দিনটা দারুণ।স্মরণীয়। রাজা প্রিয়াকে তার ভাললাগার কথা জানিয়েছে। প্রিয়া দারুণ খুশি।খুশিতে মনের আনন্দে গুনগুনিয়ে গান বেরোচ্ছে ।আজ এই দিনটাকে মনের খাতায় লিখে রাখো আমায় পড়বে মনে কাছে দূরে যেখানেই থাক।রাজার নতুন চাকুরি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এসিসটেন্ট ডিরেক্টর।
রাজা যা চায় তা পায়।রাজাকে অফার করা হয়েছিল বড় পোস্ট ক্ষমতাসীন দলের পক্ষথেকে। তাকে যখন বলা হয় রাজা তোর বন্ধুরা চাকরি করে তোর পিয়ন হবে আর তুই রাজনীতি করে তাদের মালিক হবি।
রাজা তার কথা শুনে নি রাজা বলেছে ভাই আমি রাজা হতে চইনা। সৎ ভাবে বাঁচতে চাই ।চাদাবজি টেন্ডরবাজি করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। দেশের জন্য জীবন দেয়ার মত সাহস আছে আমার। মানুষের রক্ত ঘামের সঙ্গে বেইমানী করতে পারব না। কথা শুনে অবাক হয় হাইকমান্ড। সবার একই কথা দল একজন কর্মী হারালো দল একজন নেতা হারালো। তার পরিবর্তনে সবাই অবাক। দেশ সেবার জন্য যে সব কিছু ছাড়তে পারে ।আজ তার এই অবস্থা কেন?কি হল রাজার? রাজনীতির ডার্টি গেম সে পছন্দ করত না। কিনতু দেশের সেবাকে সে ইবাদত মনে করত।
রাজার সুপারিশে প্রিয়া থিসিস পেয়ে যায়। এত কম মার্কস নিয়ে থিসিস অতীতে কেউ করে নি। তবে রাজার বদনাম হলো। যা আগে হয়নি।তার নীতিবোধের কি ইতি টানলো প্রিয়া। ওর চেয়ে ভাল মার্কস পেয়ে যারা থিসিস পেলনা তারা দুঃখ পেল খুব। শিক্ষকদের কাছে প্রিয়ার কদর বেড়ে গেল এসব অনেকেরই অসহ্য ঠেকে।
প্রজেকটে কাজ করে রাজার ইনকাম ভালই ছিল।আমেরিকাতে স্কলারশিপ নিয়ে যাওয়ার সুযোগও ছিল। চাকিরিতে জয়েন করাতে সে সুযোগ হারালো।
শুধু কি তাই বাংলদেশ ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার খবর জানার সঙ্গে সঙ্গে সে প্রিয়াকে মেসেজ পাঠালো চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি প্রিয়া শুনছো আর মাত্র কয়েকটা দিন ব্যস.............মেসেজ পড়ে প্রিয়ার চোখে পানি এসে যায়।প্রেমাশ্রু আনন্দ অশ্রু। হঠাৎ বেদনার্ত অতীত ভেসে আসে মনে।
কোন এক আশার স্বপন
হয়েছিল বেশতো আপন
কোন এক মায়ার খেলায়
জীবনটা আজ ঘোর হতাশায়।
ছিল কি তা প্রেম
নাকি অপ্রেমের বিভীষিকা
লুটেছিল সবই তার ;
বোম্বেটে এক পেয়ে তারে একা।
মায়াবী এক ছলনায় টেনেছিল কাছে
সবকিছই হারিয়েছিল যা কিছু তার আছে।
আশা ছিল প্রণয় হলে হবে এর সমাধান
বিধির বিষম খেলায় কষ্টের সাগর হলো ব্যথা আজই তার পাহাড় সমান।
কাওসারের চাকরির খবরে প্রিয়া বন্ধুদের মিষ্টি বিতরণ করেছিল। সেই মিষ্টি বিতরণের পর তার চাকরিটা চলে যায়। বন্ধুরা অনেক টিপ্পনি কেটেছিল।প্রিয়া অনেক কষ্ট পেয়েছিল ।কষ্টের মূল কারণ তার চাকরিটা চলে যাওয়া নয়।চাকরির পর তাদের বিয়ের কথাও প্রায় পাকা হয়ে গিয়েছিল।
পৌষের শীতে সেবার তার ফুফুর বাড়ী বেড়াতে যায়। ফুফু কক্সবাজার থাকেন। তার ফুফার সেখানে হোটেল বিজনেস। কক্সবাজার তার বরাবরের পছন্দের জায়গা। সমুদ্র সৈকত এ সরাসরি জোয়ারভাটা দর্শনে বারবার মুগ্ধ হয়। ভাটার সময় সমুদ্র পৃষ্ঠ বেশ নিচে নেমে যায় । ছোট ছোট গর্তে মাছ আটকা পড়ে। ছোট ছোট ছেলেরা সেই মাছ ধরে। একধরণের বিষাক্ত গাছ অল্প পানিতে রেখে দিলে সেই বিষে ছোট মাছগুলো দূ্র্বল হয়ে যায়। সহজেই সেগুলো ধরে ফেলে। গলদা চিংড়ীর রেণু সংগ্রহে দলবেধে নামে তারা। জাল টানে।হাজার চিংড়ীর রেনুর মধ্যে কয়েকটি গলদা চিংড়ীর রেণু মেলে। সেগুলো রেখে বাকী শত শত চিংড়ী রেণু শুকণোতে ফেলে রাখে। সবগুলো মরে যায়। একেকটা গলদা চিংড়ীর রেণু ২ টাকা দরে বিক্রি হয়। অন্য প্রজাতির চিঙড়ী গুলো মরে সাফ।মানুষ প্রকৃতির প্রধান শত্রু।প্রাণীর ও।অথচ প্রকৃতির কোলে সে বেড়ে ওঠে!
