ছোট বেলা থেকেই খুব আগ্রহ নিয়ে মিলাদ পড়তাম । তখন মিলাদ পড়তাম কেবল তাবারক খাওয়ার লোভে । তাবারক হিসেবে থাকতো জিলাপি, বাতাসা কখনো কখনো সিন্নি । একটু বড় হওয়ার পর হুজুরদের মুখে মিলাদের ফজিলত শুনে শুনে আরও ধর্মীয় ভাব গম্ভীর নিয়ে মিলাদ পড়তাম । কিন্তু গত ৫-৬ বছর এটা থেকে দূরে থাকি । এমনকি অন্য কারো তাবারকও মুখে দেই না । কারণটা খুব পরিস্কার , মিলাদ একটি স্পষ্ট বিদআত ।
একটা সময় হুজুরদের অন্ধ বিশ্বাস করতাম । যা বলতো তাই মেনে নিতাম কিন্তু এখন মনে হচ্ছে গন্ধ শুকা ছাড়া তাদের সব কথা গিলে ফেললে বদ হজম হবেই । তাই যে আমল করি তা সঠিক কিনা যথেষ্ট সীমাবদ্ধতা থাকা সত্তেও নিজ দায়িত্তে সেটার হাদিস বা কোরআনের রেফারেন্স খোঁজার চেষ্টা করি ।
মিলাদ কেন বিদআত এটা বুঝতে হলে আমাদের সবার আগে জানতে হবে বিদআত কি ? বিদআত শব্দের আভিধানিক অর্থ নতুন আবিষ্কার। বিদআত হলো এমন নতুন আবিষ্কৃত ইবাদত যেটাতে অনেক সওয়াব আছে মনে করে পালন করা হয় ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম বলেছেন, “তোমরা (দ্বীনের) নব প্রচলিত বিষয়সমূহ থেকে সতর্ক থাক। কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয় বিদআ‘ত এবং প্রত্যেক বিদআত ভ্রষ্টতা”।[সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৯৯১ ও সুনান আত-তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৭- তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান ও সহীহ বলেছেন।]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম তাঁর এক খুতবায় বলেছেন:“নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহ্র কিতাব এবং সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদের আদর্শ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল (দ্বীনের মধ্যে) নব উদ্ভাবিত বিষয়। আর নব উদ্ভাবিত প্রত্যেক বিষয় বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত হল ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম।[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৩৫ ও সুনান আন-নাসায়ী, হাদীস নং ১৫৬০]
রাসুল (সঃ) এর বিদায় হজ্জের অংশ বিশেষ ‘’ আমাদের কিয়ামত দিবসে জিজ্ঞাসা করা হবে। তোমাদেরও জিজ্ঞাসা করা হবে। তখন তোমরা আমার ব্যাপারে কী বলবে? আমি কি তোমাদের নিকট আল্লাহর দ্বীন পৌছে দিয়েছি? উপস্থিত সাহাবায়েকেরাম উত্তর দিলেন, আমরা সাক্ষ্য দেব যে আপনি আপনার দায়িত্ব পৌঁছে দিয়েছেন। হিত কামনা করেছেন। অতঃপর রাসুল (সা.) আকাশের দিকে হাত তুলে তিনবার বললেন, আল্লাহ আপনি সাক্ষী থাকুন।‘’ [ সহি মুসলিম, সহি তিরমিজি, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে ইবনে মাজাহ]
সুতরাং রাসুল (সঃ) জীবিত থাকতেই ইসলাম আমাদের জন্য পরিপূর্ণ করে দিয়ে গেছেন । ইবাদতের এমন কোন মাধ্যম নেই যা তিনি আমাদের মাঝে প্রচার করে দিয়ে যান নি । আমরা যদি এখন নতুন কিছু যোগ করি সেটা অবশ্যই রাসুল (সঃ) এর হাদিসের বিপরীত হবে ।
