somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেহরক্ষী !!! একটি ব্যর্থ নামকরণের উপাখ্যান !!! হওয়া উচিত ছিলো “শিয়ালের কাছে মুর্গি বর্গা” !!!

১৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হলে গিয়া কড়কড়ে ১০০ টাকা নোট খরচ কইরা সিনেমা যখন দেখলুম ই, তখন একটা রিভ্যু ও লিখা ফালাইলাম :P

কাহিনীর শুরুতেই নতুনত্ব, সন্ত্রাসীর হাতে ন্যায়পরায়ণ পিতার মৃত্যুর মাধ্যমে নয়, বরং টপ টেরর আসলামের হাতে সেমি-টপ টেরর সিজারের ভাইয়ের মৃত্যুর মাধ্যমে সিনেমার সূচনা !!! যদিও সিনেমার কাহিনীতে সন্ত্রাসী কর্তৃক ন্যায়পরায়ণ পিতার মৃত্যু কথা বর্ণিত আছে, তারপরও পরিচালকে অসংখ্য ধন্যবাদ দৃশ্যটি চিত্রায়ন না করার জন্য !!!

আর তারপর ই দৃশ্যপটে রাতের রানি সোহানার আগমন। সোহানার পিতা কাজী হায়াত রোগে ধুকে ধুকে মউতের দিন গুণতেছে, তাকে বাঁচানোর জন্য প্রয়োজন ৫ লক্ষ টাকা। তাই প্রিন্সেন্স ববি খ্যাত সোহানা বিভিন্ন হোটেলে ধেই ধেই করে নেচে গেয়ে টাকা রোজগার করে। সোহানার নৃত্য-লহরীতে মরা লাস ও জিন্দা হয়ে যায়, আর ভিলেন তো কোন ছাড়। অতএব যা হওয়ার তাই, ভিলেন কর্তৃক নায়িকারে প্রেম নিবেদন। তবে ভিলেন আসলাম নিতান্তই জেন্টলম্যান, সে নায়িকার মন চায় কিন্তু দেহ চায় না, অপরদিকে রাতের রানী সোহানা বড়োই সেয়ানা, সে দেহ দিবে তবু মন দিবে না। অতঃপর “দেহ ও প্রেমের” এই দ্বন্ধের মধ্য দিয়েই সিনেমার কাহিনীর সূচনা !!!

ভিলেন পাওয়া গেলো, নায়িকা পাওয়া গেলো, কিন্তু নায়ক কই?
নায়েক জন্য অপেক্ষা। গভীর রাত, ছাদের কিনারায় নায়ক দাঁড়িয়ে উলটো করে, পরনে রূপা স্যান্ডো গেঞ্জি, দর্শক টান টান উত্তেজন নিয়ে অপেক্ষায়.........হটাত নায়ক ঘুরলো, দর্শক অস্ফুট স্বরে চিৎকার করে উঠলো, হায় খোদা, এতো দশাই-মার্কা ভূড়িসহ কাজী মারুফ ওরফে তীব্র, যার স্যান্ডো গেঞ্জির নীচ দিয়ে ভুঁড়িটা আকু-পাকু করছে বের হয়ে আসার জন্য !!! প্রথম দর্শনে ই হ্যান্ড-সাম ভিলেন মিলনের গ্লামারের কাছে নায়ক মারুফ পরাজিত।

সোহানাকে বন্দী করে নিজের বাগান বাড়িতে নিয়ে এসেছে আসলাম। আর পাহারার জন্য নিয়োগ করেছে বড়ি-গার্ড তীব্র। যেভাবেই হোক সোহানাকে এই বন্দীদশা থেকে মুক্ত হতে হবে। আর সেই জন্য নায়ককে পটাতে বদ্ধ পরিকর সোহানা, সম্বল বলতে তার শুধু দেহখানি, বুকে একটা ই মূলমন্ত্র, “এই মাইয়া মানুষ যদি দেখাইতে চায় তা হলে পুরুষ মানুষ কি না তাকায়ে পারে”। কিন্তু নায়িকার সকল ছলা-কলা ই ব্যর্থ !!! হিমালয়ের বরফ গলে যায়, কিন্তু নায়কের পাষাণ হৃদয় তো গলে না। পরিশেষে দর্শক যখন নায়কের পুরুষত্ব নিয়ে খানিকটা সন্দিহান, তখনই নায়কের পাষাণ হৃদয় গলাতে আল্লাহর কুদরতের বৃষ্টি। নায়ক তীব্র সব কিছু অগ্রাহ্য করতে পারে, কিন্তু নায়িকার বৃষ্টি-ভেজা শরীর অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা তার নাই। ফলস্বরূপ, নায়ক নায়িকার প্রেম শুরু, আর বড়ি-গার্ড দেহরক্ষী থেকে দেহ-ভক্ষক এ রূপান্তরিত !!!

