somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবি শহীদ কাদরীর ৫টি নির্বাচিত কবিতা

২৯ শে মে, ২০০৮ বিকাল ৫:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


[শহীদ কাদরী সেই বিরলপ্রজ কবি, যিনি দীর্ঘকাল যাবৎ স্বদেশ থেকে দূরে মার্কিন মুলুকে স্বেচ্ছা-নির্বাসনে রয়েছেন। এ যাবৎ তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ সবেমাত্র তিনটি। এগুলো হলো- উত্তরাধিকার (১৯৬৭), তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা (১৯৭৪) এবং কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই (১৯৭৮)। এ তিনটি কাব্যগ্রন্থের বাইরে তাঁর আর কোনো গ্রন্থের সন্ধান এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি। দীর্ঘ দীর্ঘদিন যাবত তাঁর কোনো নতুন কবিতাও চোখে পড়েনি। হয়তো তিনি লেখালেখি ছেড়েই দিয়েছেন, নয়তো প্রকাশ করছেন না। কিন্তু তিনটি কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে তিনি যে আধুনিক মনন, বিশিষ্ট শিল্পবোধ এবং কাব্যভঙ্গির প্রকাশে যে গভীর জীবনবোধ, অন্তর্গত বিষাদ ও বৈরাগ্যের যোগ ঘটিয়েছেন তা অবশ্যই তাঁকে বাংলা কবিতার ময়দানে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে। স. ফ ]


সঙ্গতি
(অমিয় চক্রবর্তী, শ্রদ্ধাস্পদেষু)

বন্য শূকর খুঁজে পাবে প্রিয় কাদা
মাছরাঙা পাবে অন্বেষণের মাছ,
কালো রাতগুলো বৃষ্টিতে হবে শাদা
ঘন জঙ্গলে ময়ূর দেখাবে নাচ

প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক-ই
কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না...

একাকী পথিক ফিরে যাবে তার ঘরে
শূন্য হাঁড়ির গহ্বরে অবিরত
শাদা ভাত ঠিক উঠবেই ফুটে তারাপুঞ্জের মতো,
পুরোনো গানের বিস্মৃত-কথা ফিরবে তোমার স্বরে

প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক-ই
কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না...

ব্যারাকে-ব্যারাকে থামবে কুচকাওয়াজ
ক্ষুধার্ত বাঘ পেয়ে যাবে নীলগাই,
গ্রামান্তরের বাতাস আনবে স্বাদু আওয়াজ
মেয়েলি গানের- তোমরা দু'জন একঘরে পাবে ঠাঁই

প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক-ই
কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না...

-(কাব্যগ্রন্থ : কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই)



কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না

একটি মাছের অবসান ঘটে চিকন বটিতে,
রাত্রির উঠোনে তার আঁশ জ্যোৎস্নার মতো
হেলায়-ফেলায় পড়ে থাকে
কোথাও কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না,
কোথাও কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না;

কবরের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে প্রবেশ করে প্রথম বসন্তের হাওয়া,
মৃতের চোখের কোটরের মধ্যে লাল ঠোঁট নিঃশব্দে ডুবিয়ে বসে আছে
একটা সবুজ টিয়ে,
ফুটপাতে শুয়ে থাকা ন্যাংটো ভিখিরির নাভিমূলে
হীরার কৌটোর মতো টলটল করছে শিশির
এবং পাখির প্রস্রাব;
সরল গ্রাম্যজন খরগোশ শিকার করে নিপুণ ফিরে আসে
পত্নীর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে, চুল্লির লাল তাপে
একটি নরম শিশু খরগোশের মাংস দেখে আহ্লাদে লাফায়
সব রাঙা ঘাস স্মৃতির বাইরে পড়ে থাকে
বৃষ্টি ফিরিয়ে আনে তার
প্রথম সহজ রঙ হেলায়-ফেলায়

কোথাও কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না,
কোথাও কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না

