ভারত থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব বিরোধী কিছু সংগঠন প্রচার-প্রচারনা চালাচ্ছে।
গত ১৬/১/১১ ইং তারিখে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনার রজিত মিত্তারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ডেকে বিভিন্ন ইস্যুতে প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি ভারতে বাংলাদেশ বিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের তৎপরতা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়।
ভারতের এই সব সংগঠনের মধ্যে রয়েছে স্বাধীন বঙ্গভূমি আন্দোলন, নিখিল বঙ্গ নাগরিক সংঘ, বাংলাদেশ উদ্বাস্ত সংগ্রাম পরিষদ, হিন্দু রিপাবলিক অব বীরবঙ্গ , লিবারেশন টাইগারস অব বাংলাদেশ, নতুন বাংলা মুভমেন্ট, ক্যাম্পেইন অ্যাগেইনস্ট অ্যাটরোসিটিজ অন মাইনরিটি ইন বাংলাদেশ।
সংগঠনগুলো অহরহ একে অন্যকে সহায়তা করছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই একত্রে কাজ করে। এদের অধিকাংশের লক্ষ প্রায় অভিন্ন- বাংলাদেশের অংশবিশেষ নিয়ে একটি স্বাধীন হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা । সংগঠনগুলোর প্রধানতম হাতিয়ার- বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের প্রচার।
এই পোষ্টে এমন কিছু সংগঠনের পরিচিতিমূলক কিছু প্রাথমিক আলোচনা করবো।
স্বাধীন বঙ্গভূমি আন্দোলন
বাংলাদেশের দক্ষিন-পশ্চিমের জেলাগুলো নিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র "বঙ্গভূমি" প্রতিষ্ঠা করার লক্ষে ১৯৭৩ সালে ভারতের পশ্চিম বঙ্গে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
এর পেছনে বর্তমানে সমর্থন আছে কালিদাস বৈদ্যের পরিচালিত বঙ্গসেনা , শক্তিসেনের হিন্দু প্রজাতন্ত্র, বিমল মজুমদারের বাংলাদেশ উদ্বাস্ত উন্নয়ন পরিষদ, চিত্তরন্জন সুতারের বীর বঙ্গ সেনা।
মতাদর্শ:
সংঠনটির দাবি অনুযায়ী ১৯৪৭ সালে পূর্ব বাংলার জনসংখ্যার ৩০% হিন্দু ছিল। কিন্তু ২০০২ সাল নাগাদ এই হার ১০% এ নেমে আসে। অর্থাৎ বিপুল সংখ্যক হিন্দু ভারতে চলে যেতে বাধ্য হয়,অন্য দিকে ভারতের নতুন আইন অনুযায়ী এদের ভারতের নাগরিক হওয়ারও সুযোগ নেই।তাই এদের হাতে ভিন্ন কোন রাস্তা খোলা নেই।
বঙ্গভূমি:
স্বাধীন বঙ্গভূমি সংগঠনটির দাবি অনুযায়ী দেড় কোটি হিন্দুকে অর্থনৈতিক শোষন ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মাধ্যমে স্বদেশ থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।
সংগঠনটির অফিস দক্ষিন কলকাতার রামলাল বাজারে অবস্থিত। যার সভাপতি শ্রী পার্থ সামন্ত এবং সাধারন সম্পাদক কালীদাস বৈদ্য।
১৯৮২ সালের ২৫মার্চ "নিখিল বঙ্গ নাগরিক সংঘ" আনুষ্ঠানিক ভাবে "বঙ্গভূমি" গঠনের ঘোসনা দেয়।
বঙ্গভূমির আয়তন ও সীমানা:
প্রস্তাবিত বঙ্গভূমি বাংলাদেশের বৃহত্তর খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া , ফরিদপুর, বরিশাল এবং পটুয়াখালী নিয়ে গঠিত। এর মোট আয়তন প্রায় ২০ হাজার বর্গ মাইল যা বাংলাদেশের মোট আয়তনের এক-তৃতিয়াংশের অধিক।
এর সীমানা- উত্তরে পদ্মা, পূর্বে মেঘনা, পশ্চিমে ভারত-বাংলাদেশ সীমানা ও দক্ষিনে বঙ্গপোসাগর।
সেনাদল:
এদের সেনাদলের নাম "বঙ্গসেনা"। যার প্রধান কালিদাস বৈদ্য এবং এর প্রধান সমন্বয়ক ও প্রশিক্ষক অরুন ঘোস।
১১এপ্রিল ১৯৯৪ সালে কোলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে এরা হামলা করে এবং বিল্ডিং এর ভিতর বঙ্গভূমির পতাকা উত্তলন করে।
তথ্যসূত্রের একাংশ:
http://en.wikipedia.org/wiki/Bangabhumi
http://maps.thefullwiki.org/Bangabhumi
