somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অর্ধেকটা টাইগার খাওয়াবো, যাবি??

০১ লা জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



হাসান শাহরিয়ার রনি। রনি নামে ওকে আমরা খুব একটা ডাকতাম না , হাসানই ডাকতাম । বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমরা থাকতাম ক্যাম্পাসের বাইরে , ম্যাস ভারা করে দিয়েছিলো কর্তৃপক্ষ। অবাধ স্বাধীনতা। হাসানদের রুমটার নাম ছিল-গরীবালয়। নামটার জন্য প্রথমেই নজরে চলে আসে হাসান। হাসানের রূমমেট মামুন চলে যাবে এ ক্যাম্পাস ছেড়ে। এক্সটেনশনের সবাই মিলে ওকে একটা ঘড়ি দেয়া হবে ঠিক করলাম। বলতে গেলে তখন থেকেই হাসানের সাথে সখ্যতা। মামুন চলে যাওয়ার পর গরীবালয় ভেঙ্গে আমরা মসজীদ বানাই। হাসান, সা'দ এক রুমে, অশোককে ছেড়ে রায়হানও চলে আসে। তিন জন মহান ব্যাক্তিত্বের সমন্বয়ে রুমের অবস্থা তেরটা, এক্সটেনশনের সবচেয়ে হাওকাও মার্কা নোংরা রুম। ভার্সিটির সাংস্কৃতিক জগতে পা রাখছিলাম মাত্র। টার্নিং পয়েন্ট ছিল আমার রচনা ও পরিচালনায় "জ্বীনের আছর" নাটকটি। শক্তিশালি "ভন্ড পীর" চরিত্রে দারুন অভিনয় করেছে সে। নাটকে ওর হাতেই আমার (জ্বীনের আছরের শিশু) মৃত্যু হয়েছিল।

৮ মাসের অবাধ স্বাধীনতা শেষ হয়, নির্বাচন-পট পরিবর্তন। ব্যাচের সবাই আমরা চলে আসি ক্যাম্পাসের ভিতর। রিয়েল হল লাইফ। আমি এখন যে হলটাতে থাকি তার চার তলার ৪৫৩ নং রূম, রূমমেট আকাশ, সঞ্জয় আর সেই হাসান। রূমের নাম পিকিউলিয়ার হাউজ। পাবলিক ভার্সিটির হল লাইফের মজা কাকে বলে কতো প্রকার ও কি কি সব উদাহরণ সহ পেয়েছি ২৫৩-পিকিউলিয়ার হাউজে। হাসান আর আমার বেডটা সামনা-সামনি ছিল, ঘুমাতে যাওয়ার আগে ও ঘুম থেকে উঠে ওর মুখটাই দেখতাম।

হাসান কন্ঠ ছিল ফাটা বাঁশ। হার্সি ভয়েসে যখন অদ্ভুৎ অশ্লীল গল্পগুলো বলতো আমরা সকলে শিহরিত হতাম। এহেন মজা নেই, পিকিউলিয়ার হাউজে হতো না। হলের অন্যান্যরা মজা যেমন পেত, ভয়ও পেত আমাদের, কারণ আমরা ছিলাম দুষ্টের শিরোমনি । এ রূম থেকেই আমরা ক্যাম্পাসে প্রথম বারের মতো করি-এক্সক্লুসিভ ভিজ্যুয়াল প্রোগ্রাম। হঠাৎ করেই আমার ডিভি হয়ে যায় , আমেরিকা যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর আমি। আমেরিকা নিয়ে হাসান আমাকে অনেক কথা শুনিয়েছিল, কয়েকটা কথা এখনো কানে বাজে (অমুদ্রনযোগ্য)।

ডিভিতে ব্যার্থ হয়ে আমি অনেক বন্ধু (!) দের আসল চেহারা দেখেছি। রুম ছেড়ে নতুন রূমে উঠলাম। নাম জমীদার বাড়ি। রায়হান আর কিশোর। নতুন রূমে এসে জীবনধারা একদম বদলে নিলাম। ক্যাম্পাস ক্যাম্পাস করে সারাদিন মাথায় তুলতাম। সাংবাদিকতা ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গুলোর সাথে নিয়ে আমার নতুন জীবন। এসময় চলার পথে যেসব পাগলদের পাশে পেয়েছি তাদের মধ্যে একজন আমাদের হাসান। ছেলেটা অসম্ভব মেধাবী (কখনো সামনা-সামনি বলা হয়নি)। আমার মতে ক্যাম্পাসের সেরা একজন আইডিয়াবাজ ছিল। কার্টুনের কথা কি আর বলবো। ক্লাসরুমে আঁকা মজার মজার কার্টুন গুলো এখনো আমার চোখে লেগে আছে। নাচও চমৎকার। মেদবিহীন হালকা পাতলা শরীরের হাসান আয়েশার সাথে নেচেছিল বোরকা পড়া মেয়ে পাগল করেছে। পরের বছর মৌসুমির সাথে -বোরকা পার্ট টু। ওফ হোয়াট এ ফানি এন্ড রিদোমিক ড্যান্স।
আমার এখনো মনে পরে সেই রাতগুলোর কথা। এক একটা ড্যান্স উঠানোর জন্য সারা রাত আমি আর হাসান রিহার্সেল করেছিলাম। মেধার সাথে একাগ্রতা নিষ্ঠা না থাকলে আসলে কিছু হয় না..জুনিয়র সজলকে নিয়ে হাসানের সে রাতের ড্যান্সগুলো। হা হা হা ! কতো মজার স্মৃতী।