-(কাব্যগ্রন্থ : কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই)



স্মৃতি : কৈশোরিক

অদৃশ্য ফিতে থেকে ঝুলছে রঙিন বেলুন
রাত্রির নীলাভ আসঙ্গে আর স্বপ্নের ওপর
যেন তার নৌকা- দোলা; সোনার ঘণ্টার ধ্বনি
ছড়িয়ে পড়ছে সমস্ত শহরের! আমি ফিরলাম
ঝর্ণার মতো সেই গ্রীষ্ম দিনগুলোর ভেতর
যেখানে শীৎকার, মত্ততা আর বেলফুলে গাঁথা
জন্মরাত্রির উৎসবের আলো; দীর্ঘ দুপুর ভরে
অপেমান ঘোড়ার ভৌতিক পিঠের মতো রাস্তাগুলো,
গলা পিচে তরল বুদ্বুদে ছলছল নত্ররাজি,
তার ওপর কোমল পায়ের ছাপ, -চলে গেছি
শব্দহীন ঠাকুর মার ঝুলির ভেতর।
দেয়ালে ছায়ার নাচ
সোনালি মাছের। ফিরে দাঁড়ালাম সেই
গাঢ়, লাল মেঝেয়, ভয়-পাওয়া রাত্রিগুলোয়
যেখানে অসতর্ক স্পর্শে গড়িয়ে পড়লো কাঁচের
সচ্ছল আধার, আর সহোদরার কান্নাকে চিরে
শূন্যে, কয়েকটা বর্ণের ঝলক
নিঃশব্দে ফিকে হল; আমি ফিরে দাঁড়ালাম সেই
মুহূর্তটির ওপর, সেই ঠাণ্ডা করুণ মরা মেঝেয়

-(কাব্যগ্রন্থ : উত্তরাধিকার)



মাংস, মাংস, মাংস...

আমাকে রাঙাতে পারে তেমন গোলাপ
কখনও দেখি না। তবে কাকে, কখন, কোথায়
ধরা দেবো? একমাত্র গোধূলি বেলায়
সবকিছু বীরাঙ্গনার মতন রাঙা হয়ে যায়।
শৈশবও ছিলো না লাল। তবে জানি,
দেখেছিও, ছুরির উজ্জ্বলতা থেকে ঝরে পড়ে বিন্দু বিন্দু লাল ফোঁটা

তবে হাত রাখবো ছুরির বাঁটে? সবুজ সতেজ-
রূপালি রেকাবে রাখা পানের নিপুণ কোনো খিলি নয়,
মাংস, মাংস, মাংস... মাংসের ভেতরে শুধু
দৃঢ়মুখ সার্জনের রূঢ়তম হাতের মতন
খুঁজে নিতে হবে সব জীবনের রাঙা দিনগুলি ...

- (কাব্যগ্রন্থ: তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা)



বাংলা কবিতার ধারা

কে যেন চিৎকার করছে প্রাণপণে `গোলাপ! গোলাপ!'
ঠোঁট থেকে গড়িয়ে পড়ছে তার সুমসৃণ লালা,
`প্রেম, প্রেম' বলে এক চশমা-পরা চিকণ যুবক
সাইকেল-রিকশায় চেপে মাঝরাতে ফিরছে বাড়ীতে,
`নীলিমা, নিসর্গ, নারী'- সম্মিলিত মুখের ফেনায়
পরস্পর বদলে নিলো স্থানকাল, দিবস শর্বরী হলো
সফেদ পদ্মের মতো সূর্য উঠলো ফুটে গোধূরির রাঙা হ্রদে
এবং স্বপ্নের অভ্যন্তরে কবিদের নিঃসঙ্গ করুণ গণ্ডদেশে
মহিলার মতো ছদ্মবেশে জাঁদরেল নপুংসক এক
ছুড়ে মারলো সুতীক্ষ্ণ চুম্বন।

- (কাব্যগ্রন্থ: তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা)

১১টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×