Click This Link
Click This Link
http://worldsplonage.info/?p=25
Click This Link
Click This Link
নিখিল বঙ্গ নাগরিক সংঘ
সংগঠনটির ব্যাপারে পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে।ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশী উদ্বাস্তদের রাজনৈতিক দল হিসেবে সংগঠনটি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। কালিদাস বৈদ্য এর প্রধান হোতা।
১৪এপ্রিল, ২০০৮ সালে বাংলাদেশ-কলিকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেসের উদ্বোধনে বাঁধা দেবার চেষ্টা করে সংগঠনটি। পুলিশের ভাষ্য মতে, সংগঠনটির সমর্থকরা রেললাইনে ৩টি বোমা বিছিয়ে বাখে। পুলিশ বোমাগুলো নিষ্কৃয় ও নাশকতার সাথে জড়িত সংগঠনটির সমর্থকদের গ্রেফতার করে।
তথ্যসূত্রের একাংশ:
Click This Link patronize hindu militant group for breaking bangladesh and set up a hindu state&ei=NT88TcDEHYK28QOdtImlCA&usg=AFQjCNHZJ5yWo_yKOFGWkMJyB8PhpiNhJQ&cad=rja
Click This Link banga nagarik sangha information&ei=WEI8TcPqLoq18QOokYSuCA&usg=AFQjCNHpEIBiNOr_nQq-pT5VQPESDKf3ug&cad=rja
Click This Link banga nagarik sangha information&ei=WEI8TcPqLoq18QOokYSuCA&usg=AFQjCNE28hs1VWFDcfqXR8IPNpQuSuaRsQ&cad=rja
Click This Link banga nagarik sangha information&ei=WEI8TcPqLoq18QOokYSuCA&usg=AFQjCNEN1kup4djWHiqNSuqA1xhPiYnRuQ&cad=rja
Click This Link banga nagarik sangha information&ei=WEI8TcPqLoq18QOokYSuCA&usg=AFQjCNHWqSplrSzjjQA21dArFIm3MSjRKA&cad=rja
Click This Link of hindu pulitical parties&ei=ekM8TeDECsSs8gPh-eDmCA&usg=AFQjCNEz-ez7igUI7rz38rUS9muvKW2NmA&cad=rja
হিন্দু রিপাবলিক অব বীর বঙ্গ
২০০২ সালে পশ্চিম বঙ্গে হতুন স্বাধীন হিন্দু রাষ্ট্র "হিন্দু রিপাবলিক অফ বীর বঙ্গ" এর প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক ঘোসনা করা হয়। চিটাগং এর পাহাড়ি এলাকার শক্তিগড়কে রাজধানী এবং খুলনা জেলার সুরইয়া কেন্ডরামকে ওয়ারকিং ক্যাপিটাল ঘোসনা করা হয়।
সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য "Supreme Revolutionary Council" এবং ১৭ সদস্য বিশিষ্ট " interim government in exile" গঠন করা হয়।
বাংলাদেশের তৎকালিন ডেপুটি হাইকমিশন থেকে জানানো হয় , এমন দু:খজনক কার্যক্রম ইত্যিপূর্বেও সংগঠিত হয়েছে কিন্তু কখনই সফল হয় নি।
নবগঠিত এই সরকারের পক্ষ থেকে আমেরিকা, ভারত সহ ১৭টি দেশের সরকারকে এ ব্যপারে সাহায্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়।
জাতীয় সঙ্গীত
নব ঘোসিত রাষ্ট্রের জাতীয় কবি দিজেন্দ্র রয় এর "ধানে ধনে পুষ্পে ভরা......." গানটির প্রথম দশ লাইন জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মনোনিত করা হয়।
রাষ্ট্রনীতি
রাষ্ট্র পরিচালনায় মানবতাবাদ গৃহীত হয়।
সেনাদল
সংগঠনটি দাবি করে তাদের তালিকাভুক্ত ২ লক্ষ স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে যারা নিজের জীবন দানে প্রস্তুত।
প্রচার যন্ত্র
এদের পত্রিকার নাম "শক্তি সমাচার" এবং প্রস্তাবিত রেডিওর নাম "বঙ্গবানী"
এর চেয়ারম্যান হিসেবে আই,জে, মন্ডল এবং এজেন্ট হিসেবে আড: এস, গুহার নাম উল্লেখ করা হয়।
তথ্যসূত্রের একাংশ:
Click This Link republic born in bangladesh-the times of india&ei=Lkg8TdujLMut8QO71KzQCA&usg=AFQjCNEeq9uCd-wznPp-SyuoL263EaVkKA&cad=rja
সিএএএমবি
