আমি আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি না, কাজেই আপনার সাথে ব্যক্তিগত রেষারেষি থাকার প্রশ্নই আসে না। আমি মুলত আপনার চিন্তাচেতনা বা আপনার লেখার বিপরীত মনোভাব পোষন করি।জানি উনি আমার মত অধমের লেখা পড়বেন না। তবু আশা রাখি তিনি পড়বেন, আমার প্রশ্নগুলোর উত্তরও দিবেন।
১, আল্লাহর উপর আমার পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে, তথাপি জামাত-শিবিরের দৃষ্টিতে আমি নাস্তিক। কারন আমি শাহবাগের আন্দোলনকে সমর্থন করি। ভেবেছিলাম, ইসলাম ধর্মের এই ভ্রান্ত ধারক-বাহকেরা আপনার লেখার উত্তর দিবে। কিন্তু যাদের দৌড় মওদুদী, গো-আজম-সায়ডী পর্যন্ত তারা উত্তর না দেয়ায় অবাক হইনি।
আপনার লেখায় সব-সময় ইসলাম ধর্মের বিরোপ মনোভাব প্রকাশ পায়। সামান্যতম শ্রদ্ধাবোধ থাকে না। কেন জানি না, পায়ে পারা দিয়ে ঝগড়া করার একটি অদম্য ইচ্ছা থাকে। মার্ক টোয়েন বলেছেন,
‘তোমরা নির্বোধের সাথে তর্কে জরিয়ো না”
ধর্মের ব্যাপারে আপনাকে আমার নির্বোধের থেকেও এক ডিগ্রী নিচে মনে হয় ।তারপরেও আমি চেষ্টা করেছি সাধারনভাবেই আপনার ধারনাকে ভুল প্রমান করার।
২, যেহেতু আপনি ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করেন না, তাই ইসলামিক বিষয় বাদ দেয়াই শ্রেয় মনে করলাম। তাছাড়া আমি মাদ্রাসা কিংবা মক্তবে পড়াশুনা করিনি, তাই আমি ইসলামী দৃষ্টিকোন থেকে বিশ্লেষন করতে পারব না। যদিও অনেকে আলিম পাশ করে নামের সাথে আল্লামা যোগ করে, আমি তাদের দলে নই।
আপনার লেখার প্রসংগেঃ
১, আপনি আপনার লেখায় “মুহাম্মাদানুভুতি শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
>> ধরুন আপনার বাবার নামের সাথে আমি লিখলাম লুইচ্চা । নিশ্চয় তা আপনার জন্য সুখকর হবে না। আপনি অপমানিতবোধ করবেন(যদিও আপনার চরিত্র নিয়ে আমার সন্দেহ আছে) ,যদিও আপনার বাবা পতিতালয়ে গিয়েছেন কি যান নি?? লুইচ্চা ছিলেন কিনা সে সম্পর্কে আমার কাছে কোন প্রমান নেই।
আবার উনি যে লুইচ্চা নন, ভাল মানুষ সে সম্পর্কেও আপনার কাছে কোন প্রমান নেই। কারন আপনার জন্মের আগে বা পরে সব সময় তার সাথে থাকা আপনার পক্ষে সম্ভব নয়। তারপরেও তাকে সবার কাছে ভালমানুষ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন, সেটার কারন তার প্রতি আপনার বিশ্বাস।
>>এখন বলুন, যে মানুষকে আমরা আমাদের নিজের বা পরিবারের থেকেও বেশি ভালবাসি, সেই মানুষটির নাম নেওয়ার সময় সঠিকভাবে না নিলে আমাদেরও কষ্ট হয়, আমরা অপমানিত হই। কারন উনি আল্লাহর নবী ছিলেন এটা আমার বিশ্বাস।
কাজেই আমি যখন আপনার বিশ্বাসকে শ্রদ্ধা করছি, একজন সামাজিক জীব হিসেবে আমার বিশ্বাসকে শ্রদ্ধা করা আপনার কর্তব্য।
২, রাষ্টের নাগরিক হিসেবে আপনি নানা সুবিধা ভোগ করেন। বিনিময়ে রাষ্টও চায় আপনি তার আইন-কানুন মেনে চলবেন। কিন্তু আপনি আমার ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত হেনে সংবিধানের ৪১অনুচ্ছেদ এর ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন।সুতরাং একজন দায়ীত্ববান নাগরিক হিসেবে, রাষ্টের আইন অমান্য করার যুক্তিকতা আমার বোধগম্য হয় নি। রাষ্টের আইনের প্রতি ন্যুনতম শ্রদ্ধা থাকলে আপনি, এটা করতে পারতেন না।
