রাম্বুটান লিচু জাতীয় একটি ফল। মূলতঃ লিচু আর রাম্বুটান উদ্ভিদতাত্বিক ভাবে একই পরিবারভুক্ত একটি উদ্ভিদ। এটি Sapindaceae পরিবারের অর্ন্তগত উদ্ভিদ। লিচু আর রাম্বুটান জন্মানোর পরিবেশ প্রায় একই রকম। বাংলাদেশে যেহেতু লিচু ভাল উৎপাদিত হয় তাই এদেশে রাম্বুটান চাষ করলে ভাল হবে বলেই মনে করা যেতে পারে। রাম্বুটান ফলটি দেখতে কিছুটা কদম ফুলের মতো আর কিছুটা লিচুর মতো। তবে ভেতরের ভোজ্য অংশ রসালো হলেও লিচুর মতো শাস উঠে আসে না। বিচির সাথে লেগে থাকে। অনেক সময় খেতে গেলে বিচির গায়ের আবরণ শাসের সাথে উঠে আসে যা বিরক্তিকর লাগে।
রাম্বুটান 'rambutan' শব্দটি মালয় শব্দ "rambut" থেকে এসেছে । মালয় ভাষায় Rambut শব্দের অর্থ হলো- চুল। যার আরেক অর্থ 'hairy' বা রোমশ। নরম কাটা সদৃশ রোম দ্বারা ত্বক আবৃত থাকে বলে ফলটিকে রাম্বুটান বলা হয়। কাটা সদৃশ রোম দ্বারা ত্বক আবৃত না থাকলে লিচু আর রাম্বুটানের মধ্যে বাহ্যিক কোন পার্থক্য থাকে না বললই চলে। লিচুর চামড়া সামান্য পাতলা আর রাম্বুটানের চামড়া বেশ মোটা। লিচুর চামড়া বশ সহজেই খোলা যায়। রাম্বুটানের চামড়া ছাড়ানো একটু কষ্ট। কারণ বেশ মোটা বলে শক্তি লিচু চেয়ে বেশী লাগে। লিচুর বিচি ডিম্বাকার । আর খয়েরী রং এর । রাম্বুটানের বিচি চ্যাপ্টা আর সাদা রং এর। লিচুর বিচি পিচ্ছিল বা মসৃন। রাম্বুটানের বিচি মসৃন নয়।
ফলটি দেখতে অনেকটা ভেরেন্ডা ফলের মতো। ভেরেন্ড গ্রামে গঞ্জে প্রচুর ফলে। গাঢ় সবুজ রঙের ভেরেন্ডা বীজের বহিরাবরণে থাকে নরম কাঁটা। । সবুজ খোসাযুক্ত এই ভেরেন্ডা বীজের সাথে রাম্বুটানের কিছুটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। অত্যন্ত সুস্বাদু ও সুমিষ্ট এ ফলটি পাকলে সবুজাভ হলদে রঙ ধারণ করে। প্রজাতি ভেদে হালকা লাল, বাদামী এমনকি কালচে রঙের রাম্বুটানও দেখা যায়। ফলের খোসায় নরম কাঁটার মতো লোম/চুল থাকায় আমাদের দেশে অনেকে একে ‘দাঁড়িওয়ালা লিচু’ ডাকে। তবে অনেকের কাছেই্ রাম্বুটান আকর্ষণীয় নয়। কেননা, লিচুর সাথে তুলনা করলে রাম্বুটান ধোপে টিকে না।
মূলতঃ থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া,ইন্দোনেশিয়া হচ্ছে রাম্বুটানের আদি নিবাস। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে প্রচুর পরিমাণে জন্মালেও বাংলাদেশে আগে পাওয়া যেত না। বাংলাদেশে ইদানিং কেউ কেউ রাম্বুটানের গাছ লাগাচ্ছেন।বেশ চড়াদামে মাঝে মাঝে ঢাকার বড় বড় বাজারে বা মার্কেটে রাম্বুটান পাওয়া যায়। তবে মালয়েশিয়াতে মাঝে মাঝে ৩ কেজি রাম্বটান ১০ রিঙ্গিতেও পাওয়া যায়। তবে এখানকার সুপার মার্কেটেও এটা কম দামে পাওয়া যায় না।
সারা পৃথিবীতে বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ মে.টন রাম্বুটান উৎপাদিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে থাইল্যান্ড একাই করে ৫৫% বা ৫.৮৮ লক্ষ টন। এরপর ইন্দোনেশিয়া ৩.২০ লাখ ম টন, মালয়েশিয়ায় ১ লাখ ২৬ হাজার টন রাম্বুটান উৎপাদিত হয়।
এছাড়া কোস্টারিকা, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, ভারত, শ্রীলংকা, হন্ডুরাস, ক্যারাবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশে রাম্বুটান উৎপাদিত হয়।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারে এ ফলের পরীক্ষামূলক উৎপাদন সফল হয়েছে। প্রফেসর ডঃ আব্দুর রহিম অনেক আগেই এর চাষে সফল হয়েছেন। তার কাছে কেউ গেলে তিনি খুশী হয়ে নানা পরামর্শ দেন।
নিরক্ষীয় অঞ্চলের দেশ সমূহ যেখানে সারা বছরই গরম থাকে সেই সব দেশে রাম্বুটান ভালো ফলে । বাংলাদেশের আবহাওয়া রাম্বুটান চাষের উপযোগী। কেউ কেউ চাষ শুরু করেছেন। আমার মনে হয় বাংলাদেশের সার্বিক পরিবেশ রাম্বুটান চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এদেশে রাম্বুটান চাষ করা হলে লিচুর সাথে বাড়তি লিচুর কাজিন খেতে পারবে বাংলাদেশের মানুষেরা।
তাই যারা বিদেশে থাকেন, বিশেষতঃ মালয়েশিয়া তারা দেশে যাবার সময় তাজা দেখে কয়েক কেজি রাম্বুটান কিনে নিয়ে যান। লিচুর বীজের মতো যত্ন করে চারা তৈরী করুন। তারপর যত্ন করতে থাকুন। আশা করি রত্ন মিলবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৮