নায়ক নায়িকার কঠিন প্রেম চলতেছে। নায়ক তীব্র ঠিক করে সোহানাকে সে উদ্ধার করবে মিলনের নাগপাশ থেকে, ভঙ্গ করবে তার বডিগার্ড জীবনের প্রতিজ্ঞা। তাই ভিলেনের জান সোহানাকে নিয়ে চম্পট দেয়ার জন্য ঘর থেকে বের হয় সে। কিন্তু পুরা সিনেমায় জেন্টলম্যান মিলন এই প্রথম করে বিরাট অভদ্রের মতো কাজ, মোবাইলের ফোনে এ যুগে কোনো কার্টেসির ধার না ধাইরা একটা মিলকল পর্যন্ত না মাইরা সে হাজির হয় তীব্রর বাগানবাড়িতে। তারপর যথারীতি নায়ক ও ভিলেন কর্তৃক চিরাচরিত মারামারির সূচনা। মারামারির প্রথম ফেজ এ নায়ক মাইর খাইইয়া ভুত।

বাংলাদেশের মানুষ রোবোকপ দেখেছে তীব্রকে দেখে নি। রোবোকপের শরীরের বাইরের কঠিন আবরণ তাদের গুলির থেকে রক্ষা করত। কিন্তু তীব্র তো আর যন্ত্র মানব নয়, সে প্রেমিক পুরুষ, নিজের রক্ত মাংসের দেহ দিয়ে সে গুলি আটকায়। পুরা সিনেমায় কমপক্ষে গোটা পাঁচেক গুলি হজম করে, ৫০ ফিট উঁচু ব্রিজের থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নীচে পড়েও যেভাবে সে ঘোড়ার মতো দৌড়া ঝাপ করলো আর নায়িকাকে উদ্ধার করলো, তা তে বাংলাদেশ এ যে আর অন্য কোনো সুপার হিরোর ভাত নাই এইটা নিশ্চিত।

সিনেমার একটি অতি দুর্বল দিক হলো রমজান চাচার গুলিতে মৃত্যুবরণ। সদা হার্টএট্যাকে পটু বাপ চাচার বয়সী এই চরিত্রগুলো হার্ট এট্যাক না করে নির্মম ভাবে গুলি-বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ কোনো মতেই মেনে নেয়া যায় না।

সামাজিক অ্যাকশন ধর্মী সিনেমা, অথচ একটু ঠাট্টা মশকরা থাকবে না, দর্শকদের একটু কাতুকুতু দিয়ে হাসানোর বন্দোবস্ত থাকবে না, তা কি করে সম্ভব। অতএব, দর্শকদের হাসির জোয়ারে ভাসানোর জন্য দুইজন ভাঁড় ও তাদের যৌথ প্রেমিকা ময়নার আবির্ভাব। জন্মের পর থেকে এখন পর্যন্ত দেখা যেকোনো বাংলা সিনেমার ভাঁড়দের সাথে যাদের বিন্দুমাত্র পার্থক্য নাই। পুরা সিনেমার মধ্যে এই ভাড়দ্বয় ই মনে হয় দর্শকের সব থেকে বিরক্তির উদ্রেক ঘটাইছে।

সিনেমার শুরুর মতো শেষে ও পরিচালক সবার থেকে আলাদা। দর্শক যখন একটি রোমান্টিক এন্ডিং সং শুনার অপেক্ষায়, তখনই পর্দায় বড় বড় করে লিখা “সমাপ্ত” !!!

বি.দ্র. রিভ্যুর শেষে কিছু কথা না কইলে ই নয়। সিনেমার প্রিন্ট ভাই মাশাল্লাহ পুরাই ক্রিস্টাল ক্লিয়ার ছিলো, চোখের উপর যেমন কোনো চাপ পরে নাই, তেমনি ক্রিস্টাল ক্লিয়ার সাউন্ডের কারণে কানের উপর ও কোনো অত্যাচার হয় নাই। পরিচালক এই ব্যাপারে আসলেই ব্যাপাক টাকা খরচা পাতি করছে। আর সিনেমার গান গুলা আসলেই সুন্দর আছিলো, আই লাভ দ্যউজ সংগস :)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৩
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×