হাসানের আরেকটা পরিচয় সে একজন ভাল সংগঠক। সিলেটে মৃত্তিকা সংগঠনটি এখন বেশ পরিচিত। রেডিও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এর প্রচার প্রসার দুটিই বৃদ্ধি পেয়েছে। মৃত্তিকা সংগঠনটি দাঁড় করাতে সবচে বেশি কাজ করেছে হাসান। সুস্মিতার অবদানও অনস্বীকার্য। আমার এ বন্ধু দুটি না থাকলে অনেক কিছুই হয়তো হতো না। যাই হোক হাসান আর আমি মৃত্তিকা, ধুমকেতু প্রভৃতি ম্যাগাজিন বের করতে রাতের পর রাত জিন্দাবাজারের প্রেসগুলোতে কাজ করেছি। দেখা হলে তোফায়েল ভাই এখনো হাসানের কথা জিজ্ঞেস করে। যে শ্লোগানটি (মর্ত্যের পৃথিবীতে, শেকড়ের সন্ধানে) মৃত্তিকা চলছে, সেটি ওর মাথা থেকেই আসে।

ভাল গল্পও লিখতে পারতো হাসান। ফেইসবুকে সরব থাকলেও, যার হাত ধরে আমি ব্লগে আসি সে হলো রায়হান (চাষাভূষা) , পরবর্তীতে হাসান (বয়ানবাজ) যোগ দেয় আমাদের সাথে সামু ব্লগে। আমাদের মধ্যে যে কেউ একাট লেখা লিখলে জোড় করে পড়াতাম। এক কাপ চা এর বিনিময়ে একটা লাইক একটা সাদা শলাকার বিনময়ে একটা কমেন্ট। হা হা।

সেবার হঠাৎ করেই রাজশাহী চলে গেলাম হাসানের বাসায়। রাত জেগে ঢাকা, সাদ আলমগীর ভাই, হাসান, আমি। তারপর সকালে দৌড়ে কোনমতে হাসান আর আমি সিল্কসিটিতে উঠেছিলাম। সারা রাস্তা দাড়িয়ে দাড়িয়ে রাজশাহী। আন্টির হাতের কলাই ডালের রুটি, শুধু নামই শুনতাম তুই শেষ পর্যন্ত আমাকে খাওয়ালি। হাসানের প্রিয় সারা রাজশাহী শহর ঘুরে ঘুরে দেখেছি এ গলি থেকে ও গলি। ভূলার নয় সেদিনের কথা।

রাত জেগে মুভি দেখা। সিলেট শহর ঘুরে বেড়ানো সাথে ড ডট ডট। পকো পকো ছু ছু। এর মিনিং গুলো আমরাই একমাত্র বুঝবো, পাঠকরা বুঝবেন না । আমার তথাকথিত গার্লফ্রেন্ডদের নিয়ে তোর কতো কটু কথা, তোর গার্ল ফ্রেণ্ড কেও খোচা মারতে ছাড়িনি । কি পোলাপাইন্যা কাজ কারবার । কারনে অকারনে তোর সাথে কতো ঝগড়া করেছি হাসান। তুই যখন রুমের দড়জায় এসে বলতি-আমি বালুচর যাচ্ছি, কেউ গেলে অর্ধেকটা টাইগার দিব । তখন কি আর রাগ থাকতো। টাইগার খেয়ে খেয়েই তো ভুড়িটা বানিয়েছি। সুক্ষ বুদ্ধির ছিলি বলে তোকে আমি প্যাচম্যান ডাকতাম । তোর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি দোস্ত। সময়ের সাথে আজ আমরা অনেক বড়। কেউ আর আগের মতো নেই। আমাদের গ্যাংটাও ছিন্ন বিচ্ছিন্ন। আমি আগের চেয়ে আরো বেশি ব্যস্ত। রং ঢং আর ভাল লাগে না । কাজ ছাড়া বালুচরও যাই না , একটু আগে বালুচর যেতে মন চাইছিল। সবাই বিজি, বলার মতো কাউকে পেলাম না। তুই থাকলে বলতাম- অর্ধেকটা টাইগার খাওয়াবো, যাবি??
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×