প্রকৃতপক্ষে বিশ্ব-ইতিহাস এবং অতীত অভিজ্ঞতার মধ্যে ভবিষ্যত জীবনের জন্য বিরাট শিক্ষা নিহিত রয়েছে।
সুরা ইউসুফে ইউসুফ -যোলায়েখা প্রণয় কাহিনীর উল্লেখ আছে। আগেই বলে রাখা ভাল ইউসুফ আঃ স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিতেন। সেটির উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারতেন।
ইউসুফ আঃ সহ হযরত ইয়াকুব আঃ এর বার জন পুত্র সন্তান ছিল। তাদের প্রত্যেকেরই সন্তান সন্ততি হয় এবং বংশ বিস্তার লাভ করে। ইয়াকুব আঃ এর উপাধি ছিল ইসরাইল। তাই বারটি পরিবারের সবাই বনী ইসরাইল নামে খ্যাত হয়।
ইউসুফের ১০ জন বৈমাত্রীয় ভাই ছিল। বাবা ইউসুফকে বেশি স্নেহ করতেন বিধায় অন্য দশ ভাই তাকে হিংসা করতো। এবং তাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্রের লিপ্ত হয়।
সুরা ইউসুফের ১১ নম্বর আয়াত-তারা বলল ঃ পিতা ব্যাপারকি, আপনি ইউসুফের ব্যাপারে আমাদেরকে বিশ্বাস করেন না? আমরা তো তার হিতাকাংখী।১২) আগামীকাল তাকে আমাদের সঙ্গে প্রেরণ করুন- তৃপ্তিসহ খাবে এবং খেলাধূলা করবে্ এবং আমরা অবশ্যই তার রক্ষনাবেক্ষণ করব।১৩) তিনি বললেন ঃ আমার দুশ্চিন্তা হয় যে তোমরা তাকে নিয়ে যাবে এবং আমার আশংকা যে ব্যাঘ্র তাকে খেয়ে ফেলবে এবং তার দিক থেকে গাফেল থাকবে ।
ইয়াকুব আঃ স্বপ্নে দেখেছিলেন যে তিনি পাহাড়ের উপর আছেন। নীচে পাহাড়ের পাদদেশে ইউসুফ আঃ। হঠাৎ দশটি বাঘ এসে তাকে ঘেরাও করে ফেলে এবং আক্রমন করতে উদ্যত হয় কিন্তু একটি বাঘই এসে তাকে মুক্ত করে দেয়। অতপর ইউসুফ আঃ মৃত্তিকার অভ্যন্তরে গা ঢাকা দেন। বাঘে খেয়ে ফেলার আশংকা তাই বাবার মনে জেগে ওঠে।
আসলে ভাইয়েরা তাকে নিয়ে দূরে এক অন্ধকার প্রাচীন কূপে ফেলে আসে। এবং বাবাকে জানায় যে ইউসুফকে বাঘে খেয়ে ফেলেছে।
ঘটনা চক্রে একটি কাফেলা কূয়ার কাছে পৌছে যায় । কাফেলাটি সিরিয়া থেকে মিশর যাচ্ছিল।পথ ভুলে জনমানবহীন জঙ্গলে এসে উপস্থিত হয়। কূপে পানি তুলতে গিয়ে তারা ইউসুফকে পায় এবং উদ্ধার করে। তারা ইউসুফকে বিক্রি করার জন্য নিয়ে যায়।
তফসীরে কুরতবীতে বলা হয়েছে: কাফেলার লোকেরা তাকে মিশর নিয়ে যাওয়ার পর বিক্রয়ের কথা ঘোষণা করতেই ক্রেতারা প্রতিযোগিতামূলকভাবে দাম বলতে লাগলো।শেষ পর্যন্ত ইউসুফ আঃ এর ওজনের সমান স্বর্ণ, সমপরিমান মৃগনাভি এবং সম পরিমান রেশমী বস্ত্র দাম সাব্যস্ত হয়ে গেল। আযীযে মিশর এ দাম দিয়ে তাকে ক্রয় করলেন।
কোরআনের বক্তব্যে বোঝা যায় এটি কোন দৈবাৎ ঘটনা নয়; বরং বিশ্বপালকের রচিত অটুট ব্যবস্থাপনার অংশমাত্র।তিনি মিসরে ইউসুফ আঃ কে ক্রয় করার জন্য এ দেশের সর্বাধিক সম্মানিত ব্যাক্তিকে মনোনিত করেছিলেন। ইবনে কাসীর বলেন ঃ যে ব্যক্তি ইউসুফ আঃ কে ক্রয় করেছিলেন তিনি ছিলেন মিশরের অর্থমন্ত্রী।তার নাম কিতফীর কিংবা ইতফির বলা হয়ে থাকে ।তখন মিশরের সম্রাট ছিলেন আমালেকা জাতির জনৈক ব্যক্তি রাইয়ান ইবনে ওসায়দ। তিনি পরবর্তীকালে ইউসুফ আঃ এর হাতে মুসলমান হয়েছিলেন।