প্রিয়ার ভাল লাগে সমুদ্রে সূর্যাস্ত ।লালটকটকে সূর্যটা কেমন সাগরের নীলে হারিয়ে যায়। সূর্যের ডুবে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রেম লীলায় মেতে ওঠে প্রেমিক যুগল। কেউ বা সাগরে ভেসে বেড়ায়। সাতার কাটে। হঠাৎ ঢেউ আছড়ে পরে বিশাল সাগর ঢেউ সমুদ্রতটে।।কেউ কেউ নোনা পানি নাকে মুখে ঢুকে কাশতে থাকে। দল ধরে ছেলেরা নৌকায় ।সবাই গান গাইছে । সবমিলিয়ে অসাধারণ। সাগরের পানিতে ভেসে থাকে সমুদ্র জাহাজ । মানুষের কোলাহলে ব্যস্ত ।ভীষণ ব্যস্ত। কেউ কাউকে দেখার ফুসরত নাই।
প্রিয়ার কয়েকদিন পর কাওসার ও আসে কক্সবাজার তার খালার বাড়ীতে। সে ফোন করে প্রিয়ার সঙ্গে কথা বলে বলতেই থাকে। লম্বা ফোনকল।হঠাৎ প্রিয়া কাওসারকে জিজ্ঞাসা করে সে কোথায় ?প্রিয়াকে চমকে দিয়ে কাওসার বলে তোমার পিছনে। পিছনে ফিরে দেখে কাওসার!প্রিয়া বিস্মিত হয়!কাওসার পুরাই পাগল প্রিয়া যেখানেই যাবে সেখানে সে গিয়ে হাজির কাওসার। এ নিয়ে বন্ধুরা দারুণ বিরক্ত। স্টাডি ট্যুর গুলোতেও সে হাজির হতো।
কাওসারের সঙ্গে তার দারুণ সময় কাটে। কাওসার চোখ লাল হয়ে আছে।কামাগ্নি জ্বলছে । আগামীকাল প্রিয়াকে তার খালার বাসায় যওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকে। অনেকটা ঝারির সুরেই। প্রিয়া অবাক হয়। প্রিয়া রাজি হয়ে যায়। তবে বাসা থেকে কাওসারের সঙ্গে মেলমেশার উপর নিষেধাজ্ঞা। তাই ফুফুকে মিথ্যা কথা বলে কাওসারের সঙ্গে তার খালার বাড়ী হাজির হয়। কাওসারের খালা বাসায় নেই ।বাইরে গেছেন।কাওসার আর প্রিয়া একা। কাওসার একাকিত্বের সুযোগ নেয়। প্রিয়ার কোন বাধাই সে মানে না। শত চেষ্টা করেও পেরে ওঠেনা কাওসারের পশুত্বের সঙ্গে। চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরে প্রিয়ার। কাওসারের একটা কথা ই এখনও কানে বাজে এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ এন্ড ওয়ার !
................................................>
প্রেম অপ্রেমের গল্প-১
প্রেম অপ্রেমের গল্প-২
প্রেম অপ্রেমের গল্প-৩
প্রেম অপ্রেমের গল্প-৪
প্রেম অপ্রেমের গল্প -৫
প্রেম অপ্রেমের গল্প-৬
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১৩ রাত ৩:৩০