নতুন চাকুরী শুরুতে ই বদলী ।ঢাকার মানুষ সিলেটে বসবাস কোন আত্নীয় স্বজন নাই ।কোথায় থাকা? কোথায় খাওয়া । কঠিন ।চোখে সরষে ফুল দেখার মত ব্যাপার।বুকে সাহস আছে।মানুষ যা পারে সেটা আমারও পারা উচিৎ। মাসখানেক একটা হোটেলে থেকেই নবাবের মতন অফিস করছি ।আর বাসাও খুঁজছি ।একজনের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল । ভদ্রলোক তার বাসা ছাড়বেন ।একটা কক্ষ ,এটাচ বাথ ।আমি রাজি থাকলে সেখানে থাকতে পারি। সোহেল সাহেব পরিপাটি পোষাক।শ্যামলামতন। দীর্ঘদেহী।বেশ হ্যান্ডসাম।তিনি বিবাহিত। একটা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে যব করছেন।দেখে খুব নম্র ভদ্র মনে হলো ।বাসা দেখে পছন্দ হলো । উঠে পরলাম নতুন বাসায় ।
বাসায় তার উদ্ভট আচরণে আমি অবাক হলাম।তার হিসেব জ্ঞানে মুগ্ধ হবেন যে কেউ।তিনি ফ্লোরে বেডিং বিছিয়ে ঘুমান।আমার খাট আনার পর ওটাতে ভাগ বসালেন।উনি পানি পান করেন জগে।প্রথমে বুঝিনি ব্যাপারটা কি?পরে বুঝলাম তিনি অযথা খরচ করেন না।গ্লাস একটা অযৌক্তিক খরচ। জগ ছোট হলে সেটা থেকে সরাসরি পানি খাওয়া সম্ভব!তবে পোষাকে তিনি খুব পরিপাটি।ভাল বেতনের চাকরি করেন।তার স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজীতে মাস্টার্স করা। প্রেমের বিয়ে।তার ফ্যামিলি সেটা মেনে নেয় নি।কারো সঙ্গে তিনি খুব একটা কথা বলেন না।তার কথার সঙ্গী একমাত্র আমি।পাশের কক্ষগুলোতে তার অধস্তন কর্মচারীরা দল ধরে থাকেন।সংখ্যায় দশ হবেন।চুলো দুইটা।সিলিন্ডার দিয়ে সেগুলো চলে।বাড়ীটা দেখতে চমৎকার । জানালা দিয়ে তাকালে টিলা দেখা যায়।লাল রঙের শিলার স্তূপ মনে হবে প্রকৃতির মধ্যে লাল আভা ছড়িয়ে দিয়েছে ।আর অনেক ফল গাছও আছে।তবে ঢাকায় যা দেখিনি তা ওখানে আছে।সকাল বেলা দাতব্রাশ করে ছাদে পায়চারি করলে কাঠালভর্তি গাছটার দিকে তাকালে দেখা যাবে বৃহৎ আকার এক বাদর তাকিয়ে আছে।তারা ভেংচীও মারে।
বানরের ভেংচী মারা দেখার পর হাত মুখ ধূয়ে অফিসে গমন।ভেংচী মারা জীবন নিয়ে ভাবি। প্রিয়ার বিয়ের কথা বার্তা চলছে।একের পর এক পাত্রের লাইন।সুন্দরী স্মার্ট শিক্ষিতা মেয়ের আর যাই হোক প্রেমিক আর বরের অভাব হয়না।তখনো মাস্টার্স শেষ হয়নি। তার পেছনে প্রমিকের লাইন।সেই লাইন ধরালোকের একজন আমি। পোস্টিং সিলেট ।আর তিনি ঢাকায়। দিলদরিয়া মানুষ কাউকে না বলতে পারে না।বন্ধু বলতে অজ্ঞান।বান্ধবীদের সঙ্গে তার সখ্যতা নেই।তাকে ঘিরে জনা চারেক বন্ধু থাকবে।বন্ধুদের সঙ্গে তাস ,মারবেল কিংবা ডাংগুলি খেলবেন। দুপুর বেলা তার বন্ধুদের সঙ্গে লান্স করবেন নীলক্ষেতের একটা ছোট্ট হোটেল।খাবার ঘর। সেখানে।তাদের খাবার বেশ সুস্বাদু।খুব সম্ভবত কোন মেডিসিন দেয়া ।অন্তত ঘরের খাবারের স্বাদ সেই হোটেলে পাওয়া যায় ।যারা হলের পুষ্টিকর !খাবার খেয়ে অপুষ্টিতে রোগাপাতলা হয়েছেন।তাদের অনেকে ই সেখানে খাওয়া দাওয়া করেন।পুষ্টিপূরণ হোক আর না হোক রুচীপূরণ হয়।যাদের পকেট বিশাল তারা নিরব হোটেল মিতালী সোহাগ এ গিয়ে খেয়ে আসেন। তবে সেগুলো ঘরোয়া নয়। খাবার ঘর ঘরোয়া পরিবেশে খাওয়া। আর নামটাও সাহিত্যিক ;খাবার ঘর।
তার প্রেমকাহনের খবর ইথারে ভেসে আসে। সিলেটে তখন দারুণ একা আমি।তাকে ভালবেসে কত বড় পাপ করেছি আল্লাহই জানে।ভুল আমার ই প্রেমে পড়ার আগে জিজ্ঞাসা করা উচিৎ ছিল প্রিয়া আপনি কি কাউকে ভাল বাসেন? বা কাউকে কথা দিয়েছেন?
তারপরও বলি প্রেম কি আর যুক্তি মানে। প্রিয়া আমার প্রেমে পড়ার বাহানা কেন করবে?
তার চোখে অশ্রু ই বা গড়িয়ে পড়বে কেন? আমার জন্যে!আমার সামান্য কিছুর আশংকায় সে কেনই বা কষ্ট পাবে। সে অনেক আগের কথা ।এখন আর ও বোধ হয় কষ্ট পায়না। আমি ই বা কম কিসে? ওর জন্য অনেককে কষ্ট দিয়েছি।অনেক কে।নিজের কর্মক্ষেত্রে পর্যন্ত ওর সাথে কেউ জড়ালে নগদে শাস্তি ।অমানবিক ভাবে। নিষ্ঠুর ভাবে ।চাকরি থেকে কিক আউট ।এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ এন ওয়ার !
সেগুলো থেকে আমি অবশ্য এখন অনেক দূরে।নিজেকে কঠিন শাস্তি দিয়ে চলছি।কারণ তাকে কষ্ট দিয়েছি।তাকে কেন্দ্র করে অন্যদেরকেও।.............>
-----------------------------------------------------------
উৎসর্গ -নন্দিত অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদি ।তার জন্মদিন ২৯ মে।তার আত্মার মাগফিারাত কামনা করি ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৩