বাংলাদেশে গণমাধ্যমের ভূমিকা বরাবরই সংবেদনশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে গণমাধ্যমের কাজ হলো সত্য প্রকাশ, জনমতের প্রতিনিধিত্ব এবং গণতন্ত্রকে সুরক্ষা দেওয়া। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মহলে অভিযোগ উঠেছে যে, বাংলাদেশের দুই প্রভাবশালী পত্রিকা প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার ভারতের নীতি এবং আগ্রাসনকে সমর্থন জানিয়ে বাংলাদেশ বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করছে।
ভারতীয় আগ্রাসন এবং আসাম রাজ্যের প্রসঙ্গ
ভারতের আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তন করে শ্রীভূমি রাখা হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে একটি রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ। করিমগঞ্জ জেলার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যাকে উপেক্ষা করে এমন নাম পরিবর্তন ভারতের সাম্প্রতিক হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিরই প্রতিফলন। নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে সেখানে বসবাসকারী মুসলিম জনগোষ্ঠীর ইতিহাস এবং পরিচিতি মুছে ফেলার চেষ্টা করছে ভারত সরকার।
বাংলাদেশের প্রায় সব পত্রিকায় এ বিষয়টি আলোচিত হলেও, প্রথম আলো এ নিয়ে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। তাদের নিরবতা কেবল অস্বাভাবিক নয়, বরং গভীর সন্দেহের জন্ম দেয়। ডেইলি স্টারও এই ইস্যুতে কার্যত কোনো সাড়া দেয়নি। এটি এমন একটি সময় যখন প্রতিবেশী ভারতের কার্যকলাপ নিয়ে সচেতন থাকা বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গণমাধ্যমের নিরবতা: উদ্দেশ্যপ্রণোদিত?
প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার দীর্ঘদিন ধরেই তাদের কিছু রিপোর্টিংয়ের জন্য সমালোচনার মুখে পড়ছে। তাদের নীতি, কভারেজ প্যাটার্ন এবং বিশেষ করে ভারতের সাথে সম্পর্কিত বিষয়ে নিরবতা বা পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ বেশ পুরোনো।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ হলো, এই পত্রিকাগুলো এমন একটি "এজেন্ডা" বাস্তবায়ন করছে যা বাংলাদেশের স্বাধীন স্বার্থের বিপক্ষে কাজ করে। তাদের দাবি, এই গণমাধ্যমগুলো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে অগ্রাহ্য করে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শক্তির চাপে নিজেদের অবস্থান নির্ধারণ করে।
ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলো নিয়ে আরও একটি অভিযোগ হলো, তারা ধর্মীয় মুসলমানদের প্রায়শই "জঙ্গি" হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করে। উদাহরণস্বরূপ, যখন কোনো ধর্মীয় সংগঠন দেশের পক্ষে একটি যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করে, তখন এই পত্রিকাগুলো তা প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে বিকৃত করে উপস্থাপন করে।
শাহবাগী বয়ান তৈরির অভিযোগ
বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেছেন যে, এই দুটি গণমাধ্যম শাহবাগ আন্দোলনের সময় থেকে একটি নির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে। শাহবাগ আন্দোলনের সময় এ দুটি পত্রিকা একতরফা রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে জনমত প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিল। ফলে গণমাধ্যমের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে।
শাহবাগ আন্দোলনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে গণমাধ্যমের ভূমিকা ছিল জনমত তৈরি করা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সেই জনমত কি বাস্তবতা তুলে ধরেছিল, নাকি একটি বিশেষ পক্ষের বয়ানকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল?
বাংলাদেশের গণমাধ্যম: আসল চ্যালেঞ্জ
গণমাধ্যমের উচিত দেশের স্বার্থকে সবার ওপরে রাখা। ভারতের মতো শক্তিশালী প্রতিবেশী যেখানে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারে আগ্রাসী নীতি গ্রহণ করছে, সেখানে বাংলাদেশি গণমাধ্যমের নিরপেক্ষতা অটুট থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার যদি সত্যিই ভারতের আগ্রাসনের পক্ষে কাজ করে থাকে, তবে তা দেশের জন্য বিপদজনক। কারণ একটি দেশের গণমাধ্যম জনগণের চিন্তাধারাকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে।
প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন
১. কেন করিমগঞ্জের নাম পরিবর্তনের ইস্যুতে প্রথম আলো নিরব?
বাংলাদেশের জনগণ এবং গণমাধ্যমের একটি অংশ যদি এ বিষয়ে সরব হতে পারে, তবে প্রথম আলো বা ডেইলি স্টার কী কারণে এ বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেনি?
২. কেন এ দুটি গণমাধ্যম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীকে অপমান করার মতো নীতি গ্রহণ করে?
সমালোচকদের মতে, এই গণমাধ্যমগুলো পশ্চিমা এবং ভারতীয় শক্তির প্রভাবাধীন। তারা বাংলাদেশের জনগণের বাস্তব চাওয়া-পাওয়ার বিপরীতে অবস্থান নিচ্ছে।
৩. গণমাধ্যম কি নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে?
গণমাধ্যমের কাজ হলো সত্য উন্মোচন করা। পক্ষপাতমূলক রিপোর্টিং বা নিরবতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলো বাংলাদেশের গণমাধ্যম জগতে প্রভাবশালী অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু তাদের নিরপেক্ষতা এবং জাতীয় স্বার্থরক্ষার ব্যাপারে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। ভারতের মতো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের আগ্রাসনের মুখে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে উদ্বেগ থাকাটা স্বাভাবিক।
এ অবস্থায় গণমাধ্যমের উচিত দেশের জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া এবং আঞ্চলিক রাজনীতিতে দেশের অবস্থানকে শক্তিশালী করা। কোনো পক্ষপাতমূলক বয়ান বা নিরবতা যদি এই দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়, তবে তা শুধু গণমাধ্যমের জন্য নয়, বরং দেশের জন্যও ক্ষতিকর।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩০