somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রধানমন্ত্রীর কাল্পনিক ভ্রমন !!

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহর এমসি কলেজ রোডের পাশ দিয়ে যাচ্ছে । সদ্য পুড়িয়ে ফেলা এমসি কলেজ হোস্টেল গুলোর পাশ কাটাতেই বিশাল এক তোরন চোখে পড়লো । সেক্রেটারীকে প্রশ্ন।
-এটা কারা করেছে?
-ম্যাডাম, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
-তোমাকে কতোবার না বললাম, ম্যাডাম ম্যাডাম করবা না? আমাকে আপা ডাকবা। যদি আমাকে খুব বুড়ি লাগে তাহলে খালা/চাচী জাতীয় কিছু ডাকতে পারো। এখন গাড়ি ঘোরাও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। ওখানে এক কাপ চা খাব।
-আপনার তো ব্যাস্ত শিডিওল। তাছাড়া এখানে এককাপ বানিয়ে দিই ।
-এতো বেশি কথা বলো কেন? যা বলছি তাড়াতাড়ি করো ।

প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি টার্ন নিল মাদানী ঈদগাহ হয়ে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রাস্তা ।
-এদের প্রধান ফটক কই?
-আপা এদের প্রধান ফটক আরো ভেতরে।
-কিন্তু রাস্তার সাথেই একটা বড় ফটক কিংবা ইন্ডিকেটর থাকা উচিৎ।
-আছে তো, একটা বিলবোর্ডের মতো।
-আমারই চোখে পড়লো না, মানুষ কি দেখবে ?

হঠাৎ প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আটকে গেল সবুজ টিলার দিকে। উঁচু- নিচু, সারি সারি টিলা। মনে অজান্তেই বলে উঠলেন- কি সুন্দর !

এদিকে প্রধানমন্ত্রী ক্যাম্পাসে আসছেন শুনে সিকৃবিতে সাজ সাজ রব পড়ে গেল। ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের তো মাথা গরম। রাস্তাগুলোতো সব ভাঙ্গাচুড়া । থাকবেই তো, কন্স্ট্রাকশনের কাজ চলছে। । যাক মনে মনে একটা এক্সকিউজ দাড় করানো গেল ।

প্রধানমন্ত্রী সিকৃবিতে আসবেন । এককাপ চা খাবেন। এর চেয়ে আর খুশির খবর কি হতে পারে । ইশ একদিন আগেও যদি জানা যেত, সুরুক মিয়া কে বলে একটা ছোট খাট স্ট্যাইজ বানিয়ে ফেলা যেত। সেখানে মহারাণি ভিক্টোরিয়া চেয়ার থাকতো, চা গাছ কেটে নান্দনিক টেবিল বানানো হতো । কনভোকেশন মাঠের কাজটা ও বন্ধ আছে। কনভোকেশন কার্যক্রমটা চালু থাকলে মাঠটা পাকা হয়ে যেত। আর এখানে লাল গালিচা বিছিয়ে মেয়েদের দিয়ে লাল হলুদ ফুল ছিটিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করে নেয়া যেত। ইশ একদিন আগে যদি জানা যেত। ভিসি মহোদয়ের আফসোসের সীমা নেই।

এদিকে দলীয় নেতা, পাতি নেতা, উঠতি নেতা সব নেতারাও কপাল চাপড়াচ্ছেন । প্রধানমন্ত্রী আসছেন। নিজের বড় একটা ফটো লাগিয়ে গট গট করে নিজের নাম লিখে ছোট্ট ক্যাম্পাসের আনাচে কানচে গোটা পঞ্চাশেক ব্যানার না লাগালে প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসা যাবে না। ইশ একদিন আগেও যদি জানা যেত।

প্রধানমন্ত্রী গাড়ি বহর ক্যাম্পাসের মেইন গেট দিয়ে ঢুকেই থেমে গেল । বাঙ্গালিয়ানা সুতি শাড়ি পরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভাঙ্গা রাস্তায় নেমে গেলেন । ভিসি মহোদয়ের নেতৃত্বে একদল শিক্ষক-কর্মকর্তা প্যানেল এগিয়ে আসছে । কয়েকসাড়িতে একতালে হেটে আসছেন তারা। কয়েকদিন আগেও নিজেদের মধ্যে গন্ডোগোল বাঁধিয়েছেন । এখানে এক গ্রুপ ওখানে একগ্রুপ। গ্রুপের ভেতর সাবগ্রুপ । প্রধানমন্ত্রী আসা উপলক্ষে সব একসাথে ! নতুন নিয়োগ পাওয়া টীচারদের মাঝে ছাত্র গন্ধটা এখনো যায় নি। দেখা যায় কয়েকজন নিজেকে জাহির করার জন্য ভিসি স্যারের একদম গা ঘেষে হাঁটছেন ।

প্রধানমন্ত্রী কাছে আসতেই নিজেই বলে উঠলেন- "কেমন আছেন আপনারা ?"
প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নের উত্তর কেউ দিচ্ছে না। মনে হচ্ছে খুশিতে সবাই গলে যাচ্ছে । ৩২টা দাঁত বের করে শরীর টা বাঁকিয়ে কেউ কেউ মোমের মতো গলে গেল। উত্তর আর দেয়া হল না। ভিসি মহোদয় মুজিব পরিবারের সাথে আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট, তাই তিনি জানেন উনাকে ম্যাডাম ডাকা যাবেনা । সে ঝামেলায়ও গেলেন না। মৃদু হেসে প্রধানমন্ত্রীকে বললেন: "আপা চলেন চ্যাম্বারে। চা খাবেন , একটু গল্প গুজব করবেন।" প্রধানমন্ত্রী ছোট্ট হাসি উপহার দিয়ে বললেন: "আপনার চ্যাম্বারে যাবো না। আপনাদের ক্যাম্পাসে ক্যান্টিন নাই? " ভিসি মহোদয় এবার চওড়া হাসি দিলেন: " আছে আপা আছে। এ সরকারের আমলেইতো তৈরী হলো। "

সকলে মিলে বালুর রাস্তা পেড়িয়ে ছোট্ট ক্যান্টিনে ঢুকলো । বাইরে রাখা চেয়ার গুলো তরিঘরি করে ঢুকানো হলো । ভিসি স্যার কয়েকজন ছাত্রকে ডেকে ক্যান্টিন বয়ের নাম জেনে নিলেন । তারপর নিজেই হাক দিলেন: " নবিইইর (নবির) এককাপ চা নিয়ে আসোতো। দেখ আমাদের ক্যান্টিনে কে এসেছে? " ছোট্ট নবির ভীর ঠেলে চোখ টিপ টিপ করে প্রধানমন্ত্রীকে দেখে গেল । এতো বড় মানুষদের ভীরের মাঝ থেকে নবির বেড়ুতে পারছে না। চা আনতে দেরী হচ্ছে দেখে এক পাতি নেতা নবিরকে গিয়ে গালমন্দ শুরু করে দিল, কেউ কেউ আবার মারতে শুরু করলো। প্রধানমন্ত্রী ব্যাপারটি বুঝলেন , পরে তিনি নিজে গিয়ে পাতি নেতাদের ধমক লাগালেন এবং ডাইনিং বয়ের চোখ মুছে দিলেন : "নবির, চা হয়েছে তোমার?" "জ্বি খালাম্মা হইছে, এই নেন।" হাসি মুখে প্রধানমন্ত্রির দিকে চায়ের কাপ ঠেলে দেয় নবির।

ঐ পাতি নেতার ভূলের জন্য অন্যান্য নেতা, উঠতি নেতারা এসে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসে মাফ চায়। কেউ আবার জয় বাংলা শ্লোগান দিতে থাকে। পরিস্তিতি আবার স্বাভাবিক হয়। ক্যান্টিনের ক্যাশের সামনে লিখা আছে : প্রশাসনের নির্দেশে সিগারেট বিক্রি বন্ধ আছে । এটি দেখে প্রধানমন্ত্রী আরো খুশি হলেন। ছাত্রদের কাছে ডেকে বললেন: "তোমাদের মধ্যে কে ড্রাগ ট্রাগ নেয় না তো?" কেউ একজন বলতে চাইছিল- আছে কয়েকজন। কিন্তু বড় নেতা কটমট করে চাইলেন ওর দিকে। রেপুটিশনের ব্যাপার। বড় নেতা এবার আগ বাড়িয়ে বলল: "জ্বীনা লিডার এখানে এরকম কেউ নাই।" প্রধানমন্ত্রী চায়ের কাপে চুমুক দেন আবার জিজ্ঞাস করেন: "কেউ চাঁদাবাজি, গুন্ডামী করো না তো ?" আবার সলাজ উত্তর : না নেত্রী এখানে সবাই দেশকে ভালবাসে, দলকে ভালবাসে , পড়াশুনা করে , রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক কাজ করে। " "ভাল, শোন সরকারের সাফল্য কিন্তু কম না। আমাদের নাম ভাঙ্গিয়ে অনেক ছেলেপেলে টাকা খায়, মারামারি করে। বদনাম কিন্তু সবটা আমার ঘারে এসেই পরে। " এবার তিনি ভিসি মহোদয়ের দিকে তাকান:
- স্যার আপনার মুখটা কালো হয়ে আছে কেন ?" ভিসি মহোদয় অনুযোগের সুরে বলেন:
-আপা ৫০ একর জায়গা দিয়ে হচ্ছে না কিছু।
-কেন আমি না জায়গা বাড়ানোর কথা বলে দিয়েছিলাম, কৃষি ভার্সিটিতে বড় বড় মাঠ না থাকলে কি হয়? সেটা আপনারা পান নাই?
-না পাই নাই।
-ঠিক আছে আমি ঢাকা গিয়ে দেখছি।
-আরেকটা কথা আপা। খুব ইচ্ছা ছিল সমাবর্তন করবো । সবকিছু প্রস্তুতি নেয়াই ছিল। সকল নিয়োগ ও পদোন্নতি কাজও রহস্যজনক কারনে বন্ধ আছে । কতো ছেলে মেয়ের রুটি রুজি আটকে আছে।

প্রধানমন্ত্রী তৎক্ষনাৎ শিক্ষামন্ত্রীর দিকে তাকান। কাজ বাস্তবায়নের জন্য তাগাদা দেন । শিক্ষামন্ত্রী ভিসি মহোদয়ের কাছে এসে হাত ধরেন। কোলাকুলি করার এক পর্যায়ে ভিসি মহোদয়ের কানে কানে বলেন-চিন্তা করবেন না, সব ঠিক হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর চা খাওয়া শেষ হয়। তিনি নবিরকে ডেকে একশ টাকা দিতে চান । নবির পাঁচ টাকা রেখে পঁচানব্বই টাকা ফেরত দিতে চাইলে তিনি সবাইকে ডেকে বলেন: দেখ এই বাচ্চাটির মতো বাংলাদেশের সবাই যদি এরকম হতো তাহলে আর এতো দুর্দশা থাকতো না। সবাই তখন: জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে উঠে। প্রধানমন্ত্রী গাড়ি্তে উঠে হাত নাড়ান ।

** এটি আমার কাল্পনিক পোস্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সিলেট গিয়েছেন । তিনি যদি সিলেট কৃষি বিশ্ববি্যালয়ে যেতেন তাহলে হয়তো এরকমই হতো !
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×