২০১১ এর বইমেলায় জনপ্রিয় উপন্যাসিক সমরেশ মজুমদারের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম।আমার জীবনের সেরা একটি মুহূর্ত হয়ে থাকবে তার সাথে কাটোনো ক্ষাণিকটা সময়।ওই সময় ইত্তেফাকে ক্যাম্পাস রিপোর্টিং করতাম।পাশাপাশি বিভিন্ন পত্রিকার ফিচার পাতাগুলোতে লেখালেখি।গতকাল গুগলে ঘুরতে ঘুরতে দেখি একটি অনলাইন আমার এ সাক্ষাৎকারটি তাদের সাইটে দিয়ে রেখেছে।এখন বইমেলা চলছে।জানিনা কবে আবার মেলায় যাওয়া হবে।এখানে বোধহয় পুরো সাক্ষাৎকারটি নেই।তবু লোভ সামলাতে না পেরে তুলে ধরলাম...
"বেলা-অবেলা-কালবেলার পেছনে দাঁড়িয়ে একটি মানুষ। বাংলা সাহিত্যে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে তাঁর নাম। কালো অক্ষরের বন্ধনিতে উজ্জ্বল সমরেশ মজুমদার একাধারে লিখে চলেছেন। চরিত্র ভাঙ্গাগড়ার অসম সাহসি যোদ্ধা। তাঁর মানস পটের বাস্তবচিত্র কল্পনার উচ্ছ্বাসে দানা বাঁধা সাহিত্যে কাল পুরুষ আর উত্তর পুরুষের মাধবীকে ভুলে এমন সাধ্য কার। কিন্তু কোথায় তাঁর লেখনী শক্তি। সমসাময়িক আর সবার চেয়ে একটু ভিন্ন কেন সমরেশ। তার লেখক জীবনের শুরুর কথা। পশ্চিম বাংলার নন্দিত লেখক সমরেশ মজুমদার। এসব বিষয় নিয়ে খোলা মেলা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।
প্রশ্ন: দাদা কালো অক্ষরের যাদুতে কি থাকে যে মানুষ সমরেশ মজুমদারের জন্য পাগল?
সমরেশ মজুমদার: (হেসে) কেন কালোইতো আলো। আর কি বলব বল। তাহলে দাদা শ্যামলা যারা তারা কী? কি আবার শ্যামলাতো কালোরই বোন। সমরেশ মজুদারের উত্তর।
প্রশ্ন: দাদা কেউ যদি লেখতে চায় তাকে আপনি কি বলবেন?
সমরেশ মজুমদার: লেখতে হবে। প্র্যাকটিস করতে হবে। এক সময় সে একটা স্ট্যান্ডার্ড মান পেয়ে যাবে। এই ধর, যারা খেলে তারাতো প্রথমেই ভাল করে ফেলে না। কঠোর পরিশ্রমের ফলেইতো একজন খেলোয়ার সফলতা পায়। লেখকদের বেলায়ও ব্যাপারটা তাই।
প্রশ্ন: লেখতে হলে নাকি পড়তে হয়। তাহলে কি পড়বে একজন লেখক?
সমরেশ মজুমদার: খুব বেশি পড়লেই কেবল একজন ভাল লেখতে পারে, যা সামনে পাও তাই পড়বে। পড়ার ক্ষেত্রে কোন বাছ বিছার নাই।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের তরুণদের নিয়ে কিছু বলেন?
সমরেশ মজুমদার: আমি তোমেদের দেখে অনুপ্রাণিত হই। তোমরা কি সফলতাই না দেখাচ্ছ। এতবড় একটা রাষ্ট্র ভারত, তাদেরকে আর একটু হলেতো ওয়ার্ল্ডকাপে হারিয়ে দিতে।
প্রশ্ন: কিভাবে আপনার লেখক জীবন শুরু পাঠক জানতে চায়?
সমরেশ মজুমদার: শোন আমি তখন খুব গরীব। ঠিক মতো খাইতে পাই না। খুব কষ্টে জীবন চলে। তখন আমি একটা গল্প লিখে এক পত্রিকা অফিসে পাঠালাম। গল্পটা ছাপা হলো। ওরা আমার ঠিকানায় ১৫ টাকা পাঠালো। বন্ধুরা সবাই মিলে হোটেলে বসে চা-বাকুরা খেলাম। টাকা শেষ, পকেট খালি, পেটে ক্ষুধা। বন্ধুরা বলল- আবার গল্প লেখ টাকা পাবি। আমরা সবাই মিলে আবার চা খাব। আমি আবার লেখলাম। তারপর চলতে থাকে ভাল লেখার সংগ্রাম।
প্রশ্ন: একটি চরিত্র সৃষ্টির পেছনে কি থাকে?
সমরেশ মজুমদার: কিছুই না, শুধু ভালবাসা।
প্রশ্ন: দাদা আপনাকে ধন্যবাদ।
সমরেশ মজুমদার: তুমি মনে রেখো আমায়।
[সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন সরোজ মেহেদী]"