১৯৭৫ সালের জগত আর আজকের জগতের মধ্যে বিস্তার ব্যাবধান। তখন সংবাদপত্র ছিল হাতে গোনা কয়েকটি। বেতার, আর টিভি ছিল। কিন্তু তাও ঘরে ঘরে ছিল না। তবে দেশের আনাচে কানাচে প্রচুর না হলেও অনেক রেডিও ছিল।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সকালে রেডিও অন করে মানুষ হতবিহ্বল হয়ে যায়। কেননা, রেডিওতে কোন স্বাভাবিক অনুষ্ঠান ছিল না।
একটু পর পর অখ্যাত কোন এক মেজর যা বলেছিল তা হলোঃ
মেজর ডালিম বলছি। অদ্য সকাল হইতে খন্দকার মোশতাক আহমেদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করিয়াছে। শেখ মুজিব ও তার খুনী দুর্নীতিবাজ সরকারকে উৎখাত করা হইয়াছে। এখন থেকে সারা দেশে সামরিক আইন জারি করা হলো। আপনারা সবাই আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করুন। আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন। কোন অসুবিধা হইবে না। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
সারা বাংলাদেশে সকাল হইতে সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টার জন্য কার্ফিউ জারি করা হইয়াছে। পরবর্তী নির্দেশ পর্যন্ত এই কার্ফিউ জারি থাকিবে। বাংলাদেশ পুলিশ, বিডিআর, সেনাবাহিনীর সিপাহী ভাইবোনেরা, আপনার সবাই সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগদান ও সহযোগিতা করিবেন। যারা অসহযোগিতা করিবেন দেশের বৃহত্তর স্বার্থের খাতিরে তাদের চরম দন্ড দেওয়া হইবে। বাংলাদেশ জিন্দবাদ ।
এর পর বেতারের নিজস্ব লোক মারফত দেয়া হয় একটি বিশেষ ঘোষণাঃ
বাংলাদেশ বেতার। বিশেষ ঘোষণা। খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে আজ ভোরে সামরিক বাহিনী দেশের সর্বময় ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন। দেশের বৃহত্তর স্বার্থের খাতিরে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। খন্দকার মোশতাক আহমেদ নতুন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটেছে। সব দেশ প্রেমিক নাগরিককে নতুন সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে।
রক্ষী বাহিনী, বিডিআর এবং পুলিশ বাহিনীকে বিশেষ করে নিকটস্থ সামরিক কমান্ডের সঙ্গে সহযোগিতা করতে আহ্বান জানানো হয়েছে। নতুন সরকার সারা বিশ্বের প্রতি তাকে স্বীকৃতি দানের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে।
সংগ্রামী এই নতুন সরকার কতিপয় নির্দেশ জারি করেছেন। নির্দেশগুলো হচ্ছে -১। আজ সকাল থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্ট কালের জন্য সামরিক আইন জারি করা হলো।
২। জনসাধারণকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিজ নিজ বাড়ি ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
৩। এখন থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য সারা দেশে সান্ধ্য আইন জারি করা হয়েছে।