পড়তে পারেন আমার আগের পোস্টঃ প্রবাসীর চাঁদ
প্রকৃতি যেন দু’হাত ভরে সম্পদ দিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়াকে। প্রচুর পাহাড়-পর্বত আর দ্বীপের সমাহার এই মালয়েশিয়ায় পেনাং একটি অসাধারণ দ্বীপ। এটি একটি প্রদেশও। এই দ্বীপ প্রদেশের রাজধানীর নাম জর্জ টাউন। মূল ভূখন্ড থেকে দ্বীপে যাতায়াতের জন্য মোট দুইটি সেতু আছে।
মালয়েশিয়ার ফেডারেল রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে সড়ক পথে পেনাং এর দূরত্ব প্রায় ৩৫৫ কিলোমিটার।
পেনাং দ্বীপের অন্যতম প্রধান পর্যটন আকর্ষণ পেনাং পাহাড়ের ট্রেন। পেনাং পাহাড়কে মালয় ভাষায় বলে Bukit Bendera.
সমতলে অবস্থিত একটি স্টেশন থেকে পেনাং পাহাড়ের গা বেয়ে যাত্রীসহ চূড়ায় উঠে যায় ট্রেনটি। সেখানে নামার পর সময় কাটানোর জন্য রয়েছে নানান ব্যবস্থা। পাহাড়ের উপর থেকে জর্জ টাউন তথা পেনাং দ্বীপটাকে খুব মনোরম দেখা যায়। সেখানে কফি শপ, শিশুদের জন্য রাইড সহ নানান কিসিমের বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। পর্যটকরা ট্রেনটিকে দারুণভাবে উপভোগ করে। সে এক আশ্চর্য রকম অনুভূতি।
ট্রেনে চড়ে পাহাড়ের চূড়ায় যাত্রা করতে হলে কিছু ঝক্কি সামলাতে হয়। প্রথম কঠিন ধাপ হলো টিকিট কেনা। অনেকেই লাইনে দাড়ানোর ধৈর্য ধরে না রাখতে পেরে “ধুত্তুরি ছাই” ইত্যাদি বলে চলে আসে। ছুটির দিনগুলোতে অসম্ভব রকমের ভিড় থাকে। টিকিট কাউন্টারে হতাশ হবার মতো বিশাল লম্বা লাইন।হাজার খানেক লোকের লাইনে গরমের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট কিনতে পারা সত্যি এক কঠিন কাজ।
টিকিট কিনে হাতে পাবার পর ট্রেনে উঠার জন্য সমতলের স্টেশনেও আবার সমান তালে ভিড়। সেই ভিড় পেরিয়ে ট্রেনে চড়লে মনে হবে কিছু একটা বুঝি পেয়ে গেলে। ট্রেনে তো আর শত শত যাত্রী ধরে না। ঠেলেঠুলে ২০/২৫ জন যাত্রী উঠতে পারে বলে আমার মনে হয়েছে।
পাহাড়ে ভ্রমণ শেষে সমতলের স্টেশনে ফিরে আসার সময়ও বিশাল লম্বা লাইন মোকাবিলা করতে হয়। তিনবার লম্বা লাইন মোকাবিলা করতে হলেও পেনাং হিলের ট্রেন আমার কাছে মন্দ লাগেনি।
পেনাং হিল ট্রেনের কিছু তথ্যঃ
অবস্থানঃ বুকিত বেন্দেরা নামক পাহাড়।
উচ্চতাঃ ৮২৩ মিটার।
স্থাপিতঃ ১৯২৩ সালে। এরপর ২০১০ সালে সংস্কার করা হয়
ওয়েব সাইটঃপেনাং হিলের ট্রেন
টিকিটের হারঃ মালয়েশিয়ানদের জন্য-
শিশু- ৫ রিঙ্গিত(দ্রুত সার্ভিস- ২০ রিঙ্গিত)
প্রাপ্তবয়স্কঃ ১০ রিঙ্গিত(দ্রুত সার্ভিস- ৪০ রিঙ্গিত)
সিনিয়র সিটিজেনঃ ৫ রিঙ্গিত
বিদেশীদের জন্য এটার হার তিনগুণ বেশী।
পেনাং একটি ঐতিহ্যবাহী শহর। ইউনেস্কোর বেশ কিছু হেরিটেজ এই শহরের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করেছে। পুরনো বৃটিশ ধাচের শহরটি ছুটির দিনগুলোত পর্যটকের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠে। পর্যটকদের জন্য সব ধরনের সুযোগ সুবিধা অবারিত। মনে হবে – ইউরোপের কোন শহরে আছি।
পেনাং ভ্রমণ করে বিশেষ ফেরিতে চেপে সাগরের ঢেউয়ের নাচন আর দোল খেতে খেতে যেতে পারেন মালয়েশিয়ার আরেক পর্যটন আকর্ষণ প্রকৃত কণ্যা লঙ্কাবী দ্বীপ দেখতে। মালয়েশিয়া বেড়াতে গিয়ে লঙ্কাবী দ্বীপ না দেখে ফেরার মতো বোকামী আর হয় না।
ঋণ স্বীকারঃ পোস্টে ব্যবহৃত সব ছবি নেট থেকে নেয়া। আমার তোলা সব ছবি হারিয়ে গেছে।