আমি তাকে টেস্ট করতে জিগাসা করলাম "আচ্ছা আনুভামনি বলোতো তুমি কি কি বই পড়তে পারো।" সাথে সাথে সে তার বর্ণমালা বই নিয়ে এলো। আম জাম কাঁঠাল লিচু থেকে তিমি মাছ পর্যন্ত সে পড়ে গেলো গড় গড় করে বর্ণগুলোর সঠিক পরিচয়ের সাথে সাথে। আমি বিস্ময়ের উপর বিস্ময়ে তখন অভিভুত! আমি বললাম "তুমি তো পড়তে জানোনা, কি করে পড়লে?" তার সোজা সাপ্টা উত্তর "লেখাগুলো পড়তে জানিনা কিন্তু ছবিগুলো তো পড়তে জানি। "স্বরে অ" ছবিটাও পড়তে জানি, "ক" ছবিটাও পড়তে জানি। আমার তখন ভীমরি খাবার দশা। আরে তাই তো ছবিগুলো পড়া তো লেখাগুলো পড়ার চাইতে অনেক সোজা।
পাশের বাড়ির আরেক পিচ্চির কথা বলি। তার সকাল সন্ধ্যা হারমোনিয়াম নিয়ে সঙ্গীত সাধনার যন্ত্রনায় আমাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। কিন্তু সে এইবয়সেই গান গায় অদ্ভুত সুন্দর। টিভিতে দেখে খুব স হজেই যেকোনো গান সে আয়ত্ব করে ফেলে।কিন্তু তার মায়ের অভিযোগ মেয়েটা দিনরাত গান গান করে পড়ালেখা কিছুতেই মন দেয়না। আমার ভেতর এ্যাডভেন্চারের নেশাটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। আমি তার মাকে বললাম রোজ আমার কাছে এক ঘন্টা করে ওকে পাঠাতে।
প্রথমদিন পড়াটা ছিলো এমন। বাংলাদেশের জাতীয় ফল, ফুল, মাছ , পশুর নাম।
আমি ওর বইটা দেখে নিয়ে বন্ধ করে পাশে রেখে দিলাম আর হারমোনিয়াম টেনে নিলাম। সাথে সাথে তার ম্রীয়মান মুখমন্ডলে আনন্দের ঝিলিক। বললাম "চলো গান গাই।"
সূরে সূরে প্রশ্ন করলাম তাকে।
বাংলাদেশের জাতীয় ফুলের নাম বলো দেখি কি ? বলো দেখি কি?
উত্তরটাও জানিয়ে দিলাম সূরে সূরেই
শাপলা আমাদের জাতীয় ফুলের নাম,আমি জেনেছি আমি জেনেছি।
তারপর ক্রমান্নয়ে
বাংলাদেশের জাতীয় ফলের নাম বলো দেখি কি ? বলো দেখি কি?
কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফলের নাম আমি জেনেছি আমি জেনেছি।
মেয়েটার এসব শিখতে লাগলো ৫ মিনিট।
এরপর তাকে লিখতে হবে রচনা। তাও আবার কাঠখোট্টা টপিক "শীতকাল"নিয়ে।
আমি ভেবে চিন্তে ওর জন্য একটা শীতকাল গান রচনা বের করলাম
শীত এসেছে শীত এসেছে হেসে হেসে
পৌষ আর ফাল্গুনে বাংলাদেশে
পিঠা পুলি রসেরি গন্ধে ভেসে
কুয়াশার চাদরে ভেসে ভেসে।
টুপি মোজা দস্তানা আর সু্য়্যেটার
কোট টাই পরে চলো শীত করি পার।
মজার পিকনিকে বেড়িয়ে আসি
শীতকালটাকে তাই ভালোবাসি।
মেয়েটার সেটা শিখতে লাগলো ১০ মিনিট আর রচনা লিখতে আরো দশ মিনিট । ব্যাস পড়া শেষ।
আনুভা পিচ্চি আর এই মেয়েটা দুইভাবে শিখে। একজন চোখে দেখে দেখে আর একজন কানে শুনে শুনে। তারমানে জোর করে ঘাড় ধরে শিখালেই হলোনা। শিক্ষা যদি হয় আনন্দের আর যার যার বিশেষ ক্ষমতা অনুযায়ী তাহলে তাতে সাফল্য আসে বেশী। অল ইজ ওয়েল!