ক্রেতা আযীযে মিশরের স্ত্রীর নাম ছিল রাঈল কিংবা যুলায়খা। আযীযে মিসর কিতফীর ইউসুফ আঃ সম্পর্কে স্ত্রীকে নির্দেশ দিলেন তাকে বসবাসের উত্তম জায়গা দাও- ক্রিতদাসের মত রেখো না এবং তার প্রয়োজনাদির সুবন্দোবস্ত কর।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ বলেন দুনিয়াতে তিন ব্যক্তি অত্যন্ত বিচক্ষণ এবং চেহারা দেখে শুভাশুভ নিরূপনকারী প্রমাণিত হয়েছেন। প্রথম আযীযে মিসর। তিনি স্বীয় নিরূপন শক্তি দ্বারা ইউসুফ আঃ এর গুণাবলী অবহিত হয়ে স্ত্রীকে উপরোক্ত নির্দেশ দিয়েছিলেন।২য়, হযরত শোআয়েব (আঃ) এর কন্যা যে মুসা আ; সম্পর্কে বলেছিলেন পিতা তাকে চাকর রেখে দেন।কেননা উত্তম চাকর ঐ ব্যক্তি যে সবল সুঠাম ও বিশ্বস্ত। হয়। ৩য় হযরত আবু বকর সিদ্দীক, যিনি ফারূকে আযম রা: কে পরবর্তী খলিফা মনোনীত করেছিলেন। ( ইবনে কাসীর)।
কোরআনে আয়াতের অর্থ এমনি ভাবে আমি ইউসুফকে সে দেশে প্রতিষ্ঠা দান করলাম। এতে ভবিষ্যৎ ঘটনার সুসংবাদ রয়েছে যে , যে ইউসুফ এখন কৃতদাস হিসেবে আযীযে মিসরে গৃহে প্রবেশ করেছে অতি সত্ত্বর সে মিসরের সর্বপ্রধান ব্যক্তি হবে এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা লাভ করবে।
যে মহীলার গৃহে ইউসুফ আঃ থাকলেন বড় হলেন যৌবন প্রাপ্ত হলেন ,সে ই যুলায়খা তার প্রকৃত প্রেমাসক্ত হয়ে পড়লেন এবং তার সথে কুবাসনা চারিতার্থ করার জন্য তাকে ফুসলাতে লাগলেন।সে গৃহের সব দরজা বন্ধ করে দিলেন এবং ইউসুফকে বলল শীঘ্র এসে যাও তোমাকেই বলছি।
সুদ্দী ইবনে ইসহাক প্রমুখ তফসীরবিদ বর্ণনা করেন যে, এ নির্জনতায় যুলায়খা ইউসুফ আঃ কে আকৃষ্ট করার জন্য তার রূপ ও সৌন্দর্যের উচ্ছসিত প্রশংসা করতে লাগলো। সে বললঃ তোমার মাথার চুল কত সুন্দর। ইউসুফ আঃ বললেন ঃ মৃত্যুর পর এই চুল সর্বপ্রথম আমার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এরপর যুলায়খা বললঃ তোমার নেত্রদ্বয় কতই না মনোরম।ইউসুফ আঃ বললেনঃ মৃত্যুর পর এগুলো পানি হয়ে আমার মুখমন্ডলে প্রবাহিত হবে।যুলায়খা আরও বললঃ তোমর মুখ মন্ডল কতই না কমনীয়। ইউসুফ আঃ বলেন এগুলো সব মৃত্তিকার খোরাক।।
আল্লাহ তায়ালা ইউসুফ আঃ এর মনে পরকালের চিন্তা এত বেশি প্রবল করে দেন যে ভরা যৌবনেও জগতের যাবতীয় ভোগ বিলাস তার দৃষ্টিতে তুচ্ছ হয়ে যায়। সত্য বলতে কি পরকালের চিন্তাই মানুষকে সর্বত্র সব অনিষ্ট থেকে নির্লিপ্ত রাখতে পারে।
(পুরুষদের দেখলে মেয়েদেরও জিভে জল আসে..পুরুষরাও তেতুল)
মারেফুল কোরআনের আলোকে
চলবে
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:৫৪