somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধি আবিস্কৃত

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
হঠাৎ করেই যেন কবরগুলোর উদয় হলো ।


নামফলকে লিখা রয়েছে: মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ সেনা মুক্তিযোদ্ধাদের কবর/ সমাধিস্থল ! "এখানে শায়িত আছেন সিলেট এমসি রনাঙ্গনে যুদ্ধরত অবস্থায় শহীদ ১ম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকগন। ১৯৭১ সালের চৌদ্দ ডিসেম্বর তারিখে পাক হানাদার বাহিনির সাথে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে 'বি' এবং 'ডি' কোম্পানির সৈনিকগন এখানে শাহাদাত বরন করেন । " তার মানে এটি মোটেও একটি সাধারণ কবর নয় । এ কবর গুলোতে শুয়ে আছেন নাম না জানা অনেক মুক্তিযোদ্ধা । যারা ১৯৭১ এ পাক হানাদারের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে মারা গিয়েছিলেন ।


এখানে লিখা আছে- শহীদ সুবেদার ফয়েজ আহমেদকে মরনোত্তর 'বীর উত্তম' ও শহীদ নায়েক মো: আফসাল আলী কে মরনোত্তর 'বীর বিক্রম' উপাধি দেয়া হয়” ! বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা অবদান রেখেছিলেন তাদের মধ্যে থেকে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন জনকে তাদের অবদানের ভিত্তিতে বীরশ্রেষ্ঠ, বীরউত্তম, বীরবিক্রম ও বীরপ্রতীক উপাধিতে ভূষিত করেন। বীর উত্তম বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বীরত্বের পুরস্কার। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ৬৮ জনকে এবং পরবর্তীতে আরো একজনসহ এখন পর্যন্ত মোট ৬৯ জনকে এই উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। বীরবিক্রম তৃতীয় সর্বোচ্চ উপাধি। মোট ১৭৫ জনকে এই উপাধিতে ভূষিত করা হয়।


ভাবতে গর্বে বুকটি ফুলে যাচ্ছে আমি যে এলাকাটিতে থাকি সেটি ১৯৭১ সালে সরাসরি রনাঙ্গন ছিল । শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে আসে যখন দেখি এই গনকবরগুলোতে শুয়ে আছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান । যার মধ্যে রয়েছেন একজন বীর উত্তম ও একজন বীর বিক্রম ।

এখানে এই কবরগুলোর খবর শুধুমাত্র তৎকালীন সম্মুখ যুদ্ধে এ এলাকাটিতে যারা অংশ নিয়েছিলেন ও বাংলাদেশ সেনাবিহিনিই জানতো । মাত্র কয়েকদিন এ কবর গুলো বাঁধাই করা হয়েছে । বাঁধাই করার আগে বাংলাদেশ সেনাবাহীনি মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে মাটি খুড়ে খুড়ে অনেক হাড়গোর পেয়েছে এবং বিস্তর গবেষণা করা জায়গাগুলো চিহ্নিত করেছে ।

কিভাবে আসবেন: সিলেট শহরের টিলাগড় থেকে আম্বরখানা রোডে মাদানী ঈদগাহের মুখেই সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রোড । এ রোডে আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে । যেমন, সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, জেলা ছাগল উন্নয়ন খামার, টিলাগড় ইকো পার্ক, জেলা দুগ্ধ খামার, যুব উন্নয়ন কেন্দ্র ইত্যাদি । এ রোডে ঢুকে কয়েককদম হাটলেই বড় গনকবরটি দেখতে পাবেন ।

ধারনা করা হয় এখানে সবচে বেশী মুক্তিযোদ্ধা কবর দেয়া / পুতে ফেলা হয়েছে । মাটির সিড়ি করে দেয়া হয়েছে । কবরগুলো ঠিক টিলার মাঝখানে । এর একটু পরেই সামান্য হাটলেই দুগ্ধ খামার । খামারের মেইন গেট দিয়ে ঢুকে অফিসটার সামনেই ছায়া ঘেরা আরো একটা গন কবর ।

আমার চাচা চাকুরী করতেন এখানে সেই সুবাদে এখানে অনেক এসেছি । ক্যাম্পাসে ভর্তি হবার পর বন্ধুদের নিয়ে আড্ডার ছলেও এখানে এসেছি । এরপর থেকে আসবো শ্রদ্ধা নিয়ে, মাথা নূয়ে । দুগ্ধ খামার থেকে বেড়িয়ে আমাদের ক্যাম্পাসের দিকে হাটতে থাকলে উচূ নিচু সবুজ টিলা গুলো আপনার মন ভরিয়ে দিবে । এগুতে এগুতে সিকৃবি টিচার্স-অফিসার্স ডরমেটরীর সামনেই টিলার কোলে আরেকটি গণ কবর !


১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশই যেন একটি গণকবর ছিল । কতো মানুষ কতো জায়গায় গুলি খেয়ে পড়েছিল ইয়াত্তা নাই । স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধের বিরোধীশক্তি এখনো লাল সবুজের পতাকা খামচে ধরে আছে । অথচ আমরা গোল্ড ফিশের মস্তিষ্কধারীরা সব ভূলে গেছি । টাকা, ক্ষমতা, স্বার্থের জন্য আপোষ করছি , চেতনা বিসর্জন দিচ্ছি । হায় বাংলাদেশ !


আমি সিলেট জেলা প্রশাসন, বিভাগীয় প্রশাসন ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনিকে অনুরোধ করবো অতিসত্ত্বর সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একটি মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য কিংবা স্মৃতিফলক বানিয়ে দেয়ার জন্য । আমার বন্ধু তালিকায় অনেক সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোক রয়েছেন । আপানারা প্লিজ আসুন , এ গনকবরগুলো নিয়ে আরো গবেষনা করুন , খবর করুন সারা বাংলাদেশকে জানিয়ে দিন । সামনের ১৬ই ডিসেম্বর আমরা উদযাপন করতে যাচ্ছি মহান বিজয় দিবস । তার আগেই ১৪ই ডিসেম্বর বাংলার মেধাকে হত্যার দিবস । এদিনে আমাদের এলাকাটিতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ন দিন । যেটি এতোদিন আমাদের কাছে অজানা ছিল । ১৯৭১ সালে ১৪ই ডিসেম্বর টিলাগড় আলুতল পাহারতলীতে এক রক্তক্ষয়ী সম্মুখ যুদ্ধে অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছিলেন । যাদেরকে এখানেই সমাহিত করা হয়েছে । প্রিয় সিলেটসহ বাংলাদেশবাসী, আশা করি অন্ত:ত ১৪ ডিসেম্বরে আপনারা শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে এখানে আসবেন ।

জয় বাংলা ! বাংলাদেশ চিরজীবী হোক !
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×