৩, আপনি ফেইজবুকে বিভিন্ন সময় হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)এর নব্যুয়াত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আপনি এর যুক্তিক কারন জানতে চেয়েছেন। ভাল কথা, জানার ইচ্ছা থাকলে একজন ভাল আলেম এর কাছে যান। তবে বিশেষ প্রশিক্ষন প্রাপ্ত ছাগুদের কাছে না যাওয়াই ভাল, কারন তারা আপনাকে মওদুদী-গোলাম-নিজামীর যে লেখা দিবে তাতে ভুলের সংখ্যা-ই বেশি।
আপনি ব্লগে এসে ল্যাদালে কেউ আপনাকে জানাবে না। হয়ত কিছু বিকৃত-মস্তিস্কের মানুষ আপনার লেখার বাহবা দিবে, যদি সস্তা বাহবা চান তাহলে ব্লগে যতখুশি ল্যাদান কিন্তু ইসলাম নিয়ে মন্তব্য করবেন না।
৩, হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহ-তালার প্রেরিত নবী ও রাসুল। এক্ষেত্রে আমরা তাকে বিশ্বাস করি। আপনি এর বৈজ্ঞানিক-যৌক্তিক কারন খুজেছেন। কিন্তু আমরা কোন ধরনের কারনের ধার না ধরেই তাকে আল্লাহ-তালার রাসুল হিসেবে বিশ্বাস করি।
>> আপনি যাকে বাবা-মা বলে ডাকেন, তারা যে আপনার বাবা-মা তার প্রমান কি?? জন্মের সময় আপনি নিশ্চয় তাদেরকে চিনতে পারেন নি এবং সেটা সম্ভবও নয়।
আপনার বাবা যে সত্যি আপনার বাবা, তারও প্রমান কি?? আপনি নিশ্চয় বাবার পরিচয় জানতে DNA test করেন নি।
মায়ের পেট থেকে বের হয়েই নাড়ী কাটার পুর্বেই, মায়ের সাথে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন নি।
আপনার বোন এর জন্ম যে আপনার বাবার দ্বারাই হয়েছে তারই বা প্রমান কি?? আপনার মা যে অন্যকারও সাথে কিছু করেন নি এবং তার ফলে যে আপনার বোনের জন্ম হয়নি তারই বা প্রমান কি??
উপরোক্ত ক্ষেত্রে আপনার কাছে আপনার বিশ্বাসই আপনার ভিত্তি। কোন দলিল দস্তাবেজের ধার ধারেন না।তদ্রুপ আল্লাহ, হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ও ইসলামের বিষয়ে আমাদেরও দলিল বা প্রমানের ধার ধারি না।
অতএব, আপনার কাছে অনুরোধ, আমরা যেমন আপনার বিশ্বাসের ব্যাপারে কোন বিরোপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করিনা, আপনিও আমাদের বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বিরোপ মনোভাব প্রকাশ থেকে বিরত থাকুন।
আপনার উপর হামলা প্রসংগেঃ
একজন মানুষ হিসেবে, আপনার উপর হামলার সমর্থন করতে পারি না। কিন্তু কোন ধর্ম বিদ্বষীর শাস্তি আশা করতেই পারি।তাই নয় কি?? আপনার উপর হামলা হয়েছে, তা আমার মনে কোন প্রভাব ফেলেনি। কারন :
ক, দেখুন, রাজাকার বা যুদ্ধাপরাধীদেরকে আমরা (আপনি+আমি+সবাই) পশুর সাথে তুলনা করি।(যদিও পশুরা তাদের থেকে অনেক উত্তম)তাদের বিচার চাই, সেক্ষেত্রে তাদেরকে বিচার বহিঃভুত হত্যাকান্ডের কথাও বলা হয়ে থাকে।যেমনঃ শাহবাগে এনে ছেড়ে দেও, তারপর দেখ কি করি ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থাৎ অপরাধীদের শাস্তির ক্ষেত্রে শাস্তি হওয়াই আসল কথা, সেটা কিভাবে হল তা দেখার বিষয় বা সময় খুব কম লোকেরই আছে। অপরাধী মারা গেলে কারও কিছু যায় আসে না।
খ, আমরা অনেক সময়ই দেখি, চোর-ডাকাত এককথায় অপরাধীদের গনধোলাইয়ে মারা যায়, চোর-ডাকাত এর আত্মীয় বিচার চাইতে পারেনা বা তাদের হত্যার বিচার করা হয় না। আপনি নিজেও অপরাধী, তাই আপনিও বিচার চাইতে পারেন না। আপনার অপরাদ সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদ ভংগ করা, (বাংলাদেশ) দন্ডবিধির ২৯৫ক ও ২৯৮ ধারা ভংগ করা। এখন আপনিই বলুন গনধোলাই আপনি না পেলে আর কে পাবে???