এবার দেখা যাক মিলাদ কেন বিদআত । মিলাদ মানে জীবন বৃত্তান্ত নিয়ে আলোচনা । এটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সহিহ হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়নি। রাসুল (সা.) করেছেন, এর কোনো প্রমাণ নেই। তার পরবর্তী সময়ে সাহাবিরা করেছেন এরও কোনো প্রমাণ নেই। এর পরবতী সময়ে তাবেয়িরা করেছেন, এমন প্রমাণ নেই। আইমাতুল ইসতেহাদ ইমাম আবু হানিফা (র.), ইমাম মালেক (র.), ইমাম হাম্বলি (র.) ও ইমাম শাফেয়িসহ (র.) যাঁরা মাশহুর ও প্রসিদ্ধ ওলামায়ে কেরাম ছিলেন, তাঁরাও এটা করেছেন বলে কোনো প্রমাণ নেই। মূলত এই কাজটি একেবারেই নতুন আবিষ্কৃত একটি বিষয়। দ্বীনের মধ্যে এ ক্ষেত্রে রাসুল (স.)-এর কোনো নির্দেশনা নেই। আবার এটা ইবাদতের উদ্দেশে করা হচ্ছে সওয়াবের জন্য। তাই এটি বিদআত হওয়ার ক্ষেত্রে সামান্যতম কোনো সন্দেহ নেই বা সামান্যতম কোনো আপত্তি নেই
এখানে যে বিভ্রাট তৈরি হয়েছে, সেটা হলো মিলাদের যে ফরম্যাট তৈরি করা হয়েছে, এই ফরমেটের মধ্যে দরুদকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখন দরুদকে অন্তর্ভুক্ত করে এই সন্দেহ তাদের মধ্যে জাগ্রত হয়েছে যে, আমরা তো দরুদ পড়তেছি। এখানে অসুবিধার কী আছে! কিন্তু দরুদ পড়ার পদ্ধতি তো রাসুল (সা.) শিক্ষা দিয়েছেন। দরুদ আমরা কীভাবে পড়ব, সেটা কি রাসুল (সা.) শিক্ষা দেননি? তাহলে আমাদের এ কথা স্বীকার করতে হবে যে রাসুল (স.) আমাদের শিক্ষাই দিয়ে যাননি। সাহাবি, তাবেইন, তাবে তাবেঈনরা তাহলে রাসুল (সঃ) কে খুব একটা ভালোবাসতেন না আর আমরা এতই ভালোবাসি যে প্রতিনিয়ত রাসুল (সঃ) এর জীবন বৃত্তান্ত নিয়ে আলোচনা করি ।
সামনে পরীক্ষা মিলাদ পড়াও ,কেউ অসুস্থ মিলাদ পড়াও ,বিদেশ যাচ্ছ মিলাদ পড়াও ,নতুন দোকান খুলেছ মিলাদ পড়াও , নতুন ফ্ল্যাট কিনেছ মিলাদ পড়াও ইত্তাদি আরও কত কি । আমরা না বুঝেই বিদআত দিয়ে এসব শুভ কাজ শুরু করি । মিলাদে আমাদের কোন লাভ না হলেও হুজুরদের অনেক লাভ । দাওয়াতে ভরপুর খাওয়া হলো সাথে কিছু বকশিস । আর তাই ত চরমোনাই ভক্ত, চরসিনা ভক্ত, মাজার পূজারি হুজুররা মিলাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলুক পছন্দ করেন না ।
মিলাদ মাওফিলের প্রধান বক্তা হয়ে ইনকাম করার লোভে এখন এ দেশে ব্যাঙের ছাতার মত বহু পীর বাবার দরবার শরীফ গজিয়ে উঠেছে। তারা তাদের মুরিদ হলে বেহেস্তের গ্যারান্টিও দিয়ে থাকেন (আস্তাগফিরুল্লাহ) । অতছ দুনিয়ায় থাকতে কেবল ১০ জন সাহাবি বেহেস্তের গ্যারান্টি পেয়েছিলেন। পীর বাবা আপনার নিজেরি বেহেস্তের ঠিক নাই মুরিদদের কিভাবে গ্যারান্টি দেন ?
যদি কোন হুজুর লিখাটি পড়ে থাকেন তাহলে সহি হাদিস দিয়ে আমাকে মিথ্যা প্রমান করুন । দয়া করে মিথ্যা হাদিস প্রচার বন্ধ করুন কেননা এ দেশের সাধারণ মানুষ এখনও আপনাদের অন্ধের মত বিশ্বাস করে ।এই বিশ্বাস ভাঙিয়ে টাকা রোজগার করবেন না ।
( সব আলেম এক নয়, অনেক প্রকৃত আলেম আছেন যারা মিলাদ পরেন না বা বিদআত করেন না , তাদের প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা )