুলটাও
আমার কাছে কিছুটা মজাদায়ক
মনে হল।।ভ্রমণের হয়ত এটাই এক অনন্য
বৈশিষ্ট্য যে ভাল অথবা মন্দ সব
অনুভুতিই অনেক উপভোগ্য।। যাই হোক
ভুলের মাশুল হিসেবে আবার
লেগুনাতে উঠলাম এবং এবার আমরা
সঠিক ঘাটে পৌছালাম।।
ঘাট টা পারি দিতে হবে নৌকায়
।
পরিচিত নৌকার মত নয়।। বেশ চওড়া
এবং উপরে কোনো ছাউনি নেই,
একদম সমান।। দুইটি নৌকা পালাবদল
করে একবার যাচ্ছে আবার আসছে।।
আমরা তের জন একটাতে উঠলাম।।
ঘাট টা পার হতে লাগল ৫
মিনিটের মত।। ঘাটের সাথেই মটর
সাইকেল স্ট্যান্ড।। আমাদের
দেখেই বলতে লাগল তাহিরপুর
যাবেন না আপনারা?? আমরা চুপচাপ
দলনেতা তাহসিন ভাইয়ের
জবাবের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।।
তার কথা শুনে বুঝতে পারলাম যে
আমরা তাহিরপুরেই যাব।।কিন্তু
আমাদের জন্য একটা লেগুনা আসার
কথা আছে।। তবে ভাগ্য এখানেও
আমাদের সহায় হল না।। মটর সাইকেল
চালকদের কাছ থেকে জানা গেল
স্থানীয় ঝামেলার কারণে
লেগুনা চলাচল বন্ধ।। তাই আমাদের
মটর সাইকেলেই যেতে হবে।।
সাতটা মটর সাইকেল ঠিক করা হল।।
এবার ভাগ্য দেবতা মুখ তুলে
চাইলেন।। মটর সাইকেলে আমার
ভ্রমণ সঙ্গী হলেন উর্মি আপু।। আর
অন্যান্য গুলতেও দুইজন করেই
বসল,মানে চালক সহ তিনজন।। শুধু মাসুদ
আঙ্কল একা বসলেন এবং সাথে
কয়েকটা ব্যাগ।। বৃষ্টি স্নিগ্ধ
আবহাওয়া এবং চমৎকার পরিবেশ এক
অপরূপ মধুরতা সৃষ্টি করল।। এই মধুরতা ও
ভ্রমণ সঙ্গী হিসেবে বন্ধু সুলভ মানুষ
পাওয়াটাই আসলে যে কোনো
ভ্রমণে মানুষের সৌভাগ্যের কারন।।
বৃষ্টি পরবর্তী আবহাওয়া, গ্রাম্য
পরিবেশ এবং অথৈ পানির পাশ
দিয়ে মটর সাইকেলে ছুটে
চলা,পানিতে ফোঁটা লাল ও
সাদা শাপলা ফুল দেখা এবং
ঠান্ডা বাতাস নিজের শরীরকে
ছুয়ে যাওয়ার এই অসাধারণ অনুভূতির
বর্ণনা দেয়া হয়ত কারো পক্ষেই
সম্ভব না।।যদি তা বুঝতে চাও তবে
বৃষ্টির সময় যেতে হবে অপরূপ
টাঙ্গুয়ার পথে।।
এই অসাধারণ অনুভূতির রেশ কাটার
আগেই লক্ষ করলাম কয়েকটি মটর
সাইকেলের মধ্যে একটা অঘোষিত
প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে যে কে
আগে তাহিরপুর পৌছাবে।।
প্রতিযোগীদের মধ্যে আমাদের মটর
সাইকেলও আছে।। অনেক গতিতে
ছুটে চলেছে প্রথম দিকের
বাহনগুলো।। হটাৎ আমাদের মটর
সাইকেলের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেল
রাস্তার মধ্যে এবং পিছন থেকে
অপর একটি মটর সাইকেল বেশ
জোরেই ধাক্কা দিলো আমাদের।।
ভাগ্য ভাল থাকায় মটর সাইকেল ও
আমাদের কারোরই কোন ক্ষতি
হয়নি।। এই ভয়ানক ঘটনাটা আমাদের
ড্রাইভারের অপর কোনরূপ প্রভাব
ফেলল বলে মনে হল না।।সে মনে হল
আরো জোরে চালাতে শুরু করল।।
আরো বেশ কিছুক্ষন চলল আমাদের এই
যাত্রা।। এক ঘন্টার এই যাত্রা শেষ
হল আমার,উর্মি আপু এবং আমাদের
ড্রাইভারের মুখের হাসি
দিয়ে,কারণ আমাদের মটর সাইকেলই
এই অঘোষিত প্রতিযোগিতাই প্রথম
হয়েছে।। এরপর একে একে আমাদের
অন্যান্য ভ্রমণ সঙ্গীরাও এসে
পৌছাল।। সবার মুখেই তখন একই কথা
প্লেন ভ্রমণ টা কেমন লাগলো!!?? যে
যাই বলুক না কেন একটা ভয়ানক ঘটনা
প্রত্যক্ষ করা সত্তেও এই মটর সাইকেল
ভ্রমণটা ছিল এক অনন্য অসাধারণ
অনুভূতি।। এর কারন হয়ত ভ্রমণের সেই
অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য।।
তাহিরপুর বাজারে আমরা কিছুক্ষন
অপেক্ষা করলাম আর তাহসিন ভাই
এবং মেহেদী ভাই আমাদের জন্য
তাহিরপুর ঘাটে নৌকা ঠিক করতে
গেল।। এটিই হল সেই প্রিয় টাঙ্গুয়া
হাওর।। তারা নৌকা ঠিক করল এবং
তাহিরপুর বাজারে ফিরে আসলো
আমাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য।।
বাজারের মধ্যে দিয়েই তারা
আমাদের নিয়ে গেলেন ঘাটে।।
ঘাটটি আসলে বাজারের পাশেই।।
এই ঘাটের নৌকা গুলোও আমাদের
পরিচিত নৌকার মত নয়।। এটি
অনেকটা দোতলা নৌকা।। সবার
উপরে বসার জায়গা ঠিক তার
নিচেই শুয়ে থাকা অথবা ছাদের
নিচে আড্ডা দেয়ার জায়গা এবং
ইঞ্জিন।। তাহসিন ভাই এবং
মেহেদী ভাই নৌকায় খাওয়ার
জন্য অনেক কিছু নিয়ে আসলো।। এর
পরেই আমরা ভেসে যাবো প্রিয়
টাঙ্গুয়ার বুকে।।
to be continued.....
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৩:০৬