গ, আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে দন্ডবিধির ১৫৩ক ধারা ভংগ করে চলেছেন। সামাজিকভাবে দুটিশ্রেনীর বিরোদ্ধে সত্রুতার সৃষ্টি করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন।
ঘ, মানবাধিকার আর মানুষের প্রতি আচরনের কথা বারবার বলে আসছেন। কিন্তু আপনি মনে হয় ভুলে গেছেন যে, মানবাধিকার শুধুমাত্র তাদেরই প্রাপ্য যারা রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। অর্থাৎ আইন কানুন মেনে চলে। আপনি যেহেতু এগুলোর তোয়াক্কা করেন না, সেহেতু আপনি কোন মুখে মানবাধিকারের দোহাই দেন???
আপনার প্রতি অনুরোধ, আগে আপনি অপরাধ করা থেকে বিরত থাকুন, মানুষও আপনার প্রতি অপরাধ করা থেকে বিরত থাকবে। যদি তারপরেও কেউ আপনার প্রতি অন্যায় করে, তবে আইন অনুযায়ী আপনি প্রতিকার পাবেন।
আপনার কাছে জিজ্ঞাসাঃ
১, আপনি পরকাল বা মৃত্যুর পরের জীবন সম্পর্কে বিশ্বাস করেন না।
>> মোঃ করিম খুব ভাল মানুষ। তিনি কোন অন্যায় করেন না। তিনি ঘুষ নেন না তাই আর্থিকভাবে অসচ্ছল।খুব কষ্টে অথচ সৎ ভাবে জীবিকা নির্বাহ করেন।
>>মোঃ খলিল খুব খারাপ মানুষ। তিনি ঘুষ নেন, রাতের বেলা বৌকে মার-ধোর করেন।তিনি অন্যায় কাজ করেন কিন্তু ধরা পরেন না। অসত এই লোক আর্থিকভাবেও সচ্ছল ভাবে জীবন-যাপ্অন করেন।
এই দুই ব্যক্তির মৃত্যুর পর যদি তাদের কর্মের বিচার না হয়, তাহলে সৎ থাকার লাভ কি?? আর সবাই যদি অসত হয় তাহলে রাষ্ট্র ব্যবস্থা কি টিকবে???
২, আমরা জানি, হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) একজন নিরক্ষর মানুষ ছিলেন। যদি কুর-আন তার উপর নাযিল না হয়, তাহলে তার মত একজন সাধারন মানুষের পক্ষে কিভাবে আল- কুর-আনের মত ভাষা মাধুর্য সম্পন্ন গ্রন্থ রচনা করলেন, যাতে কিনা কোন ভুল নেই। আজ এতদিন পরেও কেউ কুর-আনের ব্যাকরণ বা স শব্দ ব্যবহারের ভুল ধরতে পারল না।
আপনি শিক্ষিত মানুষ, দয়াকরে জাতির স্বার্থে আপনিও কুর-আনের মত একখানা গ্রন্থ রচনা করে বাঙ্গালী জাতিকে ধন্য করছেন না কেন???
সবশেষে বলব, সস্তা খ্যাতি অর্জনের জন্য অন্যের বিশ্বাস বা শ্রদ্ধার ধর্মকে লক্ষ্য বস্তুতে পরিনত করবেন না।