CAAMB- Campaign Against Atrocities on Minorities in Bangladesh কলিকাতা কেন্দ্রিক সংস্থা , যা মূলত বাংলাদেশে মুসলিম দ্বারা সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
ইতোমধ্যে সংগঠনটির ৪টি আন্তর্জাতিক কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে। যার পেছনে সর্বাত্মক সাহায্যে ছিল- বাংলাদেশ উদ্বাস্ত উন্নয়ন সংসদ, উদ্বাস্ত সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ মাইনোরিটি ফোরাম, সোনার বাংলা ডেমকরেটিক পার্টি, ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ফোরাম।
এর ঠিকানা: ৪১, ফ্লাট ১০, রাম ঠাকুর সারনী, কলকাতা ৭০০০৩২। এর নিজস্ব ওয়েব সাইট- caambkolkata.cjb.net
তথ্যের অতিরন্জন ও অপপ্রয়োগের অভিযোগ রয়েছে সংস্থাটির বিরুদ্ধে।
তথ্যসূত্রের একাংশ:
Click This Link janajagruti samiti-caamb&ei=Okk8TbT7L82p8QPtnJH2CA&usg=AFQjCNEqVvF_abocDFUyyL7uW0B6Ijz07Q&cad=rja
Click This Link international conference of caamb ends successfully-somewhereinblog&ei=iUo8TY6iNpGs8QOxm8WiCA&usg=AFQjCNHz0GwrmuDD6aYR8fPcnnJs-tmV6w&cad=rja
Click This Link international conference of caamb ends successfully-somewhereinblog&ei=iUo8TY6iNpGs8QOxm8WiCA&usg=AFQjCNGupYDb3uXvx2QarHomoSMkj9nCyQ&cad=rja
Click This Link international conference of caamb ends successfully&ei=K0s8TY6JAsWs8QPKsInHCA&usg=AFQjCNF_EgUPOH4P5H-zdJXTC-fukHnKMA&cad=rja
তথ্যসূত্র পাকিস্তান ডিফেন্সের একটি লিংক দেওয়া হয়েছে, এর জন্য আমি আন্তরিক ভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। সেখানকার বাংলাদেশ সম্পর্কিত বক্তব্যে আমার দ্বিমত রয়েছে। শুধুমাত্র সেখানে গুরুত্বপূর্ন কিছু তথ্য ও লিংক থাকায় লিংকটি শেয়ার করলাম। আরেকবার দু:খিত।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ মিথ্যা নয় এবং এর জন্য আমরা কিছুতেই দায় এড়াতে পারি না। সংগঠনগুলোর প্রচার ও যুক্তি একেবারে ভুলও নয়।
খোদ ঢাকাতে মন্দিরের সম্পত্তি দখলের ঘটনা অহরহ ঘটছে, সেখানে দুর্গম গ্রামগুলোর অবস্থা সহজেই অনুমেয়। প্রতিবছর আমরা বন্যাদুর্গত কিংবা শীতার্তদের সহযোগিতার জন্য বিস্তার আয়োজন করি, গুজরাটে মুসলিম হত্যার প্রতিবাদে সরব হই। কিন্তু আমাদের দেশের হিন্দু ভাই-বোনদের কথা ভুলে যাই, তাদের পাশে দাড়াই না।
কিছু স্বার্থান্বেষি ব্যক্তি সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ব্যবসা করছে। তাদের বিরোধীতা করতে গিয়ে আমরা অনেকবার ভুল পথে হেটেছি।
কিন্তু কেউ যদি এই ইস্যুকে পুজি করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্বে আঘাত করে , তবে জাতি , ধর্ম নির্বিশেষে নিন্দনীয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সংগঠনগুলোর কার্যক্রম এখনও বাংলাদেশের স্বাধীনতা বা স্বার্বভৌমত্বের জন্য অনেক বড় হুমকি হয়ে যায় নি। তবে বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি নষ্ট অবশ্যই করছে।
আমরা যেন কিছু লোকের অপর্কমকে সমগ্র হিন্দুদের উপর জেনারালাইজ না করি বিশেষ করে বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর।
এই সংকটের পিছনে যারাই থাকুক , এর বিস্তার ঘৃণা আর ক্ষোভ থেকেই ঘটেছে। তাই এর সমাধান দ্বায়িত্ববোধ ও ভালোবাসার মাধ্যমের আসতে পারে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সুপ্রতিষ্ঠিত হোক।
(সময় স্বল্পতার কারনে তথ্যসূত্র ও ছবির একাংশ প্রকাশ করা হল। পরবর্তিতে আপডেড হতে পারে।)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১২:৪৩