আমাদের সবার ভেতরে কিছু সুপ্ত গুণাবলী আছে। যার সন্ধান অনেক সময় আমরা নিজেরাই পাইনা। চারিদিকের পারিপার্শ্বিকতার চাপে, সমাজ ব্যাবস্থার নিয়মকানুন গুলো মানতে গিয়ে সেসব আমাদের ভেতরেই অনেক সময় হারিয়ে যায় চিরতরে।
যদি খুঁজে পাওয়া যায় বা বের করে আনা যায় আমাদের ভেতরের সেই সব সুপ্ত গুনাবলীগুলো তাহলে জীবন হয়তো হয়ে উঠতে পারে আরো সহজ সুন্দর ও আনন্দময়।
ছোট থেকে বড় হতে হতে আমাদের মাঝে একইভাবে শেখার মজাটা একই রকম থাকেনা। বিভিন্ন বয়সে ভালোলাগা বদলায়, ইন্টারেস্ট পরিবর্তন হয়।
ছোট বাবুরা প্রিস্কুল এইজ অর্থাৎ ৫/৬ বছর পর্যন্ত দেখে দেখে শুনে শুনে শেখে তারা নিয়ম কানুন লজিক বা গানিতিক সমাধান তেমন মানতে চায়না। কিন্তু ধীরে ধীরে বড় হবার সাথে সাথে আগ্রহ পরিবর্তন হতে থাকে। ঝোঁক বাড়তে থাকে খেলাধুলা, মিউজিক আর গানিতিক বিষয়গুলোর দিকে।
মানুষের ভেতরের যে সুপ্ত গুণাবলীগুলো আছে বলে জানা যায় তা হলো:
Linguistic /word smart (আমি বাংলায় নাম দিয়েছি ভাষাবিদ/ ভাষা পন্ডিৎ)
Logical-mathematical / Number smart (গণিতবিদ/ যুক্তিবিদ)
Spatial / picture smart( শিল্পী)
Kinesthetic/body smart ( খেলোয়াড়/ নৃত্যশিল্পী)
Musical/music smart ( গায়ক বা বাদক)
Interpersonal/people smart ( জনদরদী/রাজনিতীবিদ/সমাজকর্মী)
Intrapersonal /myself smart ( অন্তর্মূখী বা শামুক মানুষ)
Naturalist/nature smart ( প্রকৃতিবিদ)
ব্যাপারটা আমার কাছে খুবি মজার লাগে। আমাদের ভেতরের এই সুপ্ত গুণাবলীগুলো লুকিয়ে থাকে আমরা তা বেশীভাগ সময়ই জানতে পাইনা এটা ভেবে।দুঃখও লাগে একটু অবশ্য। কারণ আমরা তা আমাদের বাচ্চাদের ভেতরে দেখবার চেষ্টা না করেই জোর করে নিয়ম করে প্রথাগত পড়ালেখায় বাধ্য করি।
এ সম্পর্কে আরো অনেক জানা যাবে নিচের লিন্কটি থেকে।
Click This Link
এমনকি যে কেউ চাইলে নিজের ইন্টেলিজেন্সিও টেস্ট করে দেখতে পারে। টেস্ট টা খুবই মজার। ঝটপট টেস্ট করে দেখুন কি আছে লুকিয়ে আপনার ভেতরে আর সময় নষ্ট না করে টেনে বের করুন আপনার সুপ্ত প্রতিভা। শেখার , জানার আর কর্মের শেষ নেই যতদিন বেঁচে থাকি আমরা এই পৃথিবীতে।
Click This Link
সবার শেষে আমি আর একটা জিনিস বলতে চাই, উপরে উল্লেখিত বিভিন্ন গুণাবলী বা বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন মানুষগুলো জীবনে কি কি ক্ষেত্রে ভালো করতে পারে বলে আশা করা যায়।
Linguistic /word smart ( ভাষাদক্ষতা)
বিতার্কিক
লেখক
সাংবাদিক
কৌতুক লেখক
উপস্থাপক
গল্পকার/ গল্পকথক / কথক পলাশ
Logical-mathematical / Number smart (গাণিতবিদ/ যুক্তিবিদ বা ম্যাভেরিক ভাই)
গণিতবিদ
কম্পুটার প্রোগামার
গ্রাফিক ডিজাইনার
নক্সাবিদ
Spatial / picture smart( শিল্পী)
শিল্পী
মডেল মেকার
ভাস্কর
সেট ডিজাইনার
( এই গোত্রভুক্ত কোনো ব্লগারের নাম জানা নেই, নিজের নাম ছাড়া )
Kinesthetic/body smart ( খেলোয়াড়/ নৃত্যশিল্পী)
এ্যাথলেট
নৃত্যশিল্পী
অভিনয়শিল্পী
ব্যয়ামবিদ
কুস্তিগীর
(দুরন্ত স্বপ্নচারী, শাহরিয়ার, নীলন্জন (কুস্তিগীর))
Musical/music smart ( গায়ক বা বাদক )
গায়ক
বাদক
মিউজিক কম্পোজার
( নস্টালজিককে এই গোত্রভুক্ত করা যায় বলে মনে হচ্ছে)
Interpersonal/people smart ( জনদরদী/রাজনিতীবিদ/সমাজকর্মী)
দলনেতা
সমাজকর্মী
সেবক
রাজনিতীবিদ
মতামতদানকারী
কাউন্সেলর
(এখানে রাজসোহান ১ নং এ আসবে আমি নিশ্চিৎ)
Naturalist/nature smart ( প্রকৃতিপ্রেমী )
মাঠকর্মী
গার্ডেনার
পরিদর্শক বা পর্যবেক্ষক( প্রাকৃতিক স্থল, জল ও নভো সর্বক্ষেত্রেই প্রযোজ্য)
(এক কথায় রেজোয়ানা সাথে ইমন জুবায়ের এর নাম)
Intrapersonal /myself smart ( অন্তর্মূখী বা শামুক মানুষ)
আত্নমগ্ন কথামালা লেখক
বলা বাহূল্য আমি এই গুণাবলীতে বিশেষ পারঙ্গম।
( বিঃদ্রঃ- word smart এর অন্তর্ভুক্ত অনেকেই পড়বেন তার মধ্যে মহিলা পরিষদ শীর্ষে থাকিবেন আশা করি।
সুরন্জনা আপু, রাত্রী, সমুদ্রকন্যা, নৈশচারী, মেঘ বলছে যাবো যাবো, মেহরুবা সপ্তর্ষী এর সাথে আকাশচুরি, আকাশ অম্বর, সায়েম মুন, বাঁশীওয়ালা, ভাঙ্গন,শিরীষ, সম্রাট,তাজাকলম, সুষম, হানীফ রাশেদীন, ফাহাদ মতিউর,জীবানান্দ,মেঘদূত আর অবশ্য অবশ্য হাসান মাহবুব আর আমার প্রিয় কবি ভাই ফারিহান মাহমুদসহ আরো অনেক নামী দামী লেখকেরা।)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১০ রাত